১০:২৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জরিমানা কি কেবল প্রহসন

হোটেল, রেস্টুরেন্ট, বাজার ব্যবস্থা তদারকির জন্য সরকারের বেশ কিছু সংস্থা রয়েছে। কালেভদ্রে সে সব সংস্থা বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁ,বাজারে অভিযান পরিচালনা করেন। পঁচা বাসি,অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার বিক্রি,ওজনে কম,খাদ্যে ভেজাল,বেশি মুল্যে পণ্য বিক্রির দায়ে হোটেল,রেস্তোরাঁ ও ব্যবসায়ীদের কদাচিৎ জরিমানা করার বিষয়টিও নতুন কিছু নয়। কিন্তু জরিমানার দন্ডাদেশটি অপরাধীর উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করে কিনা? বিচারের নামে এটি কোন এক প্রহসন কিনা? বিষয়টি নিয়ে সাধারন মানুষ বেশ অন্ধকারে রয়েছেই বলা যায়।

শহরে,নগরে,গ্রামে,বাজারে রয়েছে হাজারো হোটেল। এসব হোটেলে নেহায়েত বাধ্য হয়ে শতশত মানুষ প্রতিদিন আহার করেন। ভূরিভোজন করেন। অবশ্যয় অর্থের বিনিময়ে। কিন্তু কতিপয় ব্যতিক্রম ছাড়া শহরে মানসম্মত,পরিচ্ছন্ন হোটেল,রেস্তোরাঁ নেই বললেই চলে। জনস্বাস্থ্যের প্রতি নজর নেই অধিকাংশ হোটেল, রেস্তোরাঁ মালিক-ব্যবসায়ীদের। সবাই যেন টাকা রোজগার ও মুনাফায় ব্যস্ত। এ খাতে রয়েছে নজিরবিহীন বিশৃঙ্খল পরিবেশ। তা দেখে মনেই হয় না দেশে কিংবা শহরে হোটেল রেস্তোরাঁ নিয়ন্ত্রণকারী কোন কর্তৃপক্ষ আছেন।

এর ফলে হোটেল রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীদের অবস্থা অনেকটা পোয়াবারো! গুটিকয়েক ব্যতিক্রম ছাড়া বেশিরভাগ হোটেল রেস্তোরাঁ চলছে অনেকটা নিজস্ব ঢংয়ে। স্বেচ্ছাচারী ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে। এ কারনে অধিকাংশ হোটেলের পঁচা বাসি,নিম্নমানের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার খেয়ে অনেকে আক্রান্ত হচ্ছেন দুরারোগ্য ব্যাধিতে। আলসার,ক্যান্সার সহ প্রাণঘাতী রোগে। তাও একেবারে নিজের অজান্তে।
অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পচা-বাসি, নিম্নমানের খাবার বিক্রি করে,ফলমূলে মারাত্মক ফরমালিন বিষ প্রয়োগ করে অসৎ ব্যবসায়ীগন মানুষের মহামুল্যবান জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। এভাবে আর চলতে দেয়া যায়না। কর্তৃপক্ষ মাঝেমধ্যে অভিযান পরিচালনা করেন। লোকদেখানো দশহাজার,বিশহাজার বা আরও বেশি টাকা জরিমানা করেন। কেবল জরিমানা করে অপরাধের মূলোৎপাটন সম্ভব নয়। লঘু পাপে গুরু দন্ডের বিষয়টি নিয়ে সমাজে অনেক মিথ প্রচলিত। কিন্তু আমরা পরিভ্রমন করছি ইতিহাসের উল্টোপথে। ফলে গুরু পাপে লঘু বা নামসর্বস্ব দন্ড দিয়ে আমরা যেন বাহবা কুড়াতে ব্যস্ত! খাদ্যে ভেজাল মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। তাই শুধু জরিমানা করে মানুষরূপী পশুদের নিবৃত্ত করা সহজ নয়। জনস্বাস্থ্য নিয়ে কোন আপস নয়। অপরাধ নিয়ন্ত্রণের একমাত্র উপায় হচ্ছে এসব অতি লোভী, মুনাফাখোর হোটেল-রেস্তোরাঁ,অসাধু প্রতিষ্ঠান স্হায়ীভাবে বন্ধ করে দিতে হবে। তাদের লাইসেন্স বাতিল করতে হবে।

প্রয়োজনে অসৎ ও অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ১৯৭৪ ইং সালের Special Powers Act এ মামলা দায়ের করতে হবে। মজুতদারি ও খাদ্যে ভেজালের জন্য এ আইনে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড কিংবা মৃত্যুদন্ডের বিধান আছে। জরিমানা কেবল আইওয়াশ। এটি কোন স্হায়ী সমাধান নয়। জনগনের জনগণের সেন্টিমেন্টকে সাময়িক প্রশমনের জন্য জরিমানা করা হয়। যা কোনভাবে কাম্য নয়।

লেখক: সাজ্জাদুল করিম
এডভোকেট
জেলা ও দায়রা জজ আদালত, কক্সবাজার।

ট্যাগ :
পাঠকপ্রিয়

আইন শৃঙ্খলা, দ্রব্যমুল্য, সংস্কার বিষয়ে সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ- ধর্ম উপদেষ্টা

জরিমানা কি কেবল প্রহসন

প্রকাশিত সময় : ০৬:৫০:১৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১১ মার্চ ২০২৪

হোটেল, রেস্টুরেন্ট, বাজার ব্যবস্থা তদারকির জন্য সরকারের বেশ কিছু সংস্থা রয়েছে। কালেভদ্রে সে সব সংস্থা বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁ,বাজারে অভিযান পরিচালনা করেন। পঁচা বাসি,অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার বিক্রি,ওজনে কম,খাদ্যে ভেজাল,বেশি মুল্যে পণ্য বিক্রির দায়ে হোটেল,রেস্তোরাঁ ও ব্যবসায়ীদের কদাচিৎ জরিমানা করার বিষয়টিও নতুন কিছু নয়। কিন্তু জরিমানার দন্ডাদেশটি অপরাধীর উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করে কিনা? বিচারের নামে এটি কোন এক প্রহসন কিনা? বিষয়টি নিয়ে সাধারন মানুষ বেশ অন্ধকারে রয়েছেই বলা যায়।

শহরে,নগরে,গ্রামে,বাজারে রয়েছে হাজারো হোটেল। এসব হোটেলে নেহায়েত বাধ্য হয়ে শতশত মানুষ প্রতিদিন আহার করেন। ভূরিভোজন করেন। অবশ্যয় অর্থের বিনিময়ে। কিন্তু কতিপয় ব্যতিক্রম ছাড়া শহরে মানসম্মত,পরিচ্ছন্ন হোটেল,রেস্তোরাঁ নেই বললেই চলে। জনস্বাস্থ্যের প্রতি নজর নেই অধিকাংশ হোটেল, রেস্তোরাঁ মালিক-ব্যবসায়ীদের। সবাই যেন টাকা রোজগার ও মুনাফায় ব্যস্ত। এ খাতে রয়েছে নজিরবিহীন বিশৃঙ্খল পরিবেশ। তা দেখে মনেই হয় না দেশে কিংবা শহরে হোটেল রেস্তোরাঁ নিয়ন্ত্রণকারী কোন কর্তৃপক্ষ আছেন।

এর ফলে হোটেল রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীদের অবস্থা অনেকটা পোয়াবারো! গুটিকয়েক ব্যতিক্রম ছাড়া বেশিরভাগ হোটেল রেস্তোরাঁ চলছে অনেকটা নিজস্ব ঢংয়ে। স্বেচ্ছাচারী ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে। এ কারনে অধিকাংশ হোটেলের পঁচা বাসি,নিম্নমানের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার খেয়ে অনেকে আক্রান্ত হচ্ছেন দুরারোগ্য ব্যাধিতে। আলসার,ক্যান্সার সহ প্রাণঘাতী রোগে। তাও একেবারে নিজের অজান্তে।
অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পচা-বাসি, নিম্নমানের খাবার বিক্রি করে,ফলমূলে মারাত্মক ফরমালিন বিষ প্রয়োগ করে অসৎ ব্যবসায়ীগন মানুষের মহামুল্যবান জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। এভাবে আর চলতে দেয়া যায়না। কর্তৃপক্ষ মাঝেমধ্যে অভিযান পরিচালনা করেন। লোকদেখানো দশহাজার,বিশহাজার বা আরও বেশি টাকা জরিমানা করেন। কেবল জরিমানা করে অপরাধের মূলোৎপাটন সম্ভব নয়। লঘু পাপে গুরু দন্ডের বিষয়টি নিয়ে সমাজে অনেক মিথ প্রচলিত। কিন্তু আমরা পরিভ্রমন করছি ইতিহাসের উল্টোপথে। ফলে গুরু পাপে লঘু বা নামসর্বস্ব দন্ড দিয়ে আমরা যেন বাহবা কুড়াতে ব্যস্ত! খাদ্যে ভেজাল মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। তাই শুধু জরিমানা করে মানুষরূপী পশুদের নিবৃত্ত করা সহজ নয়। জনস্বাস্থ্য নিয়ে কোন আপস নয়। অপরাধ নিয়ন্ত্রণের একমাত্র উপায় হচ্ছে এসব অতি লোভী, মুনাফাখোর হোটেল-রেস্তোরাঁ,অসাধু প্রতিষ্ঠান স্হায়ীভাবে বন্ধ করে দিতে হবে। তাদের লাইসেন্স বাতিল করতে হবে।

প্রয়োজনে অসৎ ও অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ১৯৭৪ ইং সালের Special Powers Act এ মামলা দায়ের করতে হবে। মজুতদারি ও খাদ্যে ভেজালের জন্য এ আইনে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড কিংবা মৃত্যুদন্ডের বিধান আছে। জরিমানা কেবল আইওয়াশ। এটি কোন স্হায়ী সমাধান নয়। জনগনের জনগণের সেন্টিমেন্টকে সাময়িক প্রশমনের জন্য জরিমানা করা হয়। যা কোনভাবে কাম্য নয়।

লেখক: সাজ্জাদুল করিম
এডভোকেট
জেলা ও দায়রা জজ আদালত, কক্সবাজার।