ঈদুল আজহা সামনে রেখে কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে চাহিদা বেড়েছে পশু জবাই ও মাংস কাটার সরঞ্জামের। এ চাহিদা পূরণে ব্যস্ততা বেড়েছে কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন কামারের দোকানগুলোতে। বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রাংশের প্রভাবে কামার শিল্পের দুর্দিন চলছে। তবে আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন কক্সবাজারের কামার সম্প্রদায়।
কামার পল্লীর কারিগররা জানান, বর্তমানে লোহা ও কয়লার দাম বেশি। তাই তৈরিকৃত সরঞ্জাম বিক্রি বেশি হলেও লাভ কম হয়। আর ২ সপ্তাহ পর মুসলিম সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় বৃহত্তর ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। তাই এই উৎসব কেন্দ্র কামারদের ব্যস্থতা বেড়েছে অনেক। কাজের চাপে যেন দম ফেলার সময় নেই তাদের। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করছেন কামারেরা। তাদের এই ব্যস্থতা থাকবে ঈদুল আজহার দিন সকাল পর্যন্ত৷
শহরের চাউল বাজারের কামার পল্লী, কালুর দোকান, বিমান বন্দর সড়ক, বাস টার্মিনালসহ বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে দেখা গেছে লোহার তৈরি বিভিন্ন সরঞ্জাম বানাচ্ছেন কামারেরা।
এসব সরঞ্জাম শহরের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে যাচ্ছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। আবার শহর থেকে লোহা কিনে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে তৈরি করা হচ্ছে প্রয়োজনীয় এসব জিনিসপত্র।
শহরের বড় বাজারের কামার শংকর দাশ জানান, সারা বছরের মধ্যে কোরবানি ঈদেই আমাদের বেশি ব্যস্থ থাকতে হয়। বর্তমানে লোহা ও কয়লার দাম বেশি। তাই তৈরিকৃত সরঞ্জাম বিক্রি বেশি হলেও লাভ কম হয়। আমরা বছরজুড়ে এ সময়ের অপেক্ষায় থাকি।
বড়বাজারের কারিগররা অভিযোগ করে বলেন, তাদের পরিশ্রমের তুলনায় মজুরি অনেক কম। সারাদিন আগুনের পাশে বসে থেকে কাজ করতে হয়, এর ফলে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা তৈরি হয়। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে কক্সবাজারে কমে যাচ্ছে কামার সম্প্রদায়ের মানুষ। বাধ্য হয়ে পৈত্রিক পেশা পরিবর্তন করছেন অনেকে।
কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার কামার সনজিত চন্দ্র বলেন, সারাবছর আমাদের তেমন বিক্রি হয় না। তবে কোরবানি ঈদের একমাস আমাদের বিক্রি বেড়ে যায়। তবে উৎপাদন ও প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়ায় লাভ আগের চেয়ে অনেক কম।
বড় বাজারের সুভাষ ও সমির কর্মকার জানান, প্রতিবছর কোরবানি ঈদে আমরা বিভিন্ন ধরনের উপকরণ তৈরি করে থাকি। এবারও এসব উপকরণের চাহিদা বেড়েছে। সারাবছর আমরা যে আয় করি, কোরবানি ঈদের এক মাসে তার চেয়ে বেশি আয় করতে পারি। কামার শিল্পের অতি প্রয়োজনীয় জ্বালানি হচ্ছে কয়লা। কিন্তু এই কয়লা এখন প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। গ্রাম-গঞ্জে ঘুরে কয়লা সংগ্রহ করতে হয়। বর্তমানে কয়লার দামও অনেক বেড়েছে। সেইসঙ্গে বেড়েছে লোহার দামও। লোহা ও কয়লার দাম বাড়লেও সেই তুলনায় কামার শিল্পের উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়েনি।
কক্সবাজার পৌরসভার কাউন্সিলর আক্তার কামাল বলেন -লোহা শিল্পের দ্রব্য মূল্যবৃদ্ধি, আধুনিক চাষাবাদ, ক্রেতা সংকট ও দিন দিন নিত্যপণ্য সামগ্রীর ক্রয় মূল্য বৃদ্ধি, ছেলে মেয়েদের পড়াশোনা এবং সাংসারিক ঘানি টানতে চরম বিপাকে পড়েছেন কামারেরা । তবে কোরবানি ঈদের সময় তাদের ব্যবসা বানিজ্যে কিছুটা লাভ হয়৷ তা নাহলে কামারদের এই পেশায় টিকে থাকা সম্ভব ছিল না।