০৬:২৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মাতারবাড়ী হতে পারে গেম চেঞ্জার’

কক্সবাজারের মহেশখালী-মাতারবাড়ীকে কেন্দ্র করে বাস্তবায়িত হচ্ছে অর্থনৈতিক করিডর, যা এমআইডিআই বা ‘মিডি’ নামে পরিচিত। এই করিডরই বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান, নেপালসহ বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে আন্তযোগাযোগের কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে। এই অর্থনৈতিক করিডর বাংলাদেশের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী দেশের যোগাযোগের ক্ষেত্রে ‘গেম চেঞ্জার’ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ভূরাজনীতিতেও এ এলাকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।
গতকাল রোববার ‘বঙ্গোপসাগর অঞ্চল ঘিরে বহুমুখী যোগাযোগ’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) রাজধানীর বারিধারায় জাপান দূতাবাসের মিলনায়তনে এই সেমিনারের আয়োজন করে।
সেমিনারে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি ও ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাসহ বিভিন্ন খাতের বিশেষজ্ঞরা বক্তব্য দেন। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে তিনটি মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়।
মাতারবাড়ী-মহেশখালীতে যা হচ্ছে :
জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) পক্ষ থেকে সংস্থাটির প্রধান প্রতিনিধি ইচিগুচি টোমোহাইড ‘মহেশখালী-মাতারবাড়ী সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন উদ্যোগ’ নিয়ে উপস্থাপন দেন। তিনি বলেন, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরকে কেন্দ্র করে অর্থনৈতিক অঞ্চলও হচ্ছে। সব মিলিয়ে এমআইডিআই অঞ্চলকে ঘিরে এই অঞ্চলে তিনটি ‘হাব’ বা অর্থনৈতিক কেন্দ্র গড়ে ওঠার সম্ভাবনা আছে। এগুলো হলো লজিস্টিক হাব, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি হাব এবং শিল্প হাব। এই করিডর বাংলাদেশের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী দেশের আন্তযোগাযোগের ক্ষেত্রে ‘গেম চেঞ্জার’ হয়ে উঠতে পারে।
সিপিডির গবেষক সৈয়দ ইউসুফ সাদাত তাঁর উপস্থাপনায় দেখান যে আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে প্রাধান্যের বিষয় ছয়টি। এগুলো হচ্ছে পরিবহন বা যাতায়াত; সংযোগ শিল্প; তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি); মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল (এফটিএ); বিদেশি বিনিয়োগ এবং অবকাঠামো উন্নয়ন। বাণিজ্য ও তথ্যপ্রযুক্তিতে বিনিয়োগ বাড়াতে পারলে বঙ্গোপসাগরকে ঘিরে থাকা এই অঞ্চল প্রাথমিক থেকে প্রস্তুত পণ্য তৈরির সরবরাহ কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে।
মেকং নদীকেন্দ্রিক উপ-আঞ্চলিক উন্নয়নের ভূমিকা তুলে ধরেন টোয়ো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কেম্মেই সুবোটা। তিনি জানান, মেকং নদীকে কেন্দ্র করে চীন, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, কম্বোডিয়া ও লাওসের কৃষি, শিল্প, নগরায়ণ খাতে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে।
শিগগিরই সেপা নিয়ে আলোচনা শুরু :
সেমিনারের সমাপনী অধিবেশনে বক্তব্য দেন ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা। তিনি বলেন, শিগগিরই ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে কম্প্রেসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট (সেপা) নিয়ে আলোচনা শুরু হবে। প্রণয় ভার্মা আরও বলেন, মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দর চালু হলে ট্রান্সশিপমেন্ট করে রামগড়-সাবরুম হয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে সহজেই চলে যাওয়া যাবে। তিনি মানুষে মানুষে যোগাযোগ ও বাণিজ্য সম্প্রসারণের পাশাপাশি জ্বালানি এবং তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রেও সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর জোর দেন।
আলোচনা :
সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম। তিনি অনলাইনে যুক্ত হন। বলেন, বাংলাদেশ ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হয়ে গেলে রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনতে হবে। খুঁজতে হবে নতুন বাজার। এ জন্য আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি বলেন, আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়লে সব পক্ষই লাভবান হবে।
বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক মনে করেন, বাংলাদেশ এই অঞ্চলের যোগাযোগের কেন্দ্রে আছে। এর কারণ, বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান এবং সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক অগ্রগতি। এ ছাড়া আঞ্চলিক ভূরাজনীতিতে বাংলাদেশ সবাইকে আকৃষ্ট করতে পেরেছে।
বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানকে ব্যবহার করে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক করিডর উন্নয়নের ওপর জোর দেন এডিবির সরকারি খাতের ব্যবস্থাপনাবিশেষজ্ঞ সুনোকো সুনাইয়ামা।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক উজমা চৌধুরী ও জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের (জেট্রো) চিফ কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ ইউজি অ্যান্ডো ।

ট্যাগ :
পাঠকপ্রিয়

আলুর দাম আরও বেড়েছে, স্বস্তি নেই ডিম-সবজিতেও

মাতারবাড়ী হতে পারে গেম চেঞ্জার’

প্রকাশিত সময় : ০১:০৯:৪৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ মার্চ ২০২৪

কক্সবাজারের মহেশখালী-মাতারবাড়ীকে কেন্দ্র করে বাস্তবায়িত হচ্ছে অর্থনৈতিক করিডর, যা এমআইডিআই বা ‘মিডি’ নামে পরিচিত। এই করিডরই বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান, নেপালসহ বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে আন্তযোগাযোগের কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে। এই অর্থনৈতিক করিডর বাংলাদেশের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী দেশের যোগাযোগের ক্ষেত্রে ‘গেম চেঞ্জার’ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ভূরাজনীতিতেও এ এলাকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।
গতকাল রোববার ‘বঙ্গোপসাগর অঞ্চল ঘিরে বহুমুখী যোগাযোগ’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) রাজধানীর বারিধারায় জাপান দূতাবাসের মিলনায়তনে এই সেমিনারের আয়োজন করে।
সেমিনারে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি ও ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাসহ বিভিন্ন খাতের বিশেষজ্ঞরা বক্তব্য দেন। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে তিনটি মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়।
মাতারবাড়ী-মহেশখালীতে যা হচ্ছে :
জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) পক্ষ থেকে সংস্থাটির প্রধান প্রতিনিধি ইচিগুচি টোমোহাইড ‘মহেশখালী-মাতারবাড়ী সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন উদ্যোগ’ নিয়ে উপস্থাপন দেন। তিনি বলেন, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরকে কেন্দ্র করে অর্থনৈতিক অঞ্চলও হচ্ছে। সব মিলিয়ে এমআইডিআই অঞ্চলকে ঘিরে এই অঞ্চলে তিনটি ‘হাব’ বা অর্থনৈতিক কেন্দ্র গড়ে ওঠার সম্ভাবনা আছে। এগুলো হলো লজিস্টিক হাব, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি হাব এবং শিল্প হাব। এই করিডর বাংলাদেশের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী দেশের আন্তযোগাযোগের ক্ষেত্রে ‘গেম চেঞ্জার’ হয়ে উঠতে পারে।
সিপিডির গবেষক সৈয়দ ইউসুফ সাদাত তাঁর উপস্থাপনায় দেখান যে আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে প্রাধান্যের বিষয় ছয়টি। এগুলো হচ্ছে পরিবহন বা যাতায়াত; সংযোগ শিল্প; তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি); মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল (এফটিএ); বিদেশি বিনিয়োগ এবং অবকাঠামো উন্নয়ন। বাণিজ্য ও তথ্যপ্রযুক্তিতে বিনিয়োগ বাড়াতে পারলে বঙ্গোপসাগরকে ঘিরে থাকা এই অঞ্চল প্রাথমিক থেকে প্রস্তুত পণ্য তৈরির সরবরাহ কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে।
মেকং নদীকেন্দ্রিক উপ-আঞ্চলিক উন্নয়নের ভূমিকা তুলে ধরেন টোয়ো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কেম্মেই সুবোটা। তিনি জানান, মেকং নদীকে কেন্দ্র করে চীন, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, কম্বোডিয়া ও লাওসের কৃষি, শিল্প, নগরায়ণ খাতে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে।
শিগগিরই সেপা নিয়ে আলোচনা শুরু :
সেমিনারের সমাপনী অধিবেশনে বক্তব্য দেন ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা। তিনি বলেন, শিগগিরই ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে কম্প্রেসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট (সেপা) নিয়ে আলোচনা শুরু হবে। প্রণয় ভার্মা আরও বলেন, মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দর চালু হলে ট্রান্সশিপমেন্ট করে রামগড়-সাবরুম হয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে সহজেই চলে যাওয়া যাবে। তিনি মানুষে মানুষে যোগাযোগ ও বাণিজ্য সম্প্রসারণের পাশাপাশি জ্বালানি এবং তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রেও সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর জোর দেন।
আলোচনা :
সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম। তিনি অনলাইনে যুক্ত হন। বলেন, বাংলাদেশ ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হয়ে গেলে রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনতে হবে। খুঁজতে হবে নতুন বাজার। এ জন্য আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি বলেন, আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়লে সব পক্ষই লাভবান হবে।
বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক মনে করেন, বাংলাদেশ এই অঞ্চলের যোগাযোগের কেন্দ্রে আছে। এর কারণ, বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান এবং সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক অগ্রগতি। এ ছাড়া আঞ্চলিক ভূরাজনীতিতে বাংলাদেশ সবাইকে আকৃষ্ট করতে পেরেছে।
বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানকে ব্যবহার করে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক করিডর উন্নয়নের ওপর জোর দেন এডিবির সরকারি খাতের ব্যবস্থাপনাবিশেষজ্ঞ সুনোকো সুনাইয়ামা।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক উজমা চৌধুরী ও জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের (জেট্রো) চিফ কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ ইউজি অ্যান্ডো ।