০৭:৫০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সীমান্তের ১৮ পয়েন্ট রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ:পাচারে জড়িত দালাল চক্র!

  • শ.ম.গফুর:
  • প্রকাশিত সময় : ০১:৩৭:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ৫৪ ভিউ

উখিয়া-টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে বিচ্ছিন্ন ভাবে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে।সবচেয়ে বেশী চেষ্টায় রয়েছে নাফ নদীর জলসীমা দিয়ে।এপাড়ে টেকনাফ ওপারে রাখাইনের মংডু শহর।মধ্যকার জল সীমানা নাফ নদী বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে যুক্ত।নাফের ওপাড়ে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর চলমান যুদ্ধাবস্থার মধ্যেই তৎপর হয়ে উঠেছে দুই দেশের রোহিঙ্গা পারাপারের দালাল চক্রগুলো।অভিযোগ উঠেছে, অর্থের বিনিময়ে এই চক্রের মাধ্যমে নতুন করে বাংলাদেশে আসছে রোহিঙ্গারা। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীগুলো অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে তৎপর রয়েছে। সম্প্রতি কয়েক মাসের ভিতর কত রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে সে সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট তথ্য কোনও কর্তৃপক্ষ দিতে পারেনি।তবে অসমর্থিত সুত্রে জানা গেছে গত কয়েক মাসের ভিতর অন্তত ৮ হাজারের বেশী রোহিঙ্গা বিচ্ছিন্ন ভাবে বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে এদেশে অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছে।

গত সপ্তাহে রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা কয়েকজন রোহিঙ্গা এপারে গোপনে আশ্রয় নিয়েছেন।তারা জানান, প্রাণ বাঁচাতে তারা বাংলাদেশে এসেছেন। বর্ডার পার হতে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের দালালকে টাকা দিতে হয়েছে।আর সীমান্তবর্তী স্থল এলাকা ও নাফ নদী পার করে নাইক্ষ্যংছড়ি,তুমব্রু,ঘুমধুম ও টেকনাফের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশ করছে তারা।নাফ নদীর জলসীমা এবং ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গা পারাপারে দালাল চক্র গড়ে ওঠেছে। টেকনাফের নৌ-পুলিশের ইনচার্জ পরিদর্শক তপন কুমার বিশ্বাস জানান,রোহিঙ্গাদের গোপনে অনুপ্রবেশ করাতে দালাল চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে।তিনি জানান, মিয়ানমারে চলমান যুদ্ধের সুযোগে কয়েকটি দালাল চক্র রোহিঙ্গা পারাপারের বাণিজ্য গড়ে তোলার খবর আমরাও শুনেছি। আমরা সেসব দালালদের শনাক্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কাজ প্রক্রিয়াধীন।এছাড়া নাফ নদী দিয়ে যাতে কোনও অনুপ্রবেশের ঘটনা না ঘটে, সেজন্য টহল অব্যাহত রেখেছি। কিন্তু জনবল সংকটের পাশাপাশি নৌযান না থাকায় যখন-তখন অভিযানে নামতে পারি না।রাখাইন থেকে প্রথমে হেঁটে নাফ নদীর ওপারের তীরে আসেন রোহিঙ্গারা। ওই নদীতীরে নৌকা নিয়ে বসে থাকে দালালেরা। এপারেও একইভাবে বাংলাদেশের টেকনাফ সীমান্তে থাকেন দালালেরা।রাতে দুই অংশের দালালেরা টাকা নিয়ে রোহিঙ্গা ঢুকাচ্ছে বাংলাদেশে।তেমনি নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্ত দিয়ে এপাড়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করাচ্ছে মিয়ানমানে বিভিন্ন মালামাল পাচার করা সিন্ডিকেটের সদস্যরা।তারা একেকজন রোহিঙ্গা কৌশলে এপাড়ে এনে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঢুকিয়ে দিচ্ছেন মোটাংকের টাকার বিনিময়ে।ঘুমধুম পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক মাহফুজ ইমতিয়াজ ভুঁইয়া’র মতে,রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রোধে পুলিশ বাহিনী সর্বাবস্থায় সতর্ক রয়েছেন।ইতিপূর্বে ৮ সদস্যের একটি রোহিঙ্গার দল এপারে অনুপ্রবেশ কালে আটকে দিই।পরে তুমব্রুর পয়েন্ট দিয়ে বিজিবি’র তুমব্রু জোয়ানদের সহযোগিতায় পুশব্যাক করা হয়।অনুসন্ধানে জানা গেছে, দালালরা ১০/ ২০ হাজার থেকে শুরু ১ লাখ টাকার বিনিময়ে নাইক্ষ্যংছড়ি, উখিয়া-টেকনাফের সীমান্ত দিয়ে রাতের আঁধারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল দলের চোখ ফাঁকি দিয়ে এ অবৈধ পাচার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।এসব কাজে সীমান্তের অন্তত ৩০ জনের বেশির নাম পাওয়া গেছে।তাদের মধ্যে রয়েছে- টেকনাফের বদি আলম, হেলাল উদ্দিন, মো. রহিম বাদশা, মো. বলি, নুর মোহাম্মদ, মোহাম্মদ শালমান, মো. শামসুল আলম, মো. জাবেদ, ইমান হোসেন ইউচুপ, মো. ইউনুছ, মো. সিরাজ, আজিজ উল্লাহ, জাফর আলম, মো. জিয়াবুল, মো. শফিক, মুহাম্মদ মান্নান, করিম উল্লাহ, নজির আহমেদ, মো. শফিক, মো. ফারুক, মো. জয়নাল, নুর হোসেন ও মো. সাদ্দাম,ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তের জকির,ইউনুস,বাইট্রা শাহ আলম,শাহীন, কামাল,রুহুল,আবুল হাসেম,সাইফুল ছাড়াও ঘুমধুম সীমান্তের কয়েকজন নারীও রয়েছে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ, রোহিঙ্গাদের টাকা বহন ও মালামাল পাচার কাজের সহযোগী হিসেবে।

এদের মধ্যে অনেকের নামে মানব পাচার ও ইয়াবা পাচারের মামলাও পুলিশের মানবপাচার তালিকায়।তারা আবার অনেকেই সীমান্ত কেন্দ্রিক চোরাকারবারিও।এসব দালাল চক্রের সদস্যরা ১৮টি পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গাদের নিয়ে আসছে।পয়েন্টগুলো হলো, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি, বাইশফাঁড়ী,তুমব্রু,ঘুমধুম,জলপাইতলী,নোয়াপাড়া, টেকনাফ সীমান্তের জাদিমুড়া, কেরুনতরী, বরইতলী, নাইট্যং, চৌধুরীপাড়া, মৌলভীপাড়া, নাজিরপাড়া, নয়াপাড়া, মেরিন ড্রাইভের খুরের মুখ, মহেষখালীয়াপাড়া, তুলাতুলি ঘাট ও শাহপরীর জালিয়াপাড়া ও গোলারচর। এসব পয়েন্ট একাধিক মানবপাচার মামলা, ইয়াবা মামলার আসামী ও চোরাকারবারীরা নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন।

দালালের বিষয়ে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম বলেন,সীমান্তের এই পরিস্থিতিতে মধ্যস্থতাকারীদের (দালালদের) আবির্ভাব যেন না ঘটে সেজন্য গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সাধারণ মানুষদের সঙ্গে নিয়ে যাতে কোনও অনুপ্রবেশ না ঘটে, সেজন্য কাজ করছি। পাশাপাশি যদি এ ধরনের কোনও ঘটনা ঘটে, আমরা কঠোরভাবে প্রতিরোধ করবো।তবে টেকনাফ পৌরসভার প্যানেল মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন,নৌপথে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করে থাকেন। বিশেষ করে অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটছে রাতের ভারী বৃষ্টিতে। আমি জানতে পেরেছি, রোহিঙ্গাদের একটি অংশ মিয়ানমারের পাশে নাফ নদীর তীরে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করছে।ঘুমধুমের সচেতন ব্যক্তি এম.ছৈয়দ আলম বলেন,ঘুমধুম ইউনিয়নের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমার সীমান্ত কেন্দ্রিক উভয়মুখী পাচার চলছে।শুনেছি বিচ্ছিন্ন ভাবে রোহিঙ্গাদেরও অনুপ্রবেশ করাচ্ছে চোরাকারবারিরা।এ ব্যাপারে সীমান্তের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারী বাড়ানো জরুরী।নতুন করে একটা রোহিঙ্গাও যাতে অনুপ্রবেশ করতে না পারে সকলকে সজাগ থাকতে হবে।এমনিতেই ১২ লাখের বেশী রোহিঙ্গার আশ্রিত বসবাস রয়েছে আগে থেকেই।মিয়ানমারে চলমান সংঘাতে ফের রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আশংকা উড়ে দেওয়া যায় না।একজন রোহিঙ্গাও যাতে নতুন করে ঢুকতে পারে তার জন্য আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার পাশাপাশি স্থানীয় জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে।

সম্প্রতি শাহপরীর দ্বীপ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করা এক স্বজনের সঙ্গে একটি ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন নুর কামাল নামক এক রোহিঙ্গা।মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যে নৌকায় আরও ১২ জন রোহিঙ্গার সঙ্গে তিনি বাংলাদেশে প্রবেশ করেন।ওই রোহিঙ্গা তরুণ বলেন, আমার বাড়ি মংডু টাউনে।সেখানে যুদ্ধে সব কিছু ধ্বংস হয়ে গেছে। আমার বাবা মর্টার শেলের আঘাতে মারা গেছেন। আরাকান আর্মি গ্রামে প্রবেশ করে এক ঘণ্টার মধ্যে সবাইকে গ্রামটি খালি করতে বলে। গ্রাম না ছাড়লে সবাইকে মেরে ফেলা হবে বলে হুমকি দেন। কিছু খাবার নিয়ে আমরা গ্রাম ছেড়ে আসি।তিনি আরও জানান,ইতিপূর্বে ৬০ জন যুবক আরাকান আর্মির হাতে ধরা পড়েছিল, আমি জানি না তাদের পরিণতি কী হয়েছে। পালানোর সময় আমি নিজের চোখে দেখেছি,অনেক যুবককে হত্যা করা হয়েছে। মংডুতে এসে মাটিতে গর্ত খুঁড়ে আমরা তিন দিন আশ্রয় নিই। তারপর দালাল মোহাম্মদ ইউনুসের মাধ্যমে প্রত্যেকে চার লাখ কিয়াট দিয়ে পালিয়ে আসি।
টেকনাফ সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যদের টহলের কারণে দুই দিন তাকে নৌকায় ভাসতে হয়েছে।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোহিঙ্গা বলেন, প্রবল বর্ষণের মধ্যে এক রাতে আমরা গোলারচর এলাকা দিয়ে শাহপরীর দ্বীপে প্রবেশ করি। সে সময় কয়েকজন দালাল ছিলেন, আমি তাদের আগে কখনও দেখিনি।বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া আরেক রোহিঙ্গা যুবক আব্দুল হামিদ বলেন, আমার গ্রামে হঠাৎ বোমা বিস্ফোরণ হয়। আমার পরিবারের ১৩ জন প্রাণ বাঁচাতে যে যার মতো পালিয়ে যায়। বাকিরা কোথায় আছে, কী অবস্থায় আছে আমি জানি না।তিনি বলেন,আমরা ২ ভাই তিন দিন পাহাড়ি এলাকায় হেঁটে নদী পার হয়েছি। এই যাত্রায় আমাদের সঙ্গে অন্যান্য গ্রামের আরও ৭জন ছিলেন।পাহাড়ে প্রায় মাসের অধিক থাকতে হয়েছে।খাবার ছিল না, পাতা খেয়ে বাঁচতে হয়েছে।যেহেতু আমার দেশের পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে, কেউ এখানে (বাংলাদেশ) ঢুকেছে, আবার কেউ দালালের মাধ্যমে ইন্দোনেশিয়া বা মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টা করেছে,বলেন তিনি।হামিদ আরো জানান, আর্থিকভাবে সচ্ছল পরিবারগুলো তরুণদের দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে, কারণ যুবকরাই আরাকান আর্মি এবং মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর প্রধান লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে।অনেকেই এখানে পালিয়ে আসার জন্য চেষ্টা করছে।কিন্তু নৌকা পারাপারের টাকার অভাবে তারা আসতে পারছে না।জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের মতে, রাখাইনে দুই পক্ষের যুদ্ধে মংডু ও বুচিডংয়ে প্রায় অর্ধ লাখের বেশি রোহিঙ্গা আটকা পড়েছে। অনুপ্রবেশের বিষয়ে জানতে চাইলে ৮-আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের কমান্ডার অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক মোহাম্মদ আমির জাফর বলেন, গত কয়েক মাস ধরে মিয়ানমারের ভেতরে যুদ্ধ চলছে, ফলে সেখানে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা টিকে থাকতে না পেরে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।তারা এখানে (বাংলাদেশ) আসার চেষ্টা করছে, কেউ কেউ হয়তো ঢুকেছে।পাচারকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে বলেও জানান তিনি।

কুতুপালং শরণার্থী শিবিরের রোহিঙ্গা নেতা জোবায়ের ও মুহিদুল্লাহ বলেন,আমরা যেভাবে জীবনযাপন করছি,তা মোটেও ভালো নয়। তবে রাখাইনে রোহিঙ্গারা মৃত্যুর মুখোমুখি, তাই পালিয়ে এখানে নিরাপদ আশ্রয়ে আসার চেষ্টা করছেন। এ সুযোগে দালালরা বাণিজ্যে করছে।নাফ নদীতে অনেকেই নৌকা নিয়ে সাগরে নামছে। মাছ ধরার নামে কৌশলে টাকার বিনিময়ে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা পারাপারের উদ্দেশ্যে সরকারি নির্দেশ অমান্য করে সাগরে নামছে দালাল চক্রের সদস্যরা।এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)উখিয়ার সভাপতি এবং রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ ও প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির নেতা সাংবাদিক নুর মোহাম্মদ শিকদার বলেন, মিয়ানমারে এদেশ থেকে প্রয়োজনীয় সামগ্রী পাচার হচ্ছে জানা যায়।মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণ সংঘাত চলছেই।এ সুযোগে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ যাতে না ঘটে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার পাশাপাশি এদেশের জনগণকেও সর্তক থাকতে হবে।

রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ করাতে দালাল চক্র বাণিজে মেতে উঠেছিল আগেও।এখনো সক্রিয় হবে।তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। সুজন টেকনাফের সভাপতি জাবেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন,দীর্ঘ দিন ধরে পার্শ্ববর্তী রাখাইনে যুদ্ধ চলছে।এতে সেখানে থাকা রোহিঙ্গারা এপারে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।আবার এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে রোহিঙ্গা পারাপারের দালাল চক্র সক্রিয় হয়ে উঠছে। চক্রটি ২০১৭ সালেও রোহিঙ্গা পারাপারে লাখ -লাখ টাকার বাণিজ্য করেছিল। এখনও সেই সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে। এসব দালালদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আবারও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঢল নামবে,এমটাই আশংকা রয়েছে।

এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা দোলোয়ার হোসেন বলেন,অভিযানের পরও আমাদের অজান্তে কিছু নৌকা নামছে সেটা সত্য।তবে আমাদের অগোচরে হওয়াতেই সনাক্ত করতে পারছিনা। কিন্তু এসব নৌকা রোহিঙ্গা পারাপার করছে কিনা সেটা বলা মুশকিল। তবে বিষয়টি উপজেলা আইনশৃঙ্খলা সভায় তুলে ধরবো।

মিয়ানমার চলমান যুদ্ধে সীমান্তে যাতে কোনও অনুপ্রবেশ না ঘটে সেজন্য নাফ ননীতে টহল জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের এক কর্মকর্তা। তিনি জানান,ইতোমধ্যে কোনও রোহিঙ্গা ঢুকেছে কিনা সেটি অবগত নই। দালালের বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। সীমান্তে বিজিবি কাজ করছে।দালালের বিষয়ে বিজিবি’র পক্ষ থেকে কোনও বক্তব্য পাওয়া না গেলেও সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকানার পাশাপাশি যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজিবি সদস্যরা প্রস্তুত রয়েছেন বলে জানিয়েছেন টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ।

এদিকে গত ২২ জুন বাংলাদেশে প্রবেশের সময় একই সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে আরেক রোহিঙ্গা যুবক মো. আনোয়ার পা হারান। এছাড়া গত ৬ জুলাই নাফ নদে কাঁকড়া শিকারে গিয়ে তিন রোহিঙ্গা হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।এরপরে অন্তত ৩০ জনের মত রোহিঙ্গার লাশ নাফ নদীতে ভেসে আসে।অনাকাঙ্ক্ষিত এসব মৃত্যুর ঘটনায় তোয়াক্কা করছেনা জেলে কিংবা দালাল চক্রের সদস্যরা।
রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রোধে সার্বিক পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি স্থানীয়দেরও সজাগ থাকার আহবান জানিয়েছেন বিশিষ্ট মহল।

ট্যাগ :
পাঠকপ্রিয়

চকরিয়ায় বসতভিটা ও দোকান দখলের জন্য হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট: আহত ৫

সীমান্তের ১৮ পয়েন্ট রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ:পাচারে জড়িত দালাল চক্র!

প্রকাশিত সময় : ০১:৩৭:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

উখিয়া-টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে বিচ্ছিন্ন ভাবে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে।সবচেয়ে বেশী চেষ্টায় রয়েছে নাফ নদীর জলসীমা দিয়ে।এপাড়ে টেকনাফ ওপারে রাখাইনের মংডু শহর।মধ্যকার জল সীমানা নাফ নদী বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে যুক্ত।নাফের ওপাড়ে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর চলমান যুদ্ধাবস্থার মধ্যেই তৎপর হয়ে উঠেছে দুই দেশের রোহিঙ্গা পারাপারের দালাল চক্রগুলো।অভিযোগ উঠেছে, অর্থের বিনিময়ে এই চক্রের মাধ্যমে নতুন করে বাংলাদেশে আসছে রোহিঙ্গারা। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীগুলো অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে তৎপর রয়েছে। সম্প্রতি কয়েক মাসের ভিতর কত রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে সে সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট তথ্য কোনও কর্তৃপক্ষ দিতে পারেনি।তবে অসমর্থিত সুত্রে জানা গেছে গত কয়েক মাসের ভিতর অন্তত ৮ হাজারের বেশী রোহিঙ্গা বিচ্ছিন্ন ভাবে বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে এদেশে অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছে।

গত সপ্তাহে রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা কয়েকজন রোহিঙ্গা এপারে গোপনে আশ্রয় নিয়েছেন।তারা জানান, প্রাণ বাঁচাতে তারা বাংলাদেশে এসেছেন। বর্ডার পার হতে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের দালালকে টাকা দিতে হয়েছে।আর সীমান্তবর্তী স্থল এলাকা ও নাফ নদী পার করে নাইক্ষ্যংছড়ি,তুমব্রু,ঘুমধুম ও টেকনাফের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশ করছে তারা।নাফ নদীর জলসীমা এবং ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গা পারাপারে দালাল চক্র গড়ে ওঠেছে। টেকনাফের নৌ-পুলিশের ইনচার্জ পরিদর্শক তপন কুমার বিশ্বাস জানান,রোহিঙ্গাদের গোপনে অনুপ্রবেশ করাতে দালাল চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে।তিনি জানান, মিয়ানমারে চলমান যুদ্ধের সুযোগে কয়েকটি দালাল চক্র রোহিঙ্গা পারাপারের বাণিজ্য গড়ে তোলার খবর আমরাও শুনেছি। আমরা সেসব দালালদের শনাক্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কাজ প্রক্রিয়াধীন।এছাড়া নাফ নদী দিয়ে যাতে কোনও অনুপ্রবেশের ঘটনা না ঘটে, সেজন্য টহল অব্যাহত রেখেছি। কিন্তু জনবল সংকটের পাশাপাশি নৌযান না থাকায় যখন-তখন অভিযানে নামতে পারি না।রাখাইন থেকে প্রথমে হেঁটে নাফ নদীর ওপারের তীরে আসেন রোহিঙ্গারা। ওই নদীতীরে নৌকা নিয়ে বসে থাকে দালালেরা। এপারেও একইভাবে বাংলাদেশের টেকনাফ সীমান্তে থাকেন দালালেরা।রাতে দুই অংশের দালালেরা টাকা নিয়ে রোহিঙ্গা ঢুকাচ্ছে বাংলাদেশে।তেমনি নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্ত দিয়ে এপাড়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করাচ্ছে মিয়ানমানে বিভিন্ন মালামাল পাচার করা সিন্ডিকেটের সদস্যরা।তারা একেকজন রোহিঙ্গা কৌশলে এপাড়ে এনে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঢুকিয়ে দিচ্ছেন মোটাংকের টাকার বিনিময়ে।ঘুমধুম পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক মাহফুজ ইমতিয়াজ ভুঁইয়া’র মতে,রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রোধে পুলিশ বাহিনী সর্বাবস্থায় সতর্ক রয়েছেন।ইতিপূর্বে ৮ সদস্যের একটি রোহিঙ্গার দল এপারে অনুপ্রবেশ কালে আটকে দিই।পরে তুমব্রুর পয়েন্ট দিয়ে বিজিবি’র তুমব্রু জোয়ানদের সহযোগিতায় পুশব্যাক করা হয়।অনুসন্ধানে জানা গেছে, দালালরা ১০/ ২০ হাজার থেকে শুরু ১ লাখ টাকার বিনিময়ে নাইক্ষ্যংছড়ি, উখিয়া-টেকনাফের সীমান্ত দিয়ে রাতের আঁধারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল দলের চোখ ফাঁকি দিয়ে এ অবৈধ পাচার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।এসব কাজে সীমান্তের অন্তত ৩০ জনের বেশির নাম পাওয়া গেছে।তাদের মধ্যে রয়েছে- টেকনাফের বদি আলম, হেলাল উদ্দিন, মো. রহিম বাদশা, মো. বলি, নুর মোহাম্মদ, মোহাম্মদ শালমান, মো. শামসুল আলম, মো. জাবেদ, ইমান হোসেন ইউচুপ, মো. ইউনুছ, মো. সিরাজ, আজিজ উল্লাহ, জাফর আলম, মো. জিয়াবুল, মো. শফিক, মুহাম্মদ মান্নান, করিম উল্লাহ, নজির আহমেদ, মো. শফিক, মো. ফারুক, মো. জয়নাল, নুর হোসেন ও মো. সাদ্দাম,ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তের জকির,ইউনুস,বাইট্রা শাহ আলম,শাহীন, কামাল,রুহুল,আবুল হাসেম,সাইফুল ছাড়াও ঘুমধুম সীমান্তের কয়েকজন নারীও রয়েছে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ, রোহিঙ্গাদের টাকা বহন ও মালামাল পাচার কাজের সহযোগী হিসেবে।

এদের মধ্যে অনেকের নামে মানব পাচার ও ইয়াবা পাচারের মামলাও পুলিশের মানবপাচার তালিকায়।তারা আবার অনেকেই সীমান্ত কেন্দ্রিক চোরাকারবারিও।এসব দালাল চক্রের সদস্যরা ১৮টি পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গাদের নিয়ে আসছে।পয়েন্টগুলো হলো, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি, বাইশফাঁড়ী,তুমব্রু,ঘুমধুম,জলপাইতলী,নোয়াপাড়া, টেকনাফ সীমান্তের জাদিমুড়া, কেরুনতরী, বরইতলী, নাইট্যং, চৌধুরীপাড়া, মৌলভীপাড়া, নাজিরপাড়া, নয়াপাড়া, মেরিন ড্রাইভের খুরের মুখ, মহেষখালীয়াপাড়া, তুলাতুলি ঘাট ও শাহপরীর জালিয়াপাড়া ও গোলারচর। এসব পয়েন্ট একাধিক মানবপাচার মামলা, ইয়াবা মামলার আসামী ও চোরাকারবারীরা নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন।

দালালের বিষয়ে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম বলেন,সীমান্তের এই পরিস্থিতিতে মধ্যস্থতাকারীদের (দালালদের) আবির্ভাব যেন না ঘটে সেজন্য গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সাধারণ মানুষদের সঙ্গে নিয়ে যাতে কোনও অনুপ্রবেশ না ঘটে, সেজন্য কাজ করছি। পাশাপাশি যদি এ ধরনের কোনও ঘটনা ঘটে, আমরা কঠোরভাবে প্রতিরোধ করবো।তবে টেকনাফ পৌরসভার প্যানেল মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন,নৌপথে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করে থাকেন। বিশেষ করে অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটছে রাতের ভারী বৃষ্টিতে। আমি জানতে পেরেছি, রোহিঙ্গাদের একটি অংশ মিয়ানমারের পাশে নাফ নদীর তীরে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করছে।ঘুমধুমের সচেতন ব্যক্তি এম.ছৈয়দ আলম বলেন,ঘুমধুম ইউনিয়নের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমার সীমান্ত কেন্দ্রিক উভয়মুখী পাচার চলছে।শুনেছি বিচ্ছিন্ন ভাবে রোহিঙ্গাদেরও অনুপ্রবেশ করাচ্ছে চোরাকারবারিরা।এ ব্যাপারে সীমান্তের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারী বাড়ানো জরুরী।নতুন করে একটা রোহিঙ্গাও যাতে অনুপ্রবেশ করতে না পারে সকলকে সজাগ থাকতে হবে।এমনিতেই ১২ লাখের বেশী রোহিঙ্গার আশ্রিত বসবাস রয়েছে আগে থেকেই।মিয়ানমারে চলমান সংঘাতে ফের রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আশংকা উড়ে দেওয়া যায় না।একজন রোহিঙ্গাও যাতে নতুন করে ঢুকতে পারে তার জন্য আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার পাশাপাশি স্থানীয় জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে।

সম্প্রতি শাহপরীর দ্বীপ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করা এক স্বজনের সঙ্গে একটি ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন নুর কামাল নামক এক রোহিঙ্গা।মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যে নৌকায় আরও ১২ জন রোহিঙ্গার সঙ্গে তিনি বাংলাদেশে প্রবেশ করেন।ওই রোহিঙ্গা তরুণ বলেন, আমার বাড়ি মংডু টাউনে।সেখানে যুদ্ধে সব কিছু ধ্বংস হয়ে গেছে। আমার বাবা মর্টার শেলের আঘাতে মারা গেছেন। আরাকান আর্মি গ্রামে প্রবেশ করে এক ঘণ্টার মধ্যে সবাইকে গ্রামটি খালি করতে বলে। গ্রাম না ছাড়লে সবাইকে মেরে ফেলা হবে বলে হুমকি দেন। কিছু খাবার নিয়ে আমরা গ্রাম ছেড়ে আসি।তিনি আরও জানান,ইতিপূর্বে ৬০ জন যুবক আরাকান আর্মির হাতে ধরা পড়েছিল, আমি জানি না তাদের পরিণতি কী হয়েছে। পালানোর সময় আমি নিজের চোখে দেখেছি,অনেক যুবককে হত্যা করা হয়েছে। মংডুতে এসে মাটিতে গর্ত খুঁড়ে আমরা তিন দিন আশ্রয় নিই। তারপর দালাল মোহাম্মদ ইউনুসের মাধ্যমে প্রত্যেকে চার লাখ কিয়াট দিয়ে পালিয়ে আসি।
টেকনাফ সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যদের টহলের কারণে দুই দিন তাকে নৌকায় ভাসতে হয়েছে।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোহিঙ্গা বলেন, প্রবল বর্ষণের মধ্যে এক রাতে আমরা গোলারচর এলাকা দিয়ে শাহপরীর দ্বীপে প্রবেশ করি। সে সময় কয়েকজন দালাল ছিলেন, আমি তাদের আগে কখনও দেখিনি।বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া আরেক রোহিঙ্গা যুবক আব্দুল হামিদ বলেন, আমার গ্রামে হঠাৎ বোমা বিস্ফোরণ হয়। আমার পরিবারের ১৩ জন প্রাণ বাঁচাতে যে যার মতো পালিয়ে যায়। বাকিরা কোথায় আছে, কী অবস্থায় আছে আমি জানি না।তিনি বলেন,আমরা ২ ভাই তিন দিন পাহাড়ি এলাকায় হেঁটে নদী পার হয়েছি। এই যাত্রায় আমাদের সঙ্গে অন্যান্য গ্রামের আরও ৭জন ছিলেন।পাহাড়ে প্রায় মাসের অধিক থাকতে হয়েছে।খাবার ছিল না, পাতা খেয়ে বাঁচতে হয়েছে।যেহেতু আমার দেশের পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে, কেউ এখানে (বাংলাদেশ) ঢুকেছে, আবার কেউ দালালের মাধ্যমে ইন্দোনেশিয়া বা মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টা করেছে,বলেন তিনি।হামিদ আরো জানান, আর্থিকভাবে সচ্ছল পরিবারগুলো তরুণদের দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে, কারণ যুবকরাই আরাকান আর্মি এবং মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর প্রধান লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে।অনেকেই এখানে পালিয়ে আসার জন্য চেষ্টা করছে।কিন্তু নৌকা পারাপারের টাকার অভাবে তারা আসতে পারছে না।জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের মতে, রাখাইনে দুই পক্ষের যুদ্ধে মংডু ও বুচিডংয়ে প্রায় অর্ধ লাখের বেশি রোহিঙ্গা আটকা পড়েছে। অনুপ্রবেশের বিষয়ে জানতে চাইলে ৮-আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের কমান্ডার অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক মোহাম্মদ আমির জাফর বলেন, গত কয়েক মাস ধরে মিয়ানমারের ভেতরে যুদ্ধ চলছে, ফলে সেখানে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা টিকে থাকতে না পেরে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।তারা এখানে (বাংলাদেশ) আসার চেষ্টা করছে, কেউ কেউ হয়তো ঢুকেছে।পাচারকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে বলেও জানান তিনি।

কুতুপালং শরণার্থী শিবিরের রোহিঙ্গা নেতা জোবায়ের ও মুহিদুল্লাহ বলেন,আমরা যেভাবে জীবনযাপন করছি,তা মোটেও ভালো নয়। তবে রাখাইনে রোহিঙ্গারা মৃত্যুর মুখোমুখি, তাই পালিয়ে এখানে নিরাপদ আশ্রয়ে আসার চেষ্টা করছেন। এ সুযোগে দালালরা বাণিজ্যে করছে।নাফ নদীতে অনেকেই নৌকা নিয়ে সাগরে নামছে। মাছ ধরার নামে কৌশলে টাকার বিনিময়ে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা পারাপারের উদ্দেশ্যে সরকারি নির্দেশ অমান্য করে সাগরে নামছে দালাল চক্রের সদস্যরা।এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)উখিয়ার সভাপতি এবং রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ ও প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির নেতা সাংবাদিক নুর মোহাম্মদ শিকদার বলেন, মিয়ানমারে এদেশ থেকে প্রয়োজনীয় সামগ্রী পাচার হচ্ছে জানা যায়।মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণ সংঘাত চলছেই।এ সুযোগে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ যাতে না ঘটে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার পাশাপাশি এদেশের জনগণকেও সর্তক থাকতে হবে।

রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ করাতে দালাল চক্র বাণিজে মেতে উঠেছিল আগেও।এখনো সক্রিয় হবে।তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। সুজন টেকনাফের সভাপতি জাবেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন,দীর্ঘ দিন ধরে পার্শ্ববর্তী রাখাইনে যুদ্ধ চলছে।এতে সেখানে থাকা রোহিঙ্গারা এপারে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।আবার এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে রোহিঙ্গা পারাপারের দালাল চক্র সক্রিয় হয়ে উঠছে। চক্রটি ২০১৭ সালেও রোহিঙ্গা পারাপারে লাখ -লাখ টাকার বাণিজ্য করেছিল। এখনও সেই সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে। এসব দালালদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আবারও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঢল নামবে,এমটাই আশংকা রয়েছে।

এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা দোলোয়ার হোসেন বলেন,অভিযানের পরও আমাদের অজান্তে কিছু নৌকা নামছে সেটা সত্য।তবে আমাদের অগোচরে হওয়াতেই সনাক্ত করতে পারছিনা। কিন্তু এসব নৌকা রোহিঙ্গা পারাপার করছে কিনা সেটা বলা মুশকিল। তবে বিষয়টি উপজেলা আইনশৃঙ্খলা সভায় তুলে ধরবো।

মিয়ানমার চলমান যুদ্ধে সীমান্তে যাতে কোনও অনুপ্রবেশ না ঘটে সেজন্য নাফ ননীতে টহল জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের এক কর্মকর্তা। তিনি জানান,ইতোমধ্যে কোনও রোহিঙ্গা ঢুকেছে কিনা সেটি অবগত নই। দালালের বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। সীমান্তে বিজিবি কাজ করছে।দালালের বিষয়ে বিজিবি’র পক্ষ থেকে কোনও বক্তব্য পাওয়া না গেলেও সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকানার পাশাপাশি যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজিবি সদস্যরা প্রস্তুত রয়েছেন বলে জানিয়েছেন টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ।

এদিকে গত ২২ জুন বাংলাদেশে প্রবেশের সময় একই সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে আরেক রোহিঙ্গা যুবক মো. আনোয়ার পা হারান। এছাড়া গত ৬ জুলাই নাফ নদে কাঁকড়া শিকারে গিয়ে তিন রোহিঙ্গা হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।এরপরে অন্তত ৩০ জনের মত রোহিঙ্গার লাশ নাফ নদীতে ভেসে আসে।অনাকাঙ্ক্ষিত এসব মৃত্যুর ঘটনায় তোয়াক্কা করছেনা জেলে কিংবা দালাল চক্রের সদস্যরা।
রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রোধে সার্বিক পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি স্থানীয়দেরও সজাগ থাকার আহবান জানিয়েছেন বিশিষ্ট মহল।