০৫:৫৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হারিয়ে যাওয়া চকরিয়া সুন্দরবন ফেরানোর উদ্যোগ

হারিয়ে যাওয়া চকরিয়া সুন্দরবন অবশেষে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে বন বিভাগ। সুন্দরবনের অবৈধ দখলদারদের তালিকার পাশাপাশি একটি প্রস্তাবনাও তৈরি করা হয়েছে। বিট অফিস থেকে শুরু করে প্রধান বন সংরক্ষকের কার্যালয় পর্যন্ত বৈঠক শেষে এ প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করা হয়েছে। কীভাবে ও কাদের সহযোগিতায় সুন্দরবন ফিরিয়ে আনা যায়, তার বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে প্রস্তাবনায়।

অথচ সরকারের ভুল নীতি, দখল-বেদখলে মাত্র তিন দশকে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল থেকে হারিয়ে গেছে কক্সবাজার জেলার চকরিয়ার এ সুন্দরবন।
প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতায় স্থানীয় দরিদ্র ও ভূমিহীনদের সম্পৃক্ত করে বৈজ্ঞানিক মডেলে বনায়ন সৃষ্টি করতে হবে। এভাবে উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী তৈরির মধ্য দিয়ে সমৃদ্ধ কার্বন আঁধার সৃষ্টি, জীববৈচিত্র্য এবং প্রতিবেশ ও পরিবেশের উন্নতিসহ পর্যটনের সুযোগ সৃষ্টি হবে। একই সঙ্গে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক উন্নতিও ঘটবে।

কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন সরকার বলেন, সুন্দরবনের মতো ঐতিহ্যবাহী একটি বন দেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাওয়া খুবই দুঃখজনক। এটি এখন ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে বন বিভাগ।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় ৪৫ হাজার একর আয়তনের চকরিয়া সুন্দরবনকে ১৯০৩ সালে সংরক্ষিত বন ঘোষণা করেছিল তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার। ১৯২৯ সালের দিকে ২৬০টি ভূমিহীন পরিবারকে প্রায় ৪ হাজার একর জমি বরাদ্দ দিয়ে স্থানান্তর করা হয় সুন্দরবনে। তবুও ৭০ দশক পর্যন্ত বনটি টিকে ছিল স্বমহিমায়। ১৯৮৫ সালে সরকার চিংড়ি চাষ নীতিমালা প্রণয়ন করলে সর্বনাশ শুরু হয় এ বনের। ওই নীতিমালা অনুযায়ী, চিংড়ি চাষযোগ্য যে কোনো বনভূমি সরকার আগ্রহীদের লিজ দিতে পারবে। এর আলোকে বনের ১০ হাজার একর জমি লিজ দেওয়া হয় বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তিকে। এর আওতায় সরকার চকরিয়া সুন্দরবনের ১০ হাজার একর জায়গা মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়কে হস্তান্তর করে।

চকরিয়া সুন্দরবন ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, চকরিয়া সুন্দরবন খুলনা অঞ্চলের সুন্দরবনের চেয়েও পুরোনো। সরকারের চিংড়ি চাষের নীতিমালার মধ্য দিয়ে মূলত বন ধ্বংস শুরু হয়। এর পর লিজের নামে চিংড়িচাষিদের দেওয়া হয় বনের জমি। বাকিগুলো গেছে দখল-বেদখলে।

বন বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, চকরিয়ার প্যারাবনে চিংড়ি চাষের যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, সেটা বিজ্ঞানভিত্তিক ছিল না। তবে এখনও এ বন ফিরিয়ে আনা সম্ভব। বন বিভাগের সে জ্ঞান আছে। দরকার শুধু সদিচ্ছার।
মৎস্য বিভাগ সূত্র জানায়, মৎস্য বিভাগ ৫৮৭টি প্লট বরাদ্দ দিয়েছে। প্রতিটি প্লট ১০ একর, আর কিছু ১১ একর করে। বেড়িবাঁধ ও স্লুইসগেট ভেঙে যাওয়ার কারণে ওই এলাকায় এখন আশানুরূপ চিংড়ির উৎপাদন হচ্ছে না।

ট্যাগ :
পাঠকপ্রিয়

আলুর দাম আরও বেড়েছে, স্বস্তি নেই ডিম-সবজিতেও

হারিয়ে যাওয়া চকরিয়া সুন্দরবন ফেরানোর উদ্যোগ

প্রকাশিত সময় : ০৯:৪২:৪৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ জুন ২০২৪

হারিয়ে যাওয়া চকরিয়া সুন্দরবন অবশেষে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে বন বিভাগ। সুন্দরবনের অবৈধ দখলদারদের তালিকার পাশাপাশি একটি প্রস্তাবনাও তৈরি করা হয়েছে। বিট অফিস থেকে শুরু করে প্রধান বন সংরক্ষকের কার্যালয় পর্যন্ত বৈঠক শেষে এ প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করা হয়েছে। কীভাবে ও কাদের সহযোগিতায় সুন্দরবন ফিরিয়ে আনা যায়, তার বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে প্রস্তাবনায়।

অথচ সরকারের ভুল নীতি, দখল-বেদখলে মাত্র তিন দশকে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল থেকে হারিয়ে গেছে কক্সবাজার জেলার চকরিয়ার এ সুন্দরবন।
প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতায় স্থানীয় দরিদ্র ও ভূমিহীনদের সম্পৃক্ত করে বৈজ্ঞানিক মডেলে বনায়ন সৃষ্টি করতে হবে। এভাবে উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী তৈরির মধ্য দিয়ে সমৃদ্ধ কার্বন আঁধার সৃষ্টি, জীববৈচিত্র্য এবং প্রতিবেশ ও পরিবেশের উন্নতিসহ পর্যটনের সুযোগ সৃষ্টি হবে। একই সঙ্গে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক উন্নতিও ঘটবে।

কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন সরকার বলেন, সুন্দরবনের মতো ঐতিহ্যবাহী একটি বন দেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাওয়া খুবই দুঃখজনক। এটি এখন ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে বন বিভাগ।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় ৪৫ হাজার একর আয়তনের চকরিয়া সুন্দরবনকে ১৯০৩ সালে সংরক্ষিত বন ঘোষণা করেছিল তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার। ১৯২৯ সালের দিকে ২৬০টি ভূমিহীন পরিবারকে প্রায় ৪ হাজার একর জমি বরাদ্দ দিয়ে স্থানান্তর করা হয় সুন্দরবনে। তবুও ৭০ দশক পর্যন্ত বনটি টিকে ছিল স্বমহিমায়। ১৯৮৫ সালে সরকার চিংড়ি চাষ নীতিমালা প্রণয়ন করলে সর্বনাশ শুরু হয় এ বনের। ওই নীতিমালা অনুযায়ী, চিংড়ি চাষযোগ্য যে কোনো বনভূমি সরকার আগ্রহীদের লিজ দিতে পারবে। এর আলোকে বনের ১০ হাজার একর জমি লিজ দেওয়া হয় বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তিকে। এর আওতায় সরকার চকরিয়া সুন্দরবনের ১০ হাজার একর জায়গা মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়কে হস্তান্তর করে।

চকরিয়া সুন্দরবন ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, চকরিয়া সুন্দরবন খুলনা অঞ্চলের সুন্দরবনের চেয়েও পুরোনো। সরকারের চিংড়ি চাষের নীতিমালার মধ্য দিয়ে মূলত বন ধ্বংস শুরু হয়। এর পর লিজের নামে চিংড়িচাষিদের দেওয়া হয় বনের জমি। বাকিগুলো গেছে দখল-বেদখলে।

বন বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, চকরিয়ার প্যারাবনে চিংড়ি চাষের যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, সেটা বিজ্ঞানভিত্তিক ছিল না। তবে এখনও এ বন ফিরিয়ে আনা সম্ভব। বন বিভাগের সে জ্ঞান আছে। দরকার শুধু সদিচ্ছার।
মৎস্য বিভাগ সূত্র জানায়, মৎস্য বিভাগ ৫৮৭টি প্লট বরাদ্দ দিয়েছে। প্রতিটি প্লট ১০ একর, আর কিছু ১১ একর করে। বেড়িবাঁধ ও স্লুইসগেট ভেঙে যাওয়ার কারণে ওই এলাকায় এখন আশানুরূপ চিংড়ির উৎপাদন হচ্ছে না।