মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের জেলা শহর মংডু টাউনশিপের কাছাকাছি কয়েকটি গ্রামে সোমবার রাতে ব্যাপক গোলাগুলি ও মর্টার শেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তিন দিন ধরে সরকারি বাহিনীর স্থাপনার ওপর হামলা বাড়িয়েছে দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)। যুদ্ধে টিকতে না পেরে সরকারি বাহিনীর কেউ কেউ মংডুর পেছনে থাকা কালাদান পাহাড়ে আশ্রয় নিচ্ছেন। সেখানেও হামলা চালাচ্ছে আরাকান আর্মি।
গতকাল দুপুর থেকে রাত আটটা পর্যন্ত তিন দফায় মিয়ানমার সীমান্ত পুলিশের (বিজিপি) ১৭৯ জন বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির জামছড়ি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ পালিয়ে এসেছেন। তাঁদের সবাইকে নিরস্ত্র করে হেফাজতে নিয়েছে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। কালাদান পাহাড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আরও সরকারি বাহিনীর লোকজন স্থলপথে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১৭৯ জন বিজিপি সদস্যকে নিরস্ত্র করে শূন্যরেখার একটি চা–বাগানে রাখা হয়েছে। সেখানে কয়েকজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সবাইকে সেখান থেকে কোথায় সরিয়ে নেওয়া হবে, এ বিষয়ে বিজিবিসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে।
বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম বলেন, মিয়ানমারে চলমান সংঘর্ষের জেরে নাইক্ষ্যংছড়ির ১১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের দায়িত্বপূর্ণ সীমান্ত এলাকা দিয়ে এখন পর্যন্ত নতুন করে ১৭৯ বিজিপি সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন।
গত ২ ফেব্রুয়ারি থেকে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমারের বিজিপির সংঘর্ষ শুরু হয়। এর জেরে ৪ থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন বিজিপির ৩০২ জন সদস্যসহ ৩৩০ জন। ১৫ ফেব্রুয়ারি তাঁদের সবাইকে ফেরত পাঠানো হয়।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, টানা ১০-১২ দিন নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ওপারে গোলাগুলির শব্দ শুনতে পাননি এপারের লোকজন। তবে দুই দিন ধরে গোলাগুলির শব্দ কানে এলেও তা ছিল অনেক দূরে রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপের কাছে। গতকাল তিন দফায় ১৭৯ জন বিজিপি সদস্য নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসায় নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
টানা ১২ দিন ধরে মংডুর উত্তর ও দক্ষিণের কয়েকটি গ্রামে গুলি, শক্তিশালী গ্রেনেড-বোমা ও মর্টার শেলের বিস্ফোরণ ঘটছে। তাতে লন্ডভন্ড হয়ে পড়েছে মংডু টাউনশিপসহ উত্তর দিকের কুমিরখালী, বলিবাজার, নাকফুরা, নাইচাডং, কোয়াচিডং, কেয়ারিপ্রাং ও পেরাংপ্রুসহ কয়েকটি গ্রাম।
গতকাল টেকনাফ স্থলবন্দরে আমদানি পণ্য নিয়ে আসা মিয়ানমারের কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, জ্বালানি তেলের সংকটে ভুগছে সেখানকার সরকারি বাহিনী। এ কারণে বাহিনীর সদস্যরা গাড়ি নিয়ে নিয়মিত টহলে যেতে পারছেন না। আকাশ থেকেও আরাকান আর্মির অবস্থানে মর্টার শেল ও গ্রেনেড বোমা নিক্ষেপ কমিয়ে আনা হয়েছে। সঙ্গে ভোগাচ্ছে খাদ্যসংকট।
টেকনাফের হ্নীলা ইউপি চেয়ারম্যান রাশেদ মোহাম্মদ আলী বলেন, কয়েক দিন ধরে মংডু টাউনশিপের চারদিক ঘিরে সরকারি অবস্থানে হামলা চালাচ্ছে আরাকান আর্মি। টিকতে না পেরে সরকারি বাহিনীর অনেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে খবর আসছে। এতে এপারের লোকজন আতঙ্কিত।
রাখাইন পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে জানিয়ে টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে কঠোর নজরদারিতে আছে।
০৭:০৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
হেডলাইন :
মংডুর কাছে রাতভর গোলাগুলি-বিস্ফোরণ, অনুপ্রবেশের শঙ্কা
- প্রতিনিধির নাম
- প্রকাশিত সময় : ০১:০৩:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ মার্চ ২০২৪
- ১১৩ ভিউ
ট্যাগ :
পাঠকপ্রিয়