০৮:০২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চাঁদাবাজদের দখলে খরুলিয়া-লিংকরোড-উপজেলা সহ তিন বাজার!

  • প্রতিনিধির নাম
  • প্রকাশিত সময় : ১২:০৪:০৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জুন ২০২২
  • ১০২ ভিউ

কয়েক কোটি টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার. চাঁদাবাজদের দখলে খরুলিয়া-লিংকরোড-উপজেলা সহ তিন বাজার!

নিজস্ব প্রতিবেদক॥ ভোরের কক্সবাজার।

কক্সবাজারের সদরের প্রধান তিনটি বাজার খরুলিয়া, লিংকরোড এবং উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন বাজার নিয়ে চলছে লুটপাটের মহৌৎসব। জেলা শহরের নিকটতম এই তিন বাজারই এখন কৌশলগত ভাবে চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের দখলে চলে গেছে। এই তিন বাজারে এখন খাস কালেকশন আদায়ের নামে চলছে ব্যাপক অর্থ লুটপাট। কালের পরিক্রমায় বাজার তিনটির মধ্যে কোনোটার ইজারামূল্য ২কোটি টাকাও ছাড়িয়েছে। ফলে লোভাতুর দৃষ্টি পড়েছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্রের। এমনকি ষড়যন্ত্র করে অতি সুক্ষ্ম কৌশল খাটিয়ে বাজার তিনটির ইজারা যোগ্যতাও নস্যাত করা হয়েছে। এভাবে ইজারা যোগ্যতা নষ্ট করে ফেলায় বাজার তিনটি এখন উপজেলা প্রশাসনের হাতছাড়া হয়ে গেছে। অন্যদিকে নিয়ম অনুযায়ী এই বাজারগুলো এখন সদর ভূমি অফিসের অধীনে নাম মাত্র মূল্যে খাস কালকেশন করে থাকে। বাকি বিপুল অংকের টাকা খাস আদায়ের নামে বাজার থেকে উত্তোলন করে নিজেদের পকেটে ভরে নিচ্ছে বাজার দখলকারী সিন্ডিকেট। আর এভাবে কৌশলে বাজার দখল করার বন্দোবস্ত করেছে উপজেলা প্রশাসনের এক কর্মচারী। জানা যায়- খাস আদায়ে ভূমি অফিসের লোকদের দায়িত্ব দেওয়া হলেও তাদের হাতে নেই বাজারের ন্যুনতম নিয়ন্ত্রণ।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সরকারদলীয় ও বিএনপি জামায়াতের নেতারা মিলেমিশে একাকার হয়ে একটি সিন্ডিকেট করে তাদের পকেটে ঢুকিয়ে নিচ্ছে সরকারি রাজস্বের কোটি কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে খাস কালেকশনের টাকা সরকারি কোষাগারে যতসামান্যও জমা পড়ছে কীনা তা নিয়ে সচেতন মহলে দেখা দিয়েছে সংশয়।

অনুসন্ধানে জানা যায়- সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সি.এ উত্তম চক্রবর্তী উক্ত সিন্ডিকেটের প্রধান নিয়ন্ত্রক হিসেবে ভূমিকা রাখছেন। তিনিই মূলত বিভিন্ন কৌশল খাটিয়ে আইনে ফাঁকফোকর দিয়ে তিনটি বাজারের ইজারা যোগ্যতা নষ্ট করে নিজের পছন্দের মানুষদের দিয়ে বাজারগুলো থেকে খাস কালেকশনের নামে অর্থ আদায় করে লুটপাট করে যাচ্ছেন। এর মধ্যে খরুলিয়া বাজারটি স্থানীয় চেয়ারম্যান টিপু সুলতান ও শরীফ মেম্বারের অধীনে, লিংকরোড বাজার স্থানীয় মেম্বার কুদরত উল্লাহর অধীনে এবং উপজেলা বাজারটি উত্তম কুমার চক্রবর্তী নিজে নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক জনপ্রতিনিধি জানিয়েছেন- প্রতি বার বাজার ইজারা যোগ্যতা হারালেও খাস কালেকশনের জন্য খোলা ডাকের আয়োজন করা হয়।
কিন্তু এবার তাও করা হয়নি। সদর উপজেলার ইউএনও মহোদয়ের সি.এ উত্তম কুমার গায়ের জোরে বাজার তিনটিতে নিজের লোক দিয়ে লুটপাট করিয়ে নিচ্ছে। ফলে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

এদিকে খাস কালেকশন আদায়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত সদর ভূমি অফিসের তহসিলদারও কোনদিন বাজারে যাওয়া তো দুরে থাক; বাজারটি সম্পর্কে তার নুন্যতম ধারণা নেই বলে সচেতন মহলের অভিযোগ। এসব তথ্যের সত্যতা পাওয়া যায় সদর ভুমি কার্যালয়ের তহসিলদার আবুল কাশেমের বক্তব্যে।
তিনি জানান- সদর উপজেলা বাজারটিতে তার কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এটি ইউএনও সাহেবের সি.এ উত্তম চক্রবর্তী নিয়ন্ত্রণ করেন। উত্তম খাস কালেকশন আদায় করে প্রতি মাসে কত টাকা করে জমা দেন জানতে চাইলে তহসিলদার আবুল কাশেম বলেন- “এটা উত্তম দাদা ভালো বলতে পারবে। আপনি উনার কাছ থেকে জেনে নেন।” অন্যদিকে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সি.এ উত্তম চক্রবর্তী জানান- বাজারটি তিনি নিয়ন্ত্রণ করেন না। নাছির নামে একজন মেম্বার এটি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এছাড়াও উপজেলা বাজারটি মহাসড়কের পাশে হওয়ায় ভুমি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী এটি এখনও ইজারা যোগ্য বাজার নয়। তবে বাকী দুটি বাজারও মহাসড়কের সাথে অবস্থিত এবং সেসব বাজার কেনো তাহলে ইজারা আহ্বান করা হয় জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দিতে পারেননি।

সচেতন মহল জানান, প্রশাসনের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মচারীর সহযোগিতায় বাজার তিনটি বেআইনিভাবে খাস আদায়ের নামে লুটপাট করছে সিন্ডিকেট। খরুলিয়া বাজারের সাবেক এক ইজারাদার জানান, তার সময়ে প্রতি হাটে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা কালেকশন করতেন। বর্তমানে খাস কালেকশনে নিলেও এখনো সম পরিমাণ হাছিল আদায় হচ্ছে। শুধু তাই নয়, পূর্বের ইজারা আদায় পদ্ধতি এবং পরিস্থিতির সম্পর্কে জ্ঞাত থাকায় ব্যবসায়ীদের উপর চাপ প্রয়োগ করে জোর পূর্বক ইজারা সমপরিমাণ অর্থ আদায় করে নিচ্ছে খাস আদায়ের নামে নিয়োজিত এই সিন্ডিকেটটি। সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে একটি চক্র যেভাবে কোটি কোটি টাকা লুটে নিচ্ছে সেটিও ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখছেন তারা। তাদের দাবী- বাজার তিনটি যেন ন্যায় সঙ্গত ভাবে খোলা ডাকে দেওয়া হয়।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি এবং নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাকারিয়া জানান- বাজার তিনটিই তিনি আসার আগে খাস কালেকশনে চলে গেছে। আপাতত পর্যন্ত বাজার নিয়ে কোনো অনিয়ম পরিলক্ষিতও হয়নি বলে দাবী করেন তিনি। তবে যে ধরণের অভিযোগগুলো উঠে এসেছে এসব তদন্ত করে সত্যতা পাওয়া গেলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।

পাঠকপ্রিয়

আলুর দাম আরও বেড়েছে, স্বস্তি নেই ডিম-সবজিতেও

চাঁদাবাজদের দখলে খরুলিয়া-লিংকরোড-উপজেলা সহ তিন বাজার!

প্রকাশিত সময় : ১২:০৪:০৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জুন ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক॥ ভোরের কক্সবাজার।

কক্সবাজারের সদরের প্রধান তিনটি বাজার খরুলিয়া, লিংকরোড এবং উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন বাজার নিয়ে চলছে লুটপাটের মহৌৎসব। জেলা শহরের নিকটতম এই তিন বাজারই এখন কৌশলগত ভাবে চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের দখলে চলে গেছে। এই তিন বাজারে এখন খাস কালেকশন আদায়ের নামে চলছে ব্যাপক অর্থ লুটপাট। কালের পরিক্রমায় বাজার তিনটির মধ্যে কোনোটার ইজারামূল্য ২কোটি টাকাও ছাড়িয়েছে। ফলে লোভাতুর দৃষ্টি পড়েছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্রের। এমনকি ষড়যন্ত্র করে অতি সুক্ষ্ম কৌশল খাটিয়ে বাজার তিনটির ইজারা যোগ্যতাও নস্যাত করা হয়েছে। এভাবে ইজারা যোগ্যতা নষ্ট করে ফেলায় বাজার তিনটি এখন উপজেলা প্রশাসনের হাতছাড়া হয়ে গেছে। অন্যদিকে নিয়ম অনুযায়ী এই বাজারগুলো এখন সদর ভূমি অফিসের অধীনে নাম মাত্র মূল্যে খাস কালকেশন করে থাকে। বাকি বিপুল অংকের টাকা খাস আদায়ের নামে বাজার থেকে উত্তোলন করে নিজেদের পকেটে ভরে নিচ্ছে বাজার দখলকারী সিন্ডিকেট। আর এভাবে কৌশলে বাজার দখল করার বন্দোবস্ত করেছে উপজেলা প্রশাসনের এক কর্মচারী। জানা যায়- খাস আদায়ে ভূমি অফিসের লোকদের দায়িত্ব দেওয়া হলেও তাদের হাতে নেই বাজারের ন্যুনতম নিয়ন্ত্রণ।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সরকারদলীয় ও বিএনপি জামায়াতের নেতারা মিলেমিশে একাকার হয়ে একটি সিন্ডিকেট করে তাদের পকেটে ঢুকিয়ে নিচ্ছে সরকারি রাজস্বের কোটি কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে খাস কালেকশনের টাকা সরকারি কোষাগারে যতসামান্যও জমা পড়ছে কীনা তা নিয়ে সচেতন মহলে দেখা দিয়েছে সংশয়।

অনুসন্ধানে জানা যায়- সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সি.এ উত্তম চক্রবর্তী উক্ত সিন্ডিকেটের প্রধান নিয়ন্ত্রক হিসেবে ভূমিকা রাখছেন। তিনিই মূলত বিভিন্ন কৌশল খাটিয়ে আইনে ফাঁকফোকর দিয়ে তিনটি বাজারের ইজারা যোগ্যতা নষ্ট করে নিজের পছন্দের মানুষদের দিয়ে বাজারগুলো থেকে খাস কালেকশনের নামে অর্থ আদায় করে লুটপাট করে যাচ্ছেন। এর মধ্যে খরুলিয়া বাজারটি স্থানীয় চেয়ারম্যান টিপু সুলতান ও শরীফ মেম্বারের অধীনে, লিংকরোড বাজার স্থানীয় মেম্বার কুদরত উল্লাহর অধীনে এবং উপজেলা বাজারটি উত্তম কুমার চক্রবর্তী নিজে নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক জনপ্রতিনিধি জানিয়েছেন- প্রতি বার বাজার ইজারা যোগ্যতা হারালেও খাস কালেকশনের জন্য খোলা ডাকের আয়োজন করা হয়।
কিন্তু এবার তাও করা হয়নি। সদর উপজেলার ইউএনও মহোদয়ের সি.এ উত্তম কুমার গায়ের জোরে বাজার তিনটিতে নিজের লোক দিয়ে লুটপাট করিয়ে নিচ্ছে। ফলে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

এদিকে খাস কালেকশন আদায়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত সদর ভূমি অফিসের তহসিলদারও কোনদিন বাজারে যাওয়া তো দুরে থাক; বাজারটি সম্পর্কে তার নুন্যতম ধারণা নেই বলে সচেতন মহলের অভিযোগ। এসব তথ্যের সত্যতা পাওয়া যায় সদর ভুমি কার্যালয়ের তহসিলদার আবুল কাশেমের বক্তব্যে।
তিনি জানান- সদর উপজেলা বাজারটিতে তার কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এটি ইউএনও সাহেবের সি.এ উত্তম চক্রবর্তী নিয়ন্ত্রণ করেন। উত্তম খাস কালেকশন আদায় করে প্রতি মাসে কত টাকা করে জমা দেন জানতে চাইলে তহসিলদার আবুল কাশেম বলেন- “এটা উত্তম দাদা ভালো বলতে পারবে। আপনি উনার কাছ থেকে জেনে নেন।” অন্যদিকে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সি.এ উত্তম চক্রবর্তী জানান- বাজারটি তিনি নিয়ন্ত্রণ করেন না। নাছির নামে একজন মেম্বার এটি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এছাড়াও উপজেলা বাজারটি মহাসড়কের পাশে হওয়ায় ভুমি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী এটি এখনও ইজারা যোগ্য বাজার নয়। তবে বাকী দুটি বাজারও মহাসড়কের সাথে অবস্থিত এবং সেসব বাজার কেনো তাহলে ইজারা আহ্বান করা হয় জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দিতে পারেননি।

সচেতন মহল জানান, প্রশাসনের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মচারীর সহযোগিতায় বাজার তিনটি বেআইনিভাবে খাস আদায়ের নামে লুটপাট করছে সিন্ডিকেট। খরুলিয়া বাজারের সাবেক এক ইজারাদার জানান, তার সময়ে প্রতি হাটে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা কালেকশন করতেন। বর্তমানে খাস কালেকশনে নিলেও এখনো সম পরিমাণ হাছিল আদায় হচ্ছে। শুধু তাই নয়, পূর্বের ইজারা আদায় পদ্ধতি এবং পরিস্থিতির সম্পর্কে জ্ঞাত থাকায় ব্যবসায়ীদের উপর চাপ প্রয়োগ করে জোর পূর্বক ইজারা সমপরিমাণ অর্থ আদায় করে নিচ্ছে খাস আদায়ের নামে নিয়োজিত এই সিন্ডিকেটটি। সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে একটি চক্র যেভাবে কোটি কোটি টাকা লুটে নিচ্ছে সেটিও ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখছেন তারা। তাদের দাবী- বাজার তিনটি যেন ন্যায় সঙ্গত ভাবে খোলা ডাকে দেওয়া হয়।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি এবং নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাকারিয়া জানান- বাজার তিনটিই তিনি আসার আগে খাস কালেকশনে চলে গেছে। আপাতত পর্যন্ত বাজার নিয়ে কোনো অনিয়ম পরিলক্ষিতও হয়নি বলে দাবী করেন তিনি। তবে যে ধরণের অভিযোগগুলো উঠে এসেছে এসব তদন্ত করে সত্যতা পাওয়া গেলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।