ততকালীন স্বৈরাচার সরকারের দলীয় নৌকা প্রতীকে ২০২১ সালে সশস্ত্র ভোট ডাকাতির মাধ্যমে নির্বাচিত সদর উপজেলার চৌফলদন্ডী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমানের নানান অপরাধ দুর্নীতি ও অনিয়মের ধারাবাহিকতায় অত্র ইউনিয়নের ঘোনারপাড়ায় মুজিব বর্ষের ঘর বানিজ্য করে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।এতদিন ভুক্তভোগীরা নিরব থাকলেও আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সবাই আস্তে আস্তে মুখ খুলতে শুরু করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়,পালিয়ে যাওয়া সরকারের আমলে সারাদেশে বিনামূল্যে ভূমিহীনদের মাঝে মুজিববর্ষের ঘর বরাদ্দের ধারাবাহিকতায় সদর উপজেলার চৌফলদন্ডী ইউনিয়নের ঘোনারপাড়ায় মুজিববর্ষের ঘর পেতে কোন টাকা না নেওয়ার কথা থাকলেও স্থানীয় যুবলীগের এক নেতার যোগসাজশে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার তথ্য এখন এ প্রতিবেদকের হাতে।অত্র ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান অসহায় মানুষগুলোর কাছ থেকে এক প্রকার গলাটিপে ধরে সদর ইউএনও'র নাম ভাঙ্গিয়ে এ টাকা আদায় করেছে বলে ভুক্তভোগীদের দাবি।অনেকে বিষয়টি নিয়ে চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বলেও জানা গেছে।
অভিযোগের বিষয়ে সরেজমিন অনুসন্ধানে নামে এ প্রতিবেদক।অনুসন্ধানে জানা যায়, সদর উপজেলার চৌফলদন্ডী ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের ঘোনারপাড়া এলাকায় উপজেলা প্রশাসনের তত্বাবধানে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় গরীব- অসহায়দের মাঝে বিনামূল্যে ৫০টির অধিক মুজিববর্ষের ঘর বিতরণ করা হয়। সেই ঘর বরাদ্দের পূর্বে স্থানীয় যুবলীগের এক নেতাকে সাথে নিয়ে চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান যে জায়গায় মুজিববর্ষের ঘরে তৈরি করা হয়েছে সেখানে ভোগদখল দারদের ঘর না দিয়ে অনন্য এলাকার লোকজন এনে ঘর দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ঘর প্রতি ৩০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয় বলে জানান ভুক্তভোগীরা। এমনও জানা যায় অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ঘরও দেয়নি,তারা টাকাও ফেরত পায়নি। যাদের কাছ থেকে এসব টাকা নিয়েছে তাদেরকে নানাবিধ ভয়ভীতি দেখানো হয়েছিল।যাতে টাকা দেওয়ার কথা কোন ভাবে প্রকাশ না পায়। টাকা দেওয়া কথা প্রকাশ পেলে তাদের কাছ থেকে ঘর কেঁড়ে নেওয়া হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয় বলে জানা গেছে।
তখন ভুক্তভোগীরা চেয়ারম্যান বাহিনীর পেশি শক্তির ভয়ে এসব কথা কাউকে বলতেও পারেনি।
ততকালিন আওয়ামী লীগের সরকার প্রধান পালিয়ে গেলে অত্র ইউনিয়নের চেয়ারম্যানও আত্মগোপনে চলে যায়।এখন ভুক্তভোগীরা মূখ খুলতে শুরু করেছে।অনুসন্ধানকালে প্রায় প্রত্যেক ঘরে বসবাসকারীর সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের।
প্রত্যেকে যার সাথে যেমন হয়েছে সবই বলতে থাকে এ প্রতিবেদককে। ঘর পাওয়া দিনমজুর অসহায় ও বিধবা মহিলারাও চেয়ারম্যান মুজিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন, ততকালীন সরকার গরীব অসহায় মানুষকে বিনামূল্যে ঘর নির্মাণ করে দিলেও মুজিব চেয়ারম্যান আমাদের বসতভিটা থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক টাকা আদায় করেছে।অসহায় মানুষগুলো নিরূপায় হয়ে কেউ শেষ সম্বল বিক্রি করে, কেউ সুদি টাকা নিয়ে কেউ ধারদেনা করে টাকা দিতে বাধ্য হয়েছিল বলে জানা যায়।
উপস্থিত স্থানীয়দের সামনে ভুক্তভোগী সাবেকুন্নাহার এ প্রতিবেদককে কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, মুজিববর্ষের ঘরটি দেয়ার জন্য এক যুবলীগ নেতা মাধ্যমে চেয়ারম্যান মুজিব তার কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকা নিয়েছে। টাকা না দিলে ঘর বরাদ্দ দিবে না এবং ঐ জায়গা থেকে তাকে বিতাড়িত করা হবে হবে হুমকী দিয়েছিল চেয়ারম্যান মুজিব। তিনি বাধ্য হয়ে ওই টাকা দিয়েছিল বলে জানান এ নারী।
আরেক ভুক্তভোগী আনোয়ারা জানান, চেয়ারম্যান মুজিব ঘর দেয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে ৩৮ হাজার টাকা নিয়েছিল কিন্তু ঘর পাইনি। ঘর বরাদ্দ না পাওয়াই টাকা ফেরত চাইলে চেয়ারম্যান মুজিব ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। তিনি আরো জানান, চেয়ারম্যানের ঘরে একাধিকভার গিয়েও এ টাকা উদ্ধার করতে পারেনি এ ভুক্তভোগী নারী।
ভুক্তভোগী মো ওসমান জানান, তিনি একজন প্রবাসী। সে অনেক কষ্ট করে বসত ঘরটি নির্মাণ করেছেন। চেয়ারম্যান মুজিব তার বসত ঘরটি ভেঙ্গে জায়গাটিতে মুজিব বর্ষের ঘর নির্মাণ করবে বলে হুমকি দেয় এবং ঘরটি না ভাঙ্গার শর্তে দেড় লক্ষ টাকা দাবী করে। তিনি অসুস্থতার পরেও তার কাছ থেকে দেড়লক্ষ টাকা নেয় চেয়ারম্যান মুজিব। তিনি ব হুমকীর মাধ্যমে আদায় করা দেড়লক্ষ টাকা ফেরত চান ওই প্রবাসী ভুক্তভোগী।
এবিষয়ে জানার জন্য চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমানের সাথে তার মোবাইল নাম্বারে একাধিকবার যোগাযোগ করাও চেষ্টা করেও ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ ফরিদ বিষয়টি নিয়ে বলেন, ঘর দেওয়ার সময় চেয়ারম্যানের সাথে আমার বিরোধ সৃষ্টি হলে সেখান থেকে আমি সরে আসি। তবে টাকা নেওয়ার কথাটা অনেকে আমাকে বলেছে।
বিষয়টি নিয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অবহিত করে ওনার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এসেছি কিছু দিন হলো। বিষয়টি আপনার কাছ থেকে প্রথম জানলাম৷ ভুক্তভোগীরা আমাকে লিখিত জানালে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।