বাংলাদেশ-মিয়ানমার মধ্যকার সীমান্তের ঘুমধুমের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে হরদম পাচার হচ্ছে ইউরিয়া সার। এ নিয়ে দৈনিক গণসংযোগ পত্রিকায় বস্তুনিষ্ঠ ও তথ্যবহুল সংবাদ প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসে সীমান্ত এলাকার আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা।ঘুমধুমের বিভিন্ন পয়েন্টে টহল জোরদার করে তারা।নিয়মিত টহল কালে ৩৪ বিজিবি’র তুমব্রু বিওপি’র জোয়ানেরা আটক করেছে সার ভর্তি একটি ডাম্প ট্রাক।তাও রাতের আধারে।২৮ আগষ্ট দিবাগত রাত সাড়ে ৭ টার দিকে ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু পাড়াস্থ নব নির্মিতব্য ট্রানজিট ক্যাম্পের সামনে থেকে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সার বোঝাই ডাম্প ট্রাকটি আটক করেন তুমব্রু বিওপির বিজিবি’টহল দলের জোয়ানেরা।আটক সারের মালিক ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের বাইশফাঁড়ী এলাকার সাঈদী আলমের।সাঈদী আলম কৃষি অধিদপ্তর কর্তৃক নিয়োগকৃত ওয়ার্ড ভিত্তিক সাব ডিলার।সে দীর্ঘদিন ধরে সাব ডিলারের আড়ালে সার উত্তোলন করে মিয়ানমারে পাচার করে আসছিল।
জব্দ করা সার এ রিপোর্ট লেখাকালীন পর্যন্ত তুমব্রু বিজিবি বিওপিতে নিয়ে যান।গণনা পুর্বক বিস্তারিত জানানো হবে এবং পরবর্তী আইনানুগ প্রক্রিয়া শেষে উখিয়ার বালুখালী কাস্টমস শুল্ক গুদামে জমাদানের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে বিজিবি সুত্র নিশ্চিত করেন। এ প্রসঙ্গে জানতে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের ১,২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের দায়িত্ব প্রাপ্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো.কামাল উদ্দিন বলেন,সাব ডিলারের জন্য সার উত্তোলনের নির্ধারিত ঘুমধুম ইউনিয়নে বিসিআই ডিলার রয়েছে।সেখান থেকে সাব ডিলারগণ বরাদ্দকৃত সার উত্তোলন করবেন।
বিসিআই ডিলারে সার মজুদ থাকা স্বত্বেও সাব ডিলার সাঈদী আলম উখিয়া থেকে কেন সার আনতে যাবে?।এটা বেআইনী।স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে,বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ঘুমধুম পয়েন্ট দিয়ে উভয় মুখী পাচারযজ্ঞ নিয়ন্ত্রণ করছে চোরাকারবারিরা।
গত ৫ আগষ্টের পর রাষ্ট্র পরিচালনায় নিরপেক্ষ অন্তর্বতীকালীন সরকার।এখন কি পাচারযজ্ঞ বন্ধ হবে?এমন প্রশ্ন সীমান্তের দেশপ্রেমিক জনতার।সাম্প্রতিক সময়ে নাইক্ষ্যংছড়ি ও ঘুমধুম সীমান্তে একাধিক বিপুল পরিমাণের আইস ও ইয়াবার চালান,সারের চালান জব্দ করেছে বিজিবি।
সম্প্রতি ঘুমধুম সীমান্তের পাচারকারী সিন্ডিকেটের সেকেন্ড ইন কমান্ড আবু বক্কর আরো ৪জন সহযোগী নিয়ে ইয়াবা সহ ইয়াবা নিয়ে গ্রেফতার হলেও সিন্ডিকেটের অপরাপর গডফাদাররা বরাবরই অধরাই থেকে যাছে।আবু বক্কর ১৩ আগষ্ট রাত ৮ টার দিকে ৩০ বিজিবি’র রামুর মরিচ্যা চেকপোস্টে তারা গ্রেফতার হন।আবু বক্কর ঘুমধুম সীমান্তের চিহ্নিত চোরাকারবারি।তাদের চোরাই কারবারের বিশাল সিন্ডিকেট রয়েছে।কালো টাকার জোরে বরাবরই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যেতো।আবু বক্কর সহ তাদের সিন্ডিকেটের অপরাপর সদস্যরা মিয়ানমারের কাটা তাঁর মাড়িয়ে মিয়ানমারে জ্বালানী তেল সহ প্রয়োজনীয় সব পণ্যসামগ্রী পাচারের ভিডিও চিত্র এ প্রতিবেদকের সংরক্ষণে রয়েছে।তাদের পাচার যজ্ঞ নিয়ে জাতীয়,আঞ্চলিক ও স্থানীয় প্রিন্ট ও অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে বস্তুনিষ্ঠ ও তথ্যবহুল সংবাদ প্রচার হয়।ঘুমধুম সীমান্তে যতসব চোরাকারবারি সিন্ডিকেট রয়েছে,তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী বিনিয়োগ রয়েছে আবু বক্করের।তাদের সিন্ডিকেটের সেকেন্ড ইন কমান্ড আবু বক্কর।জকির-আবু বক্করদের নিয়ন্ত্রিত সিন্ডিকেট উভয়মুখী পাচারে জড়িত।জড়িত ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তের প্রায় সব দোকান।আর পাচার নির্বিঘ্ন করতে সীমান্ত এলাকায় নতুন করে দিন-দিন গজে উঠছে নতুন-নতুন দোকান।সীমান্ত লাগোয়া দক্ষিণ ঘুমধুমের নোয়াপাড়া, মন্ডল পাড়া,মধ্যম পাড়া,পুর্বপাড়া,জলপাইতলী,খিজারীঘোনা,তেতুলগাছতলা লতিফিয়া মসজিদ সংলগ্ন পাড়া,তুমব্রু পশ্চিমকুল,পাহাড়পাড়া,বাজার পাড়া,ফকিরা ঘোনা,কোনার পাড়া,উত্তর পাড়া,ভাজাবনিয়া,
চাকমা পাড়া,বাইশফাঁড়ীর প্রায় প্রতি পরিবারের কোন না সদস্য মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্ত কেন্দ্রিক উভয়নুখী পাচারে জড়িত।এমন কোন দিন বা রাত নেই মিয়ানমারে সার,তেল,চাল,ডাল সহ নিত্য প্রয়োজনীয় সব পণ্য পাচার হচ্ছেনা।
প্রতিদিন রাতের আধারে মিয়ানমারে পাচার করছে কোটি টাকার পণ্য।সবচেয়ে পাচারের নিরাপদ রুট ঘুমধুম সীমান্ত।দিবারাত্রি কোটি-কোটি টাকার নানা পণ্য সামগ্রী পাচার হয়ে গেলেও সীমান্তের রক্ষী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিচ্ছে চোরাকারবারিরা। তবে অসমর্থিত সুত্রে জানা যায়,সব কিছুতেই টাকার জোরে নির্বিঘ্ন পাচারযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে চোরাকারবারিরা।প্রতিরাতে ঘুমধুম সীমান্তে পাচার করা বিভিন্ন পণ্যের শ্রমিক পিছু টাকা উত্তোলন করা হয়।প্রতিরাতে টাকা উঠে ২ থেকে তিন লাখ টাকা।ওই টাকার অংশ আওয়ামীলীগ ও অংগ-সহযোগী সংগঠনের নেতা পরিচয়ধারী ব্যক্তি,জনপ্রতিনিধি,স্থানীয় কতিপয় দালাল চক্র সহ বিভিন্ন জনের পকেটে পৌছে যায়।ফলে চোরাকারবারিদের কালো টাকার জোরে ঘুমধুম সীমান্ত যেন তাদের অবাধ বিচরণের অভয়ারণ্যে পরিণত করেছে। অরক্ষিত হয়ে পড়েছে সীমান্ত।প্রতি দিবারাত্রি পাচারের ফলে চোরাকারবারি ও সুবিধাভোগীরা লাভবান হলেও খেসারত দিতে হচ্ছে স্থানীয় ভোক্তা-সাধারণদের।তাদের চড়া দামে নিত্যপণ্য সামগ্রী ক্রয় করতে হচ্ছে।আর উখিয়া ও কুতুপালংয়ের কিছু দোকানী মিয়ানমারে পাচারের সাথে প্রতেক্ষ্যভাবে জড়িত।সুবিধাভোগীদের আস্কারায় প্রতি দিবারাত্রি ওপারে বানের পানির মত পাচার হচ্ছে সরকারের ভর্তুকি দেয়া জ্বালানী তেল অকটেন,ইউরিয়া সার,দামী মোবাইল সেট,সিম,মোবাইল সামগ্রী,ব্লেড,ইউরিয়া সার,ভোজ্যতেল,চাল,ডাল,শাকসবজি,গাছ,বাঁশ,সাবান,মরিচ,হলুদ,বিড়ি সহ নানা খাদ্যপণ্য সামগ্রী।বিনিময়ে ওপার থেকে বানের পানির মত নিয়ে আসছে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া গরু-মহিষ,ছাগল,ইয়াবা,স্বর্ণের বার,তরল মাদক,কাপড়চোপড়, সুপারী,খাদ্যপণ্য,রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করা সহ নিষিদ্ধ সামগ্রী। এসব পাচার যজ্ঞে জড়িত রয়েছে শক্তিশালী পাচারকারী সিন্ডিকেট।চিহ্নিত এই সিন্ডিকেটের প্রধান হিসেবে কাজ করছেন ইয়াবা নিয়ে ২০২১ সালে কক্সবাজারে র্যাব-১৫’র হাতে গ্রেফতার হওয়া কথিত বিএনপি নেতা,ঘুমধুম ইউপির ১নং ওয়ার্ডের তুমব্রু পশ্চিমকুল তেঁতুল গাছতলা লতিফিয়া মসজিদ সংলগ্ন ছৈয়দ আলম-সোনা মেহের দম্পতির ছেলে জকির আহমদ।জকিরের নিয়ন্ত্রণে ঘুমধুমের সীমান্ত।তার সিন্ডিকেটে রয়েছে ডাম্প ট্রাক, সিএনজি,টমটম চালক,আওয়ামীলীগ ঘরানার দায়িত্বশীল কয়েক নেতা,মুক্তিযুদ্ধার নাতি,স্থানীয় যুবদলের কয়েক নেতা,তুমব্রু সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ করছেন জনৈক মুফিজ ওবাইদুল,পশিচমকুলের রুহুল আমিন,তুমব্রুর তারেক,আবুল হাসেম,পাহাড় পাড়ার বার্মাইয়া আবুল হাসেম,বার্মাইয়া বাইট্রা শাহ আলম,হামিদুল,ইমাম হোসেন,খিজারী ঘোনার সাইফুদ্দিন ও আরাফাত।পুরো ঘুমধুম সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমারে এপার থেকে পাচার এবং ওপার থেকে এপারে যতসব পাচার যজ্ঞ চলে,তা সম্পুর্ন নিয়ন্ত্রণ করেন চোরাকারবার সিন্ডিকেটের প্রধান জকির আহমদ।এই সিন্ডিকেটের পাচারের উদ্দেশ্যে মজুত করে রাখা একাধিকবার পণ্য সামগ্রী জকির ও তার ভাইয়ের বাড়ি থেকে উদ্ধার করে স্থানীয় রক্ষী বাহিনী।কিন্তু পাচারকারিরা বরাবরই অধরাই থেকে যায়।ফলে চোরাই মালামালের পাচার যজ্ঞ দ্ধিগুণ উৎসাহে চলমান রেখেছে চোরাকারবারিরা।