রিসোর্ট-হোটেলে ছাড়ের ছড়াছড়ি, গাড়িভাড়াও সীমিত, খাবারের দামও সহনীয়। অবাক হলেও সত্যি, এমনই পরিবেশ এখন বিশে^র দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে। পর্যটন শহর কক্সবাজারে দিবা-রাত্রি হাজার হাজার পর্যটক ছুটছেন এ পরিবেশ উপভোগ করতে। মূলত, যারা নির্ঝঞ্ঝাট পরিবেশের ভ্রমণপিয়াসী, তাদের জন্য এখন চলছে সুর্বণ সুযোগ। আর এ জন্যই পরিবার নিয়ে ভ্রমণপিপাসুরা ছুটছেন বালুময় এই সমুদ্র সৈকতে।
কক্সবাজার শহরে প্রায় ছোট-বড় পাঁচ শতাধিক হোটেল, রিসোর্ট, গেস্ট হাউস, কটেজ রয়েছে। গরম শুরু হয়ে গেছে, চলছে রোজাও। এই সময়ে অন্যান্য সময়ের তুলনায় পর্যটক কম থাকায় হোটেল ও কটেজে চলছে রীতিমতো প্রতিযোগিতাপূর্ণ অফার। এমনকি, যেসব তারকামানের হোটেলে রাত্রিযাপনে পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা ন্যূনতম পরিশোধ করতে হয়, সেখানে এখন রুমভাড়া মাত্র দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। শুধু তাই নয়, যারা রোজা রেখে পর্যটন শহর কক্সবাজারে বেড়াতে যাচ্ছেন, তাদের জন্যও হোটেলগুলোতে রাখা হয়েছে ইফতার ও সেহরির সুযোগ।
গত সোমবার সকালে দেখা গেছে, হাজার হাজার পর্যটকে মুখরিত কক্সবাজার শহর। কেউ সুগন্ধা, কেউ পরিবার নিয়ে কলাতলী পয়েন্টের সৈকতের বালুচরে হাঁটছেন। আর বড় বহর নিয়ে আসা বেশিরভাগ পরিবারের সদস্যরা ভ্রমণের আনন্দ উপভোগ করতে ছুটছেন ইনানী কিংবা পাটুয়ারটেকে। অবশ্য রোজার দিন হওয়ায় শত শত রেস্তোঁরা বন্ধ। তবে ভ্রমণপিয়সীরাও বিকল্প ব্যবস্থা নিয়ে আসায় তুলনামূলক কম ভোগান্তিতে পড়ছেন। কেননা শহরের বেশ কয়েকটি খাবার হোটেল ও ভাতঘর খোলা রয়েছে। শুধু তাই নয়, তারকামানের হোটেলেও রয়েছে রেস্টুরেন্ট সার্ভিস।
কক্সবাজার বেড়াতে আসা ভারতীয় পর্যটক শ্রীধাম জানান, কোলকাতা থেকে এসেছি এক মাস হলো। আত্মীয়রা কক্সবাজার নিয়ে এসেছেন এখন। বেশ ভালো লাগছে, ভিড় কম। এত বড় বিচ দেখতে এ সময়টা যে মোক্ষম, তা জানতাম না। শ্রীধামের সঙ্গে কুমিল্লা থেকে আসা তারই আত্মীয় রণজিৎ দেব জানান, ভারত থেকে আসা মাসতুতো ভাইদের বলেছি, সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য এখন দেখার সময়। ভিড়ে সৈকতের বিশালতা দেখার সুযোগ থাকে না। ভাইয়েরা খুব খুশি। ভ্রমণে আসা শত শত লোকের সম্মেলন কলাতলী আর সুগন্ধায়। শিশু থেকে প্রবীণ বয়সীদের উপস্থিতিও চোখে পড়ার মতো। সোমবার দুপুরে সুগন্ধার বেশিরভাগ বিচ চেয়ারে ( ছাতাযুক্ত চেয়ার) দেখা গেছে পর্যটকের অবস্থান।
দুপুরে সমুদ্র পর্যটকদের গন্তব্য দেখা গেছে কক্সবাজার সদরে। শহরের প্রধান সড়ক ও ঘুনগাছ এবং গোলদীঘি এলাকার বিভিন্ন ভাতঘর ও হোটেলে মধ্যাহ্নভোজের পর্ব সেরেছেন পর্যটকরা। কক্সবাজারের মতো বড় শহরে বেশ কয়েকটি খাবার হোটেল এখনো খোলা। তাই কক্সবাজার গিয়ে যে সরাসরি কেউ দুর্ভোগে পড়ছেন এমন নয়। এ ছাড়া যারা নিরামিষভোজী, তাদের জন্যও রয়েছে সুযোগ।
তবে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকগুলোর ভাড়া নিয়ে রয়েছে নানা অসন্তোষ। কেননা বেশিরভাগ ইজিবাইকচালকই রোহিঙ্গা; এমন অভিযোগ ইউনুচ নামের এক চালকের। তিনি কক্সবাজারের স্থায়ী বাসিন্দা। তিনি জানান, হাজার হাজার চালক রোহিঙ্গা। তারা পর্যটককে সম্মান দিতে জানে না। অথচ পর্যটক হলো আমাদের মেহমান। কিন্তু রোহিঙ্গাদের আচরণে কক্সবাজারে আসার নাম নেয় না অধিকাংশ মানুষ। আমরা যারা ইউনিফর্ম পরা, তারা পর্যটকদের জন্য ক্ষতিকারক না। এ কথার প্রমাণ মিলেছে বেশিরভাগ পর্যটকের মুখে।
অপরদিকে ঈদের আগে কক্সবাজারে পর্যটক কম থাকলেও নিরাপত্তায় ঘাটতি নেই। গভীর রাতেও সমুদ্র দর্শনে আসা পর্যকদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। দিবা-রাত্রি সুগন্ধ পয়েন্টে ট্যুরিস্ট পুলিশ বক্সে সদস্যদের উপস্থিতি দেখা গেছে। কিছুক্ষণ পর পর সৈকতে টহল দিতে দেখা গেছে পুলিশ সদস্যদের। ফলে নিরাপদ পরিবেশ পাওয়ায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কক্সবাজার ছুটছেন অনেকে।
হোটেলগুলোতে অফারের প্রতিযোগিতায় পর্যটনমুখী হচ্ছেন অনেকে। চট্টগ্রাম থেকে বাবুল দাশ তার স্ত্রী এবং আড়াই বছরের কন্যা নিয়ে কক্সবাজার এসে রীতিমতো অবাক হয়েছেন হোটেল ও সৈকতের পরিবেশ নিয়ে। তিনি জানান, রাতের সমুদ্রে কোনো ধরনের ঝুঁকি নেই। পুলিশ যেমন আছে, একইভাবে গাড়ি নিয়েও কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি। আর হোটেলগুলোতে তো ছাড় আর ছাড়। মাত্র দুই হাজার ৪শ’ টাকায় এসি রুম এবং ভালো সেবা দেওয়া তারকামানের হোটেল মিলছে। সঙ্গে আছে সকালের খাবারও। এমন সার্ভিসতো আসলেই প্রশংসার দাবি রাখে। কক্সবাজার পর্যটনবান্ধব হচ্ছে এটাই বড় বিষয়।
সরকারের পর্যটনবান্ধব পরিকল্পনায় এখন দিন-রাত হাজার হাজার যাত্রী নিয়ে কক্সবাজার ছুটছে ট্রেনগুলো। একই সঙ্গে সকাল থেকে রাত অবধি বিভিন্ন কোম্পানিরএসি/ননএসি বাসেও আসা-যাওয়া করছে অবিরত। এদিকে ইফতারের পর থেকে সেহরির সময় পর্যন্ত কলাতলী হোটেল-মোটেল জোন এলাকা জমজমাট বিভিন্ন ভোজনপ্রেমীদের নিয়ে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিন তারকামানের হোটেলে এখন দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকায় ভালো মানের রুম পাওয়া যাচ্ছে। একইভাবে পাঁচ তারকামানের হোটেলের ভাড়াও ৫০ শতাংশ কম। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারগামী এসি বাসগুলোর টিকিট মিলছে ৪২০ থেকে ৫শ’ টাকায়। যেখানে এসব টিকিটের মূল্য থাকে ছয়শ’ থেকে ৮শ’ টাকা। ফলে স্বল্প ব্যয়ে কক্সবাজার ঘুরতে পারছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো।
ফলে রোজার শুরুতে পর্যটকখরায় থাকা কক্সবাজার আবারও জমে উঠেছে ভ্রমণপিয়াসীদের উপস্থিতিতে। পর্যটকবান্ধব এমন পরিবেশ বজায় থাকলে কক্সবাজার সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা ছড়িয়ে পড়বে দেশ-বিদেশে, বলছেন সংশ্লিষ্টরা।