বৈশাখের দাবদাহে কক্সবাজারে তীব্র গরম অনুভূত হচ্ছে। তীব্র এ গরমে জনজীবনে হাঁসফাস অবস্থা। আবহাওয়া অফিসের তথ্য মত, প্রতিবছর এপ্রিল মাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকে। দেশের বিভিন্ন স্থানের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও তাপমাত্রা আরও বাড়ার পূর্বাভাস রয়েছে। ফলে জনজীবনে বাড়তে পারে অস্বস্তি। কিন্তু প্রখর রোদেও সড়কের শৃঙ্খলায় অবিরাম সেবা দিচ্ছেন ট্রাফিক পুলিশের সাড়ে ৫০ হাজার সদস্য। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ঘামে তাঁদের জামা ভিজে যাচ্ছে। এক হাতে ছাতা ধরে অন্য হাতে গাড়ি চলাচলের ইশারা—ইঙ্গিত করছেন তাঁরা। বুধবার (২৪ এপ্রিল) কলাতালী মোড়ে প্রচন্ড রোদে দায়িত্ব পালনরত ট্রাফিক পুলিশ প্রমানন্দ ধরের সঙ্গে কথা হয়। গা জ্বলা গরমে শরীরের ঘামে তাঁর জামাও ভিজে গেছে। কপালের ঘাম গড়িয়ে পড়ছে রাস্তায়। তপ্ত পিচঢালা রাস্তায় ঘাম বাষ্পে পরিণত হচ্ছে। প্রমানন্দ বলেন, ‘রাস্তার প্রখর তাপে পুড়ছি, গরম তো
প্রতিবছর আসে। কিন্তু এমন তপ্ত পরিস্থিতি এই প্রথম। রোদের তাপে রাস্তার পিচও গলে যাচ্ছে। একদিকে রোদের তাপে উত্তপ্ত রাস্তা ও অন্যদিকে গাড়ির ধোঁয়া। রাস্তায় যেন আগুন ঝরছে। এর সঙ্গে আছে হর্ন ও হুটারের শব্দের যন্ত্রণা। রোদে পুড়ে কলাতালী মোড়ে দায়িত্ব পালন করছেন ট্রাফিক পুলিশের এএসআই শাহাদাৎ হোসেন। তিনি বলেন, প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করতে হয়। যেখানে মানুষ বাসায় থাকতে পারে না গরমের কারণে, সেখানে আমাদের রোদের মধ্যে রাস্তাতে এসে মানুষদের সেবা দিতে হয়। ঝড় বৃষ্টির রোদও ডিউটি পালন করতে হয় আমাদের। অনেক সময় বৃষ্টিতে ভিজে গরমে শুকিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এপ্রিল মাসে টা যেভাবে গরম পরতেছে তারও কাজ করতে হচ্ছে। যেখানে মানুষ বাড়ি ঘর থাকতে পারে না গরমের জন্য , সেখানে আমরা সাধারণ মানুষদেরকে সেবা দিয়ে যাচ্ছি। কথা হয় ট্রাফিক মনিরুল হোসেন ও প্রসাদের সঙ্গেও। তাঁরা মনে করেন,কক্সবাজার শহরে যানজট নিরসন করতে হলে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ করার পাশাপাশি টমটম অটো রিকশা তুলে দিতে হবে। জানা গেছে , দীর্ঘক্ষণ রোদে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাফিক সদস্যরা হিট স্ট্রোকসহ পানিশূন্যতা, মাথাব্যথা ও শারীরিক দুর্বলতায় ভুগছেন। কেউ কেউ ডিহাইড্রেশনজনিত সমস্যায় ভুগছেন। বিশেষ করে যাঁদের উচ্চ রক্তচাপ আছে, তাঁদের গরমে দায়িত্ব পালন করতে আরও বেশি সমস্যা হচ্ছে।
কক্সবাজার শহরে বিভিন্ন জায়গায় প্রায় ১০০ জন ট্রাফিক সদস্য রয়েছেন। ইতোমধ্যে কয়েকজন সদস্য অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তিনজন হাসপাতালে ভর্তি ও একজন মেডিকেল বিশ্রামে রয়েছেন। কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মো. আশিকুজ্জামান বলেন, এই তাপমাত্রায় ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা রোদে থাকলে যে কেউ অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন। সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হিট স্ট্রোক। হঠাৎ করে শরীরের তাপমাত্রা ১০৬ ডিগ্রির ওপরে উঠে গেলে চেহারা লাল বর্ণ হয় ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি মাথা ঘুরে পড়ে যেতে পারেন। এই পরিস্থিতিতে একটু পরপর পানি ও স্যালাইন খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। এদিকে বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশের পক্ষ থেকে পানির গাড়ি রাখা হয়েছে। সেখান থেকে সাধারণ মানুষ ও পুলিশ সদস্যরা পানি পান করছেন। ট্রাফিক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন বলেন, তীব্র তাপদাহের মধ্যেও ট্রাফিক সদস্যদের দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার সুযোগ নেই। তপ্ত আবহাওয়া যত দিন চলবে, প্রতিদিনই ট্রাফিক সদস্যদের মাঝে খাওয়ার পানি ও স্যালাইন সরবরাহ করা হবে।