১২:১৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কোথায় গিয়ে ঘর বাঁচাবো, কোনো দিশা পাচ্ছি না

‘আমরা কোথায় গেলে একটু সাহায্য পাবো, কোথায় গেলে আমাদের ঘর বাঁচাতে পারবো কোনো দিশা পাচ্ছি না। সবখানে কুকুর-বিড়ালের মতো আমরা যাচ্ছি।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন পূবা রাণী দাস। পুরান ঢাকার বংশালের আগাসাদেক রোডের পাশে হরিজন সম্প্রদায়ের মিরনজিল্লা সিটি কলোনির ঘর হারানো ভুক্তভোগী তিনি।

শুক্রবার (১৪ জুন) বিকেলে রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের সামনে হরিজন সম্প্রদায়ের ১২০টি পরিবারকে সিটি করপোরেশনের উচ্ছেদ চেষ্টার প্রতিবাদে এক সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি। সমাবেশে বক্তব্য দিতে গিয়ে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন পূবা রাণী দাস।

তিনি বলেন, আমরা গত এক সপ্তাহ থেকে খুবই খারাপ অবস্থায় আছি। কীভাবে বলবো, কোনো ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। মিরনজিল্লা কলোনির প্রথম আমার ঘর উচ্ছেদ হয়। আমরা তিন-চার মাস আগে শুনেছিলাম এখানে কাঁচাবাজার হবে, সেজন্য ২০টা ঘর ভাঙা হবে। মেয়র সাহেব আমাদের পঞ্চায়েতের সঙ্গে বসে বলেছিলেন, ২০টার বেশি ঘর ভাঙা হবে না, আপনারা নিশ্চিন্ত থাকেন। আমরা এখান থেকে লোক পাঠাবো তারা মাপ নেবে। কিন্তু তারা মাপ নিতে আসার সময় সঙ্গে বুলডোজার নিয়ে এসেছে।

পূবা রাণী দাস আরও বলেন, তারা বলেছিলেন ২০টি ঘর ভাঙবে। কিন্তু তারা তিনটি ঘরকে একটি এবং চারটি ঘরকে দুটি ধরে গণনা করে। সে সময় তারা আবার বলেছে, আমাদের একটা ওয়াল ভাঙতেই হবে, আমাদের দেখাতে হবে। আমরা ওই সময় ঘর খালি করতেও পারিনি। আমাদের কিছু কিছু মা-বোন অজ্ঞান হয়ে পড়েন সেখানে। আমরা আমাদের মা-বোনকে সেখান থেকে বাঁচাবো, না কি ঘরের জিনিসপত্র বাঁচাবো।

কান্নাজড়িত তিনি বলেন, আমরা এটা ভাবতেও পারিনি যে, আমাদের সঙ্গে কুকুর-বিড়ালের মতো আচরণ করা হবে। আমরা সহ্য করতে না পেরে নারীরা মিলে বুলডোজারের সামনে গেলাম। হয় আমাদের এখানে মাটি দেন, না হয় মৃত্যু দেন। পরে সেদিন তারা পাঁচটি ঘর ভেঙে থামলো। পরেরদিন আবার আসে। বাধ্য হয়ে আমাদের নারী ও বাচ্চাদের বুলডোজারের সামনে শুইয়ে দিয়েছি। আমরা সাহায্যের জন্য কোথায় যাবো? আমরা দিশেহারা হয়ে পড়েছি।

ঘর হারানো এই নারী প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানিয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন কাউকে বাদ দিয়ে নয়, কাউকে পেছনে রেখে নয়। সবাইকে নিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ হবে। যদি এটাই হয়, কাউকে পুনর্বাসন না দিয়ে উচ্ছেদ হবে না। তাহলে আমাদের পুনর্বাসন না দিয়ে কেন উচ্ছেদ করা হলো? আজকে আমাদের ৪০টা ঘর ভাঙা হয়েছে। আমরা ৮৫টা সন্তান রাস্তায় আছি। আমাদের দুবেলা খাবার দিচ্ছে মন্দির কমিটি। আমাদের রাস্তার মধ্যে ভিখারিদের চেয়েও খারাপ অবস্থা। আমরা কোথায় যাবো? প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের বিনীত আবেদন, আপনি যদি রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের জন্য বরাদ্দ দিতে পারেন তাহলে আমাদের কেন নয়?

সমাবেশে অন্যান্য বক্তারা বলেন, মিরনজিল্লা কলোনিতে শত শত বছর ধরে হরিজন সম্প্রদায়ের লোকেরা বসবাস করে আসছেন। কাঁচাবাজার বানানোর নামে হঠাৎ তাদের উচ্ছেদের পেছনে সিটি করপোরেশনের অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে সেটা খুব ভালোভাবেই বোঝা যায়। আপাতত আদালত এক মাসের জন্য উচ্ছেদ স্থগিত করেছেন। কিন্তু এটা কোনো সমাধান নয়। হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষকে পুনর্বাসন না করে তাদের বসবাসের জায়গায় কোনো কাঁচাবাজার হতে দেওয়া যাবে না। আমরা সবাই মিলে এর প্রতিবাদ করবো।

ট্যাগ :
পাঠকপ্রিয়

আইন শৃঙ্খলা, দ্রব্যমুল্য, সংস্কার বিষয়ে সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ- ধর্ম উপদেষ্টা

কোথায় গিয়ে ঘর বাঁচাবো, কোনো দিশা পাচ্ছি না

প্রকাশিত সময় : ০২:২১:২২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ জুন ২০২৪

‘আমরা কোথায় গেলে একটু সাহায্য পাবো, কোথায় গেলে আমাদের ঘর বাঁচাতে পারবো কোনো দিশা পাচ্ছি না। সবখানে কুকুর-বিড়ালের মতো আমরা যাচ্ছি।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন পূবা রাণী দাস। পুরান ঢাকার বংশালের আগাসাদেক রোডের পাশে হরিজন সম্প্রদায়ের মিরনজিল্লা সিটি কলোনির ঘর হারানো ভুক্তভোগী তিনি।

শুক্রবার (১৪ জুন) বিকেলে রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের সামনে হরিজন সম্প্রদায়ের ১২০টি পরিবারকে সিটি করপোরেশনের উচ্ছেদ চেষ্টার প্রতিবাদে এক সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি। সমাবেশে বক্তব্য দিতে গিয়ে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন পূবা রাণী দাস।

তিনি বলেন, আমরা গত এক সপ্তাহ থেকে খুবই খারাপ অবস্থায় আছি। কীভাবে বলবো, কোনো ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। মিরনজিল্লা কলোনির প্রথম আমার ঘর উচ্ছেদ হয়। আমরা তিন-চার মাস আগে শুনেছিলাম এখানে কাঁচাবাজার হবে, সেজন্য ২০টা ঘর ভাঙা হবে। মেয়র সাহেব আমাদের পঞ্চায়েতের সঙ্গে বসে বলেছিলেন, ২০টার বেশি ঘর ভাঙা হবে না, আপনারা নিশ্চিন্ত থাকেন। আমরা এখান থেকে লোক পাঠাবো তারা মাপ নেবে। কিন্তু তারা মাপ নিতে আসার সময় সঙ্গে বুলডোজার নিয়ে এসেছে।

পূবা রাণী দাস আরও বলেন, তারা বলেছিলেন ২০টি ঘর ভাঙবে। কিন্তু তারা তিনটি ঘরকে একটি এবং চারটি ঘরকে দুটি ধরে গণনা করে। সে সময় তারা আবার বলেছে, আমাদের একটা ওয়াল ভাঙতেই হবে, আমাদের দেখাতে হবে। আমরা ওই সময় ঘর খালি করতেও পারিনি। আমাদের কিছু কিছু মা-বোন অজ্ঞান হয়ে পড়েন সেখানে। আমরা আমাদের মা-বোনকে সেখান থেকে বাঁচাবো, না কি ঘরের জিনিসপত্র বাঁচাবো।

কান্নাজড়িত তিনি বলেন, আমরা এটা ভাবতেও পারিনি যে, আমাদের সঙ্গে কুকুর-বিড়ালের মতো আচরণ করা হবে। আমরা সহ্য করতে না পেরে নারীরা মিলে বুলডোজারের সামনে গেলাম। হয় আমাদের এখানে মাটি দেন, না হয় মৃত্যু দেন। পরে সেদিন তারা পাঁচটি ঘর ভেঙে থামলো। পরেরদিন আবার আসে। বাধ্য হয়ে আমাদের নারী ও বাচ্চাদের বুলডোজারের সামনে শুইয়ে দিয়েছি। আমরা সাহায্যের জন্য কোথায় যাবো? আমরা দিশেহারা হয়ে পড়েছি।

ঘর হারানো এই নারী প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানিয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন কাউকে বাদ দিয়ে নয়, কাউকে পেছনে রেখে নয়। সবাইকে নিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ হবে। যদি এটাই হয়, কাউকে পুনর্বাসন না দিয়ে উচ্ছেদ হবে না। তাহলে আমাদের পুনর্বাসন না দিয়ে কেন উচ্ছেদ করা হলো? আজকে আমাদের ৪০টা ঘর ভাঙা হয়েছে। আমরা ৮৫টা সন্তান রাস্তায় আছি। আমাদের দুবেলা খাবার দিচ্ছে মন্দির কমিটি। আমাদের রাস্তার মধ্যে ভিখারিদের চেয়েও খারাপ অবস্থা। আমরা কোথায় যাবো? প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের বিনীত আবেদন, আপনি যদি রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের জন্য বরাদ্দ দিতে পারেন তাহলে আমাদের কেন নয়?

সমাবেশে অন্যান্য বক্তারা বলেন, মিরনজিল্লা কলোনিতে শত শত বছর ধরে হরিজন সম্প্রদায়ের লোকেরা বসবাস করে আসছেন। কাঁচাবাজার বানানোর নামে হঠাৎ তাদের উচ্ছেদের পেছনে সিটি করপোরেশনের অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে সেটা খুব ভালোভাবেই বোঝা যায়। আপাতত আদালত এক মাসের জন্য উচ্ছেদ স্থগিত করেছেন। কিন্তু এটা কোনো সমাধান নয়। হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষকে পুনর্বাসন না করে তাদের বসবাসের জায়গায় কোনো কাঁচাবাজার হতে দেওয়া যাবে না। আমরা সবাই মিলে এর প্রতিবাদ করবো।