০৮:০০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কক্সবাজারে কলসির পানিতে ফসল রক্ষার চেষ্টা

বোরো মৌসুমে সেচ সুবিধা নিশ্চিতে কক্সবাজারের ঈদগাঁও ফুলেশ্বরী নদীর ঈদগাঁও এবং পোকখালীতে বসানো হয়েছে দুটি রাবার ড্যাম। উজান থেকে আসা পানি জমিয়ে সেচের চাহিদা মেটানোই ছিল এর উদ্দেশ্য। কিন্তু শীত মৌসুম থেকে চলতি সময় পর্যন্ত বৃষ্টি না হওয়ায় আশানুরূপ পানি নামেনি নদীতে। ফলে, কুয়াশা ও পাহাড় ঘেমে আসা স্বল্প পানি জমেছে ঈদগাঁও রাবার ড্যামের ওপরাংশে। অথচ রাবার ড্যাম ফোলানো থাকলেও শুকিয়ে চৌচির হয়ে আছে পোকখালী রাবার ড্যাম অংশের নদী।

প্রয়োজনীয় সেচের অভাবে রাবার ড্যাম অংশের হাজারের অধিক হেক্টর বোরো চাষের জমি ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। অথচ আর কিছুদিনের মধ্যে ধানগাছে থোড় আসতে শুরু করবে। এ অবস্থায় বাধ্য হয়ে ধানক্ষেতে কলসি দিয়ে পানি ছিটাচ্ছেন কৃষকরা। পানির এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে সময়মতো থোর বের হবে কি না তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা।

কৃষকরা বলছেন, পোকখালী রাবার ড্যামনির্ভর চাষিদের পানি সংকটের জন্য দায়ী ঈদগাঁও রাবার ড্যাম পরিচালনা কমিটি। তাদের অংশে জমা পানি সমবণ্টন করা হলে পোকখালী ও চৌফলদণ্ডি বিলের ১৩০০ হেক্টর জমির চাষাবাদ ক্ষতির মুখে পড়তো না।

সূত্রমতে, উজান থেকে পানি কম আসায় ঈদগাঁও রাবার ড্যাম পরিচালনা কমিটি পানি ছাড়ছে না। ফলে পোকখালী রাবার ড্যাম ফোলানো হলেও তা পানিশূন্য। এ অবস্থায় উপজেলার পোকখালী, চৌফলদণ্ডি ও জালালাবাদ ইউনিয়নে এক হাজার ২৮৪ হেক্টরের বেশি জমিতে চাষ করা বোরো ধান ও শীতকালীন সবজিক্ষেত শুকিয়ে মারা যাচ্ছে।

পোকখালীর নাইক্যংদিয়া এলাকার (৬ নম্বর ওয়ার্ড) কৃষক জিয়াউর রহমান। তিনি বলেন, ‘দুই লাখ টাকা ঋণ নিয়ে পাঁচ একর জমিতে বোরো চাষ করেছি। আশা ছিল সুন্দরমতো চাষ করে ঋণ পরিশোধের পর পুরো বছর ভালোভাবে চলবে। কিন্তু দেরিতে রাবার ড্যাম ফোলানোর কারণে আমরা পর্যাপ্ত পানি পাচ্ছি না। কলসিতে করে পানি সেচের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছি। পানির অভাবে ফসল নষ্ট হলে নিঃস্ব হয়ে আত্মহত্যা করা ছাড়া কোনো পথ খোলা থাকবে না।’

পোকখালী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও পোকখালী রাবার ড্যাম ব্যবস্থাপনা সমিতির সাধারণ সম্পাদক হেলাল উদ্দিন বলেন, চাষের সুবিধার্থে ঈদগাঁও নদীতে দুটি রাবার ড্যাম বসানো হলেও ঈদগাঁও রাবার ড্যাম থেকে পানি না ছাড়লে নিচে পানি আসে না। ঈদগাঁও রাবার ড্যামে পানি জমা থাকলেও সমবণ্টন না হওয়ায় পানির অভাবে পোকখালী-চৌফলদণ্ডি বিলের ফসলি মাঠ শুকিয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা।

তিনি বলেন, গতরাতে অল্প পানি ছেড়েছিল, তা শুকনা খালই খেয়ে ফেলেছে। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে ঋণ নিয়ে চাষ করা কৃষকরা পথে বসবেন। সংকট সমাধানে চেষ্টা করে বারবার ব্যর্থ হয়েছি। দ্রুত পানি না পেলে পুরো চাষবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

এ বিষয়ে ঈদগাঁও রাবার ড্যাম ব্যবস্থাপনা সমিতির সভাপতি আরমান উদ্দিন মেম্বার বলেন, গত কয়েকমাস ধরে বৃষ্টি নেই। নদীর উপরিভাগে শ্যালো মেশিনে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন সচল থাকায় পানি অপচয় হচ্ছে। তাই আমাদের অংশেও পানি সংকট রয়েছে। ফলে, নিচের দিকে পানি ছাড়া সম্ভব হচ্ছে না।

তিনি বলেন, উপজেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যতটুকু সম্ভব আমরা গতকাল পানি ছেড়েছি। এর চেয়ে বেশি পানি ছাড়লে আমাদের পাম্প বসিয়ে জমিতে পানি দিতে হবে।

ঈদগাঁও উপজেলা (চলতি দায়িত্ব) কৃষি কর্মকর্তা জাহিদ হাসান বলেন, ঈদগাঁওয়ে বিপুল পরিমাণ বোরো চাষ হয়েছে। কিন্তু রাবার ড্যামে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় পোকখালী এলাকার কয়েকশ হেক্টরের বেশি জমির চাষ প্রায় নষ্ট হওয়ার পথে। সংকট কাটানো সম্ভব না হলে ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে। তবে সংকট সমাধানের চেষ্টা চলছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবল চাকমা বলেন, এ বিষয়ে ঈদগাঁও-পোকখালী রাবার ড্যাম পরিচালনা কমিটির সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে পানি সমভাবে বণ্টন করা হবে। এর ব্যত্যয় হলে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

ট্যাগ :
পাঠকপ্রিয়

জমে উঠেছে বৃহত্তর বাদশাঘোনা সমাজ পরিচালনা কমিটির দ্বি-বার্ষিক নির্বাচনের প্রচার প্রচারণা

কক্সবাজারে কলসির পানিতে ফসল রক্ষার চেষ্টা

প্রকাশিত সময় : ০২:৫৫:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪

বোরো মৌসুমে সেচ সুবিধা নিশ্চিতে কক্সবাজারের ঈদগাঁও ফুলেশ্বরী নদীর ঈদগাঁও এবং পোকখালীতে বসানো হয়েছে দুটি রাবার ড্যাম। উজান থেকে আসা পানি জমিয়ে সেচের চাহিদা মেটানোই ছিল এর উদ্দেশ্য। কিন্তু শীত মৌসুম থেকে চলতি সময় পর্যন্ত বৃষ্টি না হওয়ায় আশানুরূপ পানি নামেনি নদীতে। ফলে, কুয়াশা ও পাহাড় ঘেমে আসা স্বল্প পানি জমেছে ঈদগাঁও রাবার ড্যামের ওপরাংশে। অথচ রাবার ড্যাম ফোলানো থাকলেও শুকিয়ে চৌচির হয়ে আছে পোকখালী রাবার ড্যাম অংশের নদী।

প্রয়োজনীয় সেচের অভাবে রাবার ড্যাম অংশের হাজারের অধিক হেক্টর বোরো চাষের জমি ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। অথচ আর কিছুদিনের মধ্যে ধানগাছে থোড় আসতে শুরু করবে। এ অবস্থায় বাধ্য হয়ে ধানক্ষেতে কলসি দিয়ে পানি ছিটাচ্ছেন কৃষকরা। পানির এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে সময়মতো থোর বের হবে কি না তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা।

কৃষকরা বলছেন, পোকখালী রাবার ড্যামনির্ভর চাষিদের পানি সংকটের জন্য দায়ী ঈদগাঁও রাবার ড্যাম পরিচালনা কমিটি। তাদের অংশে জমা পানি সমবণ্টন করা হলে পোকখালী ও চৌফলদণ্ডি বিলের ১৩০০ হেক্টর জমির চাষাবাদ ক্ষতির মুখে পড়তো না।

সূত্রমতে, উজান থেকে পানি কম আসায় ঈদগাঁও রাবার ড্যাম পরিচালনা কমিটি পানি ছাড়ছে না। ফলে পোকখালী রাবার ড্যাম ফোলানো হলেও তা পানিশূন্য। এ অবস্থায় উপজেলার পোকখালী, চৌফলদণ্ডি ও জালালাবাদ ইউনিয়নে এক হাজার ২৮৪ হেক্টরের বেশি জমিতে চাষ করা বোরো ধান ও শীতকালীন সবজিক্ষেত শুকিয়ে মারা যাচ্ছে।

পোকখালীর নাইক্যংদিয়া এলাকার (৬ নম্বর ওয়ার্ড) কৃষক জিয়াউর রহমান। তিনি বলেন, ‘দুই লাখ টাকা ঋণ নিয়ে পাঁচ একর জমিতে বোরো চাষ করেছি। আশা ছিল সুন্দরমতো চাষ করে ঋণ পরিশোধের পর পুরো বছর ভালোভাবে চলবে। কিন্তু দেরিতে রাবার ড্যাম ফোলানোর কারণে আমরা পর্যাপ্ত পানি পাচ্ছি না। কলসিতে করে পানি সেচের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছি। পানির অভাবে ফসল নষ্ট হলে নিঃস্ব হয়ে আত্মহত্যা করা ছাড়া কোনো পথ খোলা থাকবে না।’

পোকখালী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও পোকখালী রাবার ড্যাম ব্যবস্থাপনা সমিতির সাধারণ সম্পাদক হেলাল উদ্দিন বলেন, চাষের সুবিধার্থে ঈদগাঁও নদীতে দুটি রাবার ড্যাম বসানো হলেও ঈদগাঁও রাবার ড্যাম থেকে পানি না ছাড়লে নিচে পানি আসে না। ঈদগাঁও রাবার ড্যামে পানি জমা থাকলেও সমবণ্টন না হওয়ায় পানির অভাবে পোকখালী-চৌফলদণ্ডি বিলের ফসলি মাঠ শুকিয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা।

তিনি বলেন, গতরাতে অল্প পানি ছেড়েছিল, তা শুকনা খালই খেয়ে ফেলেছে। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে ঋণ নিয়ে চাষ করা কৃষকরা পথে বসবেন। সংকট সমাধানে চেষ্টা করে বারবার ব্যর্থ হয়েছি। দ্রুত পানি না পেলে পুরো চাষবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

এ বিষয়ে ঈদগাঁও রাবার ড্যাম ব্যবস্থাপনা সমিতির সভাপতি আরমান উদ্দিন মেম্বার বলেন, গত কয়েকমাস ধরে বৃষ্টি নেই। নদীর উপরিভাগে শ্যালো মেশিনে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন সচল থাকায় পানি অপচয় হচ্ছে। তাই আমাদের অংশেও পানি সংকট রয়েছে। ফলে, নিচের দিকে পানি ছাড়া সম্ভব হচ্ছে না।

তিনি বলেন, উপজেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যতটুকু সম্ভব আমরা গতকাল পানি ছেড়েছি। এর চেয়ে বেশি পানি ছাড়লে আমাদের পাম্প বসিয়ে জমিতে পানি দিতে হবে।

ঈদগাঁও উপজেলা (চলতি দায়িত্ব) কৃষি কর্মকর্তা জাহিদ হাসান বলেন, ঈদগাঁওয়ে বিপুল পরিমাণ বোরো চাষ হয়েছে। কিন্তু রাবার ড্যামে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় পোকখালী এলাকার কয়েকশ হেক্টরের বেশি জমির চাষ প্রায় নষ্ট হওয়ার পথে। সংকট কাটানো সম্ভব না হলে ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে। তবে সংকট সমাধানের চেষ্টা চলছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবল চাকমা বলেন, এ বিষয়ে ঈদগাঁও-পোকখালী রাবার ড্যাম পরিচালনা কমিটির সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে পানি সমভাবে বণ্টন করা হবে। এর ব্যত্যয় হলে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।