০৭:৫২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মহেশখালীতে চুরির অপবাদে শিশুকে অন্ধকার রুমে বেঁধে অমানবিক নির্যাতন

* গলায় চুরি ধরে নেওয়া হয় চুরির স্বীকারোক্তির ভিডিও ও খালি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর
* ৩ লাখ টাকা না দিলে গুম করার হুমকি

চুরির অপবাদে ভাড়া নিয়ে যাওয়ার কথা বলে টমটম গাড়িসহ এক শিশুকে ২দিন ধরে বাড়িতে আটকে রেখে চালানো হয় অমানবিক নির্যাতন। শুধু তাই নয়, হত্যার হুমকি দিয়ে জোর করে নেওয়া হয় চুরির স্বীকারোক্তির ভিডিও ও খালি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর। এমন বর্বরোচিত ঘটনাটি ঘটে মহেশখালীর কালারমারছড়া ইউনিয়নের উত্তর নরবিলায়।

এ ঘটনায় জড়িত ওই এলাকার নুরুল আলমের ছেলে মোবারক হোসেন(৩০) ও কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি। চুরির অপবাদে শিশুটিকে নির্যাতনকারিদের মধ্যে একজন ইউপি সদস্যও রয়েছেন।

নির্যাতনের শিকার সোহেল(১৬) উপজেলার শাপলাপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড মৌলভীকাটা এলাকার মোহাম্মদ শাহ আলমের ছেলে।

জানা গেছে, গত ২৪ সেপ্টেম্বর সোহেল একটি ভাড়ায় চালিত টমটম গাড়ি চালাচ্ছিলেন। তখন কালামারছড়ার বালুর ডেইল থেকে ভাড়া নিয়ে যাওয়ার কথা বলে সোহেলকে বাড়িতে নিয়ে যান মোবারক হোসেন। বাড়িতে নিয়ে গিয়ে চুরির অপবাদে টমটম গাড়িসহ সোহেলকে আটকে রাখে। অন্ধকার ঘরে ২দিন ধরে চালানো হয় অমানবিক নির্যাতন। একপর্যায়ে সোহেলকে হত্যার হুমকি দিয়ে তার কাছ থেকে চুরির স্বীকারোক্তির ভিডিও এবং খালি একটা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়া হয়।

এদিকে শিশু সোহেলকে তার পরিবার ও টমটম গাড়ির মালিক মোঃ সোহেল(২৮) ২দিন ধরে খুঁজে না পেয়ে মহেশখালী থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। থানায় অভিযোগ দায়ের করার খবর পেয়ে সোহেলকে ছেড়ে দেয় মোবারক হোসেন। নির্যাতনের শিকার সোহেল আহত অবস্থায় বাড়িতে ফিরে গেলে পরিবার তাকে মহেশখালী স্বাস্থ্যা কমপ্লেক্সে চিকিৎসা করে সুস্থ করেন।

অভিযোগের ভিত্তিতে গত ২৬ সেপ্টেম্বর মহেশখালী থানার এএসআই এমদাদের নেতৃত্বে মোবারক হোসেনের বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশের একটি টিম। এসময় তার বাড়ি থেকে টমটম গাড়ি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। পরের দিন (২৭ সেপ্টেম্বর) কাগজপত্র যাচাই-বাচাই করে টমটম গাড়ির মালিক সোহেলকে বুঝিয়ে দেয় এএসআই এমদাদ।

এরপর থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে শিশু সোহেল ও তার পরিবারের কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা দাবি করে আসছে মোবারক হোসেন। টাকা না দিলে সোহেলকে একেবারে গুম করবে ও খালি স্ট্যাম্পটি দিয়ে মামলা করার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এনিয়ে আতংকে ও দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন সোহেলের পরিবার।

নির্যাতনের শিকার সোহেল জানায়, ভাড়া নেওয়ার কথা বলে আমাকে জোর করে আটকে রাখে মোবারক। তার বাড়ির একটি অন্ধকার রুমে আমাকে তালাবদ্ধ করে রাখে ২দিন। চিৎকার করলে আমাকে অনেক মারধর করে জবাই করার হুমকি দেয়। ২দিন ধরে ভাত-পানি কিছু খেতে দেয়নি। একদিন পর রাতে আমাকে অন্ধকার রুম থেকে বের করে মোবারকসহ ৪/৫ জন লোক গলায় চুরি ধরে খালি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর এবং জোর করে চুরির স্বীকারোক্তির ভিডিও নেয়।

সোহেল আরও জানায়, সেসময় মোবারক বলছে, আমি যেভাবে শিখিয়ে দিচ্ছি ক্যামেরার সামনে ঠিক এভাবেই বলবি, নইলে এখনি জবাই করে লাশ গুম করে ফেলব। আমি ভয়ে একটি কাগজে আমার নাম লিখেছি ও ক্যামেরার সামনে তারা যেরকম বলতে বলছে সেরকম বলছি।

নির্যাতনের শিকার সোহেলের বাবা মোহাম্মদ শাহ আলম জানায়, আমার ছেলেকে মোবারকের বাড়িতে বেঁধে দুদিন ধরে মারধর করেছে। আমি ছেলেকে খুঁজে না পেয়ে থানায় অভিযোগ করেছিলাম। পরে দেখি আমার ছেলে আহত অবস্থায় বাড়ি ফিরে আসে। তখন ছেলেকে মহেশখালী স্বাস্থ্যা কমপ্লেক্সে চিকিৎসা করে সুস্থ করি। এখন মোবারক আমার কাছ থেকে প্রতিনিয়ত ৩ লাখ টাকা দাবি করে আসছে। টাকা না দিলে সোহেলকে আবারও গুম করবে বলে হুমকি দিচ্ছে। এটি নিয়ে আমি ও আমার পরিবার আতংকের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি।
এবিষয়ে আমি প্রশাসনের সর্বোচ্চ সহযোগিতা কামনা করি।

এদিকে অভিযুক্ত মোবারকের এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, গত এক বছর আগে শাপলাপুর ইউনিয়নের মিঠাছড়ি এলাকা থেকে তার একটি টমটম কেড়ে নিয়েছিল একদল ডাকাত। এসময় ডাকাতদের চিনতে পেরে স্থানীয় মেম্বার-চেয়ারম্যানকে বিচার দিয়েছিল মোবারক। এনিয়ে স্থানীয়ভাবে বেশ কয়েকবার সালিশও বসেছিল। স্থানীয় সালিশে ডাকাতদের উপস্থিত করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা হয়েছিল। তখন টমটম কেড়ে নেওয়ার ঘটনায় জড়িত কয়েকজন ব্যক্তির সাথে ক্ষতিপূরণের একটি চুক্তিও হয়। কিন্তু তারা ক্ষতিপূরণ না দিয়ে আজকাল বলে সময় ক্ষেপণ করতে থাকে।
তারই জের ধরে শাপলাপুরের এক নিরীহ শিশুকে আটকে রেখে নির্যাতন চালিয়ে টমটম কেড়ে নেওয়ার পাঁয়তারা চালায় মোবারক। কিন্তু মোবারকের সে আশা পূরণ না হওয়ায় তার কাছে থাকা ভিডিও ও স্ট্যাম্প নিয়ে ৩ লাখ টাকা দাবি করতে থাকে শিশু সোহেলের পরিবারের কাছে।

এবিষয়ে উত্তর নলবিলার মেম্বার সেলিম শিশুটিকে নির্যাতনের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আমি নির্যাতনের খবর পেয়ে মোবারকের বাড়ি থেকে বাঁধা অবস্থায় শিশুটিকে উদ্ধার করি।
আমার অফিসে নিয়ে এসে শিশুটির পরিবারের সাথে কথা বলে বাড়ি চলে যেতে তাকে গাড়িতে তুলে দিয়েছিলাম। পরের দিন পুলিশ এসে মোবারকের বাড়ি থেকে টমটম গাড়িটি উদ্ধার করে নিয়ে যায়।

ট্যাগ :
পাঠকপ্রিয়

জমে উঠেছে বৃহত্তর বাদশাঘোনা সমাজ পরিচালনা কমিটির দ্বি-বার্ষিক নির্বাচনের প্রচার প্রচারণা

মহেশখালীতে চুরির অপবাদে শিশুকে অন্ধকার রুমে বেঁধে অমানবিক নির্যাতন

প্রকাশিত সময় : ০৫:৪২:২৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪

* গলায় চুরি ধরে নেওয়া হয় চুরির স্বীকারোক্তির ভিডিও ও খালি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর
* ৩ লাখ টাকা না দিলে গুম করার হুমকি

চুরির অপবাদে ভাড়া নিয়ে যাওয়ার কথা বলে টমটম গাড়িসহ এক শিশুকে ২দিন ধরে বাড়িতে আটকে রেখে চালানো হয় অমানবিক নির্যাতন। শুধু তাই নয়, হত্যার হুমকি দিয়ে জোর করে নেওয়া হয় চুরির স্বীকারোক্তির ভিডিও ও খালি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর। এমন বর্বরোচিত ঘটনাটি ঘটে মহেশখালীর কালারমারছড়া ইউনিয়নের উত্তর নরবিলায়।

এ ঘটনায় জড়িত ওই এলাকার নুরুল আলমের ছেলে মোবারক হোসেন(৩০) ও কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি। চুরির অপবাদে শিশুটিকে নির্যাতনকারিদের মধ্যে একজন ইউপি সদস্যও রয়েছেন।

নির্যাতনের শিকার সোহেল(১৬) উপজেলার শাপলাপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড মৌলভীকাটা এলাকার মোহাম্মদ শাহ আলমের ছেলে।

জানা গেছে, গত ২৪ সেপ্টেম্বর সোহেল একটি ভাড়ায় চালিত টমটম গাড়ি চালাচ্ছিলেন। তখন কালামারছড়ার বালুর ডেইল থেকে ভাড়া নিয়ে যাওয়ার কথা বলে সোহেলকে বাড়িতে নিয়ে যান মোবারক হোসেন। বাড়িতে নিয়ে গিয়ে চুরির অপবাদে টমটম গাড়িসহ সোহেলকে আটকে রাখে। অন্ধকার ঘরে ২দিন ধরে চালানো হয় অমানবিক নির্যাতন। একপর্যায়ে সোহেলকে হত্যার হুমকি দিয়ে তার কাছ থেকে চুরির স্বীকারোক্তির ভিডিও এবং খালি একটা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়া হয়।

এদিকে শিশু সোহেলকে তার পরিবার ও টমটম গাড়ির মালিক মোঃ সোহেল(২৮) ২দিন ধরে খুঁজে না পেয়ে মহেশখালী থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। থানায় অভিযোগ দায়ের করার খবর পেয়ে সোহেলকে ছেড়ে দেয় মোবারক হোসেন। নির্যাতনের শিকার সোহেল আহত অবস্থায় বাড়িতে ফিরে গেলে পরিবার তাকে মহেশখালী স্বাস্থ্যা কমপ্লেক্সে চিকিৎসা করে সুস্থ করেন।

অভিযোগের ভিত্তিতে গত ২৬ সেপ্টেম্বর মহেশখালী থানার এএসআই এমদাদের নেতৃত্বে মোবারক হোসেনের বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশের একটি টিম। এসময় তার বাড়ি থেকে টমটম গাড়ি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। পরের দিন (২৭ সেপ্টেম্বর) কাগজপত্র যাচাই-বাচাই করে টমটম গাড়ির মালিক সোহেলকে বুঝিয়ে দেয় এএসআই এমদাদ।

এরপর থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে শিশু সোহেল ও তার পরিবারের কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা দাবি করে আসছে মোবারক হোসেন। টাকা না দিলে সোহেলকে একেবারে গুম করবে ও খালি স্ট্যাম্পটি দিয়ে মামলা করার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এনিয়ে আতংকে ও দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন সোহেলের পরিবার।

নির্যাতনের শিকার সোহেল জানায়, ভাড়া নেওয়ার কথা বলে আমাকে জোর করে আটকে রাখে মোবারক। তার বাড়ির একটি অন্ধকার রুমে আমাকে তালাবদ্ধ করে রাখে ২দিন। চিৎকার করলে আমাকে অনেক মারধর করে জবাই করার হুমকি দেয়। ২দিন ধরে ভাত-পানি কিছু খেতে দেয়নি। একদিন পর রাতে আমাকে অন্ধকার রুম থেকে বের করে মোবারকসহ ৪/৫ জন লোক গলায় চুরি ধরে খালি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর এবং জোর করে চুরির স্বীকারোক্তির ভিডিও নেয়।

সোহেল আরও জানায়, সেসময় মোবারক বলছে, আমি যেভাবে শিখিয়ে দিচ্ছি ক্যামেরার সামনে ঠিক এভাবেই বলবি, নইলে এখনি জবাই করে লাশ গুম করে ফেলব। আমি ভয়ে একটি কাগজে আমার নাম লিখেছি ও ক্যামেরার সামনে তারা যেরকম বলতে বলছে সেরকম বলছি।

নির্যাতনের শিকার সোহেলের বাবা মোহাম্মদ শাহ আলম জানায়, আমার ছেলেকে মোবারকের বাড়িতে বেঁধে দুদিন ধরে মারধর করেছে। আমি ছেলেকে খুঁজে না পেয়ে থানায় অভিযোগ করেছিলাম। পরে দেখি আমার ছেলে আহত অবস্থায় বাড়ি ফিরে আসে। তখন ছেলেকে মহেশখালী স্বাস্থ্যা কমপ্লেক্সে চিকিৎসা করে সুস্থ করি। এখন মোবারক আমার কাছ থেকে প্রতিনিয়ত ৩ লাখ টাকা দাবি করে আসছে। টাকা না দিলে সোহেলকে আবারও গুম করবে বলে হুমকি দিচ্ছে। এটি নিয়ে আমি ও আমার পরিবার আতংকের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি।
এবিষয়ে আমি প্রশাসনের সর্বোচ্চ সহযোগিতা কামনা করি।

এদিকে অভিযুক্ত মোবারকের এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, গত এক বছর আগে শাপলাপুর ইউনিয়নের মিঠাছড়ি এলাকা থেকে তার একটি টমটম কেড়ে নিয়েছিল একদল ডাকাত। এসময় ডাকাতদের চিনতে পেরে স্থানীয় মেম্বার-চেয়ারম্যানকে বিচার দিয়েছিল মোবারক। এনিয়ে স্থানীয়ভাবে বেশ কয়েকবার সালিশও বসেছিল। স্থানীয় সালিশে ডাকাতদের উপস্থিত করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা হয়েছিল। তখন টমটম কেড়ে নেওয়ার ঘটনায় জড়িত কয়েকজন ব্যক্তির সাথে ক্ষতিপূরণের একটি চুক্তিও হয়। কিন্তু তারা ক্ষতিপূরণ না দিয়ে আজকাল বলে সময় ক্ষেপণ করতে থাকে।
তারই জের ধরে শাপলাপুরের এক নিরীহ শিশুকে আটকে রেখে নির্যাতন চালিয়ে টমটম কেড়ে নেওয়ার পাঁয়তারা চালায় মোবারক। কিন্তু মোবারকের সে আশা পূরণ না হওয়ায় তার কাছে থাকা ভিডিও ও স্ট্যাম্প নিয়ে ৩ লাখ টাকা দাবি করতে থাকে শিশু সোহেলের পরিবারের কাছে।

এবিষয়ে উত্তর নলবিলার মেম্বার সেলিম শিশুটিকে নির্যাতনের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আমি নির্যাতনের খবর পেয়ে মোবারকের বাড়ি থেকে বাঁধা অবস্থায় শিশুটিকে উদ্ধার করি।
আমার অফিসে নিয়ে এসে শিশুটির পরিবারের সাথে কথা বলে বাড়ি চলে যেতে তাকে গাড়িতে তুলে দিয়েছিলাম। পরের দিন পুলিশ এসে মোবারকের বাড়ি থেকে টমটম গাড়িটি উদ্ধার করে নিয়ে যায়।