১২:২০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেশে ব্যবসার পরিবেশের আরো অবনতি : সিপিডির জরিপ

দেশে ব্যবসার পরিবেশের আরো অবনতি : সিপিডির জরিপ
দেশে ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়নে বড় বাধা দুর্নীতি। এর পরেই রয়েছে অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, ঋণপ্রাপ্তির সমস্যা এবং অদক্ষ প্রশাসন। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ‘বাংলাদেশ ব্যবসায় পরিবেশ ২০২২ : উদ্যোক্তা’ জরিপে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।
এতে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে ব্যবসার পরিবেশের অবনতি হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। তাছাড়া সরকারি সেবা গ্রহণে আগের চেয়ে বেশি ঘুষ দিতে হচ্ছে। গতকাল রবিবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডির কার্যালয়ে মিডিয়া ব্রিফিংয়ে জরিপের তথ্য তুলে ধরেন সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। এ সময় আরো বক্তব্য দেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।

গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরের কৃষি, উৎপাদন ও সেবা খাতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৭৪ জন পদস্থ কর্মকর্তা গত বছরের এপ্রিল থেকে জুলাইয়ে করা এই মতামত জরিপে অংশ নেন। সেই হিসাবে এটি জাতীয় প্রতিনিধিত্বশীল জরিপ নয়। তবে এটি ধারাবাহিক জরিপ, তাই পরিস্থিতির অনেকটা উঠে এসেছে। জরিপে অংশ নেওয়া দুই-তৃতীয়াংশ বা ৪৭ দশমিক ৮ শতাংশ কর্মকর্তা দুর্নীতিকে ব্যবসার বড় বাধা হিসেবে উল্লেখ করেন। কোন কোন জায়গায় দুর্নীতি হচ্ছে, সেটিও জরিপে উঠে এসেছে। ৬৪ শতাংশ কর্মকর্তা কর প্রদানে, ৫৪ শতাংশ ব্যাবসায়িক লাইসেন্স নিতে, ৪৯ শতাংশ গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির সংযোগ নিতে এবং ৭৫ শতাংশ কর্মকর্তা আমদানি-রপ্তানিতে দুর্নীতির কথা বলেছেন। আগের বছরের চেয়ে এবার বেশিসংখ্যক উত্তরদাতা এই ঘুষের কথা বলেছেন। ৪৪ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, দেশ থেকে টাকা পাচার হচ্ছে। অর্থ পাচার নিয়ে সরকারি উদ্যোগ পর্যাপ্ত নয়। ৬৯ শতাংশ ব্যবসায়ী বলছেন, বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন বড় ব্যবসায়ীরা। তাছাড়া আইনশৃঙ্খলার অবনতি হচ্ছে বলেও জরিপে উঠে এসেছে। ৬৬ শতাংশ ব্যবসায়ী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সেবা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন। সামনের দিকে অস্থিরতা বাড়তে পারে বলেও তারা আশঙ্কা করছেন।

জরিপের ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, দুর্নীতির কারণে পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়ছে। সেবার মূল্যও বাড়ছে। এই বাড়তি মূল্যের প্রভাব সাধারণ মানুষকেই টানতে হয়। নানা স্তরের দুর্নীতি ব্যবসার পরিবেশ ও অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, আর্থিক খাতে সুশাসনের অভাব রয়েছে। এসএমই উদ্যোক্তারা ঋণ পান না। পুঁজিবাজারে আগের মতোই দুর্বলতা রয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগ সমানভাবে আকৃষ্ট করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে করকাঠামো-সংক্রান্ত জটিলতা, অবকাঠামোগত ঘাটতি, আমলাতান্ত্রিক দুর্বলতা ও দক্ষ জনবলের অভাবের কারণে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা যাচ্ছে না। আমাদের দেশের নীতিকাঠামো যখন করা হয়, তখন সবার জন্য করা হয়। কিন্তু ছোট, মাঝারি ও বড়দের জন্য ভিন্ন ভিন্ন নীতি দরকার। খাত ও আকারভিত্তিক উদ্যোগ দরকার। জ্বালানির মূল্য নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, এলএনজিতে বড় ভর্তুকির কারণে জ্বালানি খাতে ভর্তুকি বেড়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে গ্যাস উত্তোলনে জোর দিলে দেশে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হতো না।

ট্যাগ :
পাঠকপ্রিয়

আইন শৃঙ্খলা, দ্রব্যমুল্য, সংস্কার বিষয়ে সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ- ধর্ম উপদেষ্টা

দেশে ব্যবসার পরিবেশের আরো অবনতি : সিপিডির জরিপ

প্রকাশিত সময় : ০৯:০২:১৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৩

দেশে ব্যবসার পরিবেশের আরো অবনতি : সিপিডির জরিপ
দেশে ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়নে বড় বাধা দুর্নীতি। এর পরেই রয়েছে অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, ঋণপ্রাপ্তির সমস্যা এবং অদক্ষ প্রশাসন। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ‘বাংলাদেশ ব্যবসায় পরিবেশ ২০২২ : উদ্যোক্তা’ জরিপে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।
এতে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে ব্যবসার পরিবেশের অবনতি হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। তাছাড়া সরকারি সেবা গ্রহণে আগের চেয়ে বেশি ঘুষ দিতে হচ্ছে। গতকাল রবিবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডির কার্যালয়ে মিডিয়া ব্রিফিংয়ে জরিপের তথ্য তুলে ধরেন সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। এ সময় আরো বক্তব্য দেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।

গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরের কৃষি, উৎপাদন ও সেবা খাতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৭৪ জন পদস্থ কর্মকর্তা গত বছরের এপ্রিল থেকে জুলাইয়ে করা এই মতামত জরিপে অংশ নেন। সেই হিসাবে এটি জাতীয় প্রতিনিধিত্বশীল জরিপ নয়। তবে এটি ধারাবাহিক জরিপ, তাই পরিস্থিতির অনেকটা উঠে এসেছে। জরিপে অংশ নেওয়া দুই-তৃতীয়াংশ বা ৪৭ দশমিক ৮ শতাংশ কর্মকর্তা দুর্নীতিকে ব্যবসার বড় বাধা হিসেবে উল্লেখ করেন। কোন কোন জায়গায় দুর্নীতি হচ্ছে, সেটিও জরিপে উঠে এসেছে। ৬৪ শতাংশ কর্মকর্তা কর প্রদানে, ৫৪ শতাংশ ব্যাবসায়িক লাইসেন্স নিতে, ৪৯ শতাংশ গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির সংযোগ নিতে এবং ৭৫ শতাংশ কর্মকর্তা আমদানি-রপ্তানিতে দুর্নীতির কথা বলেছেন। আগের বছরের চেয়ে এবার বেশিসংখ্যক উত্তরদাতা এই ঘুষের কথা বলেছেন। ৪৪ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, দেশ থেকে টাকা পাচার হচ্ছে। অর্থ পাচার নিয়ে সরকারি উদ্যোগ পর্যাপ্ত নয়। ৬৯ শতাংশ ব্যবসায়ী বলছেন, বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন বড় ব্যবসায়ীরা। তাছাড়া আইনশৃঙ্খলার অবনতি হচ্ছে বলেও জরিপে উঠে এসেছে। ৬৬ শতাংশ ব্যবসায়ী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সেবা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন। সামনের দিকে অস্থিরতা বাড়তে পারে বলেও তারা আশঙ্কা করছেন।

জরিপের ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, দুর্নীতির কারণে পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়ছে। সেবার মূল্যও বাড়ছে। এই বাড়তি মূল্যের প্রভাব সাধারণ মানুষকেই টানতে হয়। নানা স্তরের দুর্নীতি ব্যবসার পরিবেশ ও অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, আর্থিক খাতে সুশাসনের অভাব রয়েছে। এসএমই উদ্যোক্তারা ঋণ পান না। পুঁজিবাজারে আগের মতোই দুর্বলতা রয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগ সমানভাবে আকৃষ্ট করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে করকাঠামো-সংক্রান্ত জটিলতা, অবকাঠামোগত ঘাটতি, আমলাতান্ত্রিক দুর্বলতা ও দক্ষ জনবলের অভাবের কারণে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা যাচ্ছে না। আমাদের দেশের নীতিকাঠামো যখন করা হয়, তখন সবার জন্য করা হয়। কিন্তু ছোট, মাঝারি ও বড়দের জন্য ভিন্ন ভিন্ন নীতি দরকার। খাত ও আকারভিত্তিক উদ্যোগ দরকার। জ্বালানির মূল্য নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, এলএনজিতে বড় ভর্তুকির কারণে জ্বালানি খাতে ভর্তুকি বেড়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে গ্যাস উত্তোলনে জোর দিলে দেশে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হতো না।