কক্সবাজারের টেকনাফে কোস্টগার্ডের হাতে আটক মো. শহীদের পরিবার অস্ত্র দিয়ে মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে টেকনাফ পৌরসভাস্থ বাসস্টেশন আবু ছিদ্দিক মার্কেটের একটি অফিসে ভুক্তভোগী পরিবার এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সেখানে বক্তব্য রাখেন শহিদের স্ত্রী জেয়াসমিন করিম জোসনা তার ভাই রাকেব উল্লাহ ও নুর কামাল।
এদিকে একইদিন সকালে টেকনাফের সাবরাংয়ে অভিযান চালিয়ে ১টি জি-৩ রাইফেল ও ৮টি ম্যাগজিনসহ মোঃ শহিদ নামের যুবককে আটক করা হয় বলে এক ব্রিফিংয়ে নিশ্চিত করেছেন কোস্টগার্ডের টেকনাফ স্টেশন কমান্ডার লে. কমান্ডার লুৎফুল লাহিল মাজিদ।
তিনি জানান, ‘শহিদ দীর্ঘদিন যাবত পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে অস্ত্র পাচার করে টেকনাফের ডাকাত দলকে সরবরাহ করছিল। এ খবরে গতকাল রাত দেড়টায় আমাদের একটি দল মো. শহিদ এর বাড়িতে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে বাড়ির তল্লাশি চালিয়ে সাদা রঙের বস্তায় মোড়ানো অবস্থায় ১টি জি-৩ রাইফেল ও ম্যাগজিন ৮ রাউন্ডস তাজা গোলা এবং ১ টি দেশীয় চাপাতি সহ মো. শহিদ (৩৭) কে কোস্টগার্ড আটক করতে সক্ষম হন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আটক পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে অস্ত্র উদ্ধার করেছি। এখন এসে পরিবারের পক্ষ থেকে যে বিষয়টি দাবি করেছে সেটি তাদের ব্যক্তিগত মতামত। সেখানে আমার কিছু বলার নেই এবং অস্ত্রসহ ধৃতকে মামলা দিয়ে থানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।’
অন্যদিকে শহীদকে ডেকে নিয়ে অস্ত্র দিয়ে মামলায় ফাঁসানো উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে শহিদের ভাই রাগেব উল্লাহ বলেন, ‘আমার বড়ভাইকে ফাঁসিয়ে আমার চোখের সামনে আটকের নাটক মঞ্চস্থ করা হয়েছে। আমার সামনেই ভাইয়ের বাড়িতে তল্লাশী করে কিছুই পায়নি। কিন্তু বাড়ি থেকে প্রায় ৮০-১০০ ফুট দূরে সুপারী ভিটা থেকে বস্তায় মোড়ানো অস্ত্র নিয়ে আসে। তখন আমি বাকরুদ্ধ এবং আমার বড় ভাই শহিদুল্লাহ পাথরের মতো দাঁড়িয়ে হাউ মাউ করে কান্না শুরু করে। এরপর পাওয়ার কথা বলে তাকে অস্ত্রসহ ধরে নিয়ে যায় কোস্ট গার্ড।
তিনি বলেন, ‘মূলত ঘটনাটি হচ্ছে এলাকার চোরাকারবারি মোয়াজ্জেম হোসেন প্রকাশ দানু ও আবদুল আমিন প্রকাশ রুল্ল্যা মাঝিকে অবাঞ্চিত ঘোষনা করে মুন্ডারডেইল নৌঘাটে আমার ভাইকে সভাপতি বানানো হয়। ফলে তাদের চোরাচালান বাঁধা হয়ে দাড়াঁয় আমার ভাই। এ কারনে চোরাকারবারিরা ষড়যন্ত্র করে কোস্টগার্ডকে দিয়ে সুপারী বাগানে অস্ত্র দিয়ে মিথ্যা মামলা সাজিয়েছে। শহিদ কোনক্রমে অবৈধ মাদক ও মানবপাচারের সাথে জড়িত নয়, যা তদন্ত করলে সত্যতা পাওয়া যাবে। মূলত শহিদকে উক্ত নৌঘাটের সভাপতি থেকে সরিয়ে দিতে পারলে মাদক, মানবপাচার, মিয়ানমারে পণ্য পাচার সুবিধাজনক হবে। তাই অস্ত্রসহ আটক দেখানো ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলায় দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে। আমি বর্তমান সরকারের কাছে তদন্তপূর্বক মামলা প্রত্যাহার ও তার মুক্তি দাবী করছি।’
স্ত্রী জেয়াসমিন করিম জোসনা তিন সন্তানকে পাশে রেখে কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, ‘আমার তিন সন্তান, কোনদিন দেখেনি স্বামী কোন অবৈধ কার্যক্রমে জড়িত ছিল। মূলত নৌঘাটের সভাপতি হওয়ার পর তার বিরোদ্ধে ষড়যন্ত্র নেমেছে চোরকারবারিরা। আমি সঠিক তদন্তের মাধ্যমে সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি সরকারের কাছে।’
টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, কোস্টগার্ডের পক্ষ থেকে আসামীকে থানায় সোপর্দ করে। পরবর্তীতে পুলিশের পক্ষ থেকে সঠিক তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।