বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সব সময় “ডাবল স্ট্যান্ডার্ড পার্টি”। কারণ, তারা মুখে বলে একটা, কাজ করে আরেকটা।’
আজ রোববার দুপুরে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।
এর আগে বিএনপি লিয়াজোঁ কমিটি ও ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের অন্য নেতারা। বৈঠকটি বেলা সোয়া ১১টার দিকে শুরু হয়ে ১টার দিকে শেষ হয়।
বৈঠক শেষে ১২ দলীয় জোটের নেতাদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন মির্জা ফখরুল। এ সময় এক সাংবাদিক বিএনপির মহাসচিবকে প্রশ্ন করেন, রাজশাহীতে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় দলটির নেতা-কর্মীরা যাতে নির্বিঘ্নে যেতে পারে, সে জন্য সাতটি বিশেষ ট্রেন রাখা হয়েছে। অন্যদিকে বিএনপির কর্মসূচি পালনে বৈপরীত্য দেখা যাচ্ছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় শান্তিপূর্ণভাবে আপনাদের (বিএনপিকে) কর্মসূচি পালন করতে দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে মির্জা ফখরুলের প্রতিক্রিয়া কী?
জবাবে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আমাদের প্রোগ্রামের সময় তিন দিন আগে থেকে যানবাহন বন্ধ করে দেয়। তিন দিন আগে পুলিশকে নামিয়ে দিয়ে চেকপোস্ট বসায়। মোবাইল ফোন পর্যন্ত তারা চেক করতে থাকে। ঢাকার সমাবেশের আগে তারা ১৫ দিনের বিশেষ অভিযান চালিয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে তারা হাজার হাজার লোককে ধরে নিয়ে গেছে। এটা হচ্ছে আওয়ামী লীগের কৌশল। যেকোনো মূল্যে হোক বিরোধী দলকে তারা কর্মসূচি করতে দেবে না। অন্যদিকে ভিন্ন মত সহ্য করবে না আর তারা তাদেরটা করতেই থাকবে। সে ক্ষেত্রে তারা রাষ্ট্রের সব যন্ত্রকে ব্যবহার করবে।’
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের চরিত্র ও কর্মকাণ্ড জনগণের কাছে স্পষ্টভাবে এসে গেছে। তারা এ দেশে একদলীয় শাসনব্যবস্থা চাপিয়ে দিচ্ছে। আওয়ামী লীগ এই দেশের সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা করেছে, তারা এ দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের যে একটা সমাজ, সেটাকে তারা ধ্বংস করে দিয়েছে।
গোটা জাতিকে একটা অশান্তিকর অবস্থার দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এ দেশের মানুষ কেউ জানে না, কীভাবে নির্বাচন হবে। এই দেশের মানুষ জানে না যে সে তার ভোটটা দিতে পারবে কি পারবে না। কারণ, তারা (ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ) অতীতে যে কাজগুলো করেছে, এতে মানুষ নিশ্চিত হয়ে গেছে এই সরকারের অধীনে কোন নির্বাচন হতে পারে না। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন কোনো দিন গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয় না। সুষ্ঠু হয় না।’
নতুন দল ও জোট যুক্ত হওয়ার কারণে আন্দোলনে ভিন্নমাত্রা পেয়েছে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অবশ্যই। মানুষের মধ্যে একটা আস্থা সৃষ্টি হয়েছে। অন্যান্য দল এই দাবির সঙ্গে একমত হয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য তাঁরা লড়াই করছেন, সংগ্রাম করছেন, এটা নিঃসন্দেহে অনেক বড় মাত্রা যোগ করেছে এবং মানুষকে আশ্বস্ত করছে।’
বিএনপির পদযাত্রাকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মরণযাত্রা বলেছেন, এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তাঁর এমন মন্তব্যে বোঝা যায়, কিশোর কুমারের একটা গান আছে না, মরণযাত্রা নিয়ে, ওইটা ওনার মনে পড়েছে। উনি উনার নিজের চিন্তা করছেন কি না জানি না। তবে আমরা এটুকু বলতে পারি, পদযাত্রার মধ্য দিয়ে একটা নতুন মাত্রা সৃষ্টি হলো।’
এর আগে ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা আমাদের চলমান যে আন্দোলন, সে বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেছি। দেশের বর্তমান পরিপ্রেক্ষিত নিয়ে আলোচনা করেছি। এবং ভবিষ্যতের কর্মসূচি কি হওয়া উচিত এই আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য, আর কি ধরনের কর্মসূচি নেওয়া যেতে পারে, সেই বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেছি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই ফ্যাসিবাদী অগণতান্ত্রিক সরকারের পতনের লক্ষ্যে আমরা যুগপৎ আন্দোলনের মধ্য দিয়েই জনগণকে সম্পৃক্ত করছি। সামনের দিকে আন্দোলনকে আরও বেগবান করে ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনা গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনা এবং গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করা এবং খালেদা জিয়াসহ সব কারাবন্দীর মুক্তির দাবিতে আমরা একমত হয়েছি।
‘আর ১২ দলীয় জোটের পক্ষে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, আলোচনা করে একটা স্থির সিদ্ধান্তের দিকে আমরা অগ্রসর হচ্ছি। আমি সুনির্দিষ্টভাবে সেই সিদ্ধান্তের কথা এখনই বলতে চাই না। তবে এটুকু বলতে চাই, সারা দেশে এই ফ্যাসিস্ট সরকার বিরুদ্ধে সব গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করায় মূল লক্ষ্য।’
মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, ‘আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে নতুন যে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে, সেদিন আমরা ঘোষণা করতে চাই আরও বৃহত্তর কর্মসূচির। সেই কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।’
১২ দলীয় জোটের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে মির্জা ফখরুলের সঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, বেগম সেলিমা রহমান, দলের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মাদ শাহজাহান ও আবদুল আউয়াল মিন্টু উপস্থিত ছিলেন।
আর ১২ দলীয় জোটের নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক, বাংলাদেশ লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বাংলাদেশ জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির শাহাদাত হোসেন সেলিম, এনডিপির ক্বারী মো. আবু তাহের, জমিয়তে ওলামায় ইসলামের মুফতি গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, জাগপার রাশেদ প্রধান, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা আবদুল করিম, বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টির আবুল কাশেম ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগের তফাজ্জল হোসেন।