সদর উপজেলার পিএমখালী ইউনিয়নে এলজিইডির রাস্তা নির্মাণ কাজে বাঁকখালী নদীর লবনাক্ত বালু ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, রাস্তার জন্য বালু কিনতে বরাদ্দ থাকলেও নদীর লবনাক্ত বালু দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করিয়ে বরাদ্দের টাকা লোপাট করা হচ্ছে। স্থানীয়দের ভাষ্য মতে, কক্সবাজার এলজিইডির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে নদীর লবনাক্ত বালু ও নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে নামমাত্র কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তাদের মতে, এটা চুরির নামান্তর। নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। এ প্রকল্প এলাকায় দুটি এস্কেভেটরের সাহায্যে ৪/৫ টি ডাম্পার দিয়ে বালু সরবরাহ করা হচ্ছে এলজিইডির এ রাস্তায়।
জানা গেছে, পিএমখালী ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড ছনখোলা মালিপাড়া এক্সমিলিটারি রাস্তার মাথা থেকে ছনখোলা ঘাটঘর বাজার হয়ে খুরুশকুল কুলিয়াপাড়া পর্যন্ত নির্মাণাধীন এই রাস্তাতে বালুর পরিবর্তে দেয়া হচ্ছে বাঁকখালী নদীর লবনাক্ত ভরাট বালু ও নিম্নমানের ইটের খোয়া। এতেও মানা হচ্ছে না খোয়া ও বালুর অনুপাত। আবার রাস্তার কাজে ব্যবহার করা এসব নদীর বালু ও নিম্নমানের খোয়া মিক্সের মধ্যে পাড়াখালের লবন পানি ছিটিয়ে রুলার করে দিচ্ছে ঠিকাদার আকরাম সিকদার।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রাস্তার কাজ তদারকির দায়িত্বে এলজিইডির দায়িত্বপ্রাপ্ত কারো দেখা মিলছে না। এ ছাড়া রাস্তার কাজ শুরুর আগে ঠিকাদারের নাম, প্রকল্পের নাম, প্রাক্কলিত ব্যয়, চুক্তির মূল্য, কাজের শুরু ও মেয়াদ লিখে সাইনবোর্ড টাঙানোর কথা থাকলেও সেটা নেই। এখন রাস্তার কাজ চলছে অথচ টাঙানো হয়নি সাইনবোর্ড। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মি এন্টারন্যাশনাল দায়সারাভাবে কাজটি সম্পাদনের পাঁয়তারা করছেন।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, উক্ত রাস্তাটি সম্পন্ন করার দায়িত্ব পেয়েছে মি ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। চলতি বছরের শুরুতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এ রাস্তা নির্মাণের কাজ শুরু করে এ পর্যন্ত চারটি মিনি কালভার্টের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আর সাববেজের কাজ সম্পন্ন করেন প্রায় অর্ধেকের মতো।
সরেজমিনে দেখা যায়, নির্মাণাধীন রাস্তার মধ্যে কাজ করছেন শ্রমিকদের একটি দল। পুরো রাস্তাজুড়ে নদীর লবণাক্ত বালু ও নিম্নমানের খোয়া ব্যবহার করা হয়েছে। ছনখোলা খেয়াঘাট সংলগ্ন রাস্তার পাশে রাখা আছে প্রশাসনের চোখে ফাঁকি দিয়ে স্থানীয় বাঁকখালী নদী থেকে অবৈধ বাল্কহেড দিয়ে তোলা লবনাক্ত বালু। পৌরসভার এসএমপাড়ার বাসিন্দারা প্রতিবেদককে বলেন, বাঁকখালী নদী থেকে শক্তিশালী ড্রেজার মেশিন ও অবৈধ বল্কহেড দিয়ে লবনাক্ত বালু তুলে ঘাট সংলগ্ন রাস্তার পাশে মজুদ করে রাখা হয়। ওই বালু ফুট পরিমাপে (১ফুট ২০টাকা) কিনে নিয়ে সড়ক নির্মাণ কাজে ব্যবহার করছে ঠিকাদার। এ প্রকল্পে প্রায় ২হাজার ডাম্পারের অধিক গাড়ি বালুর প্রয়োজন হবে (প্রতি ডাম্পার ২হাজার টাকা, ১ফুট ২০ টাকা, ১গাড়িতে ১শত ফুট)। প্রকল্পের রাস্তা নির্মাণে মাটি ভরাট, বেড প্রস্তুতকরণ, বক্স কাটিং, বালু ভরাটকরণ, এজিং, করার কথা থাকলেও কিছুই মানা হচ্ছে না।
আরো দেখা গেছে, রাস্তা নির্মাণে ব্যবহার করা হচ্ছে প্রায় ২৫-৩০ বছর আগে এ রাস্তায় ব্যবহৃত (এইচবিবি) মানহীন ইটের টুকরো/খোয়া। বালুর পরিবর্তে দেওয়া হচ্ছে নদীর লবন বালু। বিদ্যুৎ মটরের সাহায্য খালের লবন পানিতে ভিজিয়ে করা হচ্ছে রুরাল। প্রথম শ্রেণির ইটের খোয়া ব্যবহার না করে দেওয়া হয়েছে নষ্ট /অকেজো ইট। মালীপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কয়েক শ্রমিক কাজের ফাঁকে বিশ্রাম নিচ্ছেন। রাস্তাতে নিম্নমানের ইটের টুকরো, লবন বালু ব্যবহারের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে শ্রমিকরা জানান, ঠিকাদার যা দিচ্ছে তা দিয়ে কাজ করছে তারা।
স্থানীয় আবু বক্কর বলেন, 'আমরা শুনেছি পিএমখালী ইউপির ২নং ওয়ার্ড মালিপাড়া থেকে খুরুশকুল ইউপির কুলিয়াপাড়া পর্যন্ত রাস্তা হবে। অথচ এ রাস্তায় নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করছে ঠিকাদার। আপত্তি জানিয়েও লাভ হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল হামিদ, সোহেল রানা, কবির হোসেন অভিযোগ করে বলেন, পূর্বপুরুষেরা তো বসবাস করেছেই 'আমি/আমরা ৩০-৩৫ বছর ধরে এখানে বসবাস করছি। অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে রাস্তাটি পাকা হচ্ছে, তাও কাজের মান দেখছি নিম্নমানের। রাস্তায় বালু ও খোয়াতে খালের লবনাক্ত পানি দিয়ে রুলার করে দেয়া হচ্ছে।
এলাকার সুবিধাভোগী মানুষের অভিযোগ, রাস্তার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে নদীর লবনাক্ত বালু। সেইসব নিম্নমানের খোয়া ও লবন বালু মিশিয়ে রাস্তায় দিচ্ছে ঠিকাদার। দরপত্র অনুসারে খোয়া ও বালু মিশ্রণ অনুপাত মানছে না।
রাস্তা নির্মাণ কাজে নদীর লবন বালু ও লবণাক্ত পানি ব্যবহারে অনুমতি আছে কি না, জানতে চাইলে এ প্রকল্প কাজ দেখাশোনার দায়িত্বরত তোফাজ্জল নামের এক ব্যক্তির মুঠোফোনে জানান, নদীর লবন বালু রাস্তায় দেয়ার অনুমতি দিয়েছে এলজিইডি অফিস। রাস্তায় ব্যবহৃত আগের ইটগুলো রাস্তার মুল্যের সাথে ধরে দেয়া হয়। তাই তারা এসব ইট রাস্তা নির্মাণে ব্যবহার করছে। সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দিবেন। প্রকল্পের নাম, প্রাক্কলিত ব্যয়, চুক্তির মূল্য কত জানেনা। তবে ইঞ্জিনিয়ার হেলাল সাহেব এই প্রকল্প দেখাশুনা করছেন তার সাথে কথা বললে বিস্তারিত জানা যাবে।
ঠিকাদার আকরাম সিকদারের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। প্রকল্পের দায়িত্বরত ইঞ্জিনিয়ার হেলাল উদ্দিনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে সে রোজা রমজানের দিন বলে রাতে (২৭ মার্চ) কথা বলতে রাজি হননি। অফিস টাইমে যোগাযোগ করতে বলেন। পরদিন ফোন রিসিভ করেননি। যোগাযোগ করা হলে সদর উপজেলা প্রকৌশলী তৌহিদুল ইসলাম প্রতিবেদকের বক্তব্য শুনে কোন মন্তব্য না করে বলেন, সে মাত্র অফিসে এসেছেন। পরে কথা বলবেন।