কক্সবাজার পৌরসভা ১২টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। পৌর শহরের গুরুত্বপূর্ণ পানি চলাচলের নালাগুলো এখন ময়লা আবর্জনার স্তূপে পরিণত হয়েছে। যার কারণে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ চরমে। ময়লা পানিতে ভাসছে পলিথিনের ব্যাগসহ নানা ধরণের বর্জ্য। এসব থেকে চারদিকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। নালার পাশ দিয়ে যাওয়াই দুর্বিসহ হয়ে পড়েছে। নাক চেপে ধরে চলতে হচ্ছে সাধারণ মানুষের। এমন চিত্র কক্সবাজার পৌর শহরের প্রত্যেক এলাকায় দেখা যায়। আসন্ন বর্ষা মৌসুমে পৌর এলাকার নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধার আশংকা করছেন শহরবাসী। অপরদিকে নালার উপরেও জমে আছে ময়লার ভাগাড়। এছাড়া প্রধানসড়ক ও বড় বাজার এলাকাজুড়ে নালার উপর বসেছে নানা স্থাপনা। এতে দুর্ভোগ বাড়ছে জ্যামিকিতহারে। সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের কলাতলী মোড়ে থেকে ৬নং ঘাট পর্যন্ত সম্প্রতি নালা নির্মাণ করা হলেও এর আশপাশে রয়েছে ময়লার ভাগাড়। স্থানীয় অনেকের ভাষ্যমতে, সচেতনতার অভাবে শহরের পরিবেশ দিন দিন দূষিত হচ্ছে। হোটেল মোটেল জোনের প্রায় নালায় জমেছে ময়লার স্তূপ। নিচু সড়কের পাশের নালা থেকে ময়লা পানি বের হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। সড়কের পাশে স্থানীয়রা ময়লা ফেলার কারণে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। বিভিন্ন এলাকায় পৌরসভার কোনো ডাস্টবিনও নেই।
কিছু কিছু জায়গায় ডাস্টবিন থাকলেও পৌরসভার পরিচ্ছন্নকর্মীরা তা এড়িয়ে চলার কারণে এসব ময়লার স্তূপে পরিণত হচ্ছে। ফলে যত্রতত্র ময়লা—আবর্জনা ফেলা হলেও দেখার কেউ নেই। মূলতঃ ময়লা আবর্জনা ফেলার কোন নির্দিষ্ট ডাস্টবিনের জায়গা না থাকার কারণে সাধারণ মানুষ নালা এবং ফুটপাতে ময়লার স্তূপ করে রাখে। শহরের বাজার ঘাটা এলাকার আইবিপি মাঠস্থ শংকর মঠ মন্দিরের পার্শ্বে যে ময়লার স্তূপ রয়েছে। ওই স্তূপের পাশ দিয়েও মানুষের যাতায়াত করা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। ফুয়াদ আল খতিব হাসপাতালের পাশে ডাস্টবিন থাকার পরেও কয়েকটি হাসপাতালের পরিচ্ছন্নকর্মীরা ডাস্টবিনে না রেখে নালায় ফেলে দেয়। যা পরিস্কার না করায় দুর্গন্ধের কারণে তার পাশ দিয়ে চলাচলেও বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। পথচারী মাহফুজ মিয়া ও রফিকুল ইসলাম বলেন, কক্সবাজার পৌরসভার ফুটপাত দিয়ে চলাচল করতে গেলে নালা ও ময়লার স্তূপর দুর্গন্ধের ফলে স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারে না। বিশেষ করে ঘুনগাছ তলার নালায় ফেলে রাখা ময়লার দুর্গন্ধে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বেশি। সড়ক মেরামত ও ময়লা দ্রুত অপসারণের পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। কক্সবাজার শহরে প্রতিটি নালা তো সড়কের পাশে ময়লা—আবর্জনা স্তূপ করে রাখা হয়েছে। ময়লার উৎকট গন্ধে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে।
শহরে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ময়লা আবর্জনার স্তূপ থেকে ছড়ানো দুর্গন্ধে দূষিত হচ্ছে আশেপাশের পরিবেশ। অপরিকল্পিতভাবে দিনের পর দিন এখানে ময়লা ফেলে ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা। নাকে কাপড় ছাড়া কিংবা নিঃশ্বাস বন্ধ না করে এই নালা পাশ দিয়ে যাওয়া একেবারে অসম্ভব। পথচারী ও শহরবাসী নালার পার্শ্বে ফুটপাত দিয়ে কষ্ট করে যাতায়াত করতে পারলেও অসুস্থ ও মুমূর্ষু রোগীদের নিয়ে চরম বিপাকে পড়তে হয়। কক্সবাজার পৌরসভার পরিচ্ছন্নকর্মীরা ভোর বেলায় ময়লা পরিস্কার না করে, স্কুল, কলেজ পড়–য়া ছাত্র—ছাত্রী এবং বিভিন্ন অফিস আদালতের লোকজন নির্দিষ্ট সময়ে অফিসে আসতে গেলে আবর্জনার পরিস্কারের গাড়ীর দূর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে এবং পিকআপ গাড়ীর ব্যাকঢালা না থাকার কারণেও ময়লা গুলো প্রধান সড়কে পড়ে যায়, দূষিত হয় পরিবেশ। যার কারণে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ চরমে। সরেজমিনে দেখা যায়, ময়লা—আবর্জনা স্তূপ করে রেখেছেন নালা—নর্দমা গুরো দুর্গন্ধে টেকানো দায়। এ ব্যাপারে পরিবেশ আন্দোলনের নেতা সাইফুল আজম বলেন, দক্ষিণ রুমালিয়ারছড়া এ বিশাল এলাকায় কক্সবাজার পৌরসভার অধীনে কোন প্রকার ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট ডাস্টবিন ও স্থান না থাকায় সাধারণ মানুষ নালায় ময়লা গুলো রেখে স্তূপ করে ফেলে। যার কারণে নালা ভরাট হয়ে বর্ষার মৌসুম কিংবা সামান্য বৃষ্টিতেও পানি রাস্তা দিয়ে চলাচল করে। এতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে শহরের ময়লার স্তূ থেকে ৪০০ মিটার দূরে অবস্থিত এলাকা এবং ৩০০ মিটার দূরে অবস্থিত কক্সবাজার সরকারী বালক ও বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র—ছাত্রীরা প্রায় সময় স্কুল, কোচিং সেন্টারে যাতায়াত করে যার ফলে হাসপাতাল সড়ক, আইবিপি রোড, বৌদ্ধ মন্দির সড়ক, এডভোকেট সালামত উল্লাহ সড়ক দিয়ে বেশির ভাগই ছাত্র—ছাত্রীরা যাতায়াত করে থাকে। নির্দিষ্ট সময়ে ময়লা গুলো পরিস্কার না করায় বিভিন্ন সময় ছাত্র—ছাত্রীরা অসুস্থ হয়ে পড়ে।
দুর্গন্ধের কারণে সড়কটি দিয়ে চলাচল করতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে শহরে বসবাসরত বাসিন্দা, পথচারী, শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ীসহ হাজার হাজার মানুষ। হামিদ নামে এক পথচারী বলেন, বিভিন্ন স্থানের নালা ময়লা ভ্যানে করে এনে এখানে ফেলা হয়। আগে রাস্তার ধারে ময়লা ফেলা হতো, যার কারণে পাশের সড়কটির বেহাল অবস্থা হয়। বৃষ্টির সময় নালাতে ময়লা—আবর্জনার স্তূপ হতে পোকামাকড় রাস্তায় উঠে আসত। আফজাল হোসেন নামের এক কলেজ শিক্ষার্থী বলেন, ময়লার স্তূপের কারণে এই সড়ক দিয়ে আমাদের যাতায়াত করা এখন কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই অতি দ্রুত নালা থেকে ময়লা অপসারণ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে কক্সবাজার পৌরসভার প্রতি জোর দাবী জানিয়েছেন।
কক্সবাজার পৌরসভার প্রতিক্রিয়াঃ কক্সবাজার পৌরসভা কর্তৃক তিন—চারবার সংবাদ সম্মেলন করে নালার উপর অবৈধ ফুটপাত উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করবে বলে ঘোষণা দিলেও এখনও পর্যন্ত কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি পৌর কর্তৃপক্ষ। কক্সবাজার পৌরসভার এমন লোক দেখানো কার্যকর পদক্ষেপের কথা বলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। তারা কোন প্রকার পদক্ষেপ গ্রহণ করে না। ফুটপাত সাধারণ মানুষের উন্মুক্ত থাকার কথা থাকলেও কিছু অসাধু চাঁদাবাজ, দুুর্নীতিবাজরা কক্সবাজার পৌরসভার টোকেন বাণিজ্য করে প্রধান সড়কের উপর সিএনজি ষ্টেশন গড়ে তুলেছে এবং ফুটপাতে বিভিন্ন ফল ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে নানান হকারদের বসিয়ে দিয়ে দৈনিক হাজার হাজার টাকা পৌর কর্তৃপক্ষ হাতিয়ে নিচ্ছে বলে সাধারণ মানুষের অভিযোগ। এসবের কারণে দিন দিন সাধারণ মানুষের পৌরসভার প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করছে।
এ বিষয়ে কক্সবাজার পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র সালাউদ্দিন সেতু বলেন, ১২ টি ওয়ার্ডের সব নালা পরিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু লোকজন নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা না ফেলে নালাতেই ছুঁড়ে মারে। যার কারণে নালাগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে। বর্ষার আগেই আবারও সব নালা পরিস্কার করা হবে।