বৃষ্টিতে কক্সবাজারের পেকুয়ার লবণ চাষি ও ইটভাটায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বুধবার গভীর রাত থেকে বৃহস্পতিবার থেমে থেমে বৃষ্টির ফলে প্রায় ৫ থেকে ৬ হাজার একর জমিতে লবণ উৎপাদন পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এদিকে পেকুয়ার ৩টি ইটভাটার কাঁচা ও শুকনো ইট পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে।
ইটভাটার মালিকরা বলছেন, এভাবে যদি আরও কয়েকদিন বৃষ্টি চলতে থাকে তাহলে ভাটা চালু রাখা যাবে না। অন্যদিকে লবণচাষিরা বলছেন, এমনিতে বাজারে লবণের দাম মোটামুটি আছে। এর মধ্যে চৈত্র মাসের শুরুতে হঠাৎ বৃষ্টিতে লবণচাষিদের সবকিছু হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬টি ইউনিয়নে লবণের চাষ হয়। লবণের মাঠে পানি থই থই করছে। লবণচাষিরা আশার বুক বেঁধে এবার লবণ উৎপাদনে নেমে ছিল কিন্তু হঠাৎ অনাবৃষ্টি তাদের সব আশা নষ্ট করে ফেলেছে।
উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের লবণচাষি নুরুল হোছাইন বলেন, ‘এবার লবণচাষে আমাদের মতো চাষিদের খরচ অনেক বেশি হয়েছে। কেননা, ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে জমি ও লবণের পলিথিনের দাম বাড়ায় অন্যান্য খরচ বেশি পড়েছে। এই মৌসুমে আমি ৭ কানি জমিতে লবণ চাষ করেছি। এবারে আমার প্রতিকানি খরচ পড়েছে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। কিন্তু যখন লবণ উৎপাদন ও লবণ তোলার সময় ঘনিয়ে এসেছে ঠিক সেই সময় হঠাৎ বৃষ্টির ফলে লবণ মাঠে জমানো উৎপাদিত লবণ পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছি।
উপজেলার রাজাখালীর লবণচাষি নাছির উদ্দিন বলেন, এত কষ্ট করে পরিবার পরিজন নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে এবার লাভের আশায় লবণ মাঠ নিয়েছি। এদিকে বাজারে লবণের দামও মোটামুটি থাকায় আশায় বুক বেধেছি। এই দামে খরচ ওঠানো সম্ভব নয়। এমন ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে কৃষকরা এই পেশা থেকে বিমুখ হয়ে পড়বেন বলে জানান এই কৃষক।
উপজেলার টইটং ইউনিয়নের হাজিবাজার এলাকার এ বি এম ব্রিকস ভাটায় দেখা যায়, রোদে শুকাতে দেওয়া কাঁচা ইটগুলো বৃষ্টির পানিতে ভিজে গেছে। এ ছাড়া পোড়ানোর আগে শুকানো সারিবদ্ধ করে রাখা ইটগুলোও বৃষ্টির পানিতে গলে যাচ্ছে।
ইটভাটার মালিক আহমদ নবী জানান, এমনে কয়লার দাম আগের চেয়ে দ্বিগুণ, আর শ্রমিক ও মাটির দামও বেশি। এত কিছুর মধ্যেও ভাটাগুলো আমরা সচল রেখেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টি হওয়ায় আমাদের ভাটা মালিকদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। এই ক্ষতি অনেক ভাটা মালিক পুষিয়ে উঠতে পারবে না।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ছৈয়দ আলম জানান, এ বছর উপজেলায় লবণ উৎপাদনের পরিমাণ ভালো ছিল। প্রতিবছর ২০ হাজার হেক্টর লবণ উৎপাদন হয়ে থাকে। হঠাৎ বৃষ্টিতে লবণ চাষিদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়।