০৩:১৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বড় কোম্পানির রিটার্ন অনলাইনে জমা বাধ্যতামূলক চায় আইএমএফ

রাজস্ব আদায় বাড়াতে চলতি বছরের মাঝামাঝি থেকেই বৃহৎ কোম্পানিগুলোর আয়কর রিটার্ন অনলাইনে জমা দেওয়ার বিধান চালু করার পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে করছাড় দেওয়ার যেসব বিধান রয়েছে, সেগুলো বাতিলের পাশাপাশি বিদ্যমান করছাড়ের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তা আর না বাড়ানোর সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।

এছাড়া আগামী (২০২৪—২৫) অর্থবছরের বাজেটে করছাড় কমানোর ব্যাপারে এনবিআরকে কঠোর হওয়ার পরামর্শও দিয়েছে আইএমএফ।
সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুলসহ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে ঢাকা সফররত আইএমএফ প্রতিনিধিদল। বৈঠকে এনবিআরকে একাধিক সুপারিশ ও পরামর্শ দেয় তারা।

এনবিআর সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে আইএমএফ প্রতিনিধিদলে ছিলেন ডেভিড বার, আরবিন্দ মোদি ও ডেভিড ওয়েন্টওয়ার্থ নামের তিন কর্মকর্তা। এনবিআর চেয়ারম্যান ছাড়াও আয়কর বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা এতে উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে আইএমএফ জানায়, চলতি বছরের জুন মাসের পরে দেশের বড় কোম্পানিগুলোর জন্য অনলাইনে রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন। এছাড়া যেসব করপোরেট প্রতিষ্ঠান কোনো ধরনের প্রণোদনা পায়, তাদের ক্ষেত্রেও অনলাইনে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা উচিত। তা না মানলে তাদের প্রণোদনা যেন বন্ধ করা হয়। এছাড়া করপোরেট অনলাইনে রিটার্ন জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে সহায়তা প্রদানেও প্রস্তুত আছে তারা। এজন্য প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার, কম্পিউটার আছে তাদের। পাশাপাশি করপোরেট আয়করের জন্য অবচয় ভাতার হার ও ভাতা মূল্যায়নের পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ। সংস্থাটি বলছে, ব্যবসায়ের লোকসান ১০ বছর পর্যন্ত চলতে দেওয়া যেতে পারে।

এছাড়া ব্যক্তিখাতের করদাতারা এখন বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা ভাতায় (যা মোট বেতনের এক—তৃতীয়াংশ) কর অব্যাহতি পান, এ সুবিধা বাতিলের পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ। সরকারি কর্মচারীদের দেওয়া বিভিন্ন ধরনের ভাতার বিপরীতেও কর অব্যাহতির সুযোগ না দেওয়ার কথা বলেছে সংস্থাটি। যার মধ্যে রয়েছে পেনশন ও গ্রাচুইটি থেকে কর অব্যাহতির সুযোগ না দেওয়া।

এছাড়া রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় ও বিভিন্ন ধরনের বন্ডে সরকারের দেওয়া কর সুবিধা প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে আইএমএফ। শেয়ারবাজার থেকে অর্জিত আয়ের ওপর দেওয়া করছাড়ও বাতিলের পক্ষে সংস্থাটি। ব্যক্তিখাতে বিদ্যমান করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানোর পাশাপাশি ন্যূনতম করহার ৫ থেকে ১০ শতাংশে উন্নীত করার পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ।

জানা গেছে, এনবিআরকে ব্যক্তিখাতের আয়কর কাঠামো পুনর্গঠনের পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ। সংস্থাটি ব্যক্তির করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে পাঁচ লাখ টাকা করার কথা বলেছে। রেমিট্যান্স তথা প্রবাসী আয়ের ওপর কর সুবিধা প্রত্যাহারের পরামর্শ দিয়েছে। খনি ও পেট্রোলিয়াম উত্তোলনের জন্য প্রদত্ত ‘হ্রাস ভাতা’ বিলুপ্ত করার প্রস্তাবও দিয়েছে আইএমএফ।

২০২৩ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করে আইএমএফ। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআরসহ দেশের আর্থিক খাতের একাধিক নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করে আইএমএফ প্রতিনিধিদল।

ট্যাগ :
পাঠকপ্রিয়

আলুর দাম আরও বেড়েছে, স্বস্তি নেই ডিম-সবজিতেও

বড় কোম্পানির রিটার্ন অনলাইনে জমা বাধ্যতামূলক চায় আইএমএফ

প্রকাশিত সময় : ০২:২৮:৩০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ মার্চ ২০২৪

রাজস্ব আদায় বাড়াতে চলতি বছরের মাঝামাঝি থেকেই বৃহৎ কোম্পানিগুলোর আয়কর রিটার্ন অনলাইনে জমা দেওয়ার বিধান চালু করার পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে করছাড় দেওয়ার যেসব বিধান রয়েছে, সেগুলো বাতিলের পাশাপাশি বিদ্যমান করছাড়ের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তা আর না বাড়ানোর সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।

এছাড়া আগামী (২০২৪—২৫) অর্থবছরের বাজেটে করছাড় কমানোর ব্যাপারে এনবিআরকে কঠোর হওয়ার পরামর্শও দিয়েছে আইএমএফ।
সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুলসহ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে ঢাকা সফররত আইএমএফ প্রতিনিধিদল। বৈঠকে এনবিআরকে একাধিক সুপারিশ ও পরামর্শ দেয় তারা।

এনবিআর সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে আইএমএফ প্রতিনিধিদলে ছিলেন ডেভিড বার, আরবিন্দ মোদি ও ডেভিড ওয়েন্টওয়ার্থ নামের তিন কর্মকর্তা। এনবিআর চেয়ারম্যান ছাড়াও আয়কর বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা এতে উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে আইএমএফ জানায়, চলতি বছরের জুন মাসের পরে দেশের বড় কোম্পানিগুলোর জন্য অনলাইনে রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন। এছাড়া যেসব করপোরেট প্রতিষ্ঠান কোনো ধরনের প্রণোদনা পায়, তাদের ক্ষেত্রেও অনলাইনে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা উচিত। তা না মানলে তাদের প্রণোদনা যেন বন্ধ করা হয়। এছাড়া করপোরেট অনলাইনে রিটার্ন জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে সহায়তা প্রদানেও প্রস্তুত আছে তারা। এজন্য প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার, কম্পিউটার আছে তাদের। পাশাপাশি করপোরেট আয়করের জন্য অবচয় ভাতার হার ও ভাতা মূল্যায়নের পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ। সংস্থাটি বলছে, ব্যবসায়ের লোকসান ১০ বছর পর্যন্ত চলতে দেওয়া যেতে পারে।

এছাড়া ব্যক্তিখাতের করদাতারা এখন বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা ভাতায় (যা মোট বেতনের এক—তৃতীয়াংশ) কর অব্যাহতি পান, এ সুবিধা বাতিলের পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ। সরকারি কর্মচারীদের দেওয়া বিভিন্ন ধরনের ভাতার বিপরীতেও কর অব্যাহতির সুযোগ না দেওয়ার কথা বলেছে সংস্থাটি। যার মধ্যে রয়েছে পেনশন ও গ্রাচুইটি থেকে কর অব্যাহতির সুযোগ না দেওয়া।

এছাড়া রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় ও বিভিন্ন ধরনের বন্ডে সরকারের দেওয়া কর সুবিধা প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে আইএমএফ। শেয়ারবাজার থেকে অর্জিত আয়ের ওপর দেওয়া করছাড়ও বাতিলের পক্ষে সংস্থাটি। ব্যক্তিখাতে বিদ্যমান করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানোর পাশাপাশি ন্যূনতম করহার ৫ থেকে ১০ শতাংশে উন্নীত করার পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ।

জানা গেছে, এনবিআরকে ব্যক্তিখাতের আয়কর কাঠামো পুনর্গঠনের পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ। সংস্থাটি ব্যক্তির করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে পাঁচ লাখ টাকা করার কথা বলেছে। রেমিট্যান্স তথা প্রবাসী আয়ের ওপর কর সুবিধা প্রত্যাহারের পরামর্শ দিয়েছে। খনি ও পেট্রোলিয়াম উত্তোলনের জন্য প্রদত্ত ‘হ্রাস ভাতা’ বিলুপ্ত করার প্রস্তাবও দিয়েছে আইএমএফ।

২০২৩ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করে আইএমএফ। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআরসহ দেশের আর্থিক খাতের একাধিক নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করে আইএমএফ প্রতিনিধিদল।