১২:৫৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গাজায় মায়ের কবরের পাশে ছেলের আর্তনাদ

প্রতিদিনের উপবাস শেষে ধর্মীয় রীতি এবং আনন্দঘন পরিবেশে পরিবারের সবার সঙ্গে ইফতার করাটা মূলত রমজান মাসের সাধারণত চিত্র। তবে গাজাবাসীদর জন্য এবারের রমজানের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। পারিবারিক আমেজে ইফতারের স্মৃমির বদলে তাদের ভাগ্যে এবার হারানো স্বজন এবং তাদের স্মৃতির ভারই যেন জোটেছে। রক্তপাতের মধ্য দিয়েই সোমবার গাজায় শুরু হয়েছে পবিত্র রমজান মাস। তবে যুদ্ধে মা-বাবা, ভাই এবং পরিবার হারানোর গভীর শোক কোনভাবেই কাটিয়ে উঠতে পারছে না অধিকাংশ গাজাবাসী। তাদেরই একজন ইব্রাহিম হাসসুনা। রমজানের প্রথম দিনে মায়ের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে তার পাঠানো ভয়েসমেল শোনে শোকে আরও কাতর হয়ে পড়েছিলেন তিনি। তাকে নিয়ে মঙ্গলবার (১২ মার্চ) ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, রমজানের প্রথম দিনে গাজার একটি কবরস্থানে প্রিয়জনদের কবর দেখতে এসেছিলেন ইব্রাহিম হাসসুনা। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনরি হামলায় তার পরিবারের সবাই নিহত হন। মারা যাওয়ার আগে তাকে একটি ভয়েসমেইল পাঠিয়েছিলেন তার মা। মেইলটিতে সন্তানের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করতে দেখা গেছে তাকে। সেই বার্তাটিই বারবার শুনেছিলেন হাসসুনা।
হাসসুনার কাছে আসা তার মায়ের ভয়েসমেলটি একটি সাধারণ বার্তা্ ছিল। মেইলটিতে তিনি তার সন্তানের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সে কোথায় আছে জানতে চেয়েছিলেন: ‘ইব্রাহিম আমার ভালবাসা, আমি তোমার খোঁজ জানতে চাই। আমি গতকাল থেকে তোমাকে কল করছি। কিন্তু তুমি কোনও উত্তর দাওনি। কি সমস্যা?’
হাসসুনার ফোনের একটি ছবিতে তার মা ও তাকে হাসতে দেখা যায়। তাদের মাথা একসঙ্গে জড়িয়ে রাখা ছিল। ছবিটিতে হাসসুনার মাকে একটি নীল পোশাক এবং বেইজ হেড স্কার্ফ পরিহিত করতে দেখা যায়।
ফোনে তার মায়ের কন্ঠস্বর শোনাটা হাসসুনার জন্য একটি অম্ল-মিষ্টি অভিজ্ঞতা ছিল। তার মা কীভাবে তাকে নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ক্রমাগত বিরক্ত করতেন সেসব স্মৃতির রোমন্থন করছিলেন হাসসুনা। মায়ের কবরের কাছে নতজানু হয়ে কান্না করতে করতে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি যদি এক, দুই, বা তিন ঘণ্টার জন্যও কোথাও চলে যাই তবেই সে ফোন করা শুরু করবে। যদিও আমার বয়স ৩০ বছর।’তার মা উম করম নামে পরিচিত ছিলেন। যার অর্থ কারামের মা। কারাম হাসসুনার বড় ভাই।
হাসসুনা আরও বলছিলেন, ‘কেউ এখন আর আমার কথা জিজ্ঞেস করবে না। কেউ আমাকে আর সান্ত্বনা দেবে না। কেউ আমার খোঁজ নেবে না। আমার মা আমাকে নিয়ে যেভাবে উদ্বিগ্ন ছিলেন সেভাবে আর কেউ ইব্রাহিমকে নিয়ে চিন্তা করবে না।’
কবরস্থানে দাঁড়িয়ে হাসসুনা দু হাত তুলে ধরে প্রার্থনা করেছিলেন। এসময় তার হাতে তসবীহ ছিল যেটির পুতিগুলো ছিল ফিলিস্তিনি পতাকার সদৃশ কালো, সাদা, লাল ও সবুজ রঙের।
হাসসুনা বলেছিলেন, ‘এর পাশের কবরটা আমার বাবার। আমার পেছনের কবরটা আমার ভাই মোহাম্মদের। আর আমাদের পাশেই এই যে, এই কবরটা কারাম ও তার পরিবারের।’

ট্যাগ :
পাঠকপ্রিয়

আলুর দাম আরও বেড়েছে, স্বস্তি নেই ডিম-সবজিতেও

গাজায় মায়ের কবরের পাশে ছেলের আর্তনাদ

প্রকাশিত সময় : ০৬:১৫:৫৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৩ মার্চ ২০২৪

প্রতিদিনের উপবাস শেষে ধর্মীয় রীতি এবং আনন্দঘন পরিবেশে পরিবারের সবার সঙ্গে ইফতার করাটা মূলত রমজান মাসের সাধারণত চিত্র। তবে গাজাবাসীদর জন্য এবারের রমজানের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। পারিবারিক আমেজে ইফতারের স্মৃমির বদলে তাদের ভাগ্যে এবার হারানো স্বজন এবং তাদের স্মৃতির ভারই যেন জোটেছে। রক্তপাতের মধ্য দিয়েই সোমবার গাজায় শুরু হয়েছে পবিত্র রমজান মাস। তবে যুদ্ধে মা-বাবা, ভাই এবং পরিবার হারানোর গভীর শোক কোনভাবেই কাটিয়ে উঠতে পারছে না অধিকাংশ গাজাবাসী। তাদেরই একজন ইব্রাহিম হাসসুনা। রমজানের প্রথম দিনে মায়ের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে তার পাঠানো ভয়েসমেল শোনে শোকে আরও কাতর হয়ে পড়েছিলেন তিনি। তাকে নিয়ে মঙ্গলবার (১২ মার্চ) ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, রমজানের প্রথম দিনে গাজার একটি কবরস্থানে প্রিয়জনদের কবর দেখতে এসেছিলেন ইব্রাহিম হাসসুনা। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনরি হামলায় তার পরিবারের সবাই নিহত হন। মারা যাওয়ার আগে তাকে একটি ভয়েসমেইল পাঠিয়েছিলেন তার মা। মেইলটিতে সন্তানের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করতে দেখা গেছে তাকে। সেই বার্তাটিই বারবার শুনেছিলেন হাসসুনা।
হাসসুনার কাছে আসা তার মায়ের ভয়েসমেলটি একটি সাধারণ বার্তা্ ছিল। মেইলটিতে তিনি তার সন্তানের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সে কোথায় আছে জানতে চেয়েছিলেন: ‘ইব্রাহিম আমার ভালবাসা, আমি তোমার খোঁজ জানতে চাই। আমি গতকাল থেকে তোমাকে কল করছি। কিন্তু তুমি কোনও উত্তর দাওনি। কি সমস্যা?’
হাসসুনার ফোনের একটি ছবিতে তার মা ও তাকে হাসতে দেখা যায়। তাদের মাথা একসঙ্গে জড়িয়ে রাখা ছিল। ছবিটিতে হাসসুনার মাকে একটি নীল পোশাক এবং বেইজ হেড স্কার্ফ পরিহিত করতে দেখা যায়।
ফোনে তার মায়ের কন্ঠস্বর শোনাটা হাসসুনার জন্য একটি অম্ল-মিষ্টি অভিজ্ঞতা ছিল। তার মা কীভাবে তাকে নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ক্রমাগত বিরক্ত করতেন সেসব স্মৃতির রোমন্থন করছিলেন হাসসুনা। মায়ের কবরের কাছে নতজানু হয়ে কান্না করতে করতে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি যদি এক, দুই, বা তিন ঘণ্টার জন্যও কোথাও চলে যাই তবেই সে ফোন করা শুরু করবে। যদিও আমার বয়স ৩০ বছর।’তার মা উম করম নামে পরিচিত ছিলেন। যার অর্থ কারামের মা। কারাম হাসসুনার বড় ভাই।
হাসসুনা আরও বলছিলেন, ‘কেউ এখন আর আমার কথা জিজ্ঞেস করবে না। কেউ আমাকে আর সান্ত্বনা দেবে না। কেউ আমার খোঁজ নেবে না। আমার মা আমাকে নিয়ে যেভাবে উদ্বিগ্ন ছিলেন সেভাবে আর কেউ ইব্রাহিমকে নিয়ে চিন্তা করবে না।’
কবরস্থানে দাঁড়িয়ে হাসসুনা দু হাত তুলে ধরে প্রার্থনা করেছিলেন। এসময় তার হাতে তসবীহ ছিল যেটির পুতিগুলো ছিল ফিলিস্তিনি পতাকার সদৃশ কালো, সাদা, লাল ও সবুজ রঙের।
হাসসুনা বলেছিলেন, ‘এর পাশের কবরটা আমার বাবার। আমার পেছনের কবরটা আমার ভাই মোহাম্মদের। আর আমাদের পাশেই এই যে, এই কবরটা কারাম ও তার পরিবারের।’