১০:২০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভাঙ্গন-অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও অবৈধ দখলে হারিয়ে যাচ্ছে সাগরলতা

কক্সবাজার জেলায় ডেইলকেন্দ্রিক অনেক লোকালয় রয়েছে। একসময় কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক থেকে কলাতলী পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৫শ ফুট চওড়া একটি ডেইল ছিল। এই ডেইলের কোনো কোনো স্থানে উচ্চতা ৩০ ফুটেরও বেশি ছিল। যেখানে থরে থরে ফোটা সাগরলতার ফুল দেখা যেত।

রামু উপজেলার বাসিন্দা আমজাদ হোসেন বলেন, এক সময় সমুদ্র সৈকতটা অনেক সুন্দর ছিল, ছিল সাগর লতা আর লাল কাকরা। কিন্তু এবার এসে কিছু দেখতে পেলাম না, সমুদ্র সৈকতের সাগরলতা গুলো যদি থাকত তাহলে সমুদ্র সৈকত আারও সুন্দর হতো বলে মনে করি আমি।

সিলেট থেকে আসা আরফিনা আলম আরিফ বলেন,বিশ্ব দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে প্রতি বছরে একবার আসি প্রায় সময় সাগর লতা দেখতে পাই না, কিছু কিছু জায়গায় সাগর লতা থাকলেও দোকানপাট বসে সাগরলতা গুলো নষ্ট করে ফেলছে, যদিও সাগরলতা গুলো রক্ষা করা যায় আরও সুন্দর হবে বলেও মনে করি।

কক্সবাজারের পরিবেশ আন্দোলন(বাপা) জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক, নজরুল ইসলাম বলেন, কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সমুদ্রের তীর ধরে ২০ থেকে ৩০ ফুট উঁচু পাহাড়ের মতোই বড় বড় বালির ঢিবি ছিল। এসব বালিয়াড়ির প্রধান উদ্ভিদ ছিল সাগরলতা। সাগরলতার গোলাপি-অতি বেগুনী রঙের ফুলে সৈকতে অন্য রকমের সৌন্দর্য তৈরি হতো। কিন্তু সাগরলতা ও বালিয়াড়ি হারিয়ে যাওয়ায় গত ২৮ বছরে কক্সবাজার সৈকতের ৫শ মিটারের বেশি ভূমি সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। এর মধ্যে সরকারের অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও দখলদারদের কারণে বালিয়াড়িতে এসব আর দেখা পায় না।

বালিয়াড়িকে সৈকতের রক্ষাকবচ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। বালিয়াড়ির কারণে সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস লোকালয়ে তেমন ক্ষতি করতে পারে না। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের সময়েও সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টের বালিয়াড়ির পাশে থাকা মসজিদসহ আশপাশের বাড়িঘর ছিল নিরাপদ। সেখানে সামুদ্রিক জোয়ারের পানি যেমন উঠেনি, তেমনি বাতাসের তোড়ও ছিল কম। ফলে বাড়িঘরগুলো ছিল নিরাপদ। অথচ যেখানে বালিয়াড়ি ছিল না সেখানে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে বাড়িঘর তলিয়ে দেয় বলে জানান শহরের বাহারছড়ার বাসিন্দা কবির আহমদ ।

বালিয়াড়িকে কক্সবাজার অঞ্চলে ডেইল বলা হয়। কক্সবাজার উপকূলের কুতুবদিয়া থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত এই ধরনের বহু বালিয়াড়ি দেখা যেত। সমুদ্রতীরের বাসিন্দারা এই ধরনের বালিয়াড়ি ঘিরে লোকালয় তৈরি করে। আর এ লোকালয়গুলো ‘ডেইলপাড়া’ নামে পরিচিতি পায়।

তা দেখে চোখ জুড়াত পর্যটকদের। কিন্তু এসব বালিয়াড়ি ঘিরে ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে সরকারি-বেসরকারি নানা স্থাপনা। ফলে এখন আর শহরের কোথাও সাগরলতা তেমন দেখা যায় না। তবে শহরের বাইরে যেখানে কিছু বালিয়াড়ি এখনো অবশিষ্ট রয়েছে, সেখানে টিকে আছে সাগরলতা।

ট্যাগ :
পাঠকপ্রিয়

আইন শৃঙ্খলা, দ্রব্যমুল্য, সংস্কার বিষয়ে সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ- ধর্ম উপদেষ্টা

ভাঙ্গন-অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও অবৈধ দখলে হারিয়ে যাচ্ছে সাগরলতা

প্রকাশিত সময় : ০৫:৪৯:৪৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ মার্চ ২০২৪

কক্সবাজার জেলায় ডেইলকেন্দ্রিক অনেক লোকালয় রয়েছে। একসময় কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক থেকে কলাতলী পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৫শ ফুট চওড়া একটি ডেইল ছিল। এই ডেইলের কোনো কোনো স্থানে উচ্চতা ৩০ ফুটেরও বেশি ছিল। যেখানে থরে থরে ফোটা সাগরলতার ফুল দেখা যেত।

রামু উপজেলার বাসিন্দা আমজাদ হোসেন বলেন, এক সময় সমুদ্র সৈকতটা অনেক সুন্দর ছিল, ছিল সাগর লতা আর লাল কাকরা। কিন্তু এবার এসে কিছু দেখতে পেলাম না, সমুদ্র সৈকতের সাগরলতা গুলো যদি থাকত তাহলে সমুদ্র সৈকত আারও সুন্দর হতো বলে মনে করি আমি।

সিলেট থেকে আসা আরফিনা আলম আরিফ বলেন,বিশ্ব দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে প্রতি বছরে একবার আসি প্রায় সময় সাগর লতা দেখতে পাই না, কিছু কিছু জায়গায় সাগর লতা থাকলেও দোকানপাট বসে সাগরলতা গুলো নষ্ট করে ফেলছে, যদিও সাগরলতা গুলো রক্ষা করা যায় আরও সুন্দর হবে বলেও মনে করি।

কক্সবাজারের পরিবেশ আন্দোলন(বাপা) জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক, নজরুল ইসলাম বলেন, কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সমুদ্রের তীর ধরে ২০ থেকে ৩০ ফুট উঁচু পাহাড়ের মতোই বড় বড় বালির ঢিবি ছিল। এসব বালিয়াড়ির প্রধান উদ্ভিদ ছিল সাগরলতা। সাগরলতার গোলাপি-অতি বেগুনী রঙের ফুলে সৈকতে অন্য রকমের সৌন্দর্য তৈরি হতো। কিন্তু সাগরলতা ও বালিয়াড়ি হারিয়ে যাওয়ায় গত ২৮ বছরে কক্সবাজার সৈকতের ৫শ মিটারের বেশি ভূমি সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। এর মধ্যে সরকারের অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও দখলদারদের কারণে বালিয়াড়িতে এসব আর দেখা পায় না।

বালিয়াড়িকে সৈকতের রক্ষাকবচ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। বালিয়াড়ির কারণে সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস লোকালয়ে তেমন ক্ষতি করতে পারে না। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের সময়েও সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টের বালিয়াড়ির পাশে থাকা মসজিদসহ আশপাশের বাড়িঘর ছিল নিরাপদ। সেখানে সামুদ্রিক জোয়ারের পানি যেমন উঠেনি, তেমনি বাতাসের তোড়ও ছিল কম। ফলে বাড়িঘরগুলো ছিল নিরাপদ। অথচ যেখানে বালিয়াড়ি ছিল না সেখানে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে বাড়িঘর তলিয়ে দেয় বলে জানান শহরের বাহারছড়ার বাসিন্দা কবির আহমদ ।

বালিয়াড়িকে কক্সবাজার অঞ্চলে ডেইল বলা হয়। কক্সবাজার উপকূলের কুতুবদিয়া থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত এই ধরনের বহু বালিয়াড়ি দেখা যেত। সমুদ্রতীরের বাসিন্দারা এই ধরনের বালিয়াড়ি ঘিরে লোকালয় তৈরি করে। আর এ লোকালয়গুলো ‘ডেইলপাড়া’ নামে পরিচিতি পায়।

তা দেখে চোখ জুড়াত পর্যটকদের। কিন্তু এসব বালিয়াড়ি ঘিরে ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে সরকারি-বেসরকারি নানা স্থাপনা। ফলে এখন আর শহরের কোথাও সাগরলতা তেমন দেখা যায় না। তবে শহরের বাইরে যেখানে কিছু বালিয়াড়ি এখনো অবশিষ্ট রয়েছে, সেখানে টিকে আছে সাগরলতা।