* ভাড়াটে ভবনে সাইনবোর্ড থাকলেও কার্যক্রম নেই * সন্ধ্যার পর শহরের ক্রাইম স্পটে কিশোর গ্যাং, ছিনতাইকারী ও মাতালদের উৎপাত
কক্সবাজার শহরের নির্দিষ্ট স্থান থেকে শহর পুলিশ ফাঁড়ির কার্যক্রম গুটিয়ে ফেলার খবরে ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে জেলফেরত বিভিন্ন সন্ত্রাসী বাহিনী। যার ফলে শহর ও শহরতলীবাসীর মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এমনকি গত ১০ দিন ধরে শহর ও শহরতলীর অলিগলিতে সন্ধ্যার পর কিশোর গ্যাং, ছিনতাইকারী, মাতালদের উৎপাত দেখা দিয়েছে। শুধু তাই নয়, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে শহরের সিকদার বাজার এলাকায় রাতে গোলাগুলি ও অস্ত্রের মহড়ার ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয়ভাবে বিষয়টি নজরে আসার পর গত কয়েকদিন ধরে সরেজমিন ঘুরে এই চিত্র ফুটে উঠেছে।
অন্যদিকে ভাড়াটে ভবনে কক্সবাজার শহর পুলিশ ফাঁড়ির কার্যক্রম না থাকলেও ওই ভবনে ফাঁড়ির সাইনবোর্ডটি ঝুলছে। গত সোমবার রাত সাড়ে ১০টায় সরেজমিন গেলে প্রতিবেদকের চোখে ধরা পড়ে। ওই ভবনটির মালিক নতুন করে রংসহ যাবতীয় কাজ সারতে দেখা গিয়েছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কক্সবাজার শহর ও শহরতলীর ক্রাইম স্পটে দাপিয়ে বেড়ানো অপরাধীদের লাগাম টানতে ২০২০ সালে কক্সবাজার শহরের দক্ষিণ রুমালিয়ারছড়ায় ‘ডালিয়া কলোনিস্থ ‘আব্দুল্লাহ ভবনে’ একটি পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন করা হয়। ওই ফাঁড়ি স্থাপনের পর অনেকটা অপরাধের মাত্রাও কমে আসে। পাশাপাশি বিশাল জনগণের মাঝে স্বস্তি ফিরে। হঠৎ গত ২০ জুলাই রাতে কক্সবাজার শহর পুলিশ ফাঁড়ির কার্যক্রম গুটিয়ে নেন। যার ফলে স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
সরজমিন ঘুরে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শহরের দক্ষিণ রুমালিয়ার ছড়ার টেকনাফ পাহাড়, চেয়ারম্যান ঘাটা, বাঁচা মিয়ার ঘোনা, আশুর ঘোনা, উপরের স্কুল/আবু বক্কর স্কুল, সমিতি বাজার, সিকদার বাজার, মাটিয়া তলি, জেলা কারাগারের পেছনের এলাকা, ঘয়মতলি, বড় বিল, বিজিবি ক্যাম্প আম গাছ তলা, গরুর হালদা, বাসটার্মিনাল, উত্তরণ-জেলগেট, মাঝের ঘাট ব্রিজ, খুরুশকুল নতুন ব্রিজ, সৈকতের ডায়বেটিক্স পয়েন্ট, সিগাল পয়েন্ট অপরাধ প্রবন এলাকা। ওই সব স্পটে চুরি, ছিনতাই, কিশোর গ্যাংদের উৎপাত চলে। কিন্তু কক্সবাজার শহর পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপনের পর অনেকটা অপরাধের মাত্রা কমিয়ে আসে।
পুলিশ ফাঁড়ির কার্যক্রম গুড়িয়ে নেয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শহরের বাঁচামিয়ার ঘোনা এলাকার নিয়ন্ত্রণ করে রহিম উল্লাহ, আবুল কালাম, ফারুক ও মেহেদী। আলুগুলো পাহাড় এলাকার নিয়ন্ত্রক রফিক, শফি আলম ও জিসান। সমিতি বাজার এলাকা দাপটের সঙ্গে নিয়ন্ত্রণে রাখেন মামুন। সিকদার বাজার নিয়ন্ত্রক- সাদ্দাম, তারেক মুন্না, মুবিন ও কালো বাবু। তাছাড়া টেকনাফ পাহাড় নিয়ন্ত্রক নুরুল আবছার, বুলেট, সুমন, ইমন, শুভ ও ফাহিম। এর মধ্যে ২০ মামলার আসামি নুরুল আবছার ও সাদ্দাম কারাগারে থাকলেও অন্যরা সবাই জেলফেরত হিসেবে প্রকাশ্যে।
স্থানীয় সিকদার বাজার এলাকার কয়েক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, অনেকটা প্রায় গত ৪ বছর ধরে শান্তিতে ছিলাম। গত ১০ দিন ধরে রাত দিন কিশোর গ্যাংদের উৎপাতে আছি। তাদের দাবি, গত ২৫ জুলাই সিকদার বাজারের মাটিয়াতলি এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে রাতে গোলাগুলি, দিনে দেশীয় অস্ত্রের মহড়া দিয়েছে। যার ফলে স্থানীয় ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ব্যবসায়ীরা আরো জানান, অনেকদিন ধরে এলাকায় যাদের বিচরণ ছিল না, তাদেরও দেখা যাচ্ছে। এমনকি তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অচেনা নতুন মুখ।
জেলা পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্র মতে, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সারা দেশের মতো কক্সবাজারে সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় নাশকতার ছক আঁকে বিএনপি-জামায়াতচক্র। তার ধারাবাহিকতায় কক্সবাজার শহর পুলিশ ফাঁড়িতেও হামলা, অগ্নিসংযোগ, অস্ত্র লুটের ছক এঁকেছিল আন্দোলনের আড়ালে থাকা লোকজন। নানাভাবে বিষয়টি জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আঁচ করতে পেরে মূল শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পুলিশ ফাঁড়িটি সরিয়ে নিয়েছে। যোগাযোগ করা হলে এই প্রসঙ্গে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. মিজানুর রহমান জানান, বর্তমান পরিবেশ পরিস্থিতি কারণে ওই ভবন থেকে শহর পুলিশ ফাঁড়ির কার্যক্রম গুটিয়ে নেয়া হয়েছে। এর ফাঁকে ফাঁড়ির জন্য নিজস্ব জমি খোঁজা হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, আতঙ্কের কারণ নেই। পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বরতরাই আগের মতো অপরাধপ্রবণ ওইসব এলাকা নজরদারিতে রেখেছে। নিশ্চয়ই জানমাল নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ সর্বদাই সজাগ রয়েছে