০৭:১৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাপের বাচ্চা মারলে মানবশিশুদের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে

“পিটিয়ে মারা হলো রাসেলস ভাইপারের আটটি বাচ্চা”(প্রথম আলো, ২৩ জুন ২০২৪) শিরোনামে খবরটি পড়ে অস্ট্রেলীয় আদিবাসী গল্প “গুপালি”র কথা মনে পড়ল।

গুপালি নামে এক মাকড়সা দেবতা মানুষের বেশ ধরে এক গ্রামে এসেছিলেন। এর আগে একটি গাছের মরা বাকলের নিচে ছিল তাঁর বাসা। মানুষের সৃষ্ট আগুনে তাঁর ঘর পুড়ে গিয়েছিল। নিজে প্রাণে বাঁচলেও সে আগুনে তাঁর সন্তানদের কেউ বাঁচেনি। এরই ক্ষতিপূরণ হিসেবে তিনি মানবশিশুদের ঘুম ভাঙিয়ে শিশু মাকড়সায় রূপান্তরিত করেন এবং তাদের নিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যান। সকালে উঠে গোষ্ঠীর লোকজন দেখেন তাঁদের সন্তানেরা উধাও।

বাংলাদেশে গত কয়েক সপ্তাহে অসংখ্য চন্দ্রবোড়া/ রাসেলস ভাইপারকে হত্যা করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা আশ্বস্ত করে বলছেন, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, রাসেলস ভাইপার কামড়ালে চিকিৎসা আছে। কিন্তু নির্বিচারে সাপ নিধন চলছে, যদিও ২০১২ সালের বন্য প্রাণী আইন অনুযায়ী, রাসেলস ভাইপার সংরক্ষিত প্রাণী। প্রাণীটি ধরা, মারা ও বহন করা দণ্ডনীয় অপরাধ।

রাসেলস ভাইপার নিয়ে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণভাবে প্রাণীদের প্রতি আমাদের আচরণ বিবেচনার দাবি রাখে। বনভোজনে গিয়ে সে স্থানের প্রাণীদের সুবিধা-অসুবিধা উপেক্ষা করে জোরে জোরে গান বাজানোর অভ্যাস থেকে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায়। সুন্দরবনের খালে নৌকায় করে ঘোরার সময় চিৎকার করে কথা বলার মানে কী?

এসব কারণে যে সেখানকার পাখি ও অন্য প্রাণীরা ভয় পেতে পারে, তা বোঝা কি আমাদের উচিত নয়? অরণ্য তাদের আবাসস্থল; আমরা সেখানে অতিথি হিসেবে গিয়েছি। সেই বিষয় মনে থাকে না বলেই এত সমস্যা। আমরা কি ধরে নিয়েছি যে পৃথিবীটা শুধু মানুষের জন্য? সে জন্যই হয়তো আমরা এত দম্ভ নিয়ে চলি, নৃশংসভাবে সাপের বাচ্চাদের পিটিয়ে মারি।

জীববৈচিত্র্যের গুরুত্ব ও প্রাণীদের সঙ্গে আমাদের আচরণ কেমন হওয়া উচিত, সে জন্য সবাইকে শিক্ষিত করার অসাধারণ উদ্যোগ দেখেছিলাম অস্ট্রেলিয়া চিড়িয়াখানায়। ব্রিসবেনের কাছেই ৭০ একর জায়গা নিয়ে এই আয়োজন।

সেখানে প্রায় এক হাজার প্রাণী আছে, চমৎকার তাদের থাকার পরিবেশ, যত্নের ব্যবস্থা। সব কর্মী অত্যন্ত দক্ষ ও সংবেদনশীল। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে বেশ কয়েকটি প্রদর্শনী হয়। তার মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত অস্ট্রেলিয়া জু ওয়াইল্ডলাইফ ওয়ারিওর শো।

ক্রকোসিয়াম নামে স্টেডিয়ামে এই প্রদর্শনী। হাতি, কুমির, সাপ, নানা জাতের পাখি একের পর এক সেখানে প্রবেশ করে কিছুক্ষণ অবস্থান করে। তখন উপস্থাপক তাদের রক্ষায় মানুষ কি করতে পারে, তা ব্যাখ্যা করেন। তাঁর বক্তব্যের সারাংশ, প্রাণিজগৎকে শ্রদ্ধা করা এবং তাদের সীমানা মেনে চলা আমাদের দায়িত্ব।

কয়েকটা কুমির ক্রকোসিয়ামে এসে ঢোকার পর উপস্থাপক বলেন, ‘আমরা যখন নতুন কোনো দেশে যাই, তখন সেখানকার ভাষা শেখার চেষ্টা করি, আইন মেনে চলি। ঠিক সেভাবে আমরা যদি কোনো কুমিরের রাজ্যে প্রবেশ করি, তাহলে তাদের নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে, তা না করে তাদের সীমানা লঙ্ঘন করলে তারা তো আত্মরক্ষার জন্য আমাদের আক্রমণ করবেই।’ তিনি আরও মনে করিয়ে দিলেন, শতকরা ৯০ ভাগ ক্ষেত্রে মানুষ যখন সাপকে মারতে যায়, একমাত্র তখনই তারা কামড় দেয়। রাসেলস ভাইপারকে আঘাত করা বা হাত দিয়ে ধরতে চাওয়ার কারণেই বেশির ভাগ আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে।

অস্ট্রেলিয়া চিড়িয়াখানার প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ আরউইন। স্টিংরের আক্রমণে তাঁর আকস্মিক মৃত্যু প্রকৃতি সংরক্ষণে আগ্রহী সারা বিশ্বের মানুষকে ব্যথিত করেছে। তবে এই চিড়িয়াখানা তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে, দর্শনার্থীদের বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছে যে প্রাণীদের সম্মান করতে হবে, গাছপালা লাগিয়ে প্রকৃতিকে রক্ষার দায়িত্ব সবার, আর ক্রেতা হিসেবে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন, যাতে জীবজগতের কোনো ক্ষতি না হয়।

মানুষের আচরণের কারণে বিলুপ্তির হুমকিতে থাকা প্রাণীরা আরও ঝুঁকির মুখে পড়ছে। ম্যাকাও বা এ-জাতীয় কিছু পাখি পোষার জন্য অনেকের আগ্রহ আছে। ফলে গড়ে উঠছে এক দুষ্টচক্র, যারা আইন ভেঙে এদের বন্দী করে, তারপর বিক্রি করে দেয়।

এই পাখি কেনার চাহিদা যদি না থাকে, তাহলে এই বাণিজ্য চলবে না। কিছু কিছু কুমিরের চামড়া ভীষণ দামি, তা দিয়ে জুতাসহ নানা শৌখিন সামগ্রী তৈরি হয়। ক্রেতারা যদি ঠিক করেন, বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির কোনো অংশ দিয়ে বানানো কিছুই তারা খাদ্য, ওষুধ বা অন্য কোনো দ্রব্য হিসেবে কিনবেন না, তাহলে সেসব প্রাণী সংরক্ষণে তারাও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবেন।

প্রাত্যহিক জীবনে এবং কোথাও বেড়াতে গেলে সেখানকার প্রাণ ও প্রকৃতিকে সম্মান করতে হবে। পৃথিবীর ওপর মানবজাতির অধিকার যতটা, ঠিক ততটাই অধিকার গাছপালা, প্রাণিজগৎ, নদীনালা, পাহাড় আর সমুদ্রের। প্রতিটি প্রাণীই অনন্য এবং সবারই এ পৃথিবীতে থাকার নির্দিষ্ট কারণ আছে। আমাদের সবার রয়েছে পারস্পরিক নির্ভরশীলতার সম্পর্ক।

ধরা যাক একটি পাখির কথা, যে বিভিন্ন গাছের ফল খেয়ে তার বীজ ছড়িয়ে দেয়। এই পাখি না থাকলে গাছগুলোও হারিয়ে যাবে। আমরা যেন ভুলে না যাই যে সাপের বিষ থেকে নানা ধরনের ওষুধ তৈরি হয়।

মনে পড়ছে জীবাশ্মবিজ্ঞানী রিচার্ড লিকির দ্য সিক্সথ এক্সটিংশন বইয়ের কথা। তিনি মানবজাতিকে সতর্ক করে বলেছেন, ‘আমাদের কর্মকাণ্ডের ফলেই হয়তো একদিন পৃথিবী থেকে সমগ্র প্রাণিজগৎ বিলুপ্ত হয়ে যাবে।’ বইটি তিনি উৎসর্গ করেছেন ‘আমাদের সহপ্রজাতি ও যৌথ ভবিষ্যতের জন্য’। একটি প্রজাতিও যদি বিলুপ্ত হয়ে যায়, পৃথিবীর ভারসাম্য বিরাট ক্ষতির মুখে পড়বে। তখন মানুষও আর টিকে থাকতে পারবে না।

প্রাণী সংরক্ষণে আইন প্রয়োগের দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু যত দিন আমাদের মানসিকতার বদল না হচ্ছে, তত দিন ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে না। প্রকৃতি ও অন্যান্য প্রাণীর সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান শেখাটা মানুষের জন্য অত্যন্ত জরুরি। আদিবাসীরা এটা জানেন, তাঁদের প্রজ্ঞা থেকে আমাদের শিখতে পারা উচিত। অন্যথায় আজ সাপের বাচ্চা মারলে, ভবিষ্যতে মানবশিশুদের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে।

ট্যাগ :
পাঠকপ্রিয়

জমে উঠেছে বৃহত্তর বাদশাঘোনা সমাজ পরিচালনা কমিটির দ্বি-বার্ষিক নির্বাচনের প্রচার প্রচারণা

সাপের বাচ্চা মারলে মানবশিশুদের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে

প্রকাশিত সময় : ০১:৩৪:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪

“পিটিয়ে মারা হলো রাসেলস ভাইপারের আটটি বাচ্চা”(প্রথম আলো, ২৩ জুন ২০২৪) শিরোনামে খবরটি পড়ে অস্ট্রেলীয় আদিবাসী গল্প “গুপালি”র কথা মনে পড়ল।

গুপালি নামে এক মাকড়সা দেবতা মানুষের বেশ ধরে এক গ্রামে এসেছিলেন। এর আগে একটি গাছের মরা বাকলের নিচে ছিল তাঁর বাসা। মানুষের সৃষ্ট আগুনে তাঁর ঘর পুড়ে গিয়েছিল। নিজে প্রাণে বাঁচলেও সে আগুনে তাঁর সন্তানদের কেউ বাঁচেনি। এরই ক্ষতিপূরণ হিসেবে তিনি মানবশিশুদের ঘুম ভাঙিয়ে শিশু মাকড়সায় রূপান্তরিত করেন এবং তাদের নিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যান। সকালে উঠে গোষ্ঠীর লোকজন দেখেন তাঁদের সন্তানেরা উধাও।

বাংলাদেশে গত কয়েক সপ্তাহে অসংখ্য চন্দ্রবোড়া/ রাসেলস ভাইপারকে হত্যা করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা আশ্বস্ত করে বলছেন, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, রাসেলস ভাইপার কামড়ালে চিকিৎসা আছে। কিন্তু নির্বিচারে সাপ নিধন চলছে, যদিও ২০১২ সালের বন্য প্রাণী আইন অনুযায়ী, রাসেলস ভাইপার সংরক্ষিত প্রাণী। প্রাণীটি ধরা, মারা ও বহন করা দণ্ডনীয় অপরাধ।

রাসেলস ভাইপার নিয়ে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণভাবে প্রাণীদের প্রতি আমাদের আচরণ বিবেচনার দাবি রাখে। বনভোজনে গিয়ে সে স্থানের প্রাণীদের সুবিধা-অসুবিধা উপেক্ষা করে জোরে জোরে গান বাজানোর অভ্যাস থেকে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায়। সুন্দরবনের খালে নৌকায় করে ঘোরার সময় চিৎকার করে কথা বলার মানে কী?

এসব কারণে যে সেখানকার পাখি ও অন্য প্রাণীরা ভয় পেতে পারে, তা বোঝা কি আমাদের উচিত নয়? অরণ্য তাদের আবাসস্থল; আমরা সেখানে অতিথি হিসেবে গিয়েছি। সেই বিষয় মনে থাকে না বলেই এত সমস্যা। আমরা কি ধরে নিয়েছি যে পৃথিবীটা শুধু মানুষের জন্য? সে জন্যই হয়তো আমরা এত দম্ভ নিয়ে চলি, নৃশংসভাবে সাপের বাচ্চাদের পিটিয়ে মারি।

জীববৈচিত্র্যের গুরুত্ব ও প্রাণীদের সঙ্গে আমাদের আচরণ কেমন হওয়া উচিত, সে জন্য সবাইকে শিক্ষিত করার অসাধারণ উদ্যোগ দেখেছিলাম অস্ট্রেলিয়া চিড়িয়াখানায়। ব্রিসবেনের কাছেই ৭০ একর জায়গা নিয়ে এই আয়োজন।

সেখানে প্রায় এক হাজার প্রাণী আছে, চমৎকার তাদের থাকার পরিবেশ, যত্নের ব্যবস্থা। সব কর্মী অত্যন্ত দক্ষ ও সংবেদনশীল। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে বেশ কয়েকটি প্রদর্শনী হয়। তার মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত অস্ট্রেলিয়া জু ওয়াইল্ডলাইফ ওয়ারিওর শো।

ক্রকোসিয়াম নামে স্টেডিয়ামে এই প্রদর্শনী। হাতি, কুমির, সাপ, নানা জাতের পাখি একের পর এক সেখানে প্রবেশ করে কিছুক্ষণ অবস্থান করে। তখন উপস্থাপক তাদের রক্ষায় মানুষ কি করতে পারে, তা ব্যাখ্যা করেন। তাঁর বক্তব্যের সারাংশ, প্রাণিজগৎকে শ্রদ্ধা করা এবং তাদের সীমানা মেনে চলা আমাদের দায়িত্ব।

কয়েকটা কুমির ক্রকোসিয়ামে এসে ঢোকার পর উপস্থাপক বলেন, ‘আমরা যখন নতুন কোনো দেশে যাই, তখন সেখানকার ভাষা শেখার চেষ্টা করি, আইন মেনে চলি। ঠিক সেভাবে আমরা যদি কোনো কুমিরের রাজ্যে প্রবেশ করি, তাহলে তাদের নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে, তা না করে তাদের সীমানা লঙ্ঘন করলে তারা তো আত্মরক্ষার জন্য আমাদের আক্রমণ করবেই।’ তিনি আরও মনে করিয়ে দিলেন, শতকরা ৯০ ভাগ ক্ষেত্রে মানুষ যখন সাপকে মারতে যায়, একমাত্র তখনই তারা কামড় দেয়। রাসেলস ভাইপারকে আঘাত করা বা হাত দিয়ে ধরতে চাওয়ার কারণেই বেশির ভাগ আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে।

অস্ট্রেলিয়া চিড়িয়াখানার প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ আরউইন। স্টিংরের আক্রমণে তাঁর আকস্মিক মৃত্যু প্রকৃতি সংরক্ষণে আগ্রহী সারা বিশ্বের মানুষকে ব্যথিত করেছে। তবে এই চিড়িয়াখানা তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে, দর্শনার্থীদের বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছে যে প্রাণীদের সম্মান করতে হবে, গাছপালা লাগিয়ে প্রকৃতিকে রক্ষার দায়িত্ব সবার, আর ক্রেতা হিসেবে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন, যাতে জীবজগতের কোনো ক্ষতি না হয়।

মানুষের আচরণের কারণে বিলুপ্তির হুমকিতে থাকা প্রাণীরা আরও ঝুঁকির মুখে পড়ছে। ম্যাকাও বা এ-জাতীয় কিছু পাখি পোষার জন্য অনেকের আগ্রহ আছে। ফলে গড়ে উঠছে এক দুষ্টচক্র, যারা আইন ভেঙে এদের বন্দী করে, তারপর বিক্রি করে দেয়।

এই পাখি কেনার চাহিদা যদি না থাকে, তাহলে এই বাণিজ্য চলবে না। কিছু কিছু কুমিরের চামড়া ভীষণ দামি, তা দিয়ে জুতাসহ নানা শৌখিন সামগ্রী তৈরি হয়। ক্রেতারা যদি ঠিক করেন, বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির কোনো অংশ দিয়ে বানানো কিছুই তারা খাদ্য, ওষুধ বা অন্য কোনো দ্রব্য হিসেবে কিনবেন না, তাহলে সেসব প্রাণী সংরক্ষণে তারাও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবেন।

প্রাত্যহিক জীবনে এবং কোথাও বেড়াতে গেলে সেখানকার প্রাণ ও প্রকৃতিকে সম্মান করতে হবে। পৃথিবীর ওপর মানবজাতির অধিকার যতটা, ঠিক ততটাই অধিকার গাছপালা, প্রাণিজগৎ, নদীনালা, পাহাড় আর সমুদ্রের। প্রতিটি প্রাণীই অনন্য এবং সবারই এ পৃথিবীতে থাকার নির্দিষ্ট কারণ আছে। আমাদের সবার রয়েছে পারস্পরিক নির্ভরশীলতার সম্পর্ক।

ধরা যাক একটি পাখির কথা, যে বিভিন্ন গাছের ফল খেয়ে তার বীজ ছড়িয়ে দেয়। এই পাখি না থাকলে গাছগুলোও হারিয়ে যাবে। আমরা যেন ভুলে না যাই যে সাপের বিষ থেকে নানা ধরনের ওষুধ তৈরি হয়।

মনে পড়ছে জীবাশ্মবিজ্ঞানী রিচার্ড লিকির দ্য সিক্সথ এক্সটিংশন বইয়ের কথা। তিনি মানবজাতিকে সতর্ক করে বলেছেন, ‘আমাদের কর্মকাণ্ডের ফলেই হয়তো একদিন পৃথিবী থেকে সমগ্র প্রাণিজগৎ বিলুপ্ত হয়ে যাবে।’ বইটি তিনি উৎসর্গ করেছেন ‘আমাদের সহপ্রজাতি ও যৌথ ভবিষ্যতের জন্য’। একটি প্রজাতিও যদি বিলুপ্ত হয়ে যায়, পৃথিবীর ভারসাম্য বিরাট ক্ষতির মুখে পড়বে। তখন মানুষও আর টিকে থাকতে পারবে না।

প্রাণী সংরক্ষণে আইন প্রয়োগের দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু যত দিন আমাদের মানসিকতার বদল না হচ্ছে, তত দিন ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে না। প্রকৃতি ও অন্যান্য প্রাণীর সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান শেখাটা মানুষের জন্য অত্যন্ত জরুরি। আদিবাসীরা এটা জানেন, তাঁদের প্রজ্ঞা থেকে আমাদের শিখতে পারা উচিত। অন্যথায় আজ সাপের বাচ্চা মারলে, ভবিষ্যতে মানবশিশুদের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে।