গাজা যুদ্ধের প্রতিবাদ এবং হামাসকে সহায়তার অংশ হিসেবে গত নভেম্বর থেকে লোহিত সাগরে ইসরায়েল ও তাদের মিত্র পশ্চিমা দেশের জাহাজে একের পর এক হামলা করে আসছে ইয়েমেনের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী হুতি যোদ্ধারা। হুতিদের হামলায় পশ্চিমাদের বহু জাহাজ গুরুপত্বপূর্ণ এ বাণিজ্যপথ এড়িয়ে ভিন্নপথে গন্তব্যে পাড়ি দিতে বাধ্য হচ্ছে। এতে কার্গো পরিবহন ব্যয় বেড়ে সরাসরি পশ্চিমা অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
প্রথমদিকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে ইরানপন্থি এই যোদ্ধাদের থামানোর চেষ্টা করে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এতে কাজ না হওয়ায় গাজা যুদ্ধের মধ্যেই ইয়েমেনের ভেতরে হুতিদের বিভিন্ন স্থাপনায় সরাসরি বিমান হামলা শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। এরপর থেকে লোগিত সাগর ও এর আশপাশের এলাকায় দুপক্ষের মাঝে পাল্টাপাল্টি হামলা চলে আসছে। তবে এত এত হামলা করেও হুতিদের থামাতে না পেরে এখন সমঝোতার পথে হাঁটার কথা জানিয়েছে ইসরায়েলের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটন বলছে, লোহিত সাগর ও এর আশপাশের এলাকায় জাহাজে হামলা বন্ধ করলে যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকা থেকে হুতিদের নাম বাদ দেওয়া হবে। সোমবার (৮ এপ্রিল) মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের বরাতে এসব তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
গত বুধবার (৩ এপ্রিল) এক অনলাইন প্রেস ব্রিফিংয়ে ইয়েমেনে নিযুক্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিশেষ দূত টিম লেন্ডারকিং বলেছেন, এই সমস্যার কূটনৈতিক সমাধান পাব বলেই আমরা আশা করি। আমরা এমন একটি উপায় খুঁজে পাব যার মাধ্যমে উত্তেজনা প্রশমন, ইয়েমেন থেকে সরে আসা, সন্ত্রাসী তকমা রদ এবং সর্বশেষে হুতিদের সামরিক স্থাপনায় হামলা বন্ধ করা যাবে।
ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিন মাস ধরে লোহিত সাগরে হুতিদের হামলা বন্ধে সামরিক অভিযান জারি রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে হামলার মাধ্যমে হুতিদের সামরিক সক্ষমতা কমানোর দাবি করলেও তাদের থামাতে পারছে না ওয়াশিংটন। সামরিকভাবে হুতিদের সঙ্গে না পেরে এখন কূটনৈতিকভাবে বিষয়টি সমাধানের দিকে হাঁটছে দেশটি। বাইডেনের বিশেষ দূত টিমের মন্তব্যের মধ্যে এ বিষয়টিই সামনে এলো।
ব্রিফিং শেষে আবারও টিমের সঙ্গে এই বিষয়ে যোগাযোগ করে ব্লুমবার্গ। তার কাছে সংবাদমাধ্যমটি জানতে চায় হামলা বন্ধের বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র হুতিদের সন্ত্রাসী তকমা রদ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, আমরা অবশ্যই বিষয়টি পর্যালোচনা করব। তবে কোনো কিছু নিজে নিজে হয়ে যাবে না।
গত জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর হুতিদের সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে তালিকাভুক্ত করে। ইরানপন্থি এই গোষ্ঠীর হামলার জবাবে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের পাল্টা হামলা শুরুর পরই তাদের সন্ত্রাসী তকমা দেয় ওয়াশিংটন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অভিযান সত্ত্বেও লোহিত সাগরে হামলা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে হুতিরা। একমাত্র গাজায় ইসরায়েল যুদ্ধ বন্ধ করলেই লোহিত সাগরে হামলা বন্ধ করা হবে বলে জানিয়েছে গোষ্ঠীটি।