০৬:৩১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পেকুয়ায় শিক্ষক আরিফ হত্যার ঘটনায় অন্যতম মাস্টারমাইন্ড আলোচিত জলদস্যু ইউনুচ!

গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলা সদরের চৌমুুহুনীর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সামনে থেকে স্কুল শিক্ষক মো: আরিফ অপহৃত হন। অপহরণের পর আরিফের পরিবার থেকে পেকুয়া থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয় এবং বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নেওয়া হয়। অভিযোগের পর শিক্ষকের পরিবার থেকে পেকুয়া থানার ওসিকে বারবার অনুরোধ করা হয় পেকুয়া উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলমের বাড়ীতে অভিযান চালানোর জন্য। কিন্তু পেকুয়া থানার ওসি শিক্ষকের পরিবারের অভিযোগের কোন ধরনের কর্ণপাত করেনি। এরই মধ্যে অপহরণের পর শিক্ষকের পরিবার থেকে ৩৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে সংঘবদ্ধ চক্র। এরপর র‌্যাব-১৫ এর একটি টিম গত ১১ অক্টোবর দিবাগত রাত ৩টার দিকে চট্টগ্রাম শহরের আন্দরকিল্লা এলাকা থেকে শিক্ষকের পরিবার থেকে মুক্তিপণ দাবির অভিযোগে মো: রুবেল খান নামের একজনকে আটক করে পেকুয়া থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ্দ করেন। আটক রুবেল চাঁদপুর জেলার সদর উপজেলার চরপুরচন্ডী ইউনিয়নের হাবিবুল্লাহ খানের পুত্র এবং একটি মোবাইল কোম্পানীর অধীনে পেকুয়ায় চাকুরীরত ছিলো।

অপরদিকে ১১ অক্টোবর বিকাল ৩টার দিকে অপহৃত শিক্ষক মো: আরিফের বস্তাবন্ধী মরদেহ আরিফের বাড়ির অদূরে একটি পরিত্যক্ত পুকুর থেকে উদ্ধার করে পেকুয়া থানা পুলিশ। পরে পেকুয়া থানা পুলিশ মরদেহের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী শেষে ময়না তদন্তের জন্য কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। ময়না তদন্ত শেষে ১২ অক্টোবর সন্ধ্যায় জানাযা শেষে শিক্ষকের মরদেহ সামাজিকভাবে স্থানীয় কবরস্থানে সমাহিত করা হয়েছে। শিক্ষক আরিফ পেকুয়া সদর ইউনিনের মাতবর পাড়া গ্রামের বজল আহমদের পুত্র এবং পেকুয়া সেন্ট্রাল স্কুল এন্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক পদে কর্মরত ছিলেন।

জানা যায়, ঘটনার শুরু থেকেই শিক্ষক আরিফের পরিবারের সন্দেহের তীর ছিল পেকুয়া উপজেলা যুবলীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর আলমের পরিবারের দিকে। শিক্ষক আরিফের পরিবারের কিছু জমি দীর্ঘদিন ধরে জবর দখলে রেখেছিল যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম। সম্প্রতি সময়ে ক্ষমতার পট পরিবর্তন হলে জাহাঙ্গীর আলমের কবল থেকে এসব জমি উদ্ধারের জন্য চেষ্টা করছিলেন শিক্ষক আরিফ। এ ঘটনায় কাল হলো শিক্ষক আরিফের। জমি উদ্ধার চেষ্টার পর থেকে আরিফকে হত্যার চক কষেন যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম, তার ভাই আজমগীর, আলমগীর, কাইয়ুম, বাপ্পী ও তাদের ভগ্নিপতি উপকূলের অপরাধ জগতের সর্দার মগনামার ইউপি চেয়ারম্যান ইউনুচ চৌধুরী।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে শিক্ষক আরিফকে অপহরণ করে পেকুয়া উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও পেকুয়া সদর ইউনিয়নের মাতবর পাড়া গ্রামের রমিজ আহমদের ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের বাড়িতে নিয়ে আটকে রাখা হয়। অপহরণের ঘটনা মূহুর্তের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল ও এলাকাবাসীর মাঝে জানাজানি হলে অপহরণকারীরা শিক্ষক আরিফকে দূরে কোথাও নিয়ে যেতে পারেনি। শিক্ষক আরিফকে যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলমের বাড়িতে আটকে রেখে চালানো হয় পৈশাচিক কায়দায় নির্যাতন। নির্যাতন শেষে শিক্ষক মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লে কৌশলে আরিফের মরদেহ প্লাস্টিকের বস্তায় ভর্তি করে বাড়ির অদূরে একটি পরিত্যক্ত পুকুরে ফেলে ডুবিয়ে রাখা হয়। আরিফের মরদেহ উদ্ধারের পর স্থানীয় বিক্ষুদ্ধ জনতা যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলমের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে এবং মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। এরপর যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলমের বাড়ির ছাদে আরিফকে নির্যাতনের আলামতও দেখতে পায় স্থানীয়রা। বাড়ির ছাদে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ পাওয়া গেছে।

এদিকে ১২ অক্টোবর রাত ৮টার দিকে চট্টগ্রামের মাদারবাড়ি এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে শিক্ষক আরিফ হত্যাকান্ডের মূল মাস্টারমাইন্ড যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলমকে আটক করে র‌্যাব এর একটি টিম। জাহাঙ্গীর আলমকে আটকের পর এ ঘটনায় বিভিন্ন মাধ্যমে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

স্থানীয় এলাকাবাসী ও নিহত শিক্ষক আরিফের আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, শিক্ষক আরিফকে অপহরণের পূর্বে বেশ কয়েক দফা যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলমের বাড়িতে কিলিং মিশনের সদস্যদের বৈঠক হয়। বৈঠকে অন্যতম কুশীলব ছিলেন একাধিক মামলার আসামী ও জাহাঙ্গীর আলমের ভগ্নিপতি পেকুয়া ও কুতুবদিয়া উপকূলের আলোচিত জলদস্যু সম্রাট মগনামা ইউপি চেয়ারম্যান ইউনুচ চৌধুরী। আরিফকে অপহরণের পাঁচ দিন পর অপহরণের সাথে জড়িত ৪ জন লোককে মগনামার উপকূল থেকে ডেনিসবোটে উঠিয়ে কুতুবদিয়ায় পাঠিয়ে দেন ইউনুচ চৌধুরী। যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলমের ছোট ভাই আজমগীরের শ্বাশুর বাড়ি কুতুবদিয়ায়।

জানা যায়, যখন যে দল ক্ষমতায় আসে সেসব দলের নেতাদের ম্যানেজ করে ইউনুচ চৌধুরী দল পাল্টায় এবং নিজের অপরাধ কর্মকান্ড আরো প্রসারিত করে। দীর্ঘদিন ধরে পেকুয়ার মগনামা কুতুবদিয়া উপকুলে জলদস্যুতাসহ নানা ধরনের অপরাধ কর্মকান্ড সংগঠিত করে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ইউনুচ চৌধুরী। বরাবরই এসব অপরাধের অন্যতম সহযোগী ছিলেন যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম। গত ৫ আগস্টের পূর্বে পেকুয়ার রাজপথে ইউনুচ চৌধুরীর নেতৃত্বে মিছিল সভা ও সমাবেশ অনুষ্টিত হয়েছে একাধিকবার। এসব সভা সমাবেশ থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী পেকুয়ার ছাত্র জনতা ও বিএনপি জামাতের নেতাকর্মীদের শক্তভাবে মোকাবেল করার হুমকি দিয়েছিল ইউনুচ চৌধুরী।

স্থানীয়রা জানান, পেকুয়া-কুতুবদিয়া উপকূলের ত্রাস ইউনুচ চৌধুরী অপরাধ জগতের সর্দার হলেও পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের গুটি কয়েক নেতা ও যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলমের শেল্টারে থাকায় এলাকার কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায়না। ইউনুচের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানা ও আদালতে ডজন মামলা রয়েছে। এর মধ্যে পেকুয়া থানায় দায়েরকৃত মগনামার ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন হত্যা। যার মামলা নং জিআর ৪৪/২১ইং, মগনামার আফজলিয়া পাড়া গ্রামের কৃষক জাফর হত্যা মামলারও প্রধান আসামী। যার মামলা নং পেকুয়া থানার এফ.আই.আর নং ১৩ তারিখ ১৬ ডিসেম্বর ২০০৯ইং। এছাড়া পেকুয়া থানায় জি.আর নং- ১৭১/০৯ইং, পেকুয়া থানায় অস্ত্র আইনে এফ.আই.আর নং- ১০/৫২ তারিখ ১৭ এপ্রিল ২০১৭ ইং, পেকুয়া থানায় মাদক আইনে এফ.আই.আর নং- ১১/৫৩ তারিখ ১৭ এপ্রিল: ২০১৭ইং, পেকুয়া থানার এফ.আই.আর নং- ৯/৫১, তারিখ- ১১ এপ্রিল, ২০১৭ ইং, পেকুয়া থানার এফ.আই.আর নং ৯ তারিখ- ৩০ জুন, ২০১১ জি.আর নং- ৬৬/১১, তারিখ- ৩০ জুন, ২০১১ ইং, পেকুয়া থানার জি.আর নং- ১১/১১ইং, পেকুয়া থানার এফ.আই.আর নং- ৫, তারিখ- ০৮ অক্টোবর, ২০১০ জি.আর নং- ১২৬/১০ইং, পেকুয়া থানার এফ.আই.আর নং- ১৬, তারিখ ২৬ জুন, ২০০৯ জি.আর নং- ৯৩/৯ইং, মগনামা কাজীর বাজারের লবণ ব্যবসায়ী আব্দুল হাকিম কে অপহরণের পর হত্যাচেষ্টা ও চাদাঁবাজির সিআর মামলা নং ৯১/২০২২ইং, পেকুয়া থানায় জিআর মামলা নং ৮০/২০১৪ইং, চকরিয়া থানায় ডাকাতি মামলা যার জিআর মামলা নং ১১/২০০১ইং, জি.আর ৮১/২০০১ইং চকরিয়া থানায় দায়েরকৃত ধারা- জননিরাপত্তা আইন ২০০০এর ৫/১০ তৎ সহ ১৪৩/৪৪১/৩৮৭/৩৭৯/৫০৬/৩৪ দন্ডবিধি ধারার মামলাও আদালতে বিচারধীন রয়েছে। এছাড়া চকরিয়া থানায় জিআর মামলা নং ৩৮/২০০১ইং, জিআর মামলা নং ২৩৯/১৯৯৯ইং, সিআর মামলা নং ১০৩/২০০৫ইং, সি.আর ২৯১/২০০৫ইং, কক্সবাজার সদর থানায় জিআর মামলা নং ৩৬৬/১৯৮৯ইংরেজী সহ কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া, মহেশখালী, চকরিয়া, চট্টগ্রামের বাঁশখালী থানা সহ আরো বহু মামলা রয়েছে। ইউনুচ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনলয়ের তালিকাভূক্ত জলদূষ্য ও অবৈধ অস্ত্রধারী হিসাবে প্রশাসনের তালিকাভূক্ত দাগি অপরাধী।

পেকুয়া থানা সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষক আরিফ অপহরণের পর তার স্ত্রী থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেছিল। উক্ত মামলায় হত্যাকেন্ডর ধারা সংযুক্ত করে র‌্যাব কর্তৃক আটককৃদের হত্যা ও অপহরণ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করা হবে। এবং উক্ত ঘটনার ক্লু উদঘাটন করতে গ্রেফতারকৃতদের রিমান্ডে এনে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অনুমতি চাইবে।

ট্যাগ :
পাঠকপ্রিয়

উখিয়ায় ক্যাম্পে রোহিঙ্গা যুবক’কে গলাটিপে হত্যা!

পেকুয়ায় শিক্ষক আরিফ হত্যার ঘটনায় অন্যতম মাস্টারমাইন্ড আলোচিত জলদস্যু ইউনুচ!

প্রকাশিত সময় : ০৯:১৯:১৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪

গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলা সদরের চৌমুুহুনীর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সামনে থেকে স্কুল শিক্ষক মো: আরিফ অপহৃত হন। অপহরণের পর আরিফের পরিবার থেকে পেকুয়া থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয় এবং বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নেওয়া হয়। অভিযোগের পর শিক্ষকের পরিবার থেকে পেকুয়া থানার ওসিকে বারবার অনুরোধ করা হয় পেকুয়া উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলমের বাড়ীতে অভিযান চালানোর জন্য। কিন্তু পেকুয়া থানার ওসি শিক্ষকের পরিবারের অভিযোগের কোন ধরনের কর্ণপাত করেনি। এরই মধ্যে অপহরণের পর শিক্ষকের পরিবার থেকে ৩৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে সংঘবদ্ধ চক্র। এরপর র‌্যাব-১৫ এর একটি টিম গত ১১ অক্টোবর দিবাগত রাত ৩টার দিকে চট্টগ্রাম শহরের আন্দরকিল্লা এলাকা থেকে শিক্ষকের পরিবার থেকে মুক্তিপণ দাবির অভিযোগে মো: রুবেল খান নামের একজনকে আটক করে পেকুয়া থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ্দ করেন। আটক রুবেল চাঁদপুর জেলার সদর উপজেলার চরপুরচন্ডী ইউনিয়নের হাবিবুল্লাহ খানের পুত্র এবং একটি মোবাইল কোম্পানীর অধীনে পেকুয়ায় চাকুরীরত ছিলো।

অপরদিকে ১১ অক্টোবর বিকাল ৩টার দিকে অপহৃত শিক্ষক মো: আরিফের বস্তাবন্ধী মরদেহ আরিফের বাড়ির অদূরে একটি পরিত্যক্ত পুকুর থেকে উদ্ধার করে পেকুয়া থানা পুলিশ। পরে পেকুয়া থানা পুলিশ মরদেহের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী শেষে ময়না তদন্তের জন্য কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। ময়না তদন্ত শেষে ১২ অক্টোবর সন্ধ্যায় জানাযা শেষে শিক্ষকের মরদেহ সামাজিকভাবে স্থানীয় কবরস্থানে সমাহিত করা হয়েছে। শিক্ষক আরিফ পেকুয়া সদর ইউনিনের মাতবর পাড়া গ্রামের বজল আহমদের পুত্র এবং পেকুয়া সেন্ট্রাল স্কুল এন্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক পদে কর্মরত ছিলেন।

জানা যায়, ঘটনার শুরু থেকেই শিক্ষক আরিফের পরিবারের সন্দেহের তীর ছিল পেকুয়া উপজেলা যুবলীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর আলমের পরিবারের দিকে। শিক্ষক আরিফের পরিবারের কিছু জমি দীর্ঘদিন ধরে জবর দখলে রেখেছিল যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম। সম্প্রতি সময়ে ক্ষমতার পট পরিবর্তন হলে জাহাঙ্গীর আলমের কবল থেকে এসব জমি উদ্ধারের জন্য চেষ্টা করছিলেন শিক্ষক আরিফ। এ ঘটনায় কাল হলো শিক্ষক আরিফের। জমি উদ্ধার চেষ্টার পর থেকে আরিফকে হত্যার চক কষেন যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম, তার ভাই আজমগীর, আলমগীর, কাইয়ুম, বাপ্পী ও তাদের ভগ্নিপতি উপকূলের অপরাধ জগতের সর্দার মগনামার ইউপি চেয়ারম্যান ইউনুচ চৌধুরী।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে শিক্ষক আরিফকে অপহরণ করে পেকুয়া উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও পেকুয়া সদর ইউনিয়নের মাতবর পাড়া গ্রামের রমিজ আহমদের ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের বাড়িতে নিয়ে আটকে রাখা হয়। অপহরণের ঘটনা মূহুর্তের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল ও এলাকাবাসীর মাঝে জানাজানি হলে অপহরণকারীরা শিক্ষক আরিফকে দূরে কোথাও নিয়ে যেতে পারেনি। শিক্ষক আরিফকে যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলমের বাড়িতে আটকে রেখে চালানো হয় পৈশাচিক কায়দায় নির্যাতন। নির্যাতন শেষে শিক্ষক মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লে কৌশলে আরিফের মরদেহ প্লাস্টিকের বস্তায় ভর্তি করে বাড়ির অদূরে একটি পরিত্যক্ত পুকুরে ফেলে ডুবিয়ে রাখা হয়। আরিফের মরদেহ উদ্ধারের পর স্থানীয় বিক্ষুদ্ধ জনতা যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলমের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে এবং মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। এরপর যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলমের বাড়ির ছাদে আরিফকে নির্যাতনের আলামতও দেখতে পায় স্থানীয়রা। বাড়ির ছাদে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ পাওয়া গেছে।

এদিকে ১২ অক্টোবর রাত ৮টার দিকে চট্টগ্রামের মাদারবাড়ি এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে শিক্ষক আরিফ হত্যাকান্ডের মূল মাস্টারমাইন্ড যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলমকে আটক করে র‌্যাব এর একটি টিম। জাহাঙ্গীর আলমকে আটকের পর এ ঘটনায় বিভিন্ন মাধ্যমে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

স্থানীয় এলাকাবাসী ও নিহত শিক্ষক আরিফের আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, শিক্ষক আরিফকে অপহরণের পূর্বে বেশ কয়েক দফা যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলমের বাড়িতে কিলিং মিশনের সদস্যদের বৈঠক হয়। বৈঠকে অন্যতম কুশীলব ছিলেন একাধিক মামলার আসামী ও জাহাঙ্গীর আলমের ভগ্নিপতি পেকুয়া ও কুতুবদিয়া উপকূলের আলোচিত জলদস্যু সম্রাট মগনামা ইউপি চেয়ারম্যান ইউনুচ চৌধুরী। আরিফকে অপহরণের পাঁচ দিন পর অপহরণের সাথে জড়িত ৪ জন লোককে মগনামার উপকূল থেকে ডেনিসবোটে উঠিয়ে কুতুবদিয়ায় পাঠিয়ে দেন ইউনুচ চৌধুরী। যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলমের ছোট ভাই আজমগীরের শ্বাশুর বাড়ি কুতুবদিয়ায়।

জানা যায়, যখন যে দল ক্ষমতায় আসে সেসব দলের নেতাদের ম্যানেজ করে ইউনুচ চৌধুরী দল পাল্টায় এবং নিজের অপরাধ কর্মকান্ড আরো প্রসারিত করে। দীর্ঘদিন ধরে পেকুয়ার মগনামা কুতুবদিয়া উপকুলে জলদস্যুতাসহ নানা ধরনের অপরাধ কর্মকান্ড সংগঠিত করে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ইউনুচ চৌধুরী। বরাবরই এসব অপরাধের অন্যতম সহযোগী ছিলেন যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম। গত ৫ আগস্টের পূর্বে পেকুয়ার রাজপথে ইউনুচ চৌধুরীর নেতৃত্বে মিছিল সভা ও সমাবেশ অনুষ্টিত হয়েছে একাধিকবার। এসব সভা সমাবেশ থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী পেকুয়ার ছাত্র জনতা ও বিএনপি জামাতের নেতাকর্মীদের শক্তভাবে মোকাবেল করার হুমকি দিয়েছিল ইউনুচ চৌধুরী।

স্থানীয়রা জানান, পেকুয়া-কুতুবদিয়া উপকূলের ত্রাস ইউনুচ চৌধুরী অপরাধ জগতের সর্দার হলেও পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের গুটি কয়েক নেতা ও যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলমের শেল্টারে থাকায় এলাকার কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায়না। ইউনুচের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানা ও আদালতে ডজন মামলা রয়েছে। এর মধ্যে পেকুয়া থানায় দায়েরকৃত মগনামার ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন হত্যা। যার মামলা নং জিআর ৪৪/২১ইং, মগনামার আফজলিয়া পাড়া গ্রামের কৃষক জাফর হত্যা মামলারও প্রধান আসামী। যার মামলা নং পেকুয়া থানার এফ.আই.আর নং ১৩ তারিখ ১৬ ডিসেম্বর ২০০৯ইং। এছাড়া পেকুয়া থানায় জি.আর নং- ১৭১/০৯ইং, পেকুয়া থানায় অস্ত্র আইনে এফ.আই.আর নং- ১০/৫২ তারিখ ১৭ এপ্রিল ২০১৭ ইং, পেকুয়া থানায় মাদক আইনে এফ.আই.আর নং- ১১/৫৩ তারিখ ১৭ এপ্রিল: ২০১৭ইং, পেকুয়া থানার এফ.আই.আর নং- ৯/৫১, তারিখ- ১১ এপ্রিল, ২০১৭ ইং, পেকুয়া থানার এফ.আই.আর নং ৯ তারিখ- ৩০ জুন, ২০১১ জি.আর নং- ৬৬/১১, তারিখ- ৩০ জুন, ২০১১ ইং, পেকুয়া থানার জি.আর নং- ১১/১১ইং, পেকুয়া থানার এফ.আই.আর নং- ৫, তারিখ- ০৮ অক্টোবর, ২০১০ জি.আর নং- ১২৬/১০ইং, পেকুয়া থানার এফ.আই.আর নং- ১৬, তারিখ ২৬ জুন, ২০০৯ জি.আর নং- ৯৩/৯ইং, মগনামা কাজীর বাজারের লবণ ব্যবসায়ী আব্দুল হাকিম কে অপহরণের পর হত্যাচেষ্টা ও চাদাঁবাজির সিআর মামলা নং ৯১/২০২২ইং, পেকুয়া থানায় জিআর মামলা নং ৮০/২০১৪ইং, চকরিয়া থানায় ডাকাতি মামলা যার জিআর মামলা নং ১১/২০০১ইং, জি.আর ৮১/২০০১ইং চকরিয়া থানায় দায়েরকৃত ধারা- জননিরাপত্তা আইন ২০০০এর ৫/১০ তৎ সহ ১৪৩/৪৪১/৩৮৭/৩৭৯/৫০৬/৩৪ দন্ডবিধি ধারার মামলাও আদালতে বিচারধীন রয়েছে। এছাড়া চকরিয়া থানায় জিআর মামলা নং ৩৮/২০০১ইং, জিআর মামলা নং ২৩৯/১৯৯৯ইং, সিআর মামলা নং ১০৩/২০০৫ইং, সি.আর ২৯১/২০০৫ইং, কক্সবাজার সদর থানায় জিআর মামলা নং ৩৬৬/১৯৮৯ইংরেজী সহ কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া, মহেশখালী, চকরিয়া, চট্টগ্রামের বাঁশখালী থানা সহ আরো বহু মামলা রয়েছে। ইউনুচ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনলয়ের তালিকাভূক্ত জলদূষ্য ও অবৈধ অস্ত্রধারী হিসাবে প্রশাসনের তালিকাভূক্ত দাগি অপরাধী।

পেকুয়া থানা সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষক আরিফ অপহরণের পর তার স্ত্রী থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেছিল। উক্ত মামলায় হত্যাকেন্ডর ধারা সংযুক্ত করে র‌্যাব কর্তৃক আটককৃদের হত্যা ও অপহরণ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করা হবে। এবং উক্ত ঘটনার ক্লু উদঘাটন করতে গ্রেফতারকৃতদের রিমান্ডে এনে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অনুমতি চাইবে।