কক্সবাজার লালদীঘির দক্ষিণ পাশে জিয়া কমপ্লেক্স মার্কেটের তিন তলার আমেনা গেস্টের মালিক ‘আমেনা খাতুন’ ও তার মেয়ের জামাই ‘আব্দুল খালেক’ আবাসিক হোটেল ব্যবসার অড়ালে দীর্ঘদিন ধরে চালিয়ে যাচ্ছে অবৈধ পতিতা ব্যবসা। আমেনা গেস্ট হাউস নামীয় চিহ্নিত এই হোটেলটিতে যুগপৎ অসামাজিক কার্যকলাপ চললেও জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় না বলে অভিযোগ স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, পৌরসভার লালদীঘির দক্ষিণ পাড়স্থ জিয়া কমপ্লেক্স মার্কেটের মালিক মৃত আব্দুল হক কোম্পানি নামক ব্যক্তি। স্বামীর মৃত্যুর পরবর্তী ওয়ারিশদার হিসেবে আমেনা ( মৃত আব্দুল হকের দ্বিতীয় স্ত্রী) প্রায় ২০/২৫ বছর পূর্বে জিয়া কমপ্লেক্স মার্কেটের তৃতীয় তলা দখল করে নেন । এরপর আমেনা গেস্ট হাউস নাম দিয়ে বিভিন্ন অফিস ম্যানেজ করে জামাই- শাশুড়ির নেতৃত্বে প্রকাশ্য করে যাচ্ছে অবৈধ পতিতা ব্যবসা, সাথে মদ-জুয়ার আসর। হোটেলের বাহিরে পর্দা টাঙ্গি দিয়ে বিভিন্ন বয়সের নারী দিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে চালিয়ে যাচ্ছে পতিতা ব্যবসাসহ জুয়া, মাদক সেবন ও বিক্রি তো আছেই।
এছাড়া অভিযোগ রয়েছে, লালদীঘির পশ্চিম পাশে হোটেল নজরুল, এহেছান বোডিং, হোটেল পাঁচ তাঁরা, হোটেল জিলানী, হোটেল রাজমনি, হোটেল সী নাইট, হোটেল ড্রীমল্যান্ড, হোটেল সী হার্ট, হোটেল মুবিন, নিশীথা হোটেল সহ নামে-বেনামে আবাসিক হোটেলের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে চালিয়ে আসছে পতিতাবৃত্তি।
এক সময় চিহ্নিত অপরাধীদের আস্তানা হিসেবে পরিচিত ছিল এই আমেনা গেস্ট হাউস নামক আবাসিক হোটেলটি। আমেনার বখাটে ছেলে রাজু (পলাতক আসামি) থানার তালিকাভূক্ত সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে চুরি, ছিনতাই, ধর্ষণের অভিযোগে অসংখ্য মামলা রয়েছে। দুধর্ষ সন্ত্রাসী রাজু বর্তমানে দেশে বাইরে চলে গেছে বলে জানায় স্থানীয় একটি সূত্র।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, এই মার্কেটের সন্নিকটে (তিনপাশে) তিনটি মসজিদ, ২টি মন্দির, জেলার সর্বোচ্চ বিচারালয় জজ কোর্ট, ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, আইন কলেজ, জেলা আওয়ামীলীগ কার্যালয়, জেলা আইনজীবী সমিতির এনেক্স ভবন( উকিল বার) সহ অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ অফিস রয়েছেন। তাছাড়া এই জিয়া কমপ্লেক্স নামক বাণিজ্যিক মার্কেটের প্রথম, দ্বিতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম তলায় রয়েছে ব্যাংক, বীমাসহ গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যালয়। কক্সবাজার শহরের কেন্দ্রস্থল জনবহুল ব্যস্ততম এলাকা লালদিঘি, তথা প্রাচীন এই পুকুর পাড়। এখানে যে প্রকাশ্য অসামাজিক কাজ চললেও প্রশাসনের কোন নজরদারি নেই বললেই চলে। আর মনে হয়না এখানে কোন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা আছে কিনা।
তাছাড়া আবাসিক হোটেল নামের ব্যবসার আড়ালে অবৈধ দেহ ব্যবসা তা কোন ভাবে মেনে নেওয়া যায় না। আমাদের এই মার্কেট সহ পার্শ্ববর্তী মার্কেট সমূহে দূরদূরান্ত থেকে আসা লোকজন প্রতিনিয়ত দেখছেন এই হোটেলের নোংরামি। স্কুল কলেজ পড়ুয়ারা এ রাস্তা দিয়ে আসাযাওয়া করেন। চোখের সামনে প্রকাশ্যে অনৈতিক কাজ চলতে দেখলে তারাও একদিন এসবের মধ্যে জড়িয়ে বিপদগামী হবে।
এডভোকেট দিদারুল আলম হানিফ বলেছেন, অসামাজিক কার্যকলাপের সাথে জড়িত প্রতিষ্ঠানে পুলিশী অভিযান নয়, এগুলোকে স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দিতে হবে। কিছু অমানুষ আবাসিক হোটেল নাম দিয়ে দেহ ব্যবসা করে এলাকার সুনাম নষ্ট করছে। এদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানান তিনি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ভ্রাম্যমান পতিতা ছাড়াও ওই হোটেলের রুমে রুমে রাখা হয়েছে পতিতা। অবশ্য এদের পরিচয় পরিচয় দেয় ওরা তার গেস্ট। গেস্ট সাজিয়ে রুমে রাখা পতিতাদের মাধ্যমে খদ্দেরদের ব্ল্যাকমেইল করে সর্বস্ব হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে আমেনা গেস্ট হাউসের বিরুদ্ধে। হোটেল মালিক আমেনার আছে সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী ও মিডিয়া সাপোর্টার। ওদের ব্যবহার করে প্রশাসন ম্যানেজ করে দিব্যি পতিতা ব্যবসা করে বলে গেছে টাকার কুমির।
লালদীঘির পশ্চিম পাশের এক ব্যবসায়ী জানান, আমি এখানে ব্যবসা করছি প্রায় ১১ বছর। আমেনা গেস্টের মালিক ‘আমেনা’ বিভিন্ন বয়সের নারী দিয়ে প্রকাশ্য পতিতাবৃত্তি করছে দীর্ঘদিন। এখানে রাতদিন রহস্যময় নারী পুরুষের অবাধ বিচরণ যেকোন মানুষের নজর কাড়ছে। আমরা এখানকার ব্যবসায়ীরা নিরাপত্তাহীনতাই আছি।
গোপন সূত্রে জানা গেছে, দেহ ব্যবসার সাথে জড়িত হোটেল মালিকেরা প্রশাসন ম্যানেজ করে চালিয়ে যাচ্ছে দেহ ব্যবসা। শুধু পতিতা না, মদ-জুয়া, ইয়াবা সেবন, ইয়াবা বিকিকিনির নিয়মিত হাট বসানোর অভিযোগ রয়েছে এই হোটেলগুলোর বিরুদ্ধে।
পতিতা ব্যবসা করতে কক্সবাজারে কয়টি আবাসিক হোস্টেলে প্রশাসনের পারমিশন দেয়া আছে জানতে চাইলে কক্সবাজার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(সদর সার্কেল) মিজানুর রহমান বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব কাজে কোন পারমিশন দেয়া হয়না। বাংলাদেশের কোথাও আছে কিনা জানা নেই। যদি এরকম হয়ে থাকে তাহলে লালদীঘির পাড় ও তার আশেপাশের হোটেলগুলোতে প্রকাশ্য পতিতাবৃত্তি কিভাবে চলছে জানতে চাইলে, তিনি বলেন, পতিতাবৃত্তির সাথে জড়িত ব্যক্তি, হোটেল- মোটেলের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান করা হয়। অভিযান অব্যাহত আছে। তারপরেও কোন হোটেলে এরকম সংশ্লিষ্টতা দেখলে ত্রিফল (৯৯৯) নাইনে অভিযোগ করবেন।