কক্সবাজারের একাধিক সীমান্ত পয়েন্ট এখন চোরাকারবারিদের জন্য নিরাপদ রুটে পরিণত হয়েছে।এসব সীমান্ত পয়েন্ট গুলো দিয়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমারে উভয়মুখী পাচারযজ্ঞ চলছে।দেদারছে ওপারে পাচার হচ্ছে জ্বালানী তেল সহ প্রয়োজনীয় সব বাংলাদেশী পণ্য।বিনিময়ে ওপার থেকে এপারে হরদম নিয়ে আসছে ইয়াবা,স্বর্ণ,রাজস্ব বিহীন গরু ও তরল মাদকের চালান সহ নিষিদ্ধ সামগ্রী ।জেলার জল-স্থল সীমান্ত পয়েন্ট যেনো চোরাকারবারিদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে এপার থেকে ওপারে পাচার সহজ হলেও মিয়ানমারের ওপার থেকে চোরাই পণ্য-সামগ্রীর চালান এপারে ঢুকাতেই কঠিন হয়ে পড়েছে।প্রবল ঝুঁকি নিয়ে মিয়ানমার থেকে এপারে নিরাপদে পৌছাতেই পৃথক ধরা পড়েছে বৃহৎ তিনটি চালান।ধরা খাওয়া এসব চালানে রয়েছে স্বর্ণ,ইয়াবা,ক্রিস্টাল মেইথ আইস ও চোরাকারবারিদের ব্যবহ্নত অস্ত্র,দেশীয় টাকা ও মিয়ানমার মুদ্রা কিয়াত।আটক হয়েছে ৪ পাচারকারী।এদিকে টেকনাফে কোষ্ট গার্ডের অভিযানে ৪৬০ ভরি স্বর্ণ, ১কোটি ৭৭ লাখ মিয়ানমার কিয়াট ও বাংলাদেশী মুদ্রার ৫ লাখ টাকাসহ দুই পাচারকারীকে আটক করেছে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড। জব্দকৃত স্বর্ণের বাজার মূল্য ৫৫ কোটি ২২ লাখ টাকা বলে জানা গেছে।মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) মধ্যরাতে উপজেলার শাহপরীর দ্বীপের গোলারচর সংলগ্ন নাফ নদীর মোহনায় এই অভিযান পরিচালনা করা হয়।বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লেঃ কমান্ডার (বিএন) সাব্বির আলম সুজন।এতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায়, মিয়ানমার হতে স্বর্ণের একটি চালান অবৈধভাবে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করবে।ভোর ৪ টায় বাংলাদেশের জলসীমায় ১টি ইঞ্জিন চালিত কাঠের বোটের গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হলে কোস্ট গার্ডের আভিযানিক দল বোটটি থামার সংকেত দেন।এ সময় কোস্টগার্ডের উপস্থিতি বুঝতে পেরে বোটটি পালানোর চেষ্টা করলে কোস্টগার্ড সদস্যরা হাইস্পিড বোট দিয়ে ধাওয়া করে বোটটি আটক করেন।পরবর্তীতে বোটে তল্লাশি চালিয়ে ৫ হাজার ৪৯২ দশমিক ৫ গ্রাম স্বর্ণালঙ্কার, নগদ ৫ লাখ বাংলাদেশী টাকা ও ১ কোটি ৭৭ লাখ মিয়ানমার কিয়াটসহ দুই পাচারকারীকে আটক করা হয়। জব্দকৃত স্বর্ণের বাজার মূল্য ৫৫ কোটি ২২ লাখ টাকা।প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, আটককৃত পাচারকারীরা দীর্ঘদিন যাবত অবৈধভাবে স্বর্ণ পাচারে জড়িত।ধৃতদের নিকটস্থ থানায় সোপর্দ পুর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানান কোস্ট গার্ড।
এদিকে টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২ বিজিবি)'র পৃথক অভিযানে ২ কেজি ক্রিস্টাল মেথ আইস,১টি বিদেশী পিস্তল, বাংলাদেশী নগদ টাকা, মায়ানমার মুদ্রা এবং ১টি মোবাইল ফোনসহ এক মাদক পাচারকারীকে আটক করা হয়। বুধবার(২১ আগস্ট) রাতে পৃথক অভিযানে এসব উদ্ধার করেন বিজিবি।বিজিবি সুত্রে জানা যায়, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে দিবাগত রাতে টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২ বিজিবি)'র অধীনস্থ দমদমিয়া বিওপি’র নৌ-টহল দল রাত ১ টার দিকে জাদিমুড়া নাফনদের কামালের জোড়া এলাকায় সন্দেহজনক একটি নৌকা ধাওয়া করে এক ব্যক্তিকে আটক পুর্বক তল্লাশী করে তার হেফাজত বাংলাদেশী নগদ ৩৯ টাকা,মিয়ানমার মুদ্রা ৪ লাখ কিয়াত এবং একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।ধৃত ব্যক্তি টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের জাদিমুড়া এলাকার ইমাম হোসেনের ছেলে মো.শফিক(২৫)।একই রাতে দুইটার দিকে আরেক অভিযানে চোরাকারবারিদের ফেলে যাওয়া একটি ব্যাগ উদ্ধার পুর্বক তল্লাশী করে ২ ক্রিস্টাল মেথ আইস ও একটি বিদেশী পিস্তল পাওয়া যায়।
এ সংক্রান্তে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান বিজিবি।এদিকে ২০ আগষ্ট উখিয়ার পালংখালী সীমান্ত এলাকা থেকে এক লাখ পিস ইয়াবা, দুটি বিদেশি পিস্তল, একটি দেশীয় পাইপগান এবং ২৫ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছে বিজিবি।বুধবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ৩৪ বিজিবি'র অধিনায়ক লে. কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মাশরুকী। এর আগে মঙ্গলবার এই অভিযান চালায় বিজিবি।বিজিবি জানায়, উখিয়ার পালংখালী বিওপির একটি আভিযানকি টহলদল সীমান্তের পূর্ব ফারির বিল নামক স্থানে কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১ টার দিকে কতিপয় মাদক কারবারি মায়ানমার সীমান্ত দিয়ে হেঁটে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আসার সময় বিজিবি টহলদল তাদের চ্যালেঞ্জ করে।বিজিবি'র উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক কারবারিরা তাদের সঙ্গে থাকা ব্যাগ ফেলে দ্রুত জংগলাকীর্ণ পথ দিয়ে মায়ানমারের দিকে পালিয়ে যায়। পরে ঘটনাস্থল থেকে বিজিবি টহল দল চোরাকারবারিদের ফেলে যাওয়া ব্যাগ তল্লাশি করে ১ লাখ পিস বার্মিজ ইয়াবা পান। এ সময় ২টি বিদেশি পিস্তল, ১টি দেশীয় পাইপগান, ১০ রাউন্ড পিস্তলের গুলি এবং ১৫ রাউন্ড পাইপগানের গুলি জব্দ করতে সক্ষম হয় বিজিবি।
একইদিন ৩০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের মরিচ্যা বিজিবি চেকপোস্টে এক কেজি ক্রিস্টাল মেথ আইসসহ এক মাদক পাচারকারীকে আটক করেছে।মঙ্গলবার(২০ আগষ্ট) আনুমানিক সাড়ে ১০ টার দিকে রামু ব্যাটালিয়ন (৩০ বিজিবি)'র অধীনস্থ মরিচ্যা চেকপোস্টে বিশেষ টহল দলের কমান্ডার'র নেতৃত্বে টেকনাফ থেকে কক্সবাজারগামী ১টি ইজি বাইক তল্লাশী করে অভিনব কায়দায় লোকায়িত অবস্থায় ১ কেজি ক্রিস্টাল মেথ আইসসহ এক পাচারকারীকে আটক করতে সক্ষম হয় বিজিবি।আটককৃত মাদক পাচারকারী আসামী কক্সবাজারের রিদুয়ান(১৮) বলে নিশ্চিত করেছেন বিজিবি।আর উদ্ধারকৃত মাদকের আনুমানিক মুল্য ৫ কোটি টাকা বলে জানাগেছে। রামু ব্যাটালিয়ন (৩০ বিজিবি)'র সুত্রে জানা যায়, আটককৃত আসামী এবং উদ্ধারকৃত মাদকের বিষয়ে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানান।
কক্সবাজার ও পাশ্বর্বতী বান্দরবান জেলার যেসব পয়েন্ট দিয়ে পাচারযজ্ঞ চলে তৎমধ্যে টেকনাফ উপজেলার জলসীমানা সেন্টমার্টিন দ্ধীপ, শাহপরীরদ্ধীপের গোলারচর,জালিয়া পাড়া,ক্যাম্প পাড়া,দমদমিয়া,জাদিমুড়া, কেরুনতরী, বরইতলী, নাইট্যং পাড়া, চৌধুরীপাড়া, মৌলভীপাড়া, নাজিরপাড়া, নয়াপাড়া, মেরিন ড্রাইভের খুরের মুখ, মহেষখালীয়াপাড়া, তুলাতুলি ঘাট,লেদা,নাটমুড়া পাড়া,খারাংখালী, ঝিমংখালী,উনচিপ্রাং,হোয়াইক্ষ্যং ,উলুবনিয়া,উখিয়া উপজেলার পালংখালীর আঞ্জুমান পাড়া,পুটিবনিয়া,রহমতের বিল,ধামনখালী, বালুখালী এবং
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধমের নয়াপাড়া,মন্ডলপাড়া,মধ্যম,পাড়া,জলপাইতলী,তুমব্রু পশ্চিমকুলের তেঁতুল গাছতলা লতিফিয়া মসজিদ সংলগ্ন,তুমব্রু পশ্চিমকুল,বাজার পাড়া,উত্তর পাড়া,ভাজাবনিয়া,চাকমা পাড়া,বাইশফাঁড়ী,আমতলী,রেজু পাড়া,বৈদ্দ্যের ছড়া,বরইতলী,সোনাই ছড়ি,চাকঢালা,দোছড়ি প্রভৃতি।এসব পয়েন্ট সমুহ পাচারযজ্ঞের জন্য সহজ ও নিরাপদ জোন।জল ও স্থল এসব পয়েন্টগুলো পেশাদার চোরাকারবারি,রোহিঙ্গা মানব পাচারকারী দালাল চক্র নিয়ন্ত্রণ করেন।যাদের বিরুদ্ধে ইয়াবা,চোরাচালান,মানব পাচার
মামলাও রয়েছে।সেসব দালালরা নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন পাচারযজ্ঞের পয়েন্ট সমুহ।