১০:২১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
৬ দিন নৌযান বন্ধ খাদ্য সংকট তীব্র

গুলি আতঙ্কে যাওয়া যাচ্ছে না সেন্টমার্টিন

মিয়ানমার থেকে একের পর এক গুলিবর্ষণের ঘটনায় টানা ছয় দিন টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে সার্ভিস ট্রলারসহ নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে প্রবাল দ্বীপে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার আবারও একটি স্পিডবোট লক্ষ্য করে ১০ থেকে ১২ রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়। স্পিডবোটের যাত্রীরা প্রাণে রক্ষা পেলেও দ্বীপজুড়ে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম জানান, স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা স্পিডবোটে সেন্টমার্টিনে যাচ্ছিলেন। ওই সময় গুলির ঘটনা ঘটে। তবে কেউ হতাহত হননি।

টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন নৌপথে চলাচলকারী স্পিডবোট মালিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ আলম জানান, টেকনাফ থেকে চিকিৎসা শেষে স্পিডবোটে সেন্টমার্টিনে ফিরছিলেন পাঁচজন। শাহপরীর দ্বীপের বদরমোকামের গোলগরা নামক এলাকায় স্পিডবোটটি পৌঁছালে মিয়ানমারের একটি ডিঙি নৌকা থেকে ১০-১২ রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়। এতে স্পিডবোটের যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তবে শেষ পর্যন্ত তারা নিরাপদে সেন্টমার্টিন পৌঁছেছেন।

টেকনাফের ইউএনও মোহাম্মদ আদনান চৌধুরী বলেছেন, মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী, নাকি বিদ্রোহীরা গুলি চালাচ্ছে– তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সীমান্তের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা বলেছি। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বন্ধে কাজ চলছে। দ্বীপবাসীর আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

গত ৫ জুন সেন্টমার্টিন থেকে ফেরার সময় মিয়ানমার থেকে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের বহনকারী নৌযানে প্রথম গুলিবর্ষণ করা হয়। এর পর বন্ধ হয়ে যায় এ পথের নৌযান চলাচল। এর মধ্যে ৮ জুন পণ্যবাহী ট্রলার চলাচলের চেষ্টা করলে তাতেও গুলি করা হয়। তবে এদিনও কেউ হতাহত হয়নি।

জানা যায়, টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে নাফ নদ ও বঙ্গোপসাগরের মোহনার নাম বদরমোকাম। এর আধাকিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে মিয়ানমারের নাইক্ষ্যংদিয়া। এলাকাটির দখল নিয়ে অবস্থান করছে আরাকান আর্মির সদস্যরা। টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে সার্ভিস ট্রলার বা স্পিডবোট দেখামাত্রই মিয়ানমার সীমান্ত থেকে আরাকান আর্মির সদস্যরা গুলি করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সূত্রের দাবি, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আগের দু’দফা গুলির ঘটনায় কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এরই মধ্যে নতুন করে গুলিবর্ষণের ঘটনায় সেন্টমার্টিন দ্বীপজুড়ে চরম আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় প্রবাল দ্বীপের বাসিন্দারা খাদ্য সংকটে পড়েছেন। দ্বীপে বসবাসরত ১০ হাজার বাসিন্দার মধ্যে সবচেয়ে বিপদে পড়েছেন যারা দিন এনে দিন খান।

খাদ্য ও পণ্যবাহী বোট চলাচল করতে না পারায় দোকানগুলোর মজুত পণ্য শেষ হতে চলেছে। অবশ্য এ সুযোগে কতিপয় ব্যবসায়ী পণ্যের দাম দ্বিগুণ নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। চলমান সংকট দ্রুত সমাধান না হলে দ্বীপবাসী খাদ্য, চিকিৎসাসহ বিভিন্ন সমস্যায় পড়বেন।

সেন্টমার্টিনের বাসিন্দা সাদ্দাম হোসেন বলেন, ছয় দিন ধরে দ্বীপে খাদ্য সংকট। নেই প্রয়োজনীয় ওষুধ। এ অবস্থা চলতে থাকলে বাসিন্দাদের না খেয়ে মরতে হবে। টেকনাফ থেকে নাফ নদ হয়ে সেন্টমার্টিনে আসার বিকল্প কোনো পথ নেই। সরকার দ্রুত বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ না নিলে সামনে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে।

স্ত্রী-দুই সন্তানসহ চার সদস্যের সংসার আবদুল আজিজের। পরিবেশ অধিদপ্তরের সেন্টমার্টিন কার্যালয়ে খণ্ডকালীন চাকরি করে চলেন তিনি। গতকাল দুপুরে বাজারে ডিম, মরিচ ও চাল কিনতে গিয়ে খালি হাতে ফেরেন। পরে এক স্বজনের কাছ থেকে চাল ও কিছু সবজি এনে রান্না করে খেয়েছেন। আবদুল আজিজ বলেন, বুধবার সন্তানদের কী খেতে দেব, বুঝতে পারছি না।

সেন্টমার্টিনে নানা পণ্যের প্রায় ২০০ দোকান রয়েছে। সেন্টমার্টিন ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবদুর রহমান বলেন, নৌপথ টানা বন্ধ থাকায় দোকানগুলোর নিত্যপণ্য প্রায় শেষ। প্রতিদিন শত শত মানুষ দোকানে ভিড় করলেও চাহিদামতো পণ্য দিতে পারছি না।

সেন্টমার্টিনের ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানান, নৌযান বন্ধের কারণে দোকানিরা পণ্য আনতে পারেননি। এ জন্য খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।

ট্যাগ :
পাঠকপ্রিয়

আইন শৃঙ্খলা, দ্রব্যমুল্য, সংস্কার বিষয়ে সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ- ধর্ম উপদেষ্টা

৬ দিন নৌযান বন্ধ খাদ্য সংকট তীব্র

গুলি আতঙ্কে যাওয়া যাচ্ছে না সেন্টমার্টিন

প্রকাশিত সময় : ১২:৪১:৫০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ জুন ২০২৪

মিয়ানমার থেকে একের পর এক গুলিবর্ষণের ঘটনায় টানা ছয় দিন টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে সার্ভিস ট্রলারসহ নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে প্রবাল দ্বীপে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার আবারও একটি স্পিডবোট লক্ষ্য করে ১০ থেকে ১২ রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়। স্পিডবোটের যাত্রীরা প্রাণে রক্ষা পেলেও দ্বীপজুড়ে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম জানান, স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা স্পিডবোটে সেন্টমার্টিনে যাচ্ছিলেন। ওই সময় গুলির ঘটনা ঘটে। তবে কেউ হতাহত হননি।

টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন নৌপথে চলাচলকারী স্পিডবোট মালিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ আলম জানান, টেকনাফ থেকে চিকিৎসা শেষে স্পিডবোটে সেন্টমার্টিনে ফিরছিলেন পাঁচজন। শাহপরীর দ্বীপের বদরমোকামের গোলগরা নামক এলাকায় স্পিডবোটটি পৌঁছালে মিয়ানমারের একটি ডিঙি নৌকা থেকে ১০-১২ রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়। এতে স্পিডবোটের যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তবে শেষ পর্যন্ত তারা নিরাপদে সেন্টমার্টিন পৌঁছেছেন।

টেকনাফের ইউএনও মোহাম্মদ আদনান চৌধুরী বলেছেন, মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী, নাকি বিদ্রোহীরা গুলি চালাচ্ছে– তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সীমান্তের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা বলেছি। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বন্ধে কাজ চলছে। দ্বীপবাসীর আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

গত ৫ জুন সেন্টমার্টিন থেকে ফেরার সময় মিয়ানমার থেকে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের বহনকারী নৌযানে প্রথম গুলিবর্ষণ করা হয়। এর পর বন্ধ হয়ে যায় এ পথের নৌযান চলাচল। এর মধ্যে ৮ জুন পণ্যবাহী ট্রলার চলাচলের চেষ্টা করলে তাতেও গুলি করা হয়। তবে এদিনও কেউ হতাহত হয়নি।

জানা যায়, টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে নাফ নদ ও বঙ্গোপসাগরের মোহনার নাম বদরমোকাম। এর আধাকিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে মিয়ানমারের নাইক্ষ্যংদিয়া। এলাকাটির দখল নিয়ে অবস্থান করছে আরাকান আর্মির সদস্যরা। টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে সার্ভিস ট্রলার বা স্পিডবোট দেখামাত্রই মিয়ানমার সীমান্ত থেকে আরাকান আর্মির সদস্যরা গুলি করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সূত্রের দাবি, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আগের দু’দফা গুলির ঘটনায় কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এরই মধ্যে নতুন করে গুলিবর্ষণের ঘটনায় সেন্টমার্টিন দ্বীপজুড়ে চরম আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় প্রবাল দ্বীপের বাসিন্দারা খাদ্য সংকটে পড়েছেন। দ্বীপে বসবাসরত ১০ হাজার বাসিন্দার মধ্যে সবচেয়ে বিপদে পড়েছেন যারা দিন এনে দিন খান।

খাদ্য ও পণ্যবাহী বোট চলাচল করতে না পারায় দোকানগুলোর মজুত পণ্য শেষ হতে চলেছে। অবশ্য এ সুযোগে কতিপয় ব্যবসায়ী পণ্যের দাম দ্বিগুণ নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। চলমান সংকট দ্রুত সমাধান না হলে দ্বীপবাসী খাদ্য, চিকিৎসাসহ বিভিন্ন সমস্যায় পড়বেন।

সেন্টমার্টিনের বাসিন্দা সাদ্দাম হোসেন বলেন, ছয় দিন ধরে দ্বীপে খাদ্য সংকট। নেই প্রয়োজনীয় ওষুধ। এ অবস্থা চলতে থাকলে বাসিন্দাদের না খেয়ে মরতে হবে। টেকনাফ থেকে নাফ নদ হয়ে সেন্টমার্টিনে আসার বিকল্প কোনো পথ নেই। সরকার দ্রুত বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ না নিলে সামনে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে।

স্ত্রী-দুই সন্তানসহ চার সদস্যের সংসার আবদুল আজিজের। পরিবেশ অধিদপ্তরের সেন্টমার্টিন কার্যালয়ে খণ্ডকালীন চাকরি করে চলেন তিনি। গতকাল দুপুরে বাজারে ডিম, মরিচ ও চাল কিনতে গিয়ে খালি হাতে ফেরেন। পরে এক স্বজনের কাছ থেকে চাল ও কিছু সবজি এনে রান্না করে খেয়েছেন। আবদুল আজিজ বলেন, বুধবার সন্তানদের কী খেতে দেব, বুঝতে পারছি না।

সেন্টমার্টিনে নানা পণ্যের প্রায় ২০০ দোকান রয়েছে। সেন্টমার্টিন ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবদুর রহমান বলেন, নৌপথ টানা বন্ধ থাকায় দোকানগুলোর নিত্যপণ্য প্রায় শেষ। প্রতিদিন শত শত মানুষ দোকানে ভিড় করলেও চাহিদামতো পণ্য দিতে পারছি না।

সেন্টমার্টিনের ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানান, নৌযান বন্ধের কারণে দোকানিরা পণ্য আনতে পারেননি। এ জন্য খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।