০৪:১৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিক্ষক কখনো নেতা, কখনো অভিভাবক

  • প্রতিনিধির নাম
  • প্রকাশিত সময় : ০৬:৩৪:২৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
  • ৭২ ভিউ

শিক্ষকতা শুধু একটি মহান পেশা নয়, এটি একটি শিল্প। মানুষ গড়ার কারিগর হলেন শিক্ষক। একজন মৃৎশিল্পী যেমন নরম মাটি দিয়ে অনেক রকম আকার আকৃতির জিনিস তৈরি করেন। তেমনি শিক্ষকেরা শিশুদের সুকুমার বৃত্তিকে জাগ্রত করেন। শিশুদের ভবিষ্যতের উপযোগী সুন্দর মানুষ হিসেবে তৈরি করেন। একজন চিত্রশিল্পী চিত্রে বিভিন্ন রকম রং দিয়ে ছবি আঁকেন শিক্ষকেরাও তার সাধ্যমতো শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন নিয়ম কানুন, আদব-কায়দা শেখান, পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার শিক্ষাদান করেন। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বাগানের চারাগাছের মতো। এই চারাগাছ বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে অনেক যত্ন নিতে হয়।
এই শিক্ষকতা পেশা এমনি এমনি হয় না। শিক্ষককে সময়মত বিদ্যালয়ে আসা, উপযুক্ত পদ্ধতিতে শ্রেণি পাঠদান করা, মূল্যায়ন করা ইত্যাদি কাজ করতে হয়। প্রতিবছর একটি ব্যাচ স্কুলে ভর্তি হয়। তাদেরকে শিক্ষকেরা বরণ করে নেন। এক ব্যাচ বিদায় নেয়। শিক্ষকেরা সুন্দরভাবে বিদায় দেন। একটি এলাকার সব শিশু, অভিভাবকেরা শিক্ষকদের মনে রাখেন। শিশুদের পড়াতে গিয়ে শিক্ষার্থীর আচরণ ব্যবস্থাপনা জানতে হয়। একজন শিক্ষক শুধুমাত্র পড়ানোর কাজই করেন না। তিনি বিদ্যালয়ের সামগ্রীক উন্নয়নে কাজ করেন। তিনি শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ববোধ ও নৈতিকতাবোধ বিকশিত করেন। তিনি শিক্ষার্থীদের মানবিক ও নান্দনিক বিকাশে কতো কিছু যে মাথায় রাখেন তা অল্পকথায় বলে বোঝানো দুষ্কর।

একটি শিশু নৈতিকতা ও মূল্যবোধ রাতারাতি শেখে না। আবার শিশু নৈতিকতা ও মূল্যবোধ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে না। জন্মের পর শিশুরা পরিবার থেকে অনেক কিছু শেখেন। কিন্তু বিদ্যালয়ে আসার পরে শিশুর শিক্ষায় পরিপূর্ণতা আসে।
শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের জীবনযুদ্ধে জয়ী হবার মন্ত্র শিখিয়ে দেন। শিক্ষকেরা সবসময় চান শিশু যেনো মানুষের মতো মানুষ হতে পারে। একটি শিশুকে ধরে ধরে হাতের লেখা শেখানো, পড়ানো শেখানো ইত্যাদি কাজে শিক্ষক অনেক পদ্ধতি মেনে চলেন। শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের মধ্যে জ্ঞান অর্জনের তৃষ্ণা তৈরি করেন। শিক্ষক কখনো নেতা, কখনো পরামর্শদানকারী, কখনো নির্দেশক, কখনো অভিভাবক।
ভালো শিক্ষক পাঠ্যবইয়ের জ্ঞান রাখেন. কারিকুলাম জানেন, শিক্ষাদানের বিভিন্ন পদ্ধতি জানেন। তিনি সবসময় যুগের সঙ্গে আপডেট থাকেন। তিনি নিজে পড়েন ও জ্ঞান চর্চা করেন, তারপর অন্যদের পড়ান। এভাবে একজন শিক্ষক হয়ে ওঠেন মানুষ গড়ার কারিগর, জাতি গড়ার কারিগর। শিক্ষকেরা যুগ যুগ ধরে শ্রদ্ধার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের অন্তরে থাকেন। একজন শিক্ষক শ্রেণিকক্ষকে সুন্দরভাবে সাজান, শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় ও শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার রাখার প্রশিক্ষণ দেন। তিন শিক্ষার্থীদের দিয়ে দলীয় ও একক কাজ করান। শ্রেণিকক্ষে শিশুদের উপযোগী শিক্ষা উপকরণ তৈরি করেন ও ব্যবহার করেন।

সবগুলো কাজের প্রতি শিক্ষকের থাকে ভক্তি ও ভালোবাসা। মহমর্মিতা ও ভালোবাসায় শিক্ষক হলেন শিক্ষার্থীদের কাছে অনুসরণীয় মানুষ। শিক্ষার্থী অন্য কারো কথা না শুনলেও শিক্ষকদের কথা শোনে। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের বন্ধুর মতো পাশে থেকে অনুপ্রাণিত করেন। শিক্ষার্থীদের আচরণ শেখানো, ভালো কাজের জন্য পুরস্কৃত করা ইত্যাদি কাজ শিক্ষককে করতে হয়। শিক্ষক শিক্ষার্থীদের চিন্তা করার সুযোগ দেন। কখনো প্রশ্ন করেন, সমস্যা সমাধান করতে দেন, সাহস দেন, আবার শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করেন।
তাই শিক্ষাদানের সময় সুন্দর ও মার্জিত ভাষার প্রয়োগ উপস্থাপনা শিক্ষককে করে তোলে একজন শিল্পী। শিক্ষক হয়ে ওঠেন শিক্ষর্থীদের সবচেয়ে বড় স্বজন। শিক্ষার্থীরা শিক্ষককে দেখেন ও অনুপ্রাণিত হন। এভাবেই শিক্ষকতা শিল্পকলায় পরিণত হয়। যুগ যুগ ধরে মানুষ গড়ার কারিগর হলেন শিক্ষক। শিক্ষকরা বেঁচে থাকেন তাদের আদর্শের মাধ্যমে। তাই শিক্ষকতা সবচেয়ে মহান পেশা।

ট্যাগ :
পাঠকপ্রিয়

‘স্টেপ ডাউন ইউনুস’পোস্ট করে আটক হলেন যুবক!

শিক্ষক কখনো নেতা, কখনো অভিভাবক

প্রকাশিত সময় : ০৬:৩৪:২৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪

শিক্ষকতা শুধু একটি মহান পেশা নয়, এটি একটি শিল্প। মানুষ গড়ার কারিগর হলেন শিক্ষক। একজন মৃৎশিল্পী যেমন নরম মাটি দিয়ে অনেক রকম আকার আকৃতির জিনিস তৈরি করেন। তেমনি শিক্ষকেরা শিশুদের সুকুমার বৃত্তিকে জাগ্রত করেন। শিশুদের ভবিষ্যতের উপযোগী সুন্দর মানুষ হিসেবে তৈরি করেন। একজন চিত্রশিল্পী চিত্রে বিভিন্ন রকম রং দিয়ে ছবি আঁকেন শিক্ষকেরাও তার সাধ্যমতো শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন নিয়ম কানুন, আদব-কায়দা শেখান, পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার শিক্ষাদান করেন। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বাগানের চারাগাছের মতো। এই চারাগাছ বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে অনেক যত্ন নিতে হয়।
এই শিক্ষকতা পেশা এমনি এমনি হয় না। শিক্ষককে সময়মত বিদ্যালয়ে আসা, উপযুক্ত পদ্ধতিতে শ্রেণি পাঠদান করা, মূল্যায়ন করা ইত্যাদি কাজ করতে হয়। প্রতিবছর একটি ব্যাচ স্কুলে ভর্তি হয়। তাদেরকে শিক্ষকেরা বরণ করে নেন। এক ব্যাচ বিদায় নেয়। শিক্ষকেরা সুন্দরভাবে বিদায় দেন। একটি এলাকার সব শিশু, অভিভাবকেরা শিক্ষকদের মনে রাখেন। শিশুদের পড়াতে গিয়ে শিক্ষার্থীর আচরণ ব্যবস্থাপনা জানতে হয়। একজন শিক্ষক শুধুমাত্র পড়ানোর কাজই করেন না। তিনি বিদ্যালয়ের সামগ্রীক উন্নয়নে কাজ করেন। তিনি শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ববোধ ও নৈতিকতাবোধ বিকশিত করেন। তিনি শিক্ষার্থীদের মানবিক ও নান্দনিক বিকাশে কতো কিছু যে মাথায় রাখেন তা অল্পকথায় বলে বোঝানো দুষ্কর।

একটি শিশু নৈতিকতা ও মূল্যবোধ রাতারাতি শেখে না। আবার শিশু নৈতিকতা ও মূল্যবোধ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে না। জন্মের পর শিশুরা পরিবার থেকে অনেক কিছু শেখেন। কিন্তু বিদ্যালয়ে আসার পরে শিশুর শিক্ষায় পরিপূর্ণতা আসে।
শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের জীবনযুদ্ধে জয়ী হবার মন্ত্র শিখিয়ে দেন। শিক্ষকেরা সবসময় চান শিশু যেনো মানুষের মতো মানুষ হতে পারে। একটি শিশুকে ধরে ধরে হাতের লেখা শেখানো, পড়ানো শেখানো ইত্যাদি কাজে শিক্ষক অনেক পদ্ধতি মেনে চলেন। শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের মধ্যে জ্ঞান অর্জনের তৃষ্ণা তৈরি করেন। শিক্ষক কখনো নেতা, কখনো পরামর্শদানকারী, কখনো নির্দেশক, কখনো অভিভাবক।
ভালো শিক্ষক পাঠ্যবইয়ের জ্ঞান রাখেন. কারিকুলাম জানেন, শিক্ষাদানের বিভিন্ন পদ্ধতি জানেন। তিনি সবসময় যুগের সঙ্গে আপডেট থাকেন। তিনি নিজে পড়েন ও জ্ঞান চর্চা করেন, তারপর অন্যদের পড়ান। এভাবে একজন শিক্ষক হয়ে ওঠেন মানুষ গড়ার কারিগর, জাতি গড়ার কারিগর। শিক্ষকেরা যুগ যুগ ধরে শ্রদ্ধার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের অন্তরে থাকেন। একজন শিক্ষক শ্রেণিকক্ষকে সুন্দরভাবে সাজান, শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় ও শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার রাখার প্রশিক্ষণ দেন। তিন শিক্ষার্থীদের দিয়ে দলীয় ও একক কাজ করান। শ্রেণিকক্ষে শিশুদের উপযোগী শিক্ষা উপকরণ তৈরি করেন ও ব্যবহার করেন।

সবগুলো কাজের প্রতি শিক্ষকের থাকে ভক্তি ও ভালোবাসা। মহমর্মিতা ও ভালোবাসায় শিক্ষক হলেন শিক্ষার্থীদের কাছে অনুসরণীয় মানুষ। শিক্ষার্থী অন্য কারো কথা না শুনলেও শিক্ষকদের কথা শোনে। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের বন্ধুর মতো পাশে থেকে অনুপ্রাণিত করেন। শিক্ষার্থীদের আচরণ শেখানো, ভালো কাজের জন্য পুরস্কৃত করা ইত্যাদি কাজ শিক্ষককে করতে হয়। শিক্ষক শিক্ষার্থীদের চিন্তা করার সুযোগ দেন। কখনো প্রশ্ন করেন, সমস্যা সমাধান করতে দেন, সাহস দেন, আবার শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করেন।
তাই শিক্ষাদানের সময় সুন্দর ও মার্জিত ভাষার প্রয়োগ উপস্থাপনা শিক্ষককে করে তোলে একজন শিল্পী। শিক্ষক হয়ে ওঠেন শিক্ষর্থীদের সবচেয়ে বড় স্বজন। শিক্ষার্থীরা শিক্ষককে দেখেন ও অনুপ্রাণিত হন। এভাবেই শিক্ষকতা শিল্পকলায় পরিণত হয়। যুগ যুগ ধরে মানুষ গড়ার কারিগর হলেন শিক্ষক। শিক্ষকরা বেঁচে থাকেন তাদের আদর্শের মাধ্যমে। তাই শিক্ষকতা সবচেয়ে মহান পেশা।