১১:৫০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

টেকনাফে মুক্তিপণ দিয়ে ঘরে ফিরলেন আরও ১০ জন

  • প্রতিনিধির নাম
  • প্রকাশিত সময় : ০৬:১০:১৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
  • ১০২ ভিউ

টেকনাফে পাহাড় থেকে অপহরণের শিকার ১০ জন প্রায় দুই লাখ টাকায় মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে এসেছেন। বুধবার (২৭ মার্চ) রাত সাড়ে ১১টার সময় টেকনাফের হোয়াইক্যং রৈক্ষ্যং ২২নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পশ্চিমে পাহাড় থেকে তাদেরকে ফেরত দেওয়া হয়। ভুক্তভোগীরা কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন বলে জানা গেছে।

তাদের পরিবার বলছে, দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ নিয়ে তাদেরকে ছেড়েছে অপহরণকারীরা। তবে পুলিশ বলছে, অপহৃতরা ফেরত এসেছে। কিন্তু মুক্তিপণের বিষয়টি অবগত নয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ফেরত আসাদের জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে।

ফেরত আসা ১০ জন হলেন- টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের করাচি পাড়া এলাকার বেলালের কিশোর দুই ছেলে, একই এলাকার লেদুর ছেলে শাকিল (১৫), শহর আলীর ছেলে ফরিদ আলম (৩৫), নুরুল ইসলামের ছেলে আকতার (২৫), নাজির হোসেনের ছেলে ইসমাইল প্রকাশ সোনায়া (২৪), হোয়াইক্যং রৈক্ষ্যং এলাকার আলী আকবরের ছেলে ছৈয়দ হোছাইন বাবুল (২৬) ও কালা মিয়ার ছেলে ফজল কাদের (৪০)।

এ ছাড়া দুই দিন আগে অপহরণের শিকার টেকনাফের হোয়াইক্যং রোজার ঘোনা এলাকার আমির হোসেনের ছেলে অলি আহমদ (৩২) ও কম্বনিয়া এলাকার ফিরুজের ছেলে নুর মোহাম্মদ (১৭) মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে আসেন।

এ বিষয়ে টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর আহমেদ আনোয়ারী বলেন, অপহৃতরা ফেরত এসেছে। তবে কীভাবে এসেছে সেটি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কিন্তু এর আগে সব অপহৃতরা মুক্তিপণে ফিরে এসেছিল।

ফেরত আসা শাকিলের বাবা লেদু মিয়া বলেন, রাতে ২০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিলে ছেলেকে ফেরত দিয়েছে অপহরণকারীরা। কষ্টের সময় মানুষের কাছ থেকে ধার করে টাকা নিয়ে ছেলেকে ছাড়িয়ে এনেছি। ছেলের সাথে বাকিরাও মুক্তিপণ দিয়ে ফেরত এসেছে।

হোয়াইক্যং কানজর পাড়া এলাকার গ্রাম পুলিশ শেখ কবির জানান, তাদের কাছ থেকে এক লাখ ৯০ হাজার টাকা মুক্তিপণ নিয়ে রৈক্ষ্যং ২২ নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পশ্চিমে ছেড়ে দিয়ে চলে যায় অপহরণকারীরা। পরে পরিবারের লোকজন গিয়ে তাদের উদ্ধার করে নিয়ে আসে। এর আগে বুধবার সকালে পাহাড়ে কাজ করতে গেলে অপহরণের শিকার হন তারা।

এদিকে, বুধবার সকালে টেকনাফের হোয়াইক্যং রৈক্ষ্যং বাদিবন্যা পাহাড় থেকে আট জন ও মঙ্গলবার উপজেলার হোয়াইক্যং কম্বনিয়া পাহাড়ি এলাকায় গরু চরাতে গিয়ে দুই জন মোট ১০ জন অপহরণের শিকার হয়েছিলেন।

এ বিষয়ে হ্নীলা পানখালীর ৪নং ওয়ার্ডের হামিদ হোসাইন জানান, চলতি মাসে হ্নীলা-হোয়াইক্যং ইউনিয়নের প্রায় ২৫ কৃষককে অস্ত্রধারী অপহরণকারীরা ধরে নিয়ে যায়। পরে তাদের কাছ থেকে মুক্তিপণ নিয়ে ফেরত দেয়। এসব ঘটনায় এলাকার লোকজন মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী জানান, এলাকায় নতুন করে অপহরণ আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। নতুন করে রোহিঙ্গা আসার পর এ ধরনের ঘটনা খুব বৃদ্ধি পেয়েছে। পাহাড়ি এলাকায় কাজ করে যেসব কৃষক জীবিকা নির্বাহ করেন তারা এখন খুব বিপদে। প্রতিদিন কেউ না কেউ অপহরণের শিকার হচ্ছেন।

এ বিষয়ে টেকনাফে মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ ওসমান গনি বলেন, অপহৃতরা ফিরেছে। আমরা অপহরণকারীদের ধরতে কাজ করছি।

অন্যদিকে গল ১০ মার্চ হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ২২ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন পাহাড়ি এলাকা থেকে সাত জনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নিয়ে যায় অপহরণকারীরা। একদিন পরে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে তারা ফিরেছিলেন। এর আগে ৯ মার্চ হ্নীলার পূর্ব পানখালী এলাকা থেকে মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্র ছোয়াদ বিন আব্দুল্লাহকে (৬) অপহরণ করে নিয়ে যায়। ১২ দিন অতিবাহিত হলেও এখনও তাকে উদ্ধার করা যায়নি।

সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, গত ২০২৩ সালের মার্চ থেকে ২০২৪ এর মার্চ পর্যন্ত সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের পাহাড় কেন্দ্রিক ১০৩টি অপহরণের ঘটনা ঘটেছে, তার মধ্যে ৫২ জন স্থানীয় ও ৫১ জন রোহিঙ্গা। এর মধ্যে যারা ফিরে এসেছেন তাদের বেশির ভাগই মুক্তিপণ দিয়েছেন।

ট্যাগ :
পাঠকপ্রিয়

আলুর দাম আরও বেড়েছে, স্বস্তি নেই ডিম-সবজিতেও

টেকনাফে মুক্তিপণ দিয়ে ঘরে ফিরলেন আরও ১০ জন

প্রকাশিত সময় : ০৬:১০:১৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

টেকনাফে পাহাড় থেকে অপহরণের শিকার ১০ জন প্রায় দুই লাখ টাকায় মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে এসেছেন। বুধবার (২৭ মার্চ) রাত সাড়ে ১১টার সময় টেকনাফের হোয়াইক্যং রৈক্ষ্যং ২২নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পশ্চিমে পাহাড় থেকে তাদেরকে ফেরত দেওয়া হয়। ভুক্তভোগীরা কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন বলে জানা গেছে।

তাদের পরিবার বলছে, দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ নিয়ে তাদেরকে ছেড়েছে অপহরণকারীরা। তবে পুলিশ বলছে, অপহৃতরা ফেরত এসেছে। কিন্তু মুক্তিপণের বিষয়টি অবগত নয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ফেরত আসাদের জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে।

ফেরত আসা ১০ জন হলেন- টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের করাচি পাড়া এলাকার বেলালের কিশোর দুই ছেলে, একই এলাকার লেদুর ছেলে শাকিল (১৫), শহর আলীর ছেলে ফরিদ আলম (৩৫), নুরুল ইসলামের ছেলে আকতার (২৫), নাজির হোসেনের ছেলে ইসমাইল প্রকাশ সোনায়া (২৪), হোয়াইক্যং রৈক্ষ্যং এলাকার আলী আকবরের ছেলে ছৈয়দ হোছাইন বাবুল (২৬) ও কালা মিয়ার ছেলে ফজল কাদের (৪০)।

এ ছাড়া দুই দিন আগে অপহরণের শিকার টেকনাফের হোয়াইক্যং রোজার ঘোনা এলাকার আমির হোসেনের ছেলে অলি আহমদ (৩২) ও কম্বনিয়া এলাকার ফিরুজের ছেলে নুর মোহাম্মদ (১৭) মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে আসেন।

এ বিষয়ে টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর আহমেদ আনোয়ারী বলেন, অপহৃতরা ফেরত এসেছে। তবে কীভাবে এসেছে সেটি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কিন্তু এর আগে সব অপহৃতরা মুক্তিপণে ফিরে এসেছিল।

ফেরত আসা শাকিলের বাবা লেদু মিয়া বলেন, রাতে ২০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিলে ছেলেকে ফেরত দিয়েছে অপহরণকারীরা। কষ্টের সময় মানুষের কাছ থেকে ধার করে টাকা নিয়ে ছেলেকে ছাড়িয়ে এনেছি। ছেলের সাথে বাকিরাও মুক্তিপণ দিয়ে ফেরত এসেছে।

হোয়াইক্যং কানজর পাড়া এলাকার গ্রাম পুলিশ শেখ কবির জানান, তাদের কাছ থেকে এক লাখ ৯০ হাজার টাকা মুক্তিপণ নিয়ে রৈক্ষ্যং ২২ নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পশ্চিমে ছেড়ে দিয়ে চলে যায় অপহরণকারীরা। পরে পরিবারের লোকজন গিয়ে তাদের উদ্ধার করে নিয়ে আসে। এর আগে বুধবার সকালে পাহাড়ে কাজ করতে গেলে অপহরণের শিকার হন তারা।

এদিকে, বুধবার সকালে টেকনাফের হোয়াইক্যং রৈক্ষ্যং বাদিবন্যা পাহাড় থেকে আট জন ও মঙ্গলবার উপজেলার হোয়াইক্যং কম্বনিয়া পাহাড়ি এলাকায় গরু চরাতে গিয়ে দুই জন মোট ১০ জন অপহরণের শিকার হয়েছিলেন।

এ বিষয়ে হ্নীলা পানখালীর ৪নং ওয়ার্ডের হামিদ হোসাইন জানান, চলতি মাসে হ্নীলা-হোয়াইক্যং ইউনিয়নের প্রায় ২৫ কৃষককে অস্ত্রধারী অপহরণকারীরা ধরে নিয়ে যায়। পরে তাদের কাছ থেকে মুক্তিপণ নিয়ে ফেরত দেয়। এসব ঘটনায় এলাকার লোকজন মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী জানান, এলাকায় নতুন করে অপহরণ আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। নতুন করে রোহিঙ্গা আসার পর এ ধরনের ঘটনা খুব বৃদ্ধি পেয়েছে। পাহাড়ি এলাকায় কাজ করে যেসব কৃষক জীবিকা নির্বাহ করেন তারা এখন খুব বিপদে। প্রতিদিন কেউ না কেউ অপহরণের শিকার হচ্ছেন।

এ বিষয়ে টেকনাফে মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ ওসমান গনি বলেন, অপহৃতরা ফিরেছে। আমরা অপহরণকারীদের ধরতে কাজ করছি।

অন্যদিকে গল ১০ মার্চ হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ২২ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন পাহাড়ি এলাকা থেকে সাত জনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নিয়ে যায় অপহরণকারীরা। একদিন পরে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে তারা ফিরেছিলেন। এর আগে ৯ মার্চ হ্নীলার পূর্ব পানখালী এলাকা থেকে মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্র ছোয়াদ বিন আব্দুল্লাহকে (৬) অপহরণ করে নিয়ে যায়। ১২ দিন অতিবাহিত হলেও এখনও তাকে উদ্ধার করা যায়নি।

সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, গত ২০২৩ সালের মার্চ থেকে ২০২৪ এর মার্চ পর্যন্ত সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের পাহাড় কেন্দ্রিক ১০৩টি অপহরণের ঘটনা ঘটেছে, তার মধ্যে ৫২ জন স্থানীয় ও ৫১ জন রোহিঙ্গা। এর মধ্যে যারা ফিরে এসেছেন তাদের বেশির ভাগই মুক্তিপণ দিয়েছেন।