মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি এবং সামরিক বাহিনীর মধ্যে আবারও সংঘাত শুরু হয়েছে। কক্সবাজারের টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ ও সেন্টমার্টিনে মর্টার শেল ও গুলির বিকট শব্দ শোনা গেছে। মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত দ্বীপে সীমান্তের ওপারে ভারী গোলাগুলির শব্দ শোনেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এ ছাড়া টেকনাফের হোয়াইক্যং ও হ্নীলার কিছু এলাকায় গোলার ভারী শব্দ পাওয়া গেছে।
‘সীমান্তের ওপারে গোলাগুলির খবর শুনেছি’ উল্লেখ করে কোস্ট গার্ড সদর দফতরের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার খন্দকার মুনিফ তকি বলেন, ‘শুরু থেকে নাফ নদে আমরা রাত-দিন টহল জোরদার রেখেছি। আমরা যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব সময় প্রস্তুত রয়েছি। অনুপ্রবেশ রোধে সীমান্তে আমরা কঠোর অবস্থানে আছি।’
কিছুদিন বন্ধ থাকার পর শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তে ব্যাপক গোলার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন দ্বীপের জেটিঘাটের বাসিন্দা নাছির উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘সেহরির পর থেকে মিয়ানমারের ওপার থেকে খুব বিকট শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। হঠাৎ করে আবার এ সীমান্তে গোলার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। এমনকি এ গোলার শব্দ সেন্টমার্টিনেও পাওয়া যাচ্ছে।’
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আক্তার কামাল বলেন, ‘সেন্টমার্টিন সীমান্তের ওপারে ভোর থেকে গোলার শব্দ পাচ্ছে বলে স্থানীয়দের মাধ্যমে শুনেছি।’
জানতে চাইলে টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপের ইউপি সদস্য আবদুস বলেন, ‘সীমান্তে সকাল থেকে খুব বেশি গুলির শব্দ হচ্ছে বলে সীমান্তের লোকজনের কাছে শুনেছি। তবে ওপারে ঠিক কোন এলাকায় এ ঘটনা ঘটছে এপারে নাফ নদ থাকায় সেটা বলা মুশকিল।’
শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা ব্যবসায়ী মো. এনাম উল্লাহ বলেন, ‘মিয়ানমারের গোলার শব্দে দ্বীপের সীমান্ত এলাকা কাঁপছে। আধঘণ্টা পরপর ওপারের গুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। আজকের গোলাগুলির শব্দ শাহপরীর দ্বীপ বাজারে পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে। এতে সীমান্তে বসবাসকারী শিশু-নারীরা ভয়ভীতির মধ্যে আছেন।’
সেন্টমার্টিন দ্বীপের একটি আবাসিক হোটেলের পরিচালক মো. ইসহাক বলেন, ‘সকাল থেকে ভারী মর্টারশেল ও গুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে দ্বীপে। কিছুক্ষণ পরপর এ শব্দ শুনতে পাচ্ছি আমরা।’
শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা গৃহিণী রহিমা খাতুন বলেন, ‘ফজরের নামাজের পর থেকে গোলাগুলির শব্দ শুনেছি। প্রথমে বজ্রপাতের শব্দ মনে করেছি। পরে নিশ্চিত হয়েছি মিয়ানমারে ফের যুদ্ধ শুরু হয়েছে।’
টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়ার বাসিন্দা আবুল আলী বলেন, ‘সকাল ৭টার দিকে বিকট শব্দে ঘুম ভাঙে। ভেবেছি বাড়ির ছাদ ভেঙে পড়েছিল। এরপর নিশ্চিত হয়েছি, মিয়ানমারের গোলার শব্দ এপারে এসেছে। ঘণ্টাখানেক সময়ে বেশ কয়েকটি বড় গোলার শব্দ শুনেছি। এর আগে আমাদের সীমান্ত থেকে এভাবে শব্দ শোনা যায়নি। এতে সাধারণ মানুষ আতঙ্কে রয়েছে।’
এদিকে, মিয়ানমার মংডু, বুথেডং ও রাথেডংয়ের কয়েকটি গ্রামে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান আর্মির সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর তুমুল সংঘর্ষ চলছে। টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং থেকে শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত ৫৪ কিলোমিটার এলাকায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি এবং বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের সদস্যরা নাফ নদ ও সীমান্ত সড়কে টহল বৃদ্ধি করেছে।
এ বিষয়ে টেকনাফ-২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘সীমান্তে বিজিবির টহল জোরদারের পাশাপাশি সীমান্তে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রোধে সতর্ক অবস্থানে রয়েছি।’
টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন, ‘সীমান্তে ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত থেমে থেমে গোলার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। অন্যদিনের তুলনায় আজ গোলার শব্দ বিকট।’