বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের শত্রু সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি কর্তৃক চলমান রোহিঙ্গা গণহত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে ইউনাইটেড ইয়ুথ মুভমেন্ট বাংলাদেশ। শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) জুমার নামাজের পর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন করা হয়েছে।মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় এমন একটি জাতি রয়েছে, যারা প্রায় শত বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে নির্যাতন, নিপীড়ন ও গণহত্যার শিকার হয়ে আসছে। যাদের নাম চির নির্যাতিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। আমাদের পাশের দেশ মিয়ানমারের আরাকান রাজ্য তাদের আদি নিবাস। অথচ আজ নিজ দেশেই তারা অবাঞ্ছিত। কেবল মুসলিম হওয়ার অপরাধেই শত বছর আগে থেকে তাদের ওপর যে নির্যাতন শুরু হয়েছে, তা আজও থামেনি।শিক্ষা-দীক্ষা ও নিজ ধর্ম পালনের অধিকার থেকে শুরু করে সব ধরনের নাগরিক ও মানবিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে হতে কোণঠাসা হয়ে পড়া রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যৎ আজ নিকষ কালো আঁধারে মিশে গেছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে জাতিগত নিধনের শিকার হওয়া নির্যাতিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নির্মূলের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ঐতিহ্যবাহী আরাকান রাজ্যকে রোহিঙ্গাশূন্য করে ফেলা।সেই ধারাবাহিকতায় আজও আরাকানে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর বিরামহীন নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ, ছিনতাই ও লুটপাট চলছে অহরহ।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে, সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি তাদের ভূরাজনৈতিক কৌশলের কারণে আরাকান থেকে জোর করে হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে বাস্তুচ্যুত করছে। যে কারণে রোহিঙ্গারা বাধ্য হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে সীমান্তে ভিড় করছে। অথচ রোহিঙ্গা শরণার্থীরা কখনোই চায় না যে তারা বাংলাদেশে থাকবে। তারা প্রত্যেকেই নিজ ভূমি আরাকানে সম্মান ও নিরাপত্তার সঙ্গে ফিরে যেতে চায়।
সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৪৮টিরও বেশি রোহিঙ্গা গ্রাম পুড়িয়ে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। ফলে আরাকানে ১ লাখ ৭০ হাজার থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার নতুন করে বাস্তচ্যুত হয়েছে। এ ছাড়া এই সন্ত্রাসীগোষ্ঠী ৫ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গাকে হত্যা করেছে এই স্বল্প সময়ে। গত ৪ ও ৫ আগস্ট আরাকানের মংডু শহরে ড্রোন এটাক চালিয়ে ২০০ এরও বেশি রোহিঙ্গাকে হত্যা করেছে। সেই সুঙ্গড়ে অগণিত রোহিঙ্গা নারীকে ধর্ষণ করেছে এই সন্ত্রাসীরা।
সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি বাংলাদেশে কেবল মাদক পাচার করেই থেমে যাচ্ছে না, বরং তাদের পরিকল্পনা আরোও গভীরে। আরাকানের পুরো অঞ্চল দখল করে বঙ্গোপসাগরের সমুদ্রপথগুলো নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনার পাশাপাশি বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামকে অশান্ত করাও তাদের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সাথে বলতে চাই, সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি বর্তমানে উপজাতিদের থেকে নিয়মিতভাবে সৈন্য সংগ্রহ করার পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন সন্ত্রাসীগোষ্ঠীকে নিয়মিত অস্ত্র সরবরাহ করে যাচ্ছে। এটি আমাদের দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য অনেক বড় অশনি সংকেত। আমরা এভাবে চলতে দিতে পারি না।অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে বক্তারা বলেন, এই মুহূর্তে আমাদের দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে সন্ত্রাসী আরাকান আর্মিকে আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ করে রোহিঙ্গা গণহত্যার দায়ে আন্তর্জাতিক আদালতে অভিযোগ উথাপন করতে হবে, তারা যাতে আমাদের দেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় কোনও ধরনের কার্যক্রম চালাতে না পারে, সে ব্যপারেও যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইউনাইটেড ইয়ুথ মুভমেন্ট বাংলাদেশের সভাপতি মু. দ্বায়ীফ সলেমুন, সেক্রেটারি তৌফিক এলাহী, প্রচার সম্পাদক খুবাইব মাহমুদ প্রমুখ।