০৮:২৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হয়রানীমুলক মিথ্যা মামলা

মিথ্যা মামলা দিয়ে প্রতিপক্ষকে হয়রানি করা আমাদের সমাজে নতুন কিছু নয়। থানা কিংবা আদালতে মিথ্যা মামলা দায়ের করার বিষয়টি বর্তমানে খুব আলোচিত, একই সাথে সমালোচিতও বটে। মিথ্যা মামলা করার প্রবণতা ইদানীং বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে হাজারো মিথ্যা মামলার ভিড়ে কোনটি আসল বা সত্য মামলা সেটি বের করাও যেন বর্তমানে কঠিন এক চ্যালেঞ্জ।

তবে অধিকাংশ মামলার ঘটনা কিন্তু পুরোপুরি মিথ্যা নয়। বেশিরভাগ সময় দেখা যায় মামলার ঘটনা সত্য। কিন্তু আসামি করার ক্ষেত্রে বাদীপক্ষ অনেক সময় নির্দোষ,নিরপরাধ ব্যক্তিকেও আসামি করেন। এটি অবশ্যই গর্হিত, নিন্দনীয়, বেআইনি। অপরাধ করে একজন কিন্তু আসামি করা হয় পরিবারের সবাইকে। পরিবারের সবচেয়ে স্মার্ট ও দায়িত্বশীল সদস্য ঘটনায় জড়িত না থাকলেও তাকে মিথ্যা মামলায় জড়ানোর জোর তৎপরতা অনেকের মাঝে লক্ষ্য করা যায়।
মামলা করার সময় অনেক মামলাবাজ ব্যক্তি টাকা পয়সা, স্বর্ণ, মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়ার গায়েবি, ভুতুড়ে, আজগুবি অভিযোগ করেন। তথাকথিত এ অভিযোগগুলো সেকেলে ও ডাহা মিথ্যা। আদালতের ভাষায় এগুলো ornamental allegations. আবার প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে অনেকে মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলাও করেন। চাঁদাবাজির ঘটনা হয় সাধারণত ব্যবসায়িক অফিস,কনস্ট্রাকশন ফার্ম,বাড়ি বা বহুতল ভবন নির্মাণের সময়। কিন্তু ইদানীং ধান ক্ষেত,পাট ক্ষেত,সবজি ক্ষেতেও চাঁদাবাজির মিথ্যা মামলা হচ্ছে। জমিসংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে চাঁদাবাজির অধিকাংশ মামলাই মিথ্যা ও অসৎ উদ্দেশ্য প্রণোদিত।
সম্প্রতি খুরুস্কুলের নিরীহ কয়েকটি সংখ্যালঘু পরিবারের বিরুদ্ধে প্রভাবশালী সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের এক সদস্য চাঁদাবাজির মামলা করেন। সম্পুর্ন জমিসংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে। মামলাটি হয় বেশ কয়েকমাস পূর্বে। সবাই বুঝতে পারল মামলাটি মিথ্যা। কিন্তু তদন্তকারী কর্মকর্তা নাছোড়বান্দা! তাকে কোনভাবেই বুঝানো যাইনি মামলাটি মিথ্যা। ফলে নিরীহ,দরিদ্র,সংখ্যালঘু সদস্যদের বিরুদ্ধে তিনি চাঁদাবাজির রিপোর্ট দিলেন। হতদরিদ্র, নিঃস্ব সংখ্যালঘুদের এখন এ মামলার ঘানি টানতে হবে বছরের পর বছর।

কথায় বলে,সংসার সুখী হয় রমনীর গুণে। Home is not home without mom কিন্তু প্রযুক্তি ও আধুনিকায়নের এ যুগে নারীরা আজও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই লাঞ্ছিত,নিপীড়িত,অরক্ষিত। নারী দেয়ালে পিঠ ঠেকে না গেলে কখনো স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে মামলা করে না। কিন্তু বেশ কিছু মিথ্যা মামলার কারণে নারী নির্যাতন কিংবা যৌতুকের বাস্তব মামলাগুলোও আজ প্রশ্নবিদ্ধ।
অনেকসময় দেখা যায় ছেলেমেয়ের মধ্যে প্রেম ভালবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠে। জৈবিক তাড়নায় একসময় ভালবাসার সম্পর্ক রূপ নেয় শারিরীক সম্পর্কে। কিন্তু কোন কারণে সম্পর্কে ব্রেকআপ হলে কিছু ক্ষেত্রে মেয়ে বা মেয়ের অভিভাবক এসে ছেলে,ছেলের ভাইবোন ও পিতামাতার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপহরণ,ধর্ষণের মামলা দায়ের করেন। অনেকে দায়ের করেন দন্ডবিধির ৪৯৩ ধারার মামলা। এটি কোনভাবেই কাম্য নয়।

বিবাহিত স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রী কর্তৃক ধর্ষণের মামলাও আদালতে বিরল নয়। এক্ষেত্রে বর্তমান মাননীয় নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনালের অনড় অবস্থান বেশ প্রশংসনীয় হয়েছিল। মাননীয় ট্রাইব্যুনাল স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা ধর্ষণের অভিযোগকারি স্ত্রীকে কারাদন্ড প্রদান করে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এ রায়ের ফলে ভবিষ্যতে মিথ্যা মামলা করার ক্ষেত্রে অনেকেই নিরুৎসাহিত হবেন — এটি নিঃসন্দেহে বলা যায়।

ট্যাগ :
পাঠকপ্রিয়

নাগরিক বিবেক কক্সবাজার (নাবিক) আয়োজিত সীরাত কুইজ ফাইনাল পর্ব ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান সম্পন্ন

হয়রানীমুলক মিথ্যা মামলা

প্রকাশিত সময় : ০৯:৪৮:১২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১ মার্চ ২০২৪

মিথ্যা মামলা দিয়ে প্রতিপক্ষকে হয়রানি করা আমাদের সমাজে নতুন কিছু নয়। থানা কিংবা আদালতে মিথ্যা মামলা দায়ের করার বিষয়টি বর্তমানে খুব আলোচিত, একই সাথে সমালোচিতও বটে। মিথ্যা মামলা করার প্রবণতা ইদানীং বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে হাজারো মিথ্যা মামলার ভিড়ে কোনটি আসল বা সত্য মামলা সেটি বের করাও যেন বর্তমানে কঠিন এক চ্যালেঞ্জ।

তবে অধিকাংশ মামলার ঘটনা কিন্তু পুরোপুরি মিথ্যা নয়। বেশিরভাগ সময় দেখা যায় মামলার ঘটনা সত্য। কিন্তু আসামি করার ক্ষেত্রে বাদীপক্ষ অনেক সময় নির্দোষ,নিরপরাধ ব্যক্তিকেও আসামি করেন। এটি অবশ্যই গর্হিত, নিন্দনীয়, বেআইনি। অপরাধ করে একজন কিন্তু আসামি করা হয় পরিবারের সবাইকে। পরিবারের সবচেয়ে স্মার্ট ও দায়িত্বশীল সদস্য ঘটনায় জড়িত না থাকলেও তাকে মিথ্যা মামলায় জড়ানোর জোর তৎপরতা অনেকের মাঝে লক্ষ্য করা যায়।
মামলা করার সময় অনেক মামলাবাজ ব্যক্তি টাকা পয়সা, স্বর্ণ, মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়ার গায়েবি, ভুতুড়ে, আজগুবি অভিযোগ করেন। তথাকথিত এ অভিযোগগুলো সেকেলে ও ডাহা মিথ্যা। আদালতের ভাষায় এগুলো ornamental allegations. আবার প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে অনেকে মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলাও করেন। চাঁদাবাজির ঘটনা হয় সাধারণত ব্যবসায়িক অফিস,কনস্ট্রাকশন ফার্ম,বাড়ি বা বহুতল ভবন নির্মাণের সময়। কিন্তু ইদানীং ধান ক্ষেত,পাট ক্ষেত,সবজি ক্ষেতেও চাঁদাবাজির মিথ্যা মামলা হচ্ছে। জমিসংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে চাঁদাবাজির অধিকাংশ মামলাই মিথ্যা ও অসৎ উদ্দেশ্য প্রণোদিত।
সম্প্রতি খুরুস্কুলের নিরীহ কয়েকটি সংখ্যালঘু পরিবারের বিরুদ্ধে প্রভাবশালী সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের এক সদস্য চাঁদাবাজির মামলা করেন। সম্পুর্ন জমিসংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে। মামলাটি হয় বেশ কয়েকমাস পূর্বে। সবাই বুঝতে পারল মামলাটি মিথ্যা। কিন্তু তদন্তকারী কর্মকর্তা নাছোড়বান্দা! তাকে কোনভাবেই বুঝানো যাইনি মামলাটি মিথ্যা। ফলে নিরীহ,দরিদ্র,সংখ্যালঘু সদস্যদের বিরুদ্ধে তিনি চাঁদাবাজির রিপোর্ট দিলেন। হতদরিদ্র, নিঃস্ব সংখ্যালঘুদের এখন এ মামলার ঘানি টানতে হবে বছরের পর বছর।

কথায় বলে,সংসার সুখী হয় রমনীর গুণে। Home is not home without mom কিন্তু প্রযুক্তি ও আধুনিকায়নের এ যুগে নারীরা আজও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই লাঞ্ছিত,নিপীড়িত,অরক্ষিত। নারী দেয়ালে পিঠ ঠেকে না গেলে কখনো স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে মামলা করে না। কিন্তু বেশ কিছু মিথ্যা মামলার কারণে নারী নির্যাতন কিংবা যৌতুকের বাস্তব মামলাগুলোও আজ প্রশ্নবিদ্ধ।
অনেকসময় দেখা যায় ছেলেমেয়ের মধ্যে প্রেম ভালবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠে। জৈবিক তাড়নায় একসময় ভালবাসার সম্পর্ক রূপ নেয় শারিরীক সম্পর্কে। কিন্তু কোন কারণে সম্পর্কে ব্রেকআপ হলে কিছু ক্ষেত্রে মেয়ে বা মেয়ের অভিভাবক এসে ছেলে,ছেলের ভাইবোন ও পিতামাতার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপহরণ,ধর্ষণের মামলা দায়ের করেন। অনেকে দায়ের করেন দন্ডবিধির ৪৯৩ ধারার মামলা। এটি কোনভাবেই কাম্য নয়।

বিবাহিত স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রী কর্তৃক ধর্ষণের মামলাও আদালতে বিরল নয়। এক্ষেত্রে বর্তমান মাননীয় নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনালের অনড় অবস্থান বেশ প্রশংসনীয় হয়েছিল। মাননীয় ট্রাইব্যুনাল স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা ধর্ষণের অভিযোগকারি স্ত্রীকে কারাদন্ড প্রদান করে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এ রায়ের ফলে ভবিষ্যতে মিথ্যা মামলা করার ক্ষেত্রে অনেকেই নিরুৎসাহিত হবেন — এটি নিঃসন্দেহে বলা যায়।