দেশের পট পরিবর্তনের পর অপরাধীদের লাগাম টেনে ধরতে চলছে যৌথবাহিনীর অভিযান। সারাদেশের ন্যায় কক্সবাজারের ঈদগাঁওতেও যৌথবাহিনীর অভিযান অব্যাহত রয়েছে। অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছে অনেক চিহ্নিত অপরাধী। এতে অনেকেই সটকে পড়েছে অপরাধী চক্রের সদস্যরা। যার ফলে জ্যামিতিকহারে কমে গেছে অপরাধ। এতে সাধারণ মানুষের মাঝে ফিরেছে স্বস্তি। কক্সবাজারে জেলায় ২০২১ সালের ২৬ জুলাই ৫টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত হয় ঈদগাঁও উপজেলা। ইউনিয়নের মধ্যে ঈদগাঁও, ইসলামপুর, ইসলামাবাদ, জালালাবাদ ও পোকখালী নিয়ে এই উপজেলা। যেখানে বর্তমানে লোকসংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার। নতুনভাবে উপজেলাটি গঠিত হওয়ার পর ধীরে ধীরে পরিণত হয় অপরাধের স্বর্গরাজ্যে। ঈদগাঁও উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নজুড়ে ডাকাতি, অস্ত্রবাজী, চাঁদাবাজী, সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসাসহ নানা অপকর্ম যেন নিত্যদিনের সঙ্গী ছিল। দখলের রাজত্ব কায়েম করতে প্রতিনিয়িত খুন হতো এই উপজেলায়। আধিপত্য বিস্তারে সেখানে গড়ে তোলা হয় নানা বাহিনী। জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নানা সন্ত্রাসী বাহিনীর অত্যাচারে সেখানকার মানুষ অতিষ্ঠ ছিল। এসব বাহিনী চলতো রাজনৈতিক ছত্রছায়ায়। যার কারণে প্রশাসনও ছিলো অপরাধীদের হাতের মুঠোয়। প্রতিবাদ করলেই মামলা—হামলার শিকার হতো মানুষ। এই উপজেলায় সবচেয়ে বড় বাজার ঈদগাঁও বাজার যেখানে উৎপেতে থাকতো চাঁদাবাজি চক্র। যারা প্রতি মাসে বাজারে ব্যবসায়ী কিংবা গাড়ি থেকে হাতিয়ে নিতো কোটি টাকা।
ছাত্র আন্দোলনের মুখে ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের খবরে ঈদগাঁও থানায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। থানায় সংরক্ষিত বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট হয়। গত (৪ সেপ্টেম্বর) মঙ্গলবার সেসব অস্ত্রসহ এবং আগে থেকে অনেকের কাছে থাকা অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে সারাদেশের ন্যায় ঈদগাঁতেও যৌথ অভিযান শুরু হয়।
জানা যায়, ঈদগাঁও উপজেলার ইসলামাবাদ রেলওয়ে স্টেশন ও ফকিরা বাজারে স্থাপন করা হয়েছে সেনাবাহিনীর দুটি ক্যাম্প।
স্থানীয়রা বলছেন, যৌথ বাহিনী অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে ঈদগাঁও উপজেলায় অপরাধ কমতে শুরু করেছে। ঈদগাঁয়ের সিএনজি চালক কলিম উল্লাহ বলেন, গত ৫ আগষ্টের আগে ঈদগাঁও বাজার গাড়ি থেকে চাঁদা নিতো একটি চক্র। তাদের চাঁদা না দিলে এখানে গাড়ি চালাতে দিতো না। যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে সেই চাঁদাবাজ চক্রটি এখন আর দেখতে পাচ্ছি না। যার কারণে আমরা স্বাধীনভাবে গাড়ি চালিয়ে অর্থ উপার্জন করতে পারছি। বাজারের দোকানদার লোকমান হাকিম বলেন, বাজারে ব্যবসা করতে হলে আমাদের প্রতিদিন চাঁদা দিতে হতো। আওয়ামী লীগের নেতাদের যোগসাজশে তাঁরা এই চক্রটি পরিচালনা করতো। তাই মুখ ফুটে প্রতিবাদও করতে পারতাম না। এখন সেরকম কিছুই নেই, আমরা স্বস্তিতে আছি।
ঈদগাঁও বাজারে কথা হয়, ঢাকা থেকে গরু ক্রয় করতে আসা গরু ব্যবসায়ী আবদুল বাসেদের সাথে। তিনি বললেন এই যেন এক নতুন বাংলাদেশ। যে দেশে আগে আমাদের মতো ব্যবসায়ীদের ব্যবসা করতে এসে দিতে হতো চাঁদা। চাঁদা না দিলে আমাদের উপর চলতো নানান নির্যাতন। ৫ আগস্ট আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর যৌথবাহিনীর অভিযান শুরু হলে পালিয়ে যায় চাঁদাবাজ চক্র। এখন ব্যবসায়ীরা স্বস্থি নিয়ে ব্যবসা করছে বলে জানান বাসেদ। বাসেদ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, এই অভিযান যেন অপরাধীরা নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকে এটাই প্রত্যাশা। ইসলামপুরের স্থানীয় বাসিন্দা আবুল কাশেম বলেন, আমাদের এলাকায় আগে প্রকাশ্যে অস্ত্রমহড়া দিতো সন্ত্রাসীরা। যারা জমি দখল, ডাকাতি, খুন, মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলো। বিশেষ করে পাহাড়ি এলাকাগুলোতে সাধারণ পথচারীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ছিনতাই করা হতো। যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে এসব অস্ত্রবাজদের দেখা যাচ্ছে না। এখন ঈদগাঁওয়ের মানুষ শান্তিতে আছে। আমরা চাই সবসময় যেনো উপজেলাটি এমন শান্তিপূর্ণ থাকুক।