কক্সবাজার সদরের খুরুশকুলে বিচারের নামে সংখ্যালঘু এক দিনমজুরের টাকা আত্নসাতের অভিযোগ উঠেছে বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত বিএনপি নেতা হলো শাহ আলম ছিদ্দীকি। তিনি খুরুশকুল টাইম বাজারের সভাপতি ও খুরুশকুল ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এবং খুরুশকুলে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত চেয়ারম্যান শাহাজাহান ছিদ্দীকির ছোটভাই বলে জানা গেছে। ঐ সংখ্যালঘু দিনমজুরের নাম সুরেন্দ্র দে এবং সে উত্তর হিন্দু পাড়া এলাকার মৃত ওমেশ চন্দ্র দে এর ছেলে বলে জানা যায়। এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (ফেসবুকে) একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।
স্থানীয়ভাবে জানা যায়, খুরুশকুলের উত্তর হিন্দু পাড়া এলাকার দিনমজুর সুরেন্দ্র দে ও তার ভাই সুধন দে'র মধ্যে বসত ভিটার ১ শতক জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। এই বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য বিগত তিন বছর পূর্নে খুরুশকুল টাইম বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও বিএনপি নেতা শাহ আলম ছিদ্দীকির নেতৃত্বে স্থানীয় গণ্যমান্য লোকজনের উপস্থিতিতে একটি বৈঠক হয়। উক্ত বৈঠকের সিদ্ধান্ত মতে, বিরোধী জমি রেজিষ্ট্রি করে দেওয়ার শর্তে ১ লক্ষ টাকা বাজার কমিটির সহ- সভাপতির হাতে জমা দেয় ভুক্তভোগী সুরেন্দ্র দে । পরে সহ-সভাপতির কাছ থেকে উক্ত টাকা নিয়ে আত্নসাত করে ফেলে সভাপতি শাহ আলম ছিদ্দীকি। টাকা জমা দেয়ার পর তিন বছর অতিবাহিত হলেও জমিটি রেজিষ্ট্রিও পাইনি এবং টাকাও ফেরত পাইনি ঐ দিনমজুর। দীর্ঘদিন ধরে বিষয়টি সমাধান না হওয়াই ঐ দিনমজুরের ঘরে শুরু হয়েছে পিতা-পুত্রের দন্ধ।এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় বিষয়টি স্থানীয়ভাবে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। ঐ দিনমজুর সুরেন্দ্র দে ও তার পরিবার এখন নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছে বলে জানায় স্থানীয়রা।
এবিষয়ে খুরুশকুল টাইম বাজার দোকান মালিক সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি মোঃ আইয়ুব সওদাগর বলেন,"সুরেন্দ্র দে'র জমি সংক্রান্ত বৈঠকে আমিও উপস্থিত ছিলাম। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সভাপতি শাহ আলমের নির্দেশে সুরেন্দ্র দে আমাকে এক লক্ষ টাকা জমা দিয়েছিল। পরবর্তীতে সভাপতি সাহেব আমার কাছ থেকে সেই টাকা নিয়ে গেছেন"।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রিপন দে জানান-তিনি নিজে সুরেন্দ্র দে'র সাথে মিলে এক লক্ষ টাকা বাজার কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি আইয়ুব সওদাগরের হাতে জমা দিয়েছিলেন। পরে জানা যায়, সভাপতি শাহ আলম ছিদ্দীকি সেই টাকা নিয়ে গেছেন। টাকা নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি জানার পর তারা অনেকবার শাহ আলমের বাড়ি গিয়েছিলেন। শাহ আলম তাদেরকে টাকা ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন কিন্তু এখনও পর্যন্ত টাকা ফেরত দেননি এবং জমির রেজিষ্ট্রিও করে দেননি।
বৈঠকে উপস্থিত উত্তর হিন্দু পাড়া এলাকার সমাজ সেবক বাবু পরিতোষ দত্ত বলেন-বৈঠকে আমিসহ আরো অনেকে ছিল। বিরোধীয় জমি রেজিষ্ট্রি করে দেয়ার শর্তে বাজার কমিটিতে ১ লক্ষ টাকা দেয়া কথা ছিল। সুরেন্দ্র দে আইয়ুব সওদাগরের হাতে টাকা দেয়ার পর আমাকে বলেছিল।
টাইম বাজার কমিটির মেম্বার মোঃ ইদ্রিস বলেন-আমরা কমিটির সবাই বৈঠকে ছিলাম। জমি রেজিষ্ট্রি করে দেয়ার শর্তে ১ লক্ষ টাকা দেয়ার কথা ছিল। কথা মতে সুরেন্দ্র দে টাকা জমা করেছিল কিন্তু ঐ টাকা সভাপতি নিয়ে গেছে। সে এখনো জমিও পায়নি, টাকাও পায়নি।
বিচারের নামে টাকা আত্নসাতের বিষয়ে দিনমজুর সুরেন্দ্র দে জানান-তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিচারের টাকা ফেরত চেয়েও পায়নি। এবিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (ফেসবুকে) একটি ভিডিও ভাইরাল হলে সাক্ষী রিপনের মাধ্যমে তার সাথে যোগাযোগ করেন শাহ আলম ছিদ্দীকি। টাকা ফেরত দেয়ার কথা সাক্ষী রিপনের মাধ্যমে তাকে বাসায় ডেকে নিয়ে যায় এবং শাহ আলম ছিদ্দীকি তাকে হাত-পা ভেঙ্গে দেয়ার ভয় দেখিয়ে জিম্মি করে আরেকটি ভিডিও ধারণ করেন। পরবর্তীতে ঐ ভিডিও একটি অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। ভিডিওতে বলা কথা গুলো শাহ আলম ছিদ্দীকির শিখিয়ে দেয়া কথা বলে দাবি করেন ঐ দিনমজুর। সে এখনো টাকা ফেরত পায়নি। হয় জমি রেজিষ্ট্রি না হয় টাকা ফেরত চান ভুক্তভোগী সুরেন্দ্র দে।
দিনমজুর
এ বিষয়ে শাহ আলম ছিদ্দীকি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন-আমি কোন টাকা আত্নসাত করিনি। কেউ আমাকে টাকা দেয়নি। ঐ দিনমজুর সুরেন্দ্র দে বিরোধীয় জমি দখলে আছে বলে দাবি করেন ঐ বিএনপি নেতা। তিনি আরো বলেন-আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হওয়ার কারণে তাঁর বিরুদ্ধে একটি কুচক্রী মহল এই ধরনের মিথ্যা অভিযোগ তুলেছে। তিনি চ্যালেঞ্জ করেছেন যে, যদি কেউ তার বিরুদ্ধে আনা এই অভিযোগ প্রমাণ করতে পারে, তাহলে তিনি টাকা ফেরত দিতে প্রস্তুত।
বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে বিচারের নামে টাকা আত্নসাত ও গত ইউপি নির্বাচনে বিএনপি নেতা হয়েও শাহ আলম ছিদ্দীকি আওয়ামী লীগের তথা নৌকা প্রতীকের পক্ষে প্রচারণার বিষয়ে জানার জন্য কক্সবাজার সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি (অবঃ সুঃ মেজর) আব্দুল মাবুদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন-বিষয়টি আমি আগে জানতাম না, আজকে শুনেছি। বিষয়টি আমি সমাধান করার চেষ্টা করব, যদি আমি না পারি তাহলে আমাদের নেতা সাবেক এমপি লুৎফর রহমান কাজল ভাইকে অবগত করব।