১২:১৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নাইক্ষ্যংছড়ি সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের অনিয়ম দুর্নীতিতে অতিষ্ঠ শিক্ষার্থীরা

সরকারি কলেজে বোর্ড পরীক্ষার্থীদের প্রবেশ পত্র বা অন্য কোন ফি আদায়ের নিয়ম না থাকলেও নাইক্ষ্যংছড়ি হাজী এম এ কালাম সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জাফর আলমের বিরুদ্ধে এসএসসি ও ডিগ্রী পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যে কলেজের নির্ধারিত ফির অতিরিক্ত ছয় লাখ টাকা আদায় করেছে বলে জানিয়েছেন কলেজ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

জানা যায়, এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে জনপ্রতি ৫ শত টাকা এবং ডিগ্রি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে জনপ্রতি ১ হাজার টাকা করে অতিরিক্ত নেওয়া হয়। কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জাফর আলমের নির্দেশেই এসব টাকা নেওয়া হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যমতে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ টাকার মতো অতিরিক্ত আদায় করা টাকার কোন হদিস নেই কলেজের কারোর কাছে। সম্পূর্ন ব্যাক্তিগত ভাবে আদায় করা এই টাকা ছাড়াও কলেজ ফান্ড থেকে নিয়মিত নামে বেনামে মোটা অংকের টাকা আত্মসাৎ করেন। এমন অভিযোগ জোরালো হয়ে উঠছে অভিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জাফর আলমের বিরুদ্ধে।

শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জাফর আলম বলেন, পরীক্ষা চালাতে এবং কলেজের জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন আছে। এছাড়া ইউএনও ডিসি অফিসেও টাকা দিতে হয়। তাই অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে।

এবারে উক্ত কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষার্থী সালমান, শারমিন, হাফসা সহ অনেকে জানান, আমরা ৩০ জুন থেকে শুরু হতে যাওয়া এইচএসসি পরীক্ষার্থী। এর আগে ফরম ফিলাপের সময় আমাদের কাছ থেকে ২১০০ টাকার মধ্যে ২৩০০ টাকা করে নেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে আমারা জেনেছি বোর্ড ফিস সহ মিলে ২১০০ টাকা নেওয়ার বিধান ছিল, সেখানেও ২০০ টাকা করে অতিরিক্ত নেওয়া হয়েছে। এখন প্রবেশ পত্র নেওয়ার সময় আবার ৫০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। অথচ প্রবেশপত্রে টাকা নেওয়ার কোন নিয়ম নেই। এখানে ৪৭০ জনের মত শিক্ষার্থী আছে, এছাড়া বাইশারী থেকে আরো শতাধিক পরীক্ষার্থী আছে। যারা কিনা এখানে পরীক্ষা দেবেন। আবার তাদের কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে ৬০০ টাকা করে।

শিক্ষার্থীরা দাবী করেন, আমরা কক্সবাজার সহ অন্যান্য সরকারি কলেজে যোগাযোগ করে জেনেছি প্রবেশ পত্র নিতে কোন ফি দিতে হয় না। কিন্তু আমাদের কলেজে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জাফর আলম স্যার কোন নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে আমাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এদিকে কলেজ সূত্রে জানা যায়, এর আগে ডিগ্রি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত এক হাজার টাকা করে আদায় করা হয়েছিল।

কলেজ নির্ধারিত ফি ব্যতীত অতিরিক্ত টাকা আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জাফর আলম বলেন, আমাদের কলেজের পরীক্ষার্থী আছে ৪৭০ জন। অন্যান্য সব মিলিয়ে ৬০০র কাছাকাছি পরীক্ষার্থী আছে। পরীক্ষা চালাতে প্রায় ৪ লাখ টাকার প্রয়োজন আছে, আমাদের আছে ২ লাখ টাকা, বাকি টাকা কোথা থেকে আনবো। তাছাড়া ইউএনও ডিসি অফিসে খরচ আছে। কাগজপত্র প্রশ্ন পত্র আনতে খরচ আছে, তাই কিছু বাড়তি টাকা নিতে হয়।

তবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের এই বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে শিক্ষার্থী এবং কলেজের শিক্ষকরা বলেন, এটা বোর্ড পরীক্ষা। এখানে সব ব্যয়ভার শিক্ষা বোর্ড বহন করে। তাছাড়া বোর্ড ফি বাবদ সমস্ত টাকা ইতিমধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে। সরকারি কলেজে টাকা নাই, এমন বক্তব্য সরকারের বিরুদ্ধে নিছক ষড়যন্ত্র। আর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া অতিরিক্ত টাকা কোথায়, কোন ফান্ডে রাখা হয়। আর কোন খাতে ব্যয় করেছে সেটা কলেজের কেউ জানেনা। আর যেহেতু সরকারি কলেজ পরিচালনা কমিটি নাই তাই এখানে প্রতিটি খরচের জন্য আয় ব্যায় কমিটি থাকা বাধ্যতামুলক। মূলত কলেজের অফিস সহকারী আবু ছিদ্দিক এবং ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মিলে কলেজটাকে অনিয়ম দূর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছে। দিন দিনই এই কলেজের পড়ালেখার মান নিম্নমানের সহ এই কলেজকে পারিবারিক প্রতিষ্টানে পরিণত করেছে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জাফর আলম। সম্প্রতি কলেজের টাকা নিয়ে একটি ফটোকপি মেশিন ক্রয় করা হলেও সেই মেশিনে ফটোকপি করা কাগজের বিল ভাউচার দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ করছে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। আর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া অতিরিক্ত টাকা কোথায়, কোন খাতে ব্যয় করেছে তা মাউশি এবং দুদকের মাধ্যমে তদন্ত করা দরকার বলে দাবি করেন তারা।

এ ব্যাপারে কলেজের শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম বলেন, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৫০০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে এটা জেনেছি। তবে এ সমস্ত অন্যায় কাজে সাথে আমি কোন ভাবেই সম্পৃক্ত নই। আমি এসব অন্যায় কাজকে সমর্থনও করিনা। এখানে টাকা আদায়ের কোন রশিদ দেওয়া হচ্ছেনা। আবার টাকা গুলো কলেজ ফান্ডেও জমা হচ্ছে না। এটা ব্যাক্তিগত ভাবে হস্তমজুদ করা হচ্ছে যা গুরুতর অপরাধ বলে মনে করি। এছাড়া শিক্ষার্থীদের অনেকটা হুমকি ধমকি দিয়ে এসব অবৈধ টাকা আদায় করা হয় বলে জানান তিনি।

এ ব্যপারে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, সরকারি কলেজের অতিরিক্ত ফি নেওয়ার কোন বিধান নেই। আর ইউএনও, ডিসির নামে টাকা নেওয়া এটা অপরাধ। আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

ট্যাগ :
পাঠকপ্রিয়

আইন শৃঙ্খলা, দ্রব্যমুল্য, সংস্কার বিষয়ে সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ- ধর্ম উপদেষ্টা

নাইক্ষ্যংছড়ি সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের অনিয়ম দুর্নীতিতে অতিষ্ঠ শিক্ষার্থীরা

প্রকাশিত সময় : ০৪:৫৫:৫৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪

সরকারি কলেজে বোর্ড পরীক্ষার্থীদের প্রবেশ পত্র বা অন্য কোন ফি আদায়ের নিয়ম না থাকলেও নাইক্ষ্যংছড়ি হাজী এম এ কালাম সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জাফর আলমের বিরুদ্ধে এসএসসি ও ডিগ্রী পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যে কলেজের নির্ধারিত ফির অতিরিক্ত ছয় লাখ টাকা আদায় করেছে বলে জানিয়েছেন কলেজ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

জানা যায়, এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে জনপ্রতি ৫ শত টাকা এবং ডিগ্রি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে জনপ্রতি ১ হাজার টাকা করে অতিরিক্ত নেওয়া হয়। কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জাফর আলমের নির্দেশেই এসব টাকা নেওয়া হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যমতে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ টাকার মতো অতিরিক্ত আদায় করা টাকার কোন হদিস নেই কলেজের কারোর কাছে। সম্পূর্ন ব্যাক্তিগত ভাবে আদায় করা এই টাকা ছাড়াও কলেজ ফান্ড থেকে নিয়মিত নামে বেনামে মোটা অংকের টাকা আত্মসাৎ করেন। এমন অভিযোগ জোরালো হয়ে উঠছে অভিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জাফর আলমের বিরুদ্ধে।

শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জাফর আলম বলেন, পরীক্ষা চালাতে এবং কলেজের জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন আছে। এছাড়া ইউএনও ডিসি অফিসেও টাকা দিতে হয়। তাই অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে।

এবারে উক্ত কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষার্থী সালমান, শারমিন, হাফসা সহ অনেকে জানান, আমরা ৩০ জুন থেকে শুরু হতে যাওয়া এইচএসসি পরীক্ষার্থী। এর আগে ফরম ফিলাপের সময় আমাদের কাছ থেকে ২১০০ টাকার মধ্যে ২৩০০ টাকা করে নেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে আমারা জেনেছি বোর্ড ফিস সহ মিলে ২১০০ টাকা নেওয়ার বিধান ছিল, সেখানেও ২০০ টাকা করে অতিরিক্ত নেওয়া হয়েছে। এখন প্রবেশ পত্র নেওয়ার সময় আবার ৫০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। অথচ প্রবেশপত্রে টাকা নেওয়ার কোন নিয়ম নেই। এখানে ৪৭০ জনের মত শিক্ষার্থী আছে, এছাড়া বাইশারী থেকে আরো শতাধিক পরীক্ষার্থী আছে। যারা কিনা এখানে পরীক্ষা দেবেন। আবার তাদের কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে ৬০০ টাকা করে।

শিক্ষার্থীরা দাবী করেন, আমরা কক্সবাজার সহ অন্যান্য সরকারি কলেজে যোগাযোগ করে জেনেছি প্রবেশ পত্র নিতে কোন ফি দিতে হয় না। কিন্তু আমাদের কলেজে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জাফর আলম স্যার কোন নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে আমাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এদিকে কলেজ সূত্রে জানা যায়, এর আগে ডিগ্রি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত এক হাজার টাকা করে আদায় করা হয়েছিল।

কলেজ নির্ধারিত ফি ব্যতীত অতিরিক্ত টাকা আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জাফর আলম বলেন, আমাদের কলেজের পরীক্ষার্থী আছে ৪৭০ জন। অন্যান্য সব মিলিয়ে ৬০০র কাছাকাছি পরীক্ষার্থী আছে। পরীক্ষা চালাতে প্রায় ৪ লাখ টাকার প্রয়োজন আছে, আমাদের আছে ২ লাখ টাকা, বাকি টাকা কোথা থেকে আনবো। তাছাড়া ইউএনও ডিসি অফিসে খরচ আছে। কাগজপত্র প্রশ্ন পত্র আনতে খরচ আছে, তাই কিছু বাড়তি টাকা নিতে হয়।

তবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের এই বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে শিক্ষার্থী এবং কলেজের শিক্ষকরা বলেন, এটা বোর্ড পরীক্ষা। এখানে সব ব্যয়ভার শিক্ষা বোর্ড বহন করে। তাছাড়া বোর্ড ফি বাবদ সমস্ত টাকা ইতিমধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে। সরকারি কলেজে টাকা নাই, এমন বক্তব্য সরকারের বিরুদ্ধে নিছক ষড়যন্ত্র। আর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া অতিরিক্ত টাকা কোথায়, কোন ফান্ডে রাখা হয়। আর কোন খাতে ব্যয় করেছে সেটা কলেজের কেউ জানেনা। আর যেহেতু সরকারি কলেজ পরিচালনা কমিটি নাই তাই এখানে প্রতিটি খরচের জন্য আয় ব্যায় কমিটি থাকা বাধ্যতামুলক। মূলত কলেজের অফিস সহকারী আবু ছিদ্দিক এবং ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মিলে কলেজটাকে অনিয়ম দূর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছে। দিন দিনই এই কলেজের পড়ালেখার মান নিম্নমানের সহ এই কলেজকে পারিবারিক প্রতিষ্টানে পরিণত করেছে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জাফর আলম। সম্প্রতি কলেজের টাকা নিয়ে একটি ফটোকপি মেশিন ক্রয় করা হলেও সেই মেশিনে ফটোকপি করা কাগজের বিল ভাউচার দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ করছে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। আর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া অতিরিক্ত টাকা কোথায়, কোন খাতে ব্যয় করেছে তা মাউশি এবং দুদকের মাধ্যমে তদন্ত করা দরকার বলে দাবি করেন তারা।

এ ব্যাপারে কলেজের শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম বলেন, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৫০০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে এটা জেনেছি। তবে এ সমস্ত অন্যায় কাজে সাথে আমি কোন ভাবেই সম্পৃক্ত নই। আমি এসব অন্যায় কাজকে সমর্থনও করিনা। এখানে টাকা আদায়ের কোন রশিদ দেওয়া হচ্ছেনা। আবার টাকা গুলো কলেজ ফান্ডেও জমা হচ্ছে না। এটা ব্যাক্তিগত ভাবে হস্তমজুদ করা হচ্ছে যা গুরুতর অপরাধ বলে মনে করি। এছাড়া শিক্ষার্থীদের অনেকটা হুমকি ধমকি দিয়ে এসব অবৈধ টাকা আদায় করা হয় বলে জানান তিনি।

এ ব্যপারে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, সরকারি কলেজের অতিরিক্ত ফি নেওয়ার কোন বিধান নেই। আর ইউএনও, ডিসির নামে টাকা নেওয়া এটা অপরাধ। আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।