প্রেমিকার আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ফেরত না দেয়ায় মামুনকে নির্মমভাবে হত্যা করে বন্ধু শাহেদ হোসেন। এক লাখ টাকার বিনিময়ে সন্ত্রাসী ভাড়া করে হত্যার এই মিশন বাস্তবায়ন করা হয়। হত্যার পর রেললাইনের পার্শ্বে ফেলে রাখা হয় নিহত মামুনের মরদেহ। মঙ্গলবার বিকেলে শহরতলীর লিংকরোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই হত্যার মাস্টারমাইন্ড নিহত মামুনের বন্ধু ঘাতক মো. শাহেদ হোসেন (৩০)কে গ্রেফতার করে র্যাব।
বুধবার (১০ জুলাই) আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান কক্সবাজার র্যাবের উপ-অধিনায়ক মেজর শরীফুল আহসান। গ্রেফতার মো. শাহেদ ঈদগাঁও মাছুয়াখালী সিকদার পাড়ার মো. মতিউর রহমানের ছেলে। বর্তমানে সে শহরের ঝাউতলা গাড়ির মাঠ এলাকায় থাকতো।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব জানায়, সদরের খরুলিয়ার মৃত নবী হোসেনের ছেলে নিহত আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩০) একজন ইলেক্ট্রনিক্স ব্যবসায়ী। লিংক রোড বাজারে তার যৌথভাবে ভিশন ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী বিক্রয়ের একটি শোরুম রয়েছে। ওই শোরুমে মামুন তার বন্ধু মো. শাহেদ হোসেন ও শাহেদ হোসেনের ভগ্নিপতি জসিম উদ্দিনের শেয়ারের ভিত্তিতে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে।
কক্সবাজারের ঈদগাঁওয়ের একটি মেয়ের সঙ্গে ঘাতক শাহেদ হোসেনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সম্পর্ক চলাকালে তারা দুইজনেই কিছু আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও শাহেদের মোবাইলে ধারণ করে রাখে। মেয়েটির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের অবনতি হলে শাহেদের মোবাইলে থাকা তাদের আপত্তিকর ছবি ও ভিডিওগুলো ডিলিট করার জন্য বলা হয়। এতে কৌশলে শাহেদ ছবি ও ভিডিওগুলো বন্ধু মামুনের মোবাইলে সংরক্ষণ রাখার জন্য প্রেরণ করে। পরে ওই মেয়ের সামনে শাহেদের মোবাইল থেকে ছবি ও ভিডিওগুলো ডিলিট করা হয়। পরবর্তীতে ছবি ও ভিডিওগুলো বন্ধু মামুনের কাছ থেকে ফেরত চাই শাহেদ। কিন্তু এসব ছবি ও ভিডিও শাহেদকে দিতে অস্বীকার জানায় মামুন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মামুনকে হত্যার জন্য ছক আঁকে শাহেদ।
যেভাবে হত্যা করা হয় মামুনকে
পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ৬ জুলাই রাতে মামুনকে হোয়াটসঅ্যাপে ফোন করে শাহেদ। এ সময় মামুনকে বলা হয় এক জায়গায় যাওয়ার জন্য শহরের ভিশন শোরুম থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে বাহারছড়া বাজারে আসার জন্য। শাহেদের কথায় রাত সাড়ে ৮ টার দিকে মামুন বাহারছড়া বাজারে পৌঁছালে দুইজনেই মোটরসাইকেলযোগে ঈদগাঁও কালিরছড়া বাজারের একটু আগে পৌঁছালে শাহেদ বন্ধু মামুনকে মোটরসাইকেল থামাতে বলে।
মোটরসাইকেল থামানোর পরপরই ঈদগাঁওর শীর্ষ ডাকাতা মাছুয়াখালীর আলী আহদ প্রকাশ চুনতি মৌলভীর ছেলে শাহীন ওরফে লালুর নেতৃত্বে কয়েকজন সন্ত্রাসী মামুনের মোবাইলটি ছিনিয়ে নিয়ে শাহেদকে বুঝিয়ে দেয়। এ সময় তাদের এক লাল টাকা প্রদান করে শাহেদ। পরে মামুনের মোবাইলটি শাহেদ ভেঙে চুরমার করে পানির ডোবায় ফেলে দিয়ে চলে যায়।
অপরদিকে শাহেদের নির্দেশে ডাকাত শাহীনের নেতৃত্বে মামুনকে হত্যা করে হাত-পা বেঁধে রেললাইনের পার্শ্বে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। গত ৭ জুলাই সকালে রেললাইনের পূর্বপার্শ্বে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় মামুনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব আরও জানায়, হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি ধামাচাপা দিতে শাহেদ হোসেন মামুনের সঙ্গে বিচ্ছেদ হওয়া স্ত্রী ও তার পরিবারের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করে। তবে শেষ রক্ষা হয়নি শাহেদের।
র্যাব আরও জানায়, এই মৃত্যুর ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে গিয়ে এসব তথ্য বের হয়ে আসে। যার প্রেক্ষিতে ক্লুলেস এ হত্যার রহস্য উন্মোচন করে মূল পরিকল্পনাকারী নিহত মামুনের বন্ধু শাহেদ হোসেনকে গ্রেফতার করে র্যাব।