কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে কারফিউ এবং ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকায় পণ্য খালাস নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক না হওয়ায় অনেক আমদানিকারক বন্দর থেকে পণ্য খালাসে আগ্রহ দেখাচ্ছে না।
ফলে কনটেইনারের জট তৈরি হওয়ায় জাহাজ ছাড়তে বিলম্ব হচ্ছে। একইভাবে অফডকগুলোতেও আমদানি পণ্য বোঝাই কনটেইনারের সংখ্যা বেড়েছে। শুক্রবার বিকেলেও বন্দরে রয়েছে ৪১ হাজার কনটেইনার।
ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় কয়েকদিনে চট্টগ্রাম বন্দরের ভেতরে আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনারের জটলা বেড়ে যায়। স্বাভাবিকভাবে খালাস প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দর অভ্যন্তরে প্রায় ৪১ হাজার কনটেইনার জমে যায়। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়ার পর পণ্য খালাসও শুরু হয়। পণ্য খালাসের চাপের কারণে বন্দরের ভেতরে পণ্য ও কনটেইনারবাহী যানবাহনের জট তৈরি হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সারা দেশে একপ্রকার অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেয় সরকার। দেশের প্রত্যেক বন্দর এবং কাস্টমসের সেবা ডিজিটাল এবং ইন্টারনেটনির্ভর। ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় বন্ধ হয়ে যায় শুল্কায়নসহ পণ্য খালাস প্রক্রিয়া। প্রায় চারদিন বন্ধ থাকার পর গত মঙ্গলবার থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় ম্যানুয়ালি শুল্কায়ন শুরু করে কাস্টমস।
বুধবার রাত থেকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু হওয়ার পর স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে বন্দরের আমদানি—রপ্তানি কার্যক্রম। পণ্য খালাস ও জাহাজীকরণ পুরোপুরি সচল হলেও জটিলতা রয়ে গেছে।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ জাগো নিউজকে বলেন, গত সপ্তাহের প্রথম কয়েকদিন থেকে এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। কয়েকদিন ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজের অবস্থান সময় বেড়ে যায়। কারণ বিপদজনক কার্গোসহ কিছু পণ্য পরিবহনের যাবতীয় অনুমোদন প্রক্রিয়া হয় অনলাইনে।
তিনি বলেন, গত দুইদিন ধরে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে বন্দরে কনটেইনারের জটলা লেগে আছে। বিশেষ করে পণ্য সরবরাহ ও পরিবহনে প্রশাসন থেকে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হলেও পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক না হওয়ায় অনেক আমদানিকারক পণ্য খালাস করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, বন্দরে স্বাভাবিকভাবে কনটেইনার ডিসচার্জ করা যাচ্ছে না। এতে কনটেইনারের জট তৈরি হয়েছে। এতে আমদানি পণ্য খালাসও বিলম্বিত হচ্ছে। পাশাপাশি বন্দর থেকে জাহাজ ছাড়তেও এখনো ১২ ঘণ্টা থেকে ২৪ ঘণ্টা বিলম্বিত হচ্ছে।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি—রপ্তানি হওয়া পণ্যের ৯৫ শতাংশই শুল্কায়ন করে চট্টগ্রাম কাস্টমস। চট্টগ্রাম কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, বুধবার শুল্কায়নের জন্য অনলাইনে নথি জমা দেওয়া হয়েছে ৯ হাজার ৩৪৫টি চালানের। এর মধ্যে ৮ হাজার ১৫৩টি আমদানি—রপ্তানি চালান শুল্কায়ন হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত অনলাইনে আমদানি—রপ্তানির নথি জমা হয়েছে ৪ হাজার ২০০টি।
এদিকে সারাদেশে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় রপ্তানিকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কয়েকদিন জাহাজীকরণের জন্য চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য পাঠায়নি। যে কারণে অফডকগুলোতে রপ্তানিপণ্যের কনটেইনার কমেছে। তবে আমদানিপণ্য খালাস কম হওয়ায় আমদানিপণ্যবাহী কনটেইনারের সংখ্যা বেড়েছে।
বেসরকারি ডিপো মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) সচিব রুহুল আমিন শিকদার শুক্রবার বিকেলে বলেন, দেশের ১৯টি বেসরকারি ডিপোতে বর্তমানে রপ্তানিপণ্য বোঝাই পাঁচ হাজার ৭শ, আমদানিপণ্য বোঝাই ৯ হাজার ৩শ কনটেইনার রয়েছে। ডিপোগুলোতে বর্তমানে ৪৯ হাজার খালি কনটেইনার রয়েছে।
তিনি বলেন, রপ্তানিকারী প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে গত কয়েকদিনে রপ্তানির পণ্য ডিপোগুলোতে আসেনি। যে কারণে রপ্তানির পণ্যবোঝাই কনটেইনারের সংখ্যা কমেছে। আগের রপ্তানিপণ্য জাহাজীকরণ হলেও নতুন পণ্য আসেনি। ফলে দুইদিন আগে রপ্তানি পণ্যের কনটেইনার পাঁচ হাজারে নেমে এসেছিল। এখন পাঁচ হাজার ৭শ হয়েছে। তাছাড়া অফডকগুলোতে প্রতিদিন গড়ে আমদানিপণ্যের কনটেইনার থাকতো সাত হাজার। এখন খালাস কম হওয়ায় এক সপ্তাহে দুই হাজার কনটেইনার বেড়ে গেছে। এ বিষয়ে বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক শুক্রবার বিকেলে জাগো নিউজকে বলেন, শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত আমদানিপণ্যের পাঁচ হাজার ১শ কনটেইনার ডেলিভারি হয়েছে। এখনো ৪১ হাজার কনটেইনার রয়েছে বন্দরে। বর্তমানে পণ্য খালাসের চাপ রয়েছে। এতে বন্দরে গাড়ির জট তৈরি হয়েছে। তবে কিছুদিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।