ইসলামে মাস হিসেবে রমজানের রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব ও মর্যাদা। এই মাসেই কুরআন অবতীর্ণ হয়েছিলো। এই মাসের কথা কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
شَهۡرُ رَمَضَانَ الَّذِیۡۤ اُنۡزِلَ فِیۡهِ الۡقُرۡاٰنُ هُدًی لِّلنَّاسِ وَ بَیِّنٰتٍ مِّنَ الۡهُدٰی وَ الۡفُرۡقَانِ فَمَنۡ شَهِدَ مِنۡکُمُ الشَّهۡرَ فَلۡیَصُمۡهُ
রমজান মাস, যাতে কুরআন নাযিল করা হয়েছে মানুষের জন্য হিদায়াতস্বরূপ এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে মাসটিতে উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে সিয়াম পালন করে। (সুরা বাকারা: ১৮৫)
রমজান মাসে যে কোনো ইবাদতের সওয়াবই বহুগুণ বেড়ে যায়। রমজানের প্রত্যেকটি নফল ইবাদতের সওয়াব ফরজ ইবাদতের সমান। প্রতিটি ফরজ ইবাদতের সওয়াব হয় সত্তরটি ফরজ ইবাদতের সমান। আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘পবিত্র রমজনের একটি রাত বরকত ও ফজিলতের দিক থেকে হাজার মাস থেকেও উত্তম। এ মাসের রোজাকে আল্লাহ তাআলা ফরজ করেছেন এবং এর রাতগুলোয় আল্লাহর সামনে দাঁড়ানোকে নফল ইবাদত রূপে নির্দিষ্ট করেছেন। যে ব্যক্তি রমাযানের রাতে ফরজ ইবাদত ছাড়া সুন্নত বা নফল ইবাদত করবে, তাকে এর বিনিময়ে অন্যান্য সময়ের ফরজ ইবাদতের সমান সওয়াব প্রদান করা হবে। আর যে ব্যক্তি এ মাসে কোনো ফরজ আদায় করবে, সে অন্যান্য সময়ের ৭০টি ফরজ ইবাদতের সমান পুণ্য লাভ করবে।’ (বায়হাকি)
১. বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করুন। রমজান কুরআন নাযিলের মাস। এই মাসে আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কুরআন তিলাওয়াত অনেক বেড়ে যেতো। (সহিহ বুখারি)
২. সামর্থ্য অনুযায়ী বেশি বেশি দান সদকা করুন। আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রমজান মাসে অনেক বেশি দান সদকা করতেন। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, অন্যান্য মাসে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) শ্রেষ্ঠ দানশীল ছিলেন। রমজানে তিনি অন্য সময়ের তুলনায়ও বেশি দান করতেন। (সহিহ বুখারি)
৩. ইফতারের সময় হলে দ্রুত ইফতার করুন। আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সূর্যাস্তের পর মাগরিবের নামাজের আগেই ইফতার করতেন। (সহিহ বুখারি)
৪. ইফতারের সময় এই দোয়া পড়ুন:
ذهب الظمأ وابتلت العروق وثبت الأجر إن شاء الله
উচ্চারণ: যাহাবায-যামাউ ওয়া-বতাল্লাতিল উরুকু ওয়া সাবাতাল আজরু ইনশাআল্লাহ
অর্থ: তৃষ্ণা নিবারিত হয়েছে, শিরা-উপশিরা পরিতৃপ্ত হয়েছে এবং বিনিময় নির্ধারিত হয়েছে ইনশাআল্লাহ। (সুনানে আবু দাউদ)
৫. শেষ রাতে সাহরি খেয়ে রোজা শুরু করুন। আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, তোমরা সাহরি করো, সাহরিতে বরকত আছে। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)
৬. রমজানের রাতগুলোতে দীর্ঘ সময় নিয়ে নামাজে দাঁড়ান। তারাবির নামাজ পড়ুন। আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যাক্তি রমজানের রাতে সওয়াবের আশায় রাত জেগে ইবাদত করে, তার পূর্বের গুনাহ্ মাফ করে দেওয়া হয়। (সহিহ বুখারি)
৭. প্রতি নামাজের অজুর সময় মিসওয়াক করুন। রোজা রেখে মিসওয়াক করতে দ্বিধা করবেন না। আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যদি উম্মতের জন্য কষ্টকর হয়ে যাওয়ার ভয় না করতাম তাহলে প্রতি নামাজের সময় তাদেরকে মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম। (সহিহ বুখারি)
৮. রোজাদারদের ইফতার করান। মসজিদ বা গণইফতারে ইফতার পাঠান। আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যে কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে সে তার সমান সওয়াব পাবে। রোজাদারের সওয়াবও কমবে না। (সুনানে তিরমিজি)