এবারের উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থীর ছড়াছড়ি দেখা যাচ্ছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার বিধান শিথিল করা; অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিলের সুযোগ দেওয়া এবং প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর দলীয় প্রতীক না দেওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যা বেশি হবে বলে মনে করছেন রাজনীতি-বিশ্লেষকরা।
তাঁরা বলছেন, দলীয় প্রতীক নিয়ে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ থাকলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলীয় প্রতীক দেবে না। এ কারণে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতারাও এবারে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইছেন না; সহযোগী সংগঠনগুলোর তৃণমূল নেতারা প্রার্থী হতে দৌড়ঝাঁপ করছেন। বিভিন্ন উপজেলায় সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপজেলা পরিষদের তিন পদেই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে পোস্টার-বিলবোর্ডে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া সংসদ নির্বাচন বর্জন করা বিএনপির দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা কম; তবে দলটির স্থানীয় নেতারা প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অনেক উপজেলায় বিএনপি-জামায়াতের নেতারা শুভেচ্ছা বিনিময়ের পোস্টার টাঙিয়েছেন। ৮ মে প্রথম ধাপে ১৫২ উপজেলায় ভোট গ্রহণের তারিখ রেখে তফসিল দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোট গ্রহণ হবে। এ ধাপে ২২ উপজেলায় ভোট হবে ইভিএমে, ১৩০ উপজেলায় ব্যালট পেপারে। ঘোষিত তাফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমার শেষ সময় ১৫ এপ্রিল, বাছাই ১৭ এপ্রিল, প্রত্যাহারের শেষ সময় ২২ এপ্রিল। প্রতীক বরাদ্দ ২৩ এপ্রিল এবং ভোট গ্রহণ হবে ৮ মে। বিশ্লেষকরা বলছেন, বেশ কিছু কারণে এবারের উপজেলা নির্বাচনে তিন পদে প্রার্থীর ছড়াছড়ি হবে। একদিকে দলীয় প্রতীক না থাকায় স্থানীয় নেতারা সবাই প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিচ্ছেন। অনেক সময় বিরোধীরা মনোনয়নপত্র দাখিলে বাধা দেন; এবারে সে বাধা দেওয়ার সুুযোগ নেই। কেননা সব প্রার্থীকেই অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে হবে। তাই কেউ চাইলেও প্রার্থী হতে বাধা দিতে পারবেন না। এ ছাড়া শিথিল করা হয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার বিধান। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে ২৫০ ভোটারের সমর্থনসূচক স্বাক্ষর তালিকা জমা দেওয়ার বিধান বাদ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
সংশোধিত নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা অনুযায়ী, এখন এ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে কোনো সমর্থনসূচক তালিকা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। প্রতীক বরাদ্দের আগে প্রার্থীরা জনসংযোগ এবং সমাজমাধ্যমে প্রচার চালাতে পারবেন। প্রার্থীরা সাদাকালোর পাশাপাশি রঙিন পোস্টার ও ব্যানার করতে পারবেন। বিধিতে নির্বাচনের ফলাফল স্থগিত ও পুনরায় ভোটের নির্দেশ দেওয়ার বিষয়ে ইসির ক্ষমতা স্পষ্ট করা হয়েছে। তবে প্রার্থী হতে নতুন বিধিমালায় জামানতের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। নতুন বিধিমালা অনুযায়ী, উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ১ লাখ টাকা জামানত দিতে হবে, আর ভাইস চেয়ারম্যান পদে দিতে হবে ৭৫ হাজার টাকা। আগে উভয় পদে জামানত ছিল ১০ হাজার টাকা। কেউ কেউ বলছেন, জামানতের কারণে প্রার্থী সংখ্যা কম হবে না। এর আগে মঙ্গলবার বেশ কিছু সংশোধন এনে ‘উপজেলা নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা ও আচরণবিধি’ জারি করে নির্বাচন কমিশন। নতুন বিধিমালা অনুযায়ী, প্রতীক বরাদ্দের দিনই প্রচার শুরু করা যাবে। সব প্রার্থীকেই অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের পরিকল্পনা অনুযায়ী দ্বিতীয় ধাপের ২৩ মে, তৃতীয় ধাপের ২৯ মে ও চতুর্থ ধাপের ভোট ৫ জুন। এসব উপজেলায় চেয়ারম্যান, সাধারণ ও সংরক্ষিত ভাইস চেয়ারম্যান পদে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের এ সাধারণ নির্বাচন হবে।
১৫২ উপজেলার মধ্যে নয় জেলার ২২ উপজেলায় ভোট হবে ইভিএমে। সেগুলো হলো কক্সবাজার, শরীয়তপুর, চাঁদপুর, জামালপুর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, যশোর, পিরোজপুর ও মানিকগঞ্জ। বাকি ১৩০ উপজেলার ভোট হবে কাগজের ব্যালটে। প্রসঙ্গত, মে মাসে চার ধাপে ৪৮১ উপজেলায় ভোট করবে ইসি।