০৭:১৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাত ঘুরলেই বাড়ে দাম, বৃথা ঝরে কৃষকের ঘাম

উত্তরাঞ্চলের অন্যতম পাইকারি মোকাম রংপুর নগরীর সিটি বাজারে বিভিন্ন ধরনের সবজির দাম অনেক কমলেও সাধারণ ভোক্তারা এর সুফল পাচ্ছেন না। প্রান্তিক পর্যায়ে একটি ফুলকপি ও বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৫ টাকা দরে। সেটি তিন হাত ঘুরে খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা দরে।

একইভাবে ১০ টাকা কেজির টমেটো ভোক্তাদের কিনতে হচ্ছে ৪০ টাকা কেজি দরে। এ ছাড়াও বেগুন, কাঁচা মরিচ, আলুসহ অন্যান্য সবজির দাম কমে গেলেও ভোক্তারা এর সুবিধা পাচ্ছেন না। বরং তাদের ৩-৪ গুণ দামে ভরা মৌসুমেও সবজি কিনতে হচ্ছে।

এ ব্যাপারে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর কোনও কার্যকর ভূমিকাই পালন করছে না বলে অভিযোগ সাধারণ ভোক্তাদের। সরেজমিন বাজার ঘুরে কৃষক, আড়তদার, পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো নানান তথ্য। পুরো সবজি বাজারটাই কয়েকজন সিন্ডিকেট চক্রের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। তারা বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে ইচ্ছেমতো মূল্য বাড়িয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রংপুরে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন ধরনের সবজি উৎপাদিত হয়। রংপুর দেশের মধ্যে সর্ববৃহৎ আলু উৎপাদনকারী জেলা। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি প্রচুর পরিমাণে চাষ হয়। যা জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের অনেক জায়গায় চলে যায়। এজন্য রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বলদীপুকুর, দমদমাবাজার, শঠিবাড়ি, জেলা সদরের পালিচড়াসহ অন্তত ১০টি স্থানে সব ধরনের সবজির পাইকারি বাজার বসে। এখান থেকে ট্রাকে করে রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যাওয়া হয়।

সরেজমিন সবজির পাইকারি বাজার বলদীপুকুর ও শঠিবাড়িতে ঘুরে দেখা গেছে, ফুলকপি ও বাঁধাকপি প্রতি পিস (এক কেজির ওপরে) ৪-৫ টাকা, টমেটো ১০ টাকা, মোটা বেগুন ৩০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৪০-৪৫ টাকা, আলু ২০ টাকা, শসা ২০ টাকা, করোলা ৪০ টাকা, মুলা ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন প্রান্তিক পর্যায়ের সবজি চাষিরা।

কৃষকের ৫ টাকার ফুলকপি বাজারে বিক্রি ৩০ টাকায়
এ ব্যাপারে কয়েকজন সবজি চাষির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফুলকপি ও বাঁধাকপির মৌসুম শেষ। সে কারণে দাম একেবারে কমে গেছে। চাহিদা আর আগের মতো নেই। ফলে তারা তাদের ক্ষেতে থাকা ফুলকপি আর বাঁধাকপি তুলে ফেলছেন। পাইকারদের কাছে চাহিদা না থাকায় ৪-৫ টাকায় একটি করে বিক্রি করছেন তারা। যেহেতু মৌসুম শেষ সে কারণে অন্যান্য সবজি বিশেষ করে কাঁচা মরিচ, পটল, শসা, শিমসহ অন্যান্য সবজি চাষাবাদ করছেন।

তারা বলেন, ‘আমরা যারা প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষক আমাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য পাই না। আমাদের বছরব্যাপী ঘাম ঝরানো চাষ করা সবজি আড়তদার, পাইকাররা কিনে কোটি কোটি টাকা মুনাফা করছেন।’

উৎপাদন বাড়ায় কমেছে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি

রংপুরের সিটি বাজারের আড়তদার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার উত্তরাঞ্চলের রংপুর, নীলফামারী ও লালমনিরহাট জেলার তিস্তা নদীর চরাঞ্চলে ব্যাপক পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। একইভাবে কাঁচা মরিচসহ অন্যান্য সবজিও চাষাবাদ হচ্ছে। এ ছাড়াও দেশের মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, বগুড়া জেলায় ব্যাপক হারে পেঁয়াজের চাষ হয়েছে। চাহিদা মিটিয়ে এবার অন্য জেলাতেও যাচ্ছে পেঁয়াজ। তা ছাড়া দেশি পেঁয়াজের ঝাঁজ ভারতীয় পেঁয়াজের চেয়ে বেশি। আর মানের দিক থেকে দেশি পেঁয়াজ অনেক ভালো। এখন আড়তগুলোতে পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রান্তিক পর্যায়ে ৬০ টাকা কেজি। তবে খুচরা বাজারে এখনও একশ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। ভারতীয় পেঁয়াজের চাহিদা একেবারে নেই। ফলে আমদানি করার প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন আড়তদার ব্যবসায়ীরা।

যেভাবে সিন্ডিকেট করছেন ব্যবসায়ীরা

প্রান্তিক পর্যায়ে সবজির বাজার থেকে ৫ টাকা দিয়ে প্রতিটি ফুলকপি আর বাঁধাকপি কিনে নিয়ে যান আড়তদাররা। তারা প্রতিটি কপিতে ৮-১০ টাকা মুনাফা করে বিক্রি করেন পাইকারি বিক্রেতাদের কাছে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা কেজিতে ৫-৭ টাকা মুনাফা করে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। এরপর খুচরা ব্যবসায়ীরা ৫ টাকার সবজি ৩০ থেকে ৪০ টাকায় ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করছেন। ফলে সবজির দাম কমলেও এর কোনও সুফল পান না সাধারণ ভোক্তারা।

এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আড়তের কর্মচারী জানান, সিন্ডিকেটটা করছে আড়তদাররা। তারা পুরো বাজার নিয়ন্ত্রণ করে ভোক্তাদের জিম্মি করছেন। এবার ভরা মৌসুমে সবজি বিক্রি করে রংপুর সিটি বাজারের চার সিন্ডিকেট আড়তদার কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

এ ব্যাপারে শরিফুল নামে এক আড়তদার দাবি করেন, তারা নাকি ১ টাকা কেজিতে মুনাফা করে সবজি পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। কিন্তু তারা কত টাকা দিয়ে কিনেছেন তা বলেননি। এমনকি কোনও কাগজপত্রও দেখাতে পারেননি।

রংপুর সিটি বাজারের পাইকারি সবজি ব্যবসায়ী শাহ আলম বলেন, ‘কাঁচা মরিচ আমরা ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। কিনেছি ৫৫ টাকা কেজি দরে। টমেটো ২৫ টাকা, আলু ২৮ টাকা দরে বিক্রি করছি। একইভাবে পেঁয়াজ ৮০ টাকা দরে কিনে ৯০ টাকায় বিক্রি করি। ২০ গজ দূরে সিটি কাঁচা বাজারে প্রতিটি সবজির দাম আড়তদার, পাইকারদের থেকে অনেক বেশি। তারা তিন-চার গুণ বেশি দরে বিক্রি করছেন।’

সবজির বাজারে আড়তদার, পাইকার, খুচরা বিক্রেতা; কোথাও মূল্যতালিকা টানানো নেই। কত দামে কেনা এবং বিক্রি তা উল্লেখ করা হলেও ভোক্তারা কিছুটা লাভবান হতেন। কিন্তু এসব নিয়ে প্রশাসন ও ভোক্তা অধিদফতর কারও কোনও মাথাব্যথা নেই।

সাধারণ ভোক্তাদের প্রতিক্রিয়া

রংপুর সিটি বাজারে সবজি কিনতে আসা ব্যাংক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বললেন, ‘আমাদের বেতন বাড়েনি কিন্তু প্রতিনিয়ত নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। ফলে আমরা কুলাতে পারছি না। বাধ্য হয়ে কম পণ্য কিনে খেতে হচ্ছে। তারপরেও প্রতি মাসে আমাদের ধারদেনা করতে হচ্ছে।’

একই কথা বললেন নির্মাণশ্রমিক মমতাজ ও নুরু মিয়া। তারা বলেন, ‘৫০০ টাকা মজুরি পাই। প্রতিদিন তরকারি কিনতেই ২০০ টাকা চলে যায়। তারপর চালসহ আরও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে হয়। তার ওপর সংসারে নানান খরচ। আমরা কীভাবে চলছি তা নিয়ে কেউই ভাবে না।’

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের বক্তব্য

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর রংপুরের প্রধান সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজার রহমান দাবি করলেন, তারা সার্বক্ষণিক নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের বাজার মনিটারিং করেন। প্রায়শই অভিযান পরিচালনাও করছেন। কিন্তু ভোক্তাদের স্বার্থে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য বৃদ্ধির পেছনে কারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

ট্যাগ :
পাঠকপ্রিয়

জমে উঠেছে বৃহত্তর বাদশাঘোনা সমাজ পরিচালনা কমিটির দ্বি-বার্ষিক নির্বাচনের প্রচার প্রচারণা

হাত ঘুরলেই বাড়ে দাম, বৃথা ঝরে কৃষকের ঘাম

প্রকাশিত সময় : ০৫:১৭:৩২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ মার্চ ২০২৪

উত্তরাঞ্চলের অন্যতম পাইকারি মোকাম রংপুর নগরীর সিটি বাজারে বিভিন্ন ধরনের সবজির দাম অনেক কমলেও সাধারণ ভোক্তারা এর সুফল পাচ্ছেন না। প্রান্তিক পর্যায়ে একটি ফুলকপি ও বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৫ টাকা দরে। সেটি তিন হাত ঘুরে খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা দরে।

একইভাবে ১০ টাকা কেজির টমেটো ভোক্তাদের কিনতে হচ্ছে ৪০ টাকা কেজি দরে। এ ছাড়াও বেগুন, কাঁচা মরিচ, আলুসহ অন্যান্য সবজির দাম কমে গেলেও ভোক্তারা এর সুবিধা পাচ্ছেন না। বরং তাদের ৩-৪ গুণ দামে ভরা মৌসুমেও সবজি কিনতে হচ্ছে।

এ ব্যাপারে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর কোনও কার্যকর ভূমিকাই পালন করছে না বলে অভিযোগ সাধারণ ভোক্তাদের। সরেজমিন বাজার ঘুরে কৃষক, আড়তদার, পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো নানান তথ্য। পুরো সবজি বাজারটাই কয়েকজন সিন্ডিকেট চক্রের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। তারা বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে ইচ্ছেমতো মূল্য বাড়িয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রংপুরে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন ধরনের সবজি উৎপাদিত হয়। রংপুর দেশের মধ্যে সর্ববৃহৎ আলু উৎপাদনকারী জেলা। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি প্রচুর পরিমাণে চাষ হয়। যা জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের অনেক জায়গায় চলে যায়। এজন্য রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বলদীপুকুর, দমদমাবাজার, শঠিবাড়ি, জেলা সদরের পালিচড়াসহ অন্তত ১০টি স্থানে সব ধরনের সবজির পাইকারি বাজার বসে। এখান থেকে ট্রাকে করে রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যাওয়া হয়।

সরেজমিন সবজির পাইকারি বাজার বলদীপুকুর ও শঠিবাড়িতে ঘুরে দেখা গেছে, ফুলকপি ও বাঁধাকপি প্রতি পিস (এক কেজির ওপরে) ৪-৫ টাকা, টমেটো ১০ টাকা, মোটা বেগুন ৩০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৪০-৪৫ টাকা, আলু ২০ টাকা, শসা ২০ টাকা, করোলা ৪০ টাকা, মুলা ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন প্রান্তিক পর্যায়ের সবজি চাষিরা।

কৃষকের ৫ টাকার ফুলকপি বাজারে বিক্রি ৩০ টাকায়
এ ব্যাপারে কয়েকজন সবজি চাষির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফুলকপি ও বাঁধাকপির মৌসুম শেষ। সে কারণে দাম একেবারে কমে গেছে। চাহিদা আর আগের মতো নেই। ফলে তারা তাদের ক্ষেতে থাকা ফুলকপি আর বাঁধাকপি তুলে ফেলছেন। পাইকারদের কাছে চাহিদা না থাকায় ৪-৫ টাকায় একটি করে বিক্রি করছেন তারা। যেহেতু মৌসুম শেষ সে কারণে অন্যান্য সবজি বিশেষ করে কাঁচা মরিচ, পটল, শসা, শিমসহ অন্যান্য সবজি চাষাবাদ করছেন।

তারা বলেন, ‘আমরা যারা প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষক আমাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য পাই না। আমাদের বছরব্যাপী ঘাম ঝরানো চাষ করা সবজি আড়তদার, পাইকাররা কিনে কোটি কোটি টাকা মুনাফা করছেন।’

উৎপাদন বাড়ায় কমেছে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি

রংপুরের সিটি বাজারের আড়তদার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার উত্তরাঞ্চলের রংপুর, নীলফামারী ও লালমনিরহাট জেলার তিস্তা নদীর চরাঞ্চলে ব্যাপক পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। একইভাবে কাঁচা মরিচসহ অন্যান্য সবজিও চাষাবাদ হচ্ছে। এ ছাড়াও দেশের মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, বগুড়া জেলায় ব্যাপক হারে পেঁয়াজের চাষ হয়েছে। চাহিদা মিটিয়ে এবার অন্য জেলাতেও যাচ্ছে পেঁয়াজ। তা ছাড়া দেশি পেঁয়াজের ঝাঁজ ভারতীয় পেঁয়াজের চেয়ে বেশি। আর মানের দিক থেকে দেশি পেঁয়াজ অনেক ভালো। এখন আড়তগুলোতে পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রান্তিক পর্যায়ে ৬০ টাকা কেজি। তবে খুচরা বাজারে এখনও একশ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। ভারতীয় পেঁয়াজের চাহিদা একেবারে নেই। ফলে আমদানি করার প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন আড়তদার ব্যবসায়ীরা।

যেভাবে সিন্ডিকেট করছেন ব্যবসায়ীরা

প্রান্তিক পর্যায়ে সবজির বাজার থেকে ৫ টাকা দিয়ে প্রতিটি ফুলকপি আর বাঁধাকপি কিনে নিয়ে যান আড়তদাররা। তারা প্রতিটি কপিতে ৮-১০ টাকা মুনাফা করে বিক্রি করেন পাইকারি বিক্রেতাদের কাছে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা কেজিতে ৫-৭ টাকা মুনাফা করে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। এরপর খুচরা ব্যবসায়ীরা ৫ টাকার সবজি ৩০ থেকে ৪০ টাকায় ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করছেন। ফলে সবজির দাম কমলেও এর কোনও সুফল পান না সাধারণ ভোক্তারা।

এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আড়তের কর্মচারী জানান, সিন্ডিকেটটা করছে আড়তদাররা। তারা পুরো বাজার নিয়ন্ত্রণ করে ভোক্তাদের জিম্মি করছেন। এবার ভরা মৌসুমে সবজি বিক্রি করে রংপুর সিটি বাজারের চার সিন্ডিকেট আড়তদার কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

এ ব্যাপারে শরিফুল নামে এক আড়তদার দাবি করেন, তারা নাকি ১ টাকা কেজিতে মুনাফা করে সবজি পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। কিন্তু তারা কত টাকা দিয়ে কিনেছেন তা বলেননি। এমনকি কোনও কাগজপত্রও দেখাতে পারেননি।

রংপুর সিটি বাজারের পাইকারি সবজি ব্যবসায়ী শাহ আলম বলেন, ‘কাঁচা মরিচ আমরা ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। কিনেছি ৫৫ টাকা কেজি দরে। টমেটো ২৫ টাকা, আলু ২৮ টাকা দরে বিক্রি করছি। একইভাবে পেঁয়াজ ৮০ টাকা দরে কিনে ৯০ টাকায় বিক্রি করি। ২০ গজ দূরে সিটি কাঁচা বাজারে প্রতিটি সবজির দাম আড়তদার, পাইকারদের থেকে অনেক বেশি। তারা তিন-চার গুণ বেশি দরে বিক্রি করছেন।’

সবজির বাজারে আড়তদার, পাইকার, খুচরা বিক্রেতা; কোথাও মূল্যতালিকা টানানো নেই। কত দামে কেনা এবং বিক্রি তা উল্লেখ করা হলেও ভোক্তারা কিছুটা লাভবান হতেন। কিন্তু এসব নিয়ে প্রশাসন ও ভোক্তা অধিদফতর কারও কোনও মাথাব্যথা নেই।

সাধারণ ভোক্তাদের প্রতিক্রিয়া

রংপুর সিটি বাজারে সবজি কিনতে আসা ব্যাংক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বললেন, ‘আমাদের বেতন বাড়েনি কিন্তু প্রতিনিয়ত নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। ফলে আমরা কুলাতে পারছি না। বাধ্য হয়ে কম পণ্য কিনে খেতে হচ্ছে। তারপরেও প্রতি মাসে আমাদের ধারদেনা করতে হচ্ছে।’

একই কথা বললেন নির্মাণশ্রমিক মমতাজ ও নুরু মিয়া। তারা বলেন, ‘৫০০ টাকা মজুরি পাই। প্রতিদিন তরকারি কিনতেই ২০০ টাকা চলে যায়। তারপর চালসহ আরও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে হয়। তার ওপর সংসারে নানান খরচ। আমরা কীভাবে চলছি তা নিয়ে কেউই ভাবে না।’

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের বক্তব্য

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর রংপুরের প্রধান সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজার রহমান দাবি করলেন, তারা সার্বক্ষণিক নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের বাজার মনিটারিং করেন। প্রায়শই অভিযান পরিচালনাও করছেন। কিন্তু ভোক্তাদের স্বার্থে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য বৃদ্ধির পেছনে কারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’