সাবেক কাউন্সিলর আক্তার কামাল এক সময় বিএনপি রাজনীতিতে সংশ্লিষ্টতা থাকলেও গত ১৫ বছর বিএনপি রাজনীতি থেকে দূরে গিয়ে পদ-পদবী ছাড়াই আওয়ামী লীগের সাথে হাত মিলিয়ে একক প্রভাব বিস্তার করেছিল সমিতি পাড়া এলাকায়।
আওয়ামী লীগের লোক দাবি করে নৌকার পক্ষে হয়ে সরাসরি রাজনীতি এবং ভোটের মাঠেও নেমেছিলেন। তার বড় ছেলে ও আপন ভাই এবং ভাতিজাদেরকে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন ইউনিটের নেতা বানিয়ে একক ক্ষমতায় নিজ এলাকায় ত্রাস চালিয়েছে সাবেক কাউন্সিলর আক্তার কামাল। বিএনপির নেতা-কর্মীরা বলছেন, আক্তার কামাল আওয়ামী লীগের ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বিএনপি'র অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদেরকে চাপে রাখার চেষ্টা করতেন। বিএনপি নেতাকর্মীরা রাতে বাড়িতে ঘুমাতে পারতেন না। আক্তার কামাল পুলিশ নিয়ে তাদের বাড়িতে তল্লাশি চালাতেন। সর্বশেষ গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর এখন বিএনপি নেতা পরিচয় দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন তিনি।
কক্সবাজার পৌরসভার নিবার্চনে অংশগ্রহনের অভিযোগে বিএনপি থেকে আক্তার কামালকে বহিষ্কার করা হলেও সম্প্রতি কয়েকজন বিএনপি নেতার হাত ধরে স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাউদ্দিন আহমেদের সাথে স্বাক্ষাত করেন সাবেক এই কাউন্সিলর। এ ঘটনায় বিএনপি ও বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা মিশ্র প্রতিক্রিয়াও জানিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে পোস্ট করে অনেক নেতা তাদের সুবিধাবাদী হিসেবে উল্লেখ করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বিএনপির দুর্দিনে দল থেকে দূরে গিয়ে গা-বাঁচিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষে নিবার্চনের মাঠে কাজ করেছে। আওয়ামী লীগের পক্ষে হয়ে উল্টো বিএনপি নেতাকর্মীদের মামলার দেওয়ার দিতে সহযোগিতা করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আক্তার কামালের আপন ছোট আব্দুল মান্নান স্বেচ্ছাসেবক লীগের ১নং ওয়ার্ডের আহবায়ক কমিটির আহবায়ক।
তার বড় ছেলে রবিউল ইসলাম মানিক স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহবায়ক কমিটির যুগ্ম আহবায়ক। তার আরেক আপন ভাই কক্সবাজার জেলা যুবলীগের নেতা এবং তার আপন ভাতিজা মোস্তাক আহমদ কক্সবাজার ১নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি। তার আরেক আপন ভাতিজা আনিসুর রহমান ১নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। জুলাই-আগস্টে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমানোর জন্য অস্ত্র ও গোলাবারুদ যোগান দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে আক্তার কামালের বিরুদ্ধে। তার ওয়ার্ডে যারা আন্দোলনের অংশগ্রহণ করেছে তাদেরকে নানান ভাবে হুমকি প্রদান করেছে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা। স্থানীয়রা জানান, আকতার কামাল দেশের অন্যতম ইয়াবা কারবারি ও মাদকব্যাবসায়ীদের শেল্টারদাতা। তিনি আওয়ামী লীগের আমলে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অর্থের বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের ভোটার করাতেন। এছাড়া তিনি আদালতে মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করে সরকারি খাস জমি দখল করে বিক্রি করতেন। তার কাছে অনিয়মই যেন নিয়ম ছিল।
কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে আকতার কামাল ক্ষমতার অপব্যবহার করে হয়ে উঠেছেন অপরাধীদের গডফাদার। মাদক কারবারিদের কাছ থেকে মাসিক মাসোহারা আদায়।
সূত্র জানায়, পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডে দ্বিতীয় বার ছেলে, ভাই-ভাবি ও ভাইপোকে দিয়ে ইয়াবা কারবার করারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। নাজিরার টেক- সমিতিপাড়া ও কুতুবদিয়ার একাধিক মাদক ব্যবসায়ীই আকতার কামালের আশীর্বাদপুষ্ট বলেও জানায় এই সূত্র। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সমিতি পাড়ার এক যুবক জানান, জেলার শীর্ষ ইয়াবা ও মানব পাচারকারী রোহিঙ্গা রশিদ মাঝি সম্পর্কে আকতার কামালের বেয়াই। তিনি এক সময় ১০ হাজার ইয়াবাসহ সমিতিপাড়া থেকে র্যাবের হাতে
গ্রেপ্তার হন।
সেই চিহ্নিত রোহিঙ্গা রশিদ মাঝি এখন কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার। রোহিঙ্গা রশিদ মাঝিই মূলত তার ইয়াবা সিন্ডিকেটের প্রধান হিসেবে রয়েছেন।
তিনি আরো জানান, শুধু রশিদ মাঝিই নন কুতুবদিয়া পাড়ায় আক্তার কামালের সহায়তায় ১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে এনআইডি নিয়েছেন তার ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে পরিচিত রোহিঙ্গা জিয়াউর রহমান, রোহিঙ্গা শফি আলম, মো. আলম, নুর আলম, ইসমাঈল,খুরশিদা, নুর বেগম, লায়লা বেগম, শমজিদা, মো. রফিক, ইউনুছ, মো. আব্দুর রহমান, মো. রুবায়েত গণী, জাহাঙ্গীর, আবু তাহের, মো. শফিক, মো. ইউসুফ, সিরাজুল মোস্তাফা, দিল মোহম্মদ, নুরুল আলম, মীর কাশেম, সানজিদা, নূর কায়দা বেগম, আনোয়ারা বেগম, নুর বাহার, তৈয়াবা বেগম, সাজেদা বেগম। তাদের প্রত্যেকেরই বাবা-মা রোহিঙ্গা ক্যাম্প অথবা মিয়ানমারে রয়েছে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে সাবেক কাউন্সিলর আক্তার কামালের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মিটিংয়ে আছে বলে ফোন কেটে দেন। পরবর্তীতে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয় কথা বলতে রাজি হয়নি।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শামীম আরা স্বপ্না বলেন, আওয়ামীলীগ সরকারের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় আক্তার কামালকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে অনেকে আগেই। তার বহিষ্কার
আদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত দলীয় পরিচয় ব্যাবহার করার কোন সুযোগ নেই।