১০:২৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পিএমখালীতে এলজিইডি’র আরসিসি ঢালাই কালভার্ট বিধ্বস্ত

  • এম.এ. সাত্তার
  • প্রকাশিত সময় : ০৭:৫৪:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ জুন ২০২৪
  • ১২২ ভিউ

পিএমখালী ইউনিয়নে ব্যবহারের আগেই নবনির্মিত একটি আরসিসি ঢালাই কালভার্ট পানিতে উপড়ে পড়ে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয় সুবিধাভোগী গোষ্ঠী। তাদের অভিযোগ, ফন্ডিশনে অসংগতি, এলজিইডি অফিসের দায়িত্বশীলদের অব্যবস্থাপনার কারণে এমনটা ঘটেছে। আর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হয়ে উক্ত কালভার্ট (চুক্তি ভিত্তিক) নির্মাণের কাজ করছেন স্থানীয় এক রাজমিস্ত্রী।

সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার পিএমখালী-খুরুশকুল খুলিয়া পাড়া হয়ে কক্সবাজার সংযোগ সড়ক প্রকল্প ছনখোলা রোডের কাজ শুরু হয় চলিত বছরের শুরুতে। এই প্রকল্পের আওতাধীন ৫/৬টি আরসিসি ঢালাই কালভার্ট ও ১টি আরসিসি গার্ডার ব্রীজের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ওখানে পূর্ব থেকে ছিল বদি আলম ডিয়া নামক স্থানের একটি কালভার্ট। উক্ত স্থানের পুরনো বক্স কালভার্ট ভেঙে নতুনভাবে একটি আরসিসি ঢালাই কালভার্ট তৈরির কাজ চলমান ছিল। কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। এর মধ্যেই উল্টে যায় ‘গণেশ’। গত মাসে সারা দেশে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় রিমেল দেখিয়ে দেয়, ব্যাপক অনিয়মের মাধ্যমে এই প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ কালভার্ট গুলো নির্মাণ করা হয়েছে, হচ্ছে। এরজ্যান্ত উদাহরণ হলো পানিতে অকেজো হয়ে পড়া ছনখোলা রোডে নির্মাণাধীন আরসিসি ঢালাই কালভার্ট।

একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানায়, জোয়ারের প্রভাবে সৃষ্ট পানি এই কালভার্ট দিয়ে ঢুকে। পরে ভাটার টানে পানি বেরিয়ে আসার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় অপরিপক্ক এই কালভার্ট। পানি বের হতে না পেরে কালভার্টের ভেতর- বাহির ও তলদেশ দিয়ে বেরিয়ে পড়ে পানি। এ সময় প্রবল স্রোতের টানে কালভার্টের দুই পাশের ৪০-৫০ ফুটের মতো জায়গার মাটিশুদ্ধ পানির সাথে চলে যায়। কালভার্টটি উল্টে গিয়ে মূল ফন্ডিশন থেকে সরিয়ে ২/৩ ফুটের ব্যবধানে একদিকে হেলিয়ে পড়েছে। এতে কেউ হতাহত না হলেও মর্মাহত হয়েছেন সুবিধাভোগী মানুষ।

এ ব্যাপারে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন বলে জানিয়ে স্থানীয়রা বলেন, এলজিইডি অফিসের অবহেলা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের সামগ্রী (স্থানীয় নদীর লবনাক্ত বালু) দিয়ে কালভার্টটি তৈরির কারণে এটির বেহাল দশা। এমনকি কাজের শুরু থেকেই নানা অনিয়মে এই প্রকল্পভুক্ত রাস্তা ও কালভার্ট নির্মাণের কাজ করে যাচ্ছেন ঠিকাদার। অথচ এই প্রকল্পের কাজ চলাকালে কাজ তদারকির ঘাটতি দেখতে পায় তারা।

সুবিধাভোগীদের অভিযোগ পেয়ে সরেজমিন দেখা গেছে, বিধ্বস্ত ঞ্জকালভার্টটির উভয় পাশে ও রাস্তায় এস্কেভেটর দিয়ে তড়িঘড়ি করে মাটি ভরাট করে দিচ্ছে ঠিকাদারের লোকজন। যাতে করে নষ্ট কালভার্টটির বিষয়ে কিছুই বুঝতে না পারেন গণমাধ্যম সহ সংশ্লিষ্ট তদারকি
প্রতিষ্ঠানের লোকজন। এ সময় প্রকল্প কাজে জড়িত দায়িত্বশীল কাউকে পাওয়া যায়নি।

অকেজো হয়ে পড়া কালভার্টের বিষয়ে নালা পরিস্কার কাজে নিয়োজিত শ্রমিক শহীদুল্লাহ, রমজান আলী, একেলাছ প্রতিবেদককে জানান, যৎসামান্য পানির চাপে কালভার্টটি উল্টে গিয়ে এ অবস্থা হয়েছে। কালভার্টটি কতোদিন টিকবে (স্থায়িত্ব) তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন তারা। ঠিকাদারের ইচ্ছামতো কাজ করছে যাচ্ছে এই রাস্তার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো। প্রকল্পের কাজ চললেও দায়িত্বশীল কাউকে দেখা যায়না। মাঝেমধ্যে আগন্তুক কারো দেখা মিললেও রাস্তার একপাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে তাদের। এই দূর্নীতি দেখার কেউ নেই।

আব্দুস শুকুর নামের এক শ্রমিক জানান, কালভার্টি ছড়ার ভরাট বালুতে করা হয়েছে। আর সিসিও ঢালাই দিয়ে নাম মাত্র। খালের লবনাক্ত বালু ব্যবহার করা হয় আর সিসি ঢালাই কাজে। এ কারণেই সামান্য পানিতে কালভার্টি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। এ ঘটনার পর দৌড়ের ওপর আছেন ঠিকাদারের লোকজন।। ফন্ডিশন থেকে উপড়ে গিয়ে ২/৩ ফুট ব্যবধানে ব্যবহার অনুপযোগী কালভার্টি এস্কেভেটর দিয়ে সঠিক পজিশনে আনার সর্বাত্মক চেষ্টা ব্যর্থ তাদের । ২/৩ ফুট ব্যবধানে( উঁচু-নিচু) হেলিয়ে পড়ে আছে কালভার্ট। এই অবস্থাতেই মাটি চাপা দেয়া হয়েছে কালভার্টের উভয় পাশে। যেমনটি- শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা মাত্র।

সদর উপজেলা অফিসের এক কর্মকর্তার বরাতে জানা যায়, বিধ্বস্ত, অকেজো কালভার্টটি প্রকল্পভুক্ত করতে এলজিইডি অফিসের লোকজনকে মোটা অংকে ম্যানেজ করতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে ঠিকাদার। যদিও কোন না কোনভাবে এলজিইডি অফিসে বিধ্বস্ত কালভার্টটির কাজ অবশেষে এলজিইডি অফিসে বুঝিয়ে দিতে পারেন ঠিকাদার, তাহলে এক সময় চরম ভোগান্তিতে পড়তে হবে সবাই কে। অথচ রোডের কাজ আরম্ভের শুরু থেকেই নানা দূর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। তাতে কর্ণপাত করেনি সংশ্লিষ্ট এলজিইডি অফিস।

প্রকল্প ঠিকাদার আকরাম সিকদারের বক্তব্য জানতে কয়েক বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এবিষয়ে কথা হয় সদর উপজেলা এলজিইডি অফিসের উপ সহকারী প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিনের সাথে। তিনি মুঠোফোনে বলেন, এ ব্যাপারে এর আগে কিছু জানতেননা, এখন জেনেছেন। যদি এমন হয়ে থাকে, তাহলে অকেজো হয়ে পড়া কালভার্টটি আদৌ ব্যবহার করা যাবে, কি যাবেনা তা দেখে সিদ্ধান্ত নিবেন।

ট্যাগ :
পাঠকপ্রিয়

আইন শৃঙ্খলা, দ্রব্যমুল্য, সংস্কার বিষয়ে সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ- ধর্ম উপদেষ্টা

পিএমখালীতে এলজিইডি’র আরসিসি ঢালাই কালভার্ট বিধ্বস্ত

প্রকাশিত সময় : ০৭:৫৪:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ জুন ২০২৪

পিএমখালী ইউনিয়নে ব্যবহারের আগেই নবনির্মিত একটি আরসিসি ঢালাই কালভার্ট পানিতে উপড়ে পড়ে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয় সুবিধাভোগী গোষ্ঠী। তাদের অভিযোগ, ফন্ডিশনে অসংগতি, এলজিইডি অফিসের দায়িত্বশীলদের অব্যবস্থাপনার কারণে এমনটা ঘটেছে। আর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হয়ে উক্ত কালভার্ট (চুক্তি ভিত্তিক) নির্মাণের কাজ করছেন স্থানীয় এক রাজমিস্ত্রী।

সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার পিএমখালী-খুরুশকুল খুলিয়া পাড়া হয়ে কক্সবাজার সংযোগ সড়ক প্রকল্প ছনখোলা রোডের কাজ শুরু হয় চলিত বছরের শুরুতে। এই প্রকল্পের আওতাধীন ৫/৬টি আরসিসি ঢালাই কালভার্ট ও ১টি আরসিসি গার্ডার ব্রীজের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ওখানে পূর্ব থেকে ছিল বদি আলম ডিয়া নামক স্থানের একটি কালভার্ট। উক্ত স্থানের পুরনো বক্স কালভার্ট ভেঙে নতুনভাবে একটি আরসিসি ঢালাই কালভার্ট তৈরির কাজ চলমান ছিল। কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। এর মধ্যেই উল্টে যায় ‘গণেশ’। গত মাসে সারা দেশে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় রিমেল দেখিয়ে দেয়, ব্যাপক অনিয়মের মাধ্যমে এই প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ কালভার্ট গুলো নির্মাণ করা হয়েছে, হচ্ছে। এরজ্যান্ত উদাহরণ হলো পানিতে অকেজো হয়ে পড়া ছনখোলা রোডে নির্মাণাধীন আরসিসি ঢালাই কালভার্ট।

একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানায়, জোয়ারের প্রভাবে সৃষ্ট পানি এই কালভার্ট দিয়ে ঢুকে। পরে ভাটার টানে পানি বেরিয়ে আসার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় অপরিপক্ক এই কালভার্ট। পানি বের হতে না পেরে কালভার্টের ভেতর- বাহির ও তলদেশ দিয়ে বেরিয়ে পড়ে পানি। এ সময় প্রবল স্রোতের টানে কালভার্টের দুই পাশের ৪০-৫০ ফুটের মতো জায়গার মাটিশুদ্ধ পানির সাথে চলে যায়। কালভার্টটি উল্টে গিয়ে মূল ফন্ডিশন থেকে সরিয়ে ২/৩ ফুটের ব্যবধানে একদিকে হেলিয়ে পড়েছে। এতে কেউ হতাহত না হলেও মর্মাহত হয়েছেন সুবিধাভোগী মানুষ।

এ ব্যাপারে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন বলে জানিয়ে স্থানীয়রা বলেন, এলজিইডি অফিসের অবহেলা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের সামগ্রী (স্থানীয় নদীর লবনাক্ত বালু) দিয়ে কালভার্টটি তৈরির কারণে এটির বেহাল দশা। এমনকি কাজের শুরু থেকেই নানা অনিয়মে এই প্রকল্পভুক্ত রাস্তা ও কালভার্ট নির্মাণের কাজ করে যাচ্ছেন ঠিকাদার। অথচ এই প্রকল্পের কাজ চলাকালে কাজ তদারকির ঘাটতি দেখতে পায় তারা।

সুবিধাভোগীদের অভিযোগ পেয়ে সরেজমিন দেখা গেছে, বিধ্বস্ত ঞ্জকালভার্টটির উভয় পাশে ও রাস্তায় এস্কেভেটর দিয়ে তড়িঘড়ি করে মাটি ভরাট করে দিচ্ছে ঠিকাদারের লোকজন। যাতে করে নষ্ট কালভার্টটির বিষয়ে কিছুই বুঝতে না পারেন গণমাধ্যম সহ সংশ্লিষ্ট তদারকি
প্রতিষ্ঠানের লোকজন। এ সময় প্রকল্প কাজে জড়িত দায়িত্বশীল কাউকে পাওয়া যায়নি।

অকেজো হয়ে পড়া কালভার্টের বিষয়ে নালা পরিস্কার কাজে নিয়োজিত শ্রমিক শহীদুল্লাহ, রমজান আলী, একেলাছ প্রতিবেদককে জানান, যৎসামান্য পানির চাপে কালভার্টটি উল্টে গিয়ে এ অবস্থা হয়েছে। কালভার্টটি কতোদিন টিকবে (স্থায়িত্ব) তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন তারা। ঠিকাদারের ইচ্ছামতো কাজ করছে যাচ্ছে এই রাস্তার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো। প্রকল্পের কাজ চললেও দায়িত্বশীল কাউকে দেখা যায়না। মাঝেমধ্যে আগন্তুক কারো দেখা মিললেও রাস্তার একপাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে তাদের। এই দূর্নীতি দেখার কেউ নেই।

আব্দুস শুকুর নামের এক শ্রমিক জানান, কালভার্টি ছড়ার ভরাট বালুতে করা হয়েছে। আর সিসিও ঢালাই দিয়ে নাম মাত্র। খালের লবনাক্ত বালু ব্যবহার করা হয় আর সিসি ঢালাই কাজে। এ কারণেই সামান্য পানিতে কালভার্টি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। এ ঘটনার পর দৌড়ের ওপর আছেন ঠিকাদারের লোকজন।। ফন্ডিশন থেকে উপড়ে গিয়ে ২/৩ ফুট ব্যবধানে ব্যবহার অনুপযোগী কালভার্টি এস্কেভেটর দিয়ে সঠিক পজিশনে আনার সর্বাত্মক চেষ্টা ব্যর্থ তাদের । ২/৩ ফুট ব্যবধানে( উঁচু-নিচু) হেলিয়ে পড়ে আছে কালভার্ট। এই অবস্থাতেই মাটি চাপা দেয়া হয়েছে কালভার্টের উভয় পাশে। যেমনটি- শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা মাত্র।

সদর উপজেলা অফিসের এক কর্মকর্তার বরাতে জানা যায়, বিধ্বস্ত, অকেজো কালভার্টটি প্রকল্পভুক্ত করতে এলজিইডি অফিসের লোকজনকে মোটা অংকে ম্যানেজ করতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে ঠিকাদার। যদিও কোন না কোনভাবে এলজিইডি অফিসে বিধ্বস্ত কালভার্টটির কাজ অবশেষে এলজিইডি অফিসে বুঝিয়ে দিতে পারেন ঠিকাদার, তাহলে এক সময় চরম ভোগান্তিতে পড়তে হবে সবাই কে। অথচ রোডের কাজ আরম্ভের শুরু থেকেই নানা দূর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। তাতে কর্ণপাত করেনি সংশ্লিষ্ট এলজিইডি অফিস।

প্রকল্প ঠিকাদার আকরাম সিকদারের বক্তব্য জানতে কয়েক বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এবিষয়ে কথা হয় সদর উপজেলা এলজিইডি অফিসের উপ সহকারী প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিনের সাথে। তিনি মুঠোফোনে বলেন, এ ব্যাপারে এর আগে কিছু জানতেননা, এখন জেনেছেন। যদি এমন হয়ে থাকে, তাহলে অকেজো হয়ে পড়া কালভার্টটি আদৌ ব্যবহার করা যাবে, কি যাবেনা তা দেখে সিদ্ধান্ত নিবেন।