০২:৩০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ৪ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মিয়ানমার সংঘাত: বিকট শব্দে ঘুম ভাঙল টেকনাফ সীমান্তের বাসিন্দাদের

কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সীমান্তবর্তী বিভিন্ন এলাকা থেকে আবারও মর্টার শেল ও ভারী গোলা বর্ষণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত নয়টা পর্যন্ত প্রচণ্ড শব্দে সীমান্ত এলাকা কেঁপে উঠেছে। সারা রাত শান্ত থাকলেও আজ শুক্রবার ভোর সাড়ে পাঁচটায় বিকট একটি শব্দে ঘুম ভাঙে সীমান্তের মানুষের। এর পর থেকে বেলা একটা পর্যন্ত কিছুক্ষণ পরপর মিয়ানমার থেকে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসতে থাকে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে টেকনাফ পৌরসভার প্যানেল মেয়র মুজিবুর রহমান ও সাবরাং ইউপি চেয়ারম্যান নুর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, গত মঙ্গলবার বিকেল থেকে টানা কয়েক দিন ধরে টেকনাফ উপজেলার মানুষ আতঙ্কের মধ্যে বাস করছেন। ক্রমাগত মর্টার শেল ও ভারী গোলার শব্দে টেকনাফ সীমান্তের মানুষ ভালো ঘুমাতে পারছে না। আজ ভোরে বিকট একটি শব্দ শোনা যায়। মনে হচ্ছে মিয়ানমারের গোলা বাড়ির ছাদে এসে পড়েছে। প্রচণ্ড ভয় পেয়ে ঘুম ভাঙে সবার। এ রকম বিকট শব্দে হঠাৎ করে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে লোকজন মারা যেতে পারে।

জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য শফিক মিয়া বলেন, মিয়ানমারের বোমা হামলার শব্দে টেকনাফে থাকা যাচ্ছে না। রাষ্ট্রীয়ভাবে মিয়ানমার সরকারকে বিষয়টি জানানো প্রয়োজন। ঘুমন্ত অবস্থায় হঠাৎ বিকট শব্দে চমকে উঠছে শিশু ও বয়স্ক লোকজন। আজ সকালের শব্দটি খুবই ভয়ংকর ছিল।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সীমান্ত এলাকার লোকজনের মতে, মিয়ানমারের মংডু টাউনশিপের যে এলাকায় বর্তমানে হামলা হচ্ছে, সেখানে অধিকাংশ রোহিঙ্গা নাগরিকের বসবাস। মংডু টাউনশিপের আশপাশের এলাকায় নতুন করে জান্তা বাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘর্ষের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় এমন বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে নাফ নদী পেরিয়ে টেকনাফের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে। তবে সম্ভাব্য রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সতর্ক রয়েছে কোস্টগার্ড ও বিজিবি। নতুন করে আর কোনো রোহিঙ্গাকে ঠাঁই দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ।

২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনের রোহিঙ্গা-অধ্যুষিত গ্রামগুলোয় অভিযান শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের শিকার হয়ে প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে দলে দলে বাংলাদেশে আসতে থাকে রোহিঙ্গারা। ওই সময় ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আশ্রয় নেয় বাংলাদেশে। তারা বর্তমানে টেকনাফ, উখিয়া ও নোয়াখালীর ভাসানচর আশ্রয়শিবিরে বসবাস করছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বাংলাদেশ সীমান্তে বিজিবি ও কোস্টগার্ডের টহল জোরদার করা হয়েছে। তবে মিয়ানমার থেকে আসা বিকট বিস্ফোরণের শব্দ এখনো থামেনি।

ট্যাগ :
পাঠকপ্রিয়

‘স্টেপ ডাউন ইউনুস’পোস্ট করে আটক হলেন যুবক!

মিয়ানমার সংঘাত: বিকট শব্দে ঘুম ভাঙল টেকনাফ সীমান্তের বাসিন্দাদের

প্রকাশিত সময় : ১২:৫৭:৪৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪

কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সীমান্তবর্তী বিভিন্ন এলাকা থেকে আবারও মর্টার শেল ও ভারী গোলা বর্ষণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত নয়টা পর্যন্ত প্রচণ্ড শব্দে সীমান্ত এলাকা কেঁপে উঠেছে। সারা রাত শান্ত থাকলেও আজ শুক্রবার ভোর সাড়ে পাঁচটায় বিকট একটি শব্দে ঘুম ভাঙে সীমান্তের মানুষের। এর পর থেকে বেলা একটা পর্যন্ত কিছুক্ষণ পরপর মিয়ানমার থেকে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসতে থাকে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে টেকনাফ পৌরসভার প্যানেল মেয়র মুজিবুর রহমান ও সাবরাং ইউপি চেয়ারম্যান নুর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, গত মঙ্গলবার বিকেল থেকে টানা কয়েক দিন ধরে টেকনাফ উপজেলার মানুষ আতঙ্কের মধ্যে বাস করছেন। ক্রমাগত মর্টার শেল ও ভারী গোলার শব্দে টেকনাফ সীমান্তের মানুষ ভালো ঘুমাতে পারছে না। আজ ভোরে বিকট একটি শব্দ শোনা যায়। মনে হচ্ছে মিয়ানমারের গোলা বাড়ির ছাদে এসে পড়েছে। প্রচণ্ড ভয় পেয়ে ঘুম ভাঙে সবার। এ রকম বিকট শব্দে হঠাৎ করে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে লোকজন মারা যেতে পারে।

জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য শফিক মিয়া বলেন, মিয়ানমারের বোমা হামলার শব্দে টেকনাফে থাকা যাচ্ছে না। রাষ্ট্রীয়ভাবে মিয়ানমার সরকারকে বিষয়টি জানানো প্রয়োজন। ঘুমন্ত অবস্থায় হঠাৎ বিকট শব্দে চমকে উঠছে শিশু ও বয়স্ক লোকজন। আজ সকালের শব্দটি খুবই ভয়ংকর ছিল।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সীমান্ত এলাকার লোকজনের মতে, মিয়ানমারের মংডু টাউনশিপের যে এলাকায় বর্তমানে হামলা হচ্ছে, সেখানে অধিকাংশ রোহিঙ্গা নাগরিকের বসবাস। মংডু টাউনশিপের আশপাশের এলাকায় নতুন করে জান্তা বাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘর্ষের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় এমন বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে নাফ নদী পেরিয়ে টেকনাফের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে। তবে সম্ভাব্য রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সতর্ক রয়েছে কোস্টগার্ড ও বিজিবি। নতুন করে আর কোনো রোহিঙ্গাকে ঠাঁই দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ।

২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনের রোহিঙ্গা-অধ্যুষিত গ্রামগুলোয় অভিযান শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের শিকার হয়ে প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে দলে দলে বাংলাদেশে আসতে থাকে রোহিঙ্গারা। ওই সময় ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আশ্রয় নেয় বাংলাদেশে। তারা বর্তমানে টেকনাফ, উখিয়া ও নোয়াখালীর ভাসানচর আশ্রয়শিবিরে বসবাস করছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বাংলাদেশ সীমান্তে বিজিবি ও কোস্টগার্ডের টহল জোরদার করা হয়েছে। তবে মিয়ানমার থেকে আসা বিকট বিস্ফোরণের শব্দ এখনো থামেনি।