কক্সবাজার সদরের বাংলাবাজার-পিএমখালী সড়ক সংস্কারে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তিন নম্বর ইটের খোয়া ও রাবিশ দিয়েই চলছে সড়কটির মেরামতের কাজ। বারবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের অবগত করলেও মিলছে না প্রতিকার। যেন দেখার কেউ নেই।
স্থানীয়রা বলছেন, নির্মাণকাজে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করায় বছর না ঘুরতেই এ সড়ক আবার ভাঙনের মুখে পড়বে।তাদের মতে, কাজের শুরুতে অতি নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করা হলেও কর্তৃপক্ষের এ ব্যাপারে কোনো পদেক্ষেপ নেই। এ নিয়ে স্থানীয়রা আপত্তি জানালেও ঠিকাদার তাতে বিন্দুমাত্র কর্ণপাত করছেন না।সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষেকে ম্যানেজ করে এমন নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তাই দেদারসে অনিয়ম করে পার পেয়ে যায় ঠিকাদার। এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।
জানা গেছে, পিএমখালী ইউনিয়নের বাংলাবাজার স্টেশন থেকে খুরুশকুলের বঙ্গবন্ধু বাজার পর্যন্ত সড়কের কার্পেটিং উঠে গিয়ে খানাখন্দে ভরপুর হয়ে যায়। এতে সড়কটি দিয়ে টমটম, ট্রাক, সিএনজি, ভ্যানগাড়িসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচলে স্থানীয়রা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। দুর্ভোগ লাঘবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কক্সবাজারের অধীনে বাংলা বাজার-খুরুশকুল ৮ কিলোমিটার সড়কের মেরামতের জন্য গত বছরের শেষের দিকে টেন্ডার দেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, এলজিইডির রক্ষণাবেক্ষণ প্রকল্পের (জিওবিএম) আওতায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলা বাজার থেকে খুরুশকুল পর্যন্ত সড়কটি প্রায় সোয়া ১৪ কোটি টাকার সংস্কার কাজের টেন্ডারে কাজটি পান টাই ফরিদ নামে এক ঠিকাদার।
এরপর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি সড়কের মেরামত কাজ শুরু করেন ঠিকাদার। গত বছরের ডিসেম্বর কার্যাদেশ পেলেও তিনি চলতি বছরের এপ্রিল মাসেও প্রকল্পের ১০ শতাংশ কাজও শেষ করেননি। অথচ এসব প্রকল্পের মেয়াদ থাকে সর্বোচ্চ ছয় মাস। এ ছাড়া প্রকল্প এলাকায় টাঙানো হয়নি কাজের শিডিউলের সাইনবোর্ড।
অভিযোগ পেয়ে সরেজমিনে দেখা যায়, বাংলাবাজার থেকে চেরাংঘর বাজার পর্যন্ত এই রাস্তার সংস্কার কাজে অনিয়ম দেখা গেছে। রাস্তার দুই পাশ দিয়ে দুই ফিট বর্ধিত অংশে তিন নম্বর ইটের গুড়ির সাথে ধুলাবালি মিশ্রিত নিম্নমানের খোয়া দিয়ে কাজ করতে দেখা গেছে শ্রমিকদের। কাজের শুরুতে সড়কের পুরাতন কার্পেটিং এবং খোয়া তুলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নতুন করে মেরামত কাজ শুরু করেন। প্রথম দিকে সড়কে অল্প এক নম্বর ইটের খোয়া দিলেও পরে এক নম্বরের ওপরে তিন নম্বর ইটের খোয়া ফেলা হয়েছে। তার ওপর আবার নিম্নমানের রাবিশ দিয়ে চালাচ্ছেন সড়ক মেরামতের কাজ। ওই সড়কে সংস্কারকাজে এলজিইডির কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকেন না। এ ছাড়া ঠিকাদারের ব্যক্তিগত প্রাতিষ্ঠানিক কোনো প্রকৌশলীও নেই। আছে কিছু শ্রমিক।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, সড়ক সংস্কারে ঠিকাদার নিজের ইচ্ছেমতো কাজ করছেন। পুরোনো ইট ও খোয়া ব্যবহার করা হচ্ছে সড়ক সংস্কার কাজে। নতুন ইটও মানসম্মত নয়, খুবই নিম্নমানের। এমনকি রাতেও সড়ক সংস্কার কাজ করানো হয়। বাধা দিলে কারও কথা শোনেন না ঠিকাদারের লোকজন। সংস্কার কাজে কোনো তদারকি নেই এলজিইডির প্রকৌশলী ও তাঁর অফিসের লোকজনের। এ কারণে সড়ক সংস্কারে অনিয়ম করছেন ঠিকাদার।
চেরাংঘাটা বাজারের বাসিন্দা ফজল হোসেন ও আবদুর রহিম জানান, সড়কের দুই পাশের বর্ধিত অংশে যে খোয়া ফেলা হচ্ছে তার ওপর দিয়ে হালকা যানবাহন গেলেই ধুলা হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া রাস্তার দুই ধারে ব্যবহার করা ইট এতই নিম্নমানের ব্যবহারের আগেই ভেঙে যাচ্ছে। এভাবে যেনতেনভাবে সংস্কার করা হলে বছর না ঘুরতেই গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি আবারও চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়বে।
কথা হয় পিএমখালীর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহর সঙ্গে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সড়কটি সংস্কারে যত ধরনের অনিয়ম করা সম্ভব, তার সবই করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে জেনেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। সড়কটি খুঁড়ে পুরোনো খোয়া ও ইট বের করে সেগুলোই আবার সংস্কার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। নতুন ইট যেগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে, সেগুলোও নিম্নমানের। রাতেও সড়কের কাজ করা হয়।
এই বিষয়ে কথা বলে ঠিকাদার ফরিদের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।
এলজিইডি কক্সবাজারের সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী মোঃ আব্দুর রহমান মুহিম বলেন, মাঠ পর্যায়ে কাজের গুণগতমান দেখভাল করার দায়িত্ব উপজেলা প্রকৌশলীর। আমরা বাড়জোর ঠিকাদারের বিল আটকে দিতে পারি। পরে উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মাদ তৌহিদুল ইসলামের সাথে যোগাযোগের পরামর্শ দেন এই কর্মকর্তা।
তবে এইসব অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে সদর উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মাদ তৌহিদুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মুঠোফোনে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। এইসব বিষয়ে কথা গেলে তার অফিসে যেতে হবে বলে দাবি করেন তিনি।