কক্সবাজার জেলা কারাগার এখনও অনিয়ম দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনায় ভরপুর । যেমনটি বলা হয়ছে, স্লোগানেে “রাখিব নিরাপদ- দেখাব আলোর পথ”। কিন্তু আলোর পথ দেখানোর কিছুই নেই ভিতরে। কারাগারের ভিতরকার অবস্থা যেকেউ না গেলেই অজানা থেকে যাবে। এই কারাগারে একেকটি কর্মকর্তা কর্মচারী পোস্টিং নিয়ে আসা মানেই প্রতিজনের কাছে সোনার হরিণ। যা আপনি বাহিরে থাকলে বুঝতেই পারবেন না। আর এসবকে ঘিরে নানা ধরনের অসুবিধার সম্মুখীন কারাবন্দী মানুষগুলো। রক্তচোষা দায়িত্বশীল কর্মকর্তা কর্মচারীদের কাছে প্রতিনিয়ত জিম্মি হতে হচ্ছে বন্দীদের। তারা কারাগারে নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে বসেছে। এমন কোন অনিয়ম নেই যা কারা কতৃপক্ষ করছেনা । তবে এসব অনিয়ম দুর্নীতি করার পরেও সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের কোন টনক নাড়া দেয়নি। কক্সবাজার জেলা কারাগারে এমন লাগামহীন অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অনিয়ম-দুর্নীতির মাত্রা এমনই পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, কারাগারে আটক বন্দিদের নিকট এক কেজি গরুর কাঁচা মাংস বিক্রি করা হচ্ছে ১৮০০ টাকায়।
সেই সঙ্গে কাঁচা মুরগির মাংস বিক্রি করা হচ্ছে কেজি প্রতি ১০০০ থেকে ১৩০০ টাকা করে। এত উচ্চ দামের মাংসের ক্রেতারা হচ্ছেন- আত্মসমর্পণ করা কোটিপতি কারাবন্দি ইয়াবা কারবারিরা। সেল ও ওয়ার্ড বাণিজ্য আগে কারা অভ্যন্তরে সিট বেচাকেনার বিষয়টি অনেকটাই সহনশীল ছিল। কিন্তু ইয়াবা কারবারিদের কারণে এখন অন্যান্য মামলার বন্দিরা আর কোনো সিট কিনে থাকতে পারছেন না। কেননা ইয়াবা কারবারিরা যে টাকা দিয়ে সিট কিনে কারাগারের ভেতর থাকতে পারছেন তা অন্যান্য বন্দিদের কোনোভাবেই সম্ভব হচ্ছে না। যেমনটি একজন বন্দী প্রথমত কারাগারে গেলেই তার সমস্ত বায়োডাটা নেয়ার পর তার উপর চলে মানষিক চাপ সৃষ্টি। দেখানো হয় ভয়ভীতি । আলোচিত মাদক ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী হলে নেয়া হয় সেলে। এরপর দেয়া হয় নানা ধরনের সুবিধা ও অসুবিধার প্রস্তাব। না হয় মোটা অংকের টাকা দিলে সেল থেকে বের করে দেয়া হবে সাধারণ ওয়ার্ডে। যতদিন পর্যন্ত চাহিদা অনুযায়ী টাকা না পাই ততদিন পর্যন্ত রেখে দেয়া হয় সেলে। চাহিদা মতো টাকা দিলেই মিলে যাবে সবকিছু নাগালের ভিতরে৷ সবমিলিয়ে এই সেল বাণিজ্য থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে মাসে ৫০ লাখ টাকারও বেশি। পাশাপাশি আমদানি ওয়ার্ড ও ভিআইপি ওয়ার্ড নামে বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড রয়েছে।
এসব ওয়ার্ড থেকে প্রতিজনের কাছ থেকে দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এখান থেকেও দুই থেকে তিন লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। সাধারণত দেশের প্রতিটি কারাগারে দুর্নীতি-অনিয়ম চলে আসলেও কক্সবাজার জেলা কারাগারের সাম্প্রতিক চিত্র ভিন্ন রকমের। কারাগার সূত্রে জানা গেছে, রবিবার পর্যন্ত কক্সবাজার জেলা কারাগারে বন্দি রয়েছে ৪ হাজার ২৬০ জন। এসব বন্দিদের মধ্যে শতকরা ৭০ জন অর্থাৎ তিন হাজারেরও বেশি রয়েছেন ইয়াবা কারবারি। কারাহাসপাতালের চিত্র ! এদিকে হাসপাতালে রোগীদের জায়গায় মাদক ব্যবসায়ীদের কেবিন ভাড়া দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে মাসে কয়েক লক্ষ টাকা। প্রতি মাসে জনপ্রতি এইসব কেবিন থেকে দশ থেকে পনের হাজার টাকারও বেশি ভাড়া তুলে । যেখানে শুধু মাত্র রোগীদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এই কেবিন। সেখানে মাদক ব্যবসায়ীদেরকে ফাইভ স্টার হোটেলের দামে ভাড়া দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে জেল সুপার ও জেলার মিলে। পাচ্ছেনা কারাবন্দী রোগীরা সেবা। এই কারা হাসপাতালের ঔষুধ বাহিরে বিক্রি করে মাসে কয়েক লক্ষ টাকার সঞ্চয় পত্র করে নিচ্ছে এই অসাধু কর্মকর্তারা।
হাসপাতালের রোগীদের জন্য রান্না করা খাবারেও নানা ধরনের লুটপাট। এসবের উপর ভিত্তি করে কারারক্ষীরা ইয়াবা কারবারিদের টার্গেট করে যেনতেনভাবে টাকা আদায় করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। কারাগারে সরকারি মোবাইল মাদক ব্যবসায়ীদের দখলে। কক্সবাজার জেলা কারাগারে সতের থেকে বিশটিরও অধিক মোবাইল রয়েছে। যেই মোবাইলগুলো প্রতি সপ্তাহে কারাবন্দীরা বন্দীদের পরিবারের সাথে ১০ টাকায় ১০ মিনিট করে যোগাযোগ করার সূ ব্যবস্থা রয়েছে। কারাগারের বন্দিদের সঙ্গে পাঁচ মিনিট কথা বলতে আদায় করা হয় জনপ্রতি ১৫০০ টাকা । এর পরবর্তী মিনিট নেয়া হয় ১২০ টাকা করে। সেই মোবাইলগুলো এখন ইয়াবা মাফিয়াদের বাণিজ্যিক হিসেবে বিক্রি করে দৈনিক ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা করে নিচ্ছে জেল সুপার শাহ আলম ও জেলার সওকত মিয়া মিলে। কিন্তু সপ্তাহে একবার যোগাযোগ করার কথা থাকলেও এখন টাকার বিনিময়ে প্রতিদিন ঘন্টার পর ঘন্টা যোগাযোগ করার ব্যবস্থা রয়েছে। এসব মোবাইলগুলো থেকে মাদক ব্যবসায়ী ও নানা অপরাধীরা ঘন্টার পর ঘন্টা যোগাযোগ করে কৌশলে ইয়াবা ও বিভিন্ন অপরাধ সংগঠিত করছে। নিজের ঘরের বউ কিংবা প্রেমিক প্রেমিকাদেে সাথে দীর্ঘ আলাপনসহ নানা সুবিধা ভোগ করা যায় ঘন্টার পর ঘন্টা মোবাইল ভাড়া করে। তবে ডিআইজি ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তা যদি কারাগারে পরিদর্শন করতে আসেন তখন সবকিছুই স্বাভাবিক হয়ে যায়।
বন্দীদের খাদ্যেও নানা অনিয়ম ! প্রতিদিন বন্দীদের জন্য যে পরিমাণ খাদ্য তালিকায় রয়েছে সেই পরিমাণ খাদ্যের কোন কিছু দেখা পাইনা কারাবন্দীরা। নিয়মিত পাঙ্গাস মাছ ও অকেজো পঁচাবাসি সবজি দিয়ে চালিয়ে নিচ্ছে জেলে কারাগার বন্দীদের খাবার । আর এসব থেকেও মাঝে মাঝে প্রতি মাসে আট থেকে দশটি বরাদ্দ তালিকায় থাকা ডায়েট কেটে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে জেল সুপার ও জেলারের বিরুদ্ধে। এসব খাতে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা নয়ছয় করে ভাগবাটোয়ারা করে এই দুই কর্মকর্তা। তবে বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে নানা সময় গড়ে বিপত্তি। ক্যান্টিন বাণিজ্যেও আরেক ভয়াবহ অনিয়ম ! প্রতিমাসে ক্যান্টিনের দায়িত্ব পরিবর্তন করে দেওয়া হয় ভিন্ন ভিন্ন কারারক্ষীদের। তবে কে আগে পাবে কে পরে পাবে সবকিছু সিদ্ধান্ত হয় জেল সুপার ও জেলারের মাধ্যমে। তবে এসব দায়িত্ব নিতে টাকার মাধ্যমে প্রতিযোগিতায় মরিয়া কারারক্ষীরা। এদিকে প্রতিটি পণ্যের মূল্য তালিকার চেয়ে দুইগুণ তিনগুণ বৃদ্ধিতে বিক্রি হয় নানা প্রয়োজনীয় পণ্য। ক্যান্টিনে রান্না করা এক কেজি গরুর মাংস ৩ থেকে, ৪ হাজার টাকা। মুরগির মাংসের দাম ১৫০০/২০০০ টাকা আলুর কেজি|