১২:১৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাড়িঘর সন্ত্রাসীদের দখলে, অন্যের বাড়িতে আশ্রিত ভূক্তভোগী পরিবার

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন এবং পরবর্তীতে সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে এলাকার পরিস্থিতি সামলাতে ব্যতিব্যস্ত ছিলেন দেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। আর ইহা একটি জাতীয় ইস্যু হলেও তা স্থানীয় পর্যায়ে চলে আসে। সে মূহুর্তে দেশের এমন দুর্যোগ পরিস্থিতিতে একমূখী কর্মতৎপরতায় ব্যস্ত থাকতে হয়েছে স্থানীয় আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনকে।

এই সুযোগটাই হাতছাড়া করেননি ভূমিদস্যু সন্ত্রাসীরা। ঝিলংজা ইউনিয়নের রহমতপুর এলাকার বাসিন্দা নুরুল আলমের ঘরে ঢুকে পরিবারের সদস্যদের উপর হামলা চালিয়ে বসতবাড়ি জবর দখল করে নিয়েছে। এঘটনায় কক্সবাজার সদর থানায় একটি নিয়মিত মামলা করা হয় জড়িত সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। এছাড়াও চিহ্নিত এই ভূমিদস্যু সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত অসহায় দরিদ্র, নিরীহ মানুষের জমি, ঘরবাড়ি লুটপাট, জবর দখল, নারীর শ্লীলতাহানি করছে বলে অসংখ্য অভিযোগ স্থানীয়দের।

ভূমিদস্যু সন্ত্রাসীরা এমন ন্যক্কারজনকজনক ঘটনাটি ঘটিয়েছে সোমবার (৫ আগস্ট) রাত আনুমানিক ২টার দিকে।

মৃত লালমিয়া সারাজীবন কাটিয়ে দেন রহমতপুর গ্রামে। পিতার সান্নিধ্যে বর্তমান মধ্য বয়সি নুরুল আলমের বেড়ে ওঠা এ এলাকাতেই। শ্রম বিক্রি করে সংসার চালান নুরুল আলম।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, গত মাসে সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যুরা নুরুল আলমের বসতঘরে লুটপাট ও ভাঙচুর চালিয়েছে। এ ঘটনায় নুরুল আলমের ৪ ছেলেমেয়েকে ধারালো দা’য়ের কাটা ও লৌহার রড দিয়ে আঘাত করে মারাত্মক ফোলা জখমের আঘাত করে সন্ত্রাসীরা। পেশকার পাড়া, বাহারছড়া, আলির জাহাল, বাসটার্মিনাল, লারপাড়ার, জোয়ারিয়ানালার সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা এ তাণ্ডব চালিয়ে নগদ টাকা, স্বর্নালংকার, মুল্যবান কাগজ পত্র, ঘরের আসবাবপত্র লুট করেছে। এ ঘটনায় আহতদের শোর চিৎকারে এলাকাবাসী এগিয়ে আসলে সন্ত্রাসীদের হাতে থাকা অবৈধ অস্ত্রের ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করেননি। তবে আহতদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেয়ার সহায়তায় এগিয়ে আসেন স্থানীয়রা। এ ঘটনার জেরে নুরুল আলম বাদী হয়ে কক্সবাজার সদর থানায় মামলা দায়ের করেন।

এ ঘটনায় জড়িতদের নামে মামলার খবর জানতে পেরে দিনদিন ক্ষিপ্ত হয়ে উঠছে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসীরা। মামলা তুলে নিতে বারবার চাপসৃষ্টি করে বাদীকে। মামলা তুলে না নিলে প্রথমে ঘরছাড়া করার হুমকি দেয় নুরু ডাকাত, সন্ত্রাসী শাপু, জঙ্গি মোর্শেদ টিটু। অভিযুক্তরা নুরুল আলমকে মামলা তুলে নিতে সময় সীমা বেঁধে দিয়ে বলেন, গতবারে আহত করেছে মাত্র। এবারে সবাইকে মেরে কুঁচি করে ওখানেই পুঁতে ফেলবে। তাদের হুমকি ধমকিতে মামলা তুলে না নেয়ায় যেকোনো সময় ঘরছাড়া করবে বলে বাদীকে সরাসরি হুমকি দেন নুরু, শাপু, টিটু সহ অন্যান্য আসামিরা।

এদিকে দেশে কোটা বাতিলের দাবিতে উঠা আন্দোলনের কারনে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে একমূখী কাছে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন এবং এদিকে স্থানীয় প্রশাসনের দুর্বলতার সুযোগ পেয়ে দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীরা গত ৫ আগষ্ট গভীর রাতে পুনরায় নুরুল আলমের বাড়িতে ঢুকে সবাইকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বাড়ি থেকে সবাইকে বের করে দিয়ে সুদীর্ঘ ৫০ বছরের অধিক সময় বসবাসরত বসতবাড়িটি দখল করেন। এরপর আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে সন্ত্রাসীদের তোপের মুখে বাড়িতে ঢুকতে পারেনি তারা। এখন অন্যের বাড়িতে আশ্রিত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের কালো থাবাতে বর্তমানে মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু হারাতে বসেছে নুরুল আলম।

জানতে চাইলে জেলগেইট এলাকায় বসবাসকারী ছৈয়দুর নূর বলেন, এই এলাকায় অধিকাংশ লোক বহিরাগত ও খারাপ প্রাকৃতির লোক। অথচ নুরুল আলমের ছোট বড় তিন/ চারজন টগবগে যুবক ছেলে আছে। তাদের সাথে এলাকার কোন ব্যক্তি বা পরিবারের সাথে ঝগড়া-বিবাদ তো দূরের কথা কারো সাথে কথা কাটাকাটি হয়েছে এরকম কোন খবর আমার জানা নেই। এলাকার সহজ সরল, সজ্জন মানুষ হিসেবে পরিচিত নুরুল আলম ও তার পরিবারের সবাই। তাদের দখলে থাকা জমিতে সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যদের কুনজর লেগেছে আছে দীর্ঘদিন ধরে। তার কাছ থেকে জমি কেড়ে নেওয়ার অপতৎপরতা অব্যাহত রাখেন তারা। অবৈধভাবে জমি দখল করতে গিয়ে ভূমিদস্যু কর্তৃক বিভিন্ন সময় হামলা মামলা ও জোর জুলুমের শিকার হয়েছে। গত মাসে ভূমিদস্যু সন্ত্রাসীরা নুরুল আলমের পরিবারের উপর হামলা করে ৪ ছেলে মেয়েকে মারাত্মকভাবে আহত করে। এরপর বাড়ির সবাই আহতদের চিকিৎসা করতে গেলে তালা ভেঙে তার ঘরটি দখল করেছে সন্ত্রাসীরা।

প্রতিবেশী নিজাম উদ্দিন বলেন, নুরুল আলমের বাড়িভিটি ছাড়া আর কিছুই নেই। কিছু জমি তাদের দখলে থাকলেও এই জমির একশত জমি কাউকে বিক্রি করতে দেখেননি। তাছাড়াও বর্তমানে জমির বাজার মূল্য অনেক। তার আশেপাশে যেসব খাস খতিয়ানভূক্ত জমি রয়েছে তা কমছে হলেও এ পর্যন্ত ৭-৮ বার বেচাবিক্রি হয়ে গেছে। অথচ নুরুল আলমের দখলে থাকা জমি বিক্রি তো দূরের কথা, সে জমিতে বিভিন্ন মূল্যবান গাছের বাগান গড়ে তুলে। বাপ দাদার আমল হতেই দীর্ঘ ৫০ বছরের অধিক সময় তাদের দখলে থাকা জমি কেড়ে নিতে একশ্রেণীর লোক নানা ষড়যন্ত্রের সঙ্গে তৎপরতা চালিয়ে আসছে। কোনমতে একটি ঘর তুলে পরিবারের সবাইকে নিয়ে এই অবস্থায় আছে নুরুল আলম। তার ঘরবাড়ি দখল ও ছেলে মেয়েদের উপর জোর জুলুমের ঘটনায় পুলিশ এসেছিল। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।

স্থানীয় ইউপি মেম্বার মোঃ ইউনূস বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। তাদের ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে অনেক অনুরোধ করছি। ভূমিদস্যুরা তার কথায় কর্ণপাত করেনি। তারা যেটা করছে তা অন্যায়। একজনের বাড়ি কেউ জোরপূর্বক দখল করতে পারে না। অথচ একটি পরিবারের কতকলোক আজ তাদের ঠাঁইটুকু হারিয়ে কতটা দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে তা একমাত্র ভুক্তভোগীরা জানেন। ওয়ার্ড মেম্বার আরো বলেন, তাদের ঘর বাড়ি ফিরিয়ে দিতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে যাবো।

এ বিষয়ে ভূক্তভোগী নুরুল আলম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ভূমিদস্যু সন্ত্রাসীদের অত্যাচার জুলুম নির্যাতন সহ্য করে আসছে। আড়াই ডজন মামলার আসামি কক্সবাজারের শীর্ষ সন্ত্রাসী নুরুল ইসলাম প্রকাশ নুরু ডাকাত, সন্ত্রাসী শাহাব উদ্দিন শাপু, ভূমিদস্যু সন্ত্রাসী মোর্শেদ টিটু, মহেশখালীতে ১৪ মাঝি মহল্লা হত্যা মামলার জেল ফেরত আসামি কামাল পাশার নেতৃত্বে আরো ১৫/২০ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী আমার বাড়িতে ঢুকে অবলা ছেলেমেয়েদের যাকে যেভাবে পেয়েছে মারধর করে আহত করে। এসময় পালিয়ে গিয়ে আমি প্রাণে রক্ষা পায়। সবাইকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে লুটপাট ও মেয়েদের শ্লীলতাহানি করে তারা। এতকিছুর পরও তারা আমার পিছু ছাড়েনি।

গত ৫ আগষ্ট প্রশাসনের দুর্বলতার সুযোগে পুনরায় দখল করে নিয়েছে সন্ত্রাসীরা। এখন আমার পাশের বাড়ির মৃত সামশুল হক মাষ্টারের ছেলে মোর্শেদ টিটু, তার মা, ৪ বোনসহ কতক আগন্তুক ব্যক্তি আমার বসতবাড়িতে অবস্থান করছেন। মুর্শেদ টিটুর নেতৃত্বে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের চপের মুখে বাধ্য হয়ে সবাইকে নিয়ে বাড়ি ছাড়া হয়েছি। তারা কী কারণে বাড়ি দখল করেছে আমার জানা নেই। থানায় মামলা করেছি। আইন আদালতই এখন আমার কাছে ভরসা। সন্ত্রাসীদের পক্ষ থেকে তার জবরদখল হয়ে যাওয়া বাড়িঘর উদ্ধার করতে স্থানীয় প্রশাসন, সাথে এলাকাবাসীর সহযোগিতা চেয়েছেন নুরুল আলম।

এ বিষয়ে সদর থানা পুলিশের এক পদস্থ কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বলেন, থানার কাজের অবস্থা ফিরে আসলে দ্রুত পদক্ষেপ নিবেন।

ট্যাগ :
পাঠকপ্রিয়

আইন শৃঙ্খলা, দ্রব্যমুল্য, সংস্কার বিষয়ে সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ- ধর্ম উপদেষ্টা

বাড়িঘর সন্ত্রাসীদের দখলে, অন্যের বাড়িতে আশ্রিত ভূক্তভোগী পরিবার

প্রকাশিত সময় : ০৭:৩৭:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ অগাস্ট ২০২৪

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন এবং পরবর্তীতে সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে এলাকার পরিস্থিতি সামলাতে ব্যতিব্যস্ত ছিলেন দেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। আর ইহা একটি জাতীয় ইস্যু হলেও তা স্থানীয় পর্যায়ে চলে আসে। সে মূহুর্তে দেশের এমন দুর্যোগ পরিস্থিতিতে একমূখী কর্মতৎপরতায় ব্যস্ত থাকতে হয়েছে স্থানীয় আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনকে।

এই সুযোগটাই হাতছাড়া করেননি ভূমিদস্যু সন্ত্রাসীরা। ঝিলংজা ইউনিয়নের রহমতপুর এলাকার বাসিন্দা নুরুল আলমের ঘরে ঢুকে পরিবারের সদস্যদের উপর হামলা চালিয়ে বসতবাড়ি জবর দখল করে নিয়েছে। এঘটনায় কক্সবাজার সদর থানায় একটি নিয়মিত মামলা করা হয় জড়িত সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। এছাড়াও চিহ্নিত এই ভূমিদস্যু সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত অসহায় দরিদ্র, নিরীহ মানুষের জমি, ঘরবাড়ি লুটপাট, জবর দখল, নারীর শ্লীলতাহানি করছে বলে অসংখ্য অভিযোগ স্থানীয়দের।

ভূমিদস্যু সন্ত্রাসীরা এমন ন্যক্কারজনকজনক ঘটনাটি ঘটিয়েছে সোমবার (৫ আগস্ট) রাত আনুমানিক ২টার দিকে।

মৃত লালমিয়া সারাজীবন কাটিয়ে দেন রহমতপুর গ্রামে। পিতার সান্নিধ্যে বর্তমান মধ্য বয়সি নুরুল আলমের বেড়ে ওঠা এ এলাকাতেই। শ্রম বিক্রি করে সংসার চালান নুরুল আলম।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, গত মাসে সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যুরা নুরুল আলমের বসতঘরে লুটপাট ও ভাঙচুর চালিয়েছে। এ ঘটনায় নুরুল আলমের ৪ ছেলেমেয়েকে ধারালো দা’য়ের কাটা ও লৌহার রড দিয়ে আঘাত করে মারাত্মক ফোলা জখমের আঘাত করে সন্ত্রাসীরা। পেশকার পাড়া, বাহারছড়া, আলির জাহাল, বাসটার্মিনাল, লারপাড়ার, জোয়ারিয়ানালার সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা এ তাণ্ডব চালিয়ে নগদ টাকা, স্বর্নালংকার, মুল্যবান কাগজ পত্র, ঘরের আসবাবপত্র লুট করেছে। এ ঘটনায় আহতদের শোর চিৎকারে এলাকাবাসী এগিয়ে আসলে সন্ত্রাসীদের হাতে থাকা অবৈধ অস্ত্রের ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করেননি। তবে আহতদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেয়ার সহায়তায় এগিয়ে আসেন স্থানীয়রা। এ ঘটনার জেরে নুরুল আলম বাদী হয়ে কক্সবাজার সদর থানায় মামলা দায়ের করেন।

এ ঘটনায় জড়িতদের নামে মামলার খবর জানতে পেরে দিনদিন ক্ষিপ্ত হয়ে উঠছে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসীরা। মামলা তুলে নিতে বারবার চাপসৃষ্টি করে বাদীকে। মামলা তুলে না নিলে প্রথমে ঘরছাড়া করার হুমকি দেয় নুরু ডাকাত, সন্ত্রাসী শাপু, জঙ্গি মোর্শেদ টিটু। অভিযুক্তরা নুরুল আলমকে মামলা তুলে নিতে সময় সীমা বেঁধে দিয়ে বলেন, গতবারে আহত করেছে মাত্র। এবারে সবাইকে মেরে কুঁচি করে ওখানেই পুঁতে ফেলবে। তাদের হুমকি ধমকিতে মামলা তুলে না নেয়ায় যেকোনো সময় ঘরছাড়া করবে বলে বাদীকে সরাসরি হুমকি দেন নুরু, শাপু, টিটু সহ অন্যান্য আসামিরা।

এদিকে দেশে কোটা বাতিলের দাবিতে উঠা আন্দোলনের কারনে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে একমূখী কাছে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন এবং এদিকে স্থানীয় প্রশাসনের দুর্বলতার সুযোগ পেয়ে দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীরা গত ৫ আগষ্ট গভীর রাতে পুনরায় নুরুল আলমের বাড়িতে ঢুকে সবাইকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বাড়ি থেকে সবাইকে বের করে দিয়ে সুদীর্ঘ ৫০ বছরের অধিক সময় বসবাসরত বসতবাড়িটি দখল করেন। এরপর আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে সন্ত্রাসীদের তোপের মুখে বাড়িতে ঢুকতে পারেনি তারা। এখন অন্যের বাড়িতে আশ্রিত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের কালো থাবাতে বর্তমানে মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু হারাতে বসেছে নুরুল আলম।

জানতে চাইলে জেলগেইট এলাকায় বসবাসকারী ছৈয়দুর নূর বলেন, এই এলাকায় অধিকাংশ লোক বহিরাগত ও খারাপ প্রাকৃতির লোক। অথচ নুরুল আলমের ছোট বড় তিন/ চারজন টগবগে যুবক ছেলে আছে। তাদের সাথে এলাকার কোন ব্যক্তি বা পরিবারের সাথে ঝগড়া-বিবাদ তো দূরের কথা কারো সাথে কথা কাটাকাটি হয়েছে এরকম কোন খবর আমার জানা নেই। এলাকার সহজ সরল, সজ্জন মানুষ হিসেবে পরিচিত নুরুল আলম ও তার পরিবারের সবাই। তাদের দখলে থাকা জমিতে সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যদের কুনজর লেগেছে আছে দীর্ঘদিন ধরে। তার কাছ থেকে জমি কেড়ে নেওয়ার অপতৎপরতা অব্যাহত রাখেন তারা। অবৈধভাবে জমি দখল করতে গিয়ে ভূমিদস্যু কর্তৃক বিভিন্ন সময় হামলা মামলা ও জোর জুলুমের শিকার হয়েছে। গত মাসে ভূমিদস্যু সন্ত্রাসীরা নুরুল আলমের পরিবারের উপর হামলা করে ৪ ছেলে মেয়েকে মারাত্মকভাবে আহত করে। এরপর বাড়ির সবাই আহতদের চিকিৎসা করতে গেলে তালা ভেঙে তার ঘরটি দখল করেছে সন্ত্রাসীরা।

প্রতিবেশী নিজাম উদ্দিন বলেন, নুরুল আলমের বাড়িভিটি ছাড়া আর কিছুই নেই। কিছু জমি তাদের দখলে থাকলেও এই জমির একশত জমি কাউকে বিক্রি করতে দেখেননি। তাছাড়াও বর্তমানে জমির বাজার মূল্য অনেক। তার আশেপাশে যেসব খাস খতিয়ানভূক্ত জমি রয়েছে তা কমছে হলেও এ পর্যন্ত ৭-৮ বার বেচাবিক্রি হয়ে গেছে। অথচ নুরুল আলমের দখলে থাকা জমি বিক্রি তো দূরের কথা, সে জমিতে বিভিন্ন মূল্যবান গাছের বাগান গড়ে তুলে। বাপ দাদার আমল হতেই দীর্ঘ ৫০ বছরের অধিক সময় তাদের দখলে থাকা জমি কেড়ে নিতে একশ্রেণীর লোক নানা ষড়যন্ত্রের সঙ্গে তৎপরতা চালিয়ে আসছে। কোনমতে একটি ঘর তুলে পরিবারের সবাইকে নিয়ে এই অবস্থায় আছে নুরুল আলম। তার ঘরবাড়ি দখল ও ছেলে মেয়েদের উপর জোর জুলুমের ঘটনায় পুলিশ এসেছিল। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।

স্থানীয় ইউপি মেম্বার মোঃ ইউনূস বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। তাদের ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে অনেক অনুরোধ করছি। ভূমিদস্যুরা তার কথায় কর্ণপাত করেনি। তারা যেটা করছে তা অন্যায়। একজনের বাড়ি কেউ জোরপূর্বক দখল করতে পারে না। অথচ একটি পরিবারের কতকলোক আজ তাদের ঠাঁইটুকু হারিয়ে কতটা দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে তা একমাত্র ভুক্তভোগীরা জানেন। ওয়ার্ড মেম্বার আরো বলেন, তাদের ঘর বাড়ি ফিরিয়ে দিতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে যাবো।

এ বিষয়ে ভূক্তভোগী নুরুল আলম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ভূমিদস্যু সন্ত্রাসীদের অত্যাচার জুলুম নির্যাতন সহ্য করে আসছে। আড়াই ডজন মামলার আসামি কক্সবাজারের শীর্ষ সন্ত্রাসী নুরুল ইসলাম প্রকাশ নুরু ডাকাত, সন্ত্রাসী শাহাব উদ্দিন শাপু, ভূমিদস্যু সন্ত্রাসী মোর্শেদ টিটু, মহেশখালীতে ১৪ মাঝি মহল্লা হত্যা মামলার জেল ফেরত আসামি কামাল পাশার নেতৃত্বে আরো ১৫/২০ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী আমার বাড়িতে ঢুকে অবলা ছেলেমেয়েদের যাকে যেভাবে পেয়েছে মারধর করে আহত করে। এসময় পালিয়ে গিয়ে আমি প্রাণে রক্ষা পায়। সবাইকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে লুটপাট ও মেয়েদের শ্লীলতাহানি করে তারা। এতকিছুর পরও তারা আমার পিছু ছাড়েনি।

গত ৫ আগষ্ট প্রশাসনের দুর্বলতার সুযোগে পুনরায় দখল করে নিয়েছে সন্ত্রাসীরা। এখন আমার পাশের বাড়ির মৃত সামশুল হক মাষ্টারের ছেলে মোর্শেদ টিটু, তার মা, ৪ বোনসহ কতক আগন্তুক ব্যক্তি আমার বসতবাড়িতে অবস্থান করছেন। মুর্শেদ টিটুর নেতৃত্বে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের চপের মুখে বাধ্য হয়ে সবাইকে নিয়ে বাড়ি ছাড়া হয়েছি। তারা কী কারণে বাড়ি দখল করেছে আমার জানা নেই। থানায় মামলা করেছি। আইন আদালতই এখন আমার কাছে ভরসা। সন্ত্রাসীদের পক্ষ থেকে তার জবরদখল হয়ে যাওয়া বাড়িঘর উদ্ধার করতে স্থানীয় প্রশাসন, সাথে এলাকাবাসীর সহযোগিতা চেয়েছেন নুরুল আলম।

এ বিষয়ে সদর থানা পুলিশের এক পদস্থ কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বলেন, থানার কাজের অবস্থা ফিরে আসলে দ্রুত পদক্ষেপ নিবেন।