০৪:৪৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিখ্যাত সাহাবী আবূ হুরাইরাহ (রা.) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী

আবূ হুরাইরাহ (রা.) মহানবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) এর অন্যতম সহচর এবং তাঁর বাক্য ও কর্মের উৎসাহী প্রচারক। তিনি দক্ষিণ ‘আরবের আয্দ গোত্রের সুলায়ম ইবনু ফাহম বংশোদ্খূত।
‘আবূ হুরাইরাহ ’উপনামে তিনি সমাধিক পরিচিত। তার প্রকৃত নাম সম্বন্ধে পরস্পর বিরোধী বর্ণনা পাওয়া যায়। অধিকতর বিশ্বস্ত বিবরণ মতে তার নাম ‘আবদুর রহমান ইবনু সাখর, অথবা ‘উমায়র ইবনু আমির। বিড়ালের প্রতি স্নেহাধিক্যের জন্য তিনি আবূ হুরাইরাহ্ অর্থাৎ- ছোট বিড়ালের পিতা নামে অভিহিত হন। এ উপনামের জনপ্রিয়তা তার আসল নামটিকে আড়াল করে দাঁড়ায়।
আবূ হুরাইরাহ্ (রা) হুদায়বিয়ার সন্ধি এবং খায়বার যুদ্ধের অন্তবর্তী সময়ে মদিনায় আগমন করে ইসলাম গ্রহণ করেন। তখন তার বয়স ত্রিশ বছরের মতো। তখন থেকে তিনি রাসূলে করিম (সা.) এর পবিত্র সাহচর্য অবলম্বন করেন এবং ‘আসহাবে সুফ্ফা’-এর অন্তর্ভুক্ত হন।
মহানবী (সা.) এর খেদমতের প্রত্যেকটি সুযোগ গ্রহণ মানসে এবং তাঁর পবিত্র মুখ নিঃসৃত বাণী শুনার ঐকান্তিক আগ্রহে আবূ হুরাইরাহ্ (রা.) সর্বদা ছায়ার ন্যায় তাঁর অনুগামী হন; এমন কী তিনি প্রায়ই মহানবী (সা.) এর ওজু এবং শৌচের জন্য পানির পাত্র নিয়ে যেতেন, হজ এবং জিহাদে তাঁর অনুগামী হতেন। রাসূলে করিম (সা.) যে খাদ্য হাদিয়া পেতেন, তা সবই প্রায় আসহাবে সুফ্ফার মধ্যে বন্টন করে দিতেন। আবূ হুরাইরাহ্ (রা) এর ভাগে যতটুক পড়ত, অত্যন্ত অপর্যাপ্ত হলেও তা খেয়ে তিনি দিন কাটিয়ে দিতেন।
সাহাবীগণ তাকে কখনো ক্ষুধায় কাতর দেখলে নিজেদের গৃহে ডেকে এনে আহার করাতেন। একবার জা‘ফার ইবনু আবু তালিব তাকে সঙ্গে নিয়ে যান, কিন্তু তার ঘরে কিছু না থাকায় ঘি এর শূন্য পাত্রটি হাজির কররেন। আবূ হুরাইরাহ্ (রা) তা-ই চেটে-পুটে ক্ষুধা নিবারণের প্রয়াস পেলেন। অনেক সময় খেজুর আর পানি খেয়েই তিনি দিনের পর দিন অতিবাহিত করতেন। কখনো কখনো পেটে পাথর বেঁধে শুয়ে থাকতেন, কিন্তু কোনদিন কানো নিকট কিছু চাইতেন না।
আবূ হুরাইরাহ্ (রা) সর্বাপেক্ষা অধিক হাদিস বর্ণনা করেছেন। তার বর্ণিত হাদিসের মোট সংখ্যা ৫৩৭৪ (পাঁচ হাজার তিনশত,চুয়াত্তর)। তার মধ্যে সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম উভয় গ্রন্থে রয়েছে মোট ৩৫২টি হাদিস, এককভাবে সহীহ বুখারীতে রয়েছে ৭৯টি। আর সহীহ মুসলিমে ৭৩টি হাদিস।
আবূ হুরাইরাহ্ (রা.) এর অসাধারণ স্মৃতিশক্তি সম্পর্কে নিম্মোক্ত হাদিসটি প্রণিধানযোগ্য। একবার আবূ হুরাইরাহ্ (রা) রাসূলে করিম (সা.)-কে বললেন,আমি আপনার নিকট বহু হাদিস শুনি কিন্তু ভুলে যাই। রাসূলে করিম (সা.) তাকে বললেন, তোমার গায়ের চাদর খুলে ধরো। তিনি তা খুলে ধরলেন, আর রাসূলে করিম(সা.) কথা বলে গেলেন। তারপর রাসূলে করিম (সা.) এর নির্দেশে আবূ হুরাইরাহ্ (রা) চাদরটি গুটিয়ে নিয়ে নিজ বক্ষে চেপে ধরলেন। আবূ হুরাইরাহ্ (রা) বলেন, তারপর আমি আর কোনদিন কোনো হাদিস ভুলিনি। কোনো সাহাবী আবূ হুরাইরাহ্ (রা.) এর উপরোক্ত উক্তির প্রতিবাদ করেননি।
তিনি বলতেন,‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রা.) ব্যতীত আমার চেয়ে অধিক হাদিস আর কেউ-ই জানে না। কিন্তু ইবনু‘আমর বলেন, হাদিসে আবূ হুরাইরাহ্ (রা.) আমর চেয়ে অধিক জ্ঞান রাখেন।
স্বয়ং‘ওমর (রা.) সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, আবূ হুরাইরাহ্ (রা.) আমাদের তুলনায় হাদিস শ্রবণের অধিকতর সুযোগ লাভ করেছেন এবং তার অসাধারণ স্মৃতিশক্তি ছিল।
আবূ হুরায়রাহ্ (রা.) এর একটি অভ্যাস বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি হাদিস বর্ণনার পূর্বে বরাবর রাসূলে করিম (সা.) এর এই সতর্কবাণী উচ্চারণ করতেন, ‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাপূর্বক আমার নামে মিথ্যা হাদিস বর্ণনা করবে, সে জাহান্নামের আগুনে তার বাসস্থান রচনা করবে।’
রাসূলে করিম (সা.) এর নিকট থেকে সরাসরি হাদিস শ্রবণ ছাড়াও আবূ হুরাইরাহ্ (রা.) বিশিষ্ট সাহাবীগণের মধ্যে আবূ বকর ‘ওমর, ফাযল ইবনু আব্বাস (রা.) প্রমুখ হতে হাদিস গ্রহণ করেন এবং তা বর্ণনা করেন। অপরপক্ষে ইমাম বুখারী (রা.) এর বর্ণনা মতে আটশত রাবী তার নিকট থেকে হাদিস গ্রহণ করেছেন। সাহাবীগণের মধ্যে আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস, ইবনু ওমর, জাবির ও আনাস (রা.) প্রমুখ তার নিকট থেকে হাদিস শুনেছেন। অনেক সময় ‘উমার, ‘উসমান, ‘আলী, ত্বালহাহ্ ও জুবাইর (রা.) প্রয়োজনে তার কাছে হাদিসের অনুসন্ধান করতেন।
আবূ হুরাইরাহ্ (রা.) এর দেহের রং ছিল গৌর, অপর এক বর্ণনায় কিঞ্চত গৈরিক, দুই কাধ ছিল প্রশস্ত, মেজাজ বিনম্র ভালো কাজে তিনি ছিলেন উদ্যোগী, মেহমানদারীতে ছিলেন অগ্রণী। রাসূলে করিম (সা.) এর সময়ে সংসার বিরাগীরুপে চরম দারিদ্র দিন কাটালেও পরবর্তী জীবনে তিনি বিবাহ করে সংসারী হন, সন্তান-সন্ততির পিতা এবং ধন সম্পদের অধিকারী হন।
প্রাচুর্যের সময় অভাবের কথা স্বরণ করে তিনি মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতেন। আবূ হুরাইরাহ্ (রা.) অতি ধর্মভীরু এবং রাসূলে করিম (সা.) এর সুন্নাতের একনিষ্ঠ অনুসারী ছিলেন। ইসলামী শরীয়াতে তার বুৎপত্তি এবং বিদ্যা-বুদ্ধি ও প্রজ্ঞায়‘উমার(রা.) এর গভীর আস্থা ছিল। তিনি তাকে বাহরাইন প্রদেশের শাসনকর্তা নিযুক্ত করেছিলেন। অর্থ সঞ্চয়ের অপবাদে তাকে বরখাস্ত করেন, যথাবিহিত অনুসন্ধানের মাধ্যমে সন্দেহ দূর হলে পরে তাকে পুনরায় উক্ত পদ গ্রহণের অনুরোধ জানান।
কিন্তু আবূ হুরাইরাহ্ (রা.) এর আহত আত্ন-সম্মানবোধ উক্ত পদ পুনঃ গ্রহণে তাকে নিরুৎসাহ করে তোলে। ফলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। মু‘আবিয়াহ্ (রা.) এর খিলাফত কালে মদিনার শাসনকর্তা মারওয়ান আবূ হুরাইরাহ্ (রা) এর হাদিস স্বরণ রাখার অদ্ভুত শক্তি এবং হুবহু বর্ণনার আশ্চর্য ক্ষমতা তার অজান্তে পরীক্ষা করে তার প্রতি অতিশয় শ্রদ্ধাশীল হয়েছিলেন।
‘ওমর (রা.) থেকে মু‘আবিয়াহ্ (রা.) পর্যন্ত প্রত্যেক খলীফা তার নিকট হাদিস অনুসন্ধান করতেন এবং সাহাবী ও তাবি‘ঈগণ যে কোনো প্রশ্নের মীমাংসার জন্য তার নিকট যেতেন। এতে নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হয় যে, আবূ হুরাইরাহ্ (রা.) ছিলেন একজন শরীয়াতজ্ঞ প্রজ্ঞাশীল এবং মুহাককিক ফাকীহ্। তার সরলতা, সততা এবং বিশ্বস্ততা ছিল প্রশ্নাতীত। রাসূলে করিম (সা.) এর বহু গুরত্বপূর্ণ হাদিস তথা ইসলামের বহু অমূল্য শিক্ষার প্রচারে তার অতুলনীয় ভূমিকা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে চিরস্বরণীয় হয়ে থাকবে। তার মৃত্যুসন সম্পর্কে মতভেদ রয়েছে। তিনি মহান্তরে ৫৭/৬৭৬/-৫৮/৬৭৭-৫৯/৬৭৮ সনে ইন্তেকাল করেন।
মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল আটাত্তরের কাছাকাছি। ওয়ালীদ ইবনু‘উকবাহ ইবনু আবী সুফইয়ান তার জানাজায় ইমামতি করেন। সাহাবীগনের মধ্যে ইবনু‘ওমর এবং আবূ সা‘ঈদ আল-খুদরী (রা.) শরীক হন। মদিনার অদূরে কাসবা নামক স্থানে তার মৃত্যু হয়। পরেসেকান থেকে তার লাশ মদিনায় এনে সমাধিস্থ করা হয়। (ইবনু কাসীর, আল বিদায়াহ্ ওয়ান নিহায়াহ্,নতুন সংস্করণ (দারুল ফিকর বৈরুত, লেবানান,১৩৯৮/১৯৭৭), পৃ:৩১৫;ইবনু হাজার, তাকরীবুত্ তাহযীব, হাশিয়াহ-পৃ: ৪৪১)।

ট্যাগ :
পাঠকপ্রিয়

তদন্তে নির্দোষ প্রমাণিত হলেন ঈদগাঁও আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খুরশিদুল জান্নাত

বিখ্যাত সাহাবী আবূ হুরাইরাহ (রা.) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী

প্রকাশিত সময় : ০১:৪৩:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ মার্চ ২০২৪

আবূ হুরাইরাহ (রা.) মহানবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) এর অন্যতম সহচর এবং তাঁর বাক্য ও কর্মের উৎসাহী প্রচারক। তিনি দক্ষিণ ‘আরবের আয্দ গোত্রের সুলায়ম ইবনু ফাহম বংশোদ্খূত।
‘আবূ হুরাইরাহ ’উপনামে তিনি সমাধিক পরিচিত। তার প্রকৃত নাম সম্বন্ধে পরস্পর বিরোধী বর্ণনা পাওয়া যায়। অধিকতর বিশ্বস্ত বিবরণ মতে তার নাম ‘আবদুর রহমান ইবনু সাখর, অথবা ‘উমায়র ইবনু আমির। বিড়ালের প্রতি স্নেহাধিক্যের জন্য তিনি আবূ হুরাইরাহ্ অর্থাৎ- ছোট বিড়ালের পিতা নামে অভিহিত হন। এ উপনামের জনপ্রিয়তা তার আসল নামটিকে আড়াল করে দাঁড়ায়।
আবূ হুরাইরাহ্ (রা) হুদায়বিয়ার সন্ধি এবং খায়বার যুদ্ধের অন্তবর্তী সময়ে মদিনায় আগমন করে ইসলাম গ্রহণ করেন। তখন তার বয়স ত্রিশ বছরের মতো। তখন থেকে তিনি রাসূলে করিম (সা.) এর পবিত্র সাহচর্য অবলম্বন করেন এবং ‘আসহাবে সুফ্ফা’-এর অন্তর্ভুক্ত হন।
মহানবী (সা.) এর খেদমতের প্রত্যেকটি সুযোগ গ্রহণ মানসে এবং তাঁর পবিত্র মুখ নিঃসৃত বাণী শুনার ঐকান্তিক আগ্রহে আবূ হুরাইরাহ্ (রা.) সর্বদা ছায়ার ন্যায় তাঁর অনুগামী হন; এমন কী তিনি প্রায়ই মহানবী (সা.) এর ওজু এবং শৌচের জন্য পানির পাত্র নিয়ে যেতেন, হজ এবং জিহাদে তাঁর অনুগামী হতেন। রাসূলে করিম (সা.) যে খাদ্য হাদিয়া পেতেন, তা সবই প্রায় আসহাবে সুফ্ফার মধ্যে বন্টন করে দিতেন। আবূ হুরাইরাহ্ (রা) এর ভাগে যতটুক পড়ত, অত্যন্ত অপর্যাপ্ত হলেও তা খেয়ে তিনি দিন কাটিয়ে দিতেন।
সাহাবীগণ তাকে কখনো ক্ষুধায় কাতর দেখলে নিজেদের গৃহে ডেকে এনে আহার করাতেন। একবার জা‘ফার ইবনু আবু তালিব তাকে সঙ্গে নিয়ে যান, কিন্তু তার ঘরে কিছু না থাকায় ঘি এর শূন্য পাত্রটি হাজির কররেন। আবূ হুরাইরাহ্ (রা) তা-ই চেটে-পুটে ক্ষুধা নিবারণের প্রয়াস পেলেন। অনেক সময় খেজুর আর পানি খেয়েই তিনি দিনের পর দিন অতিবাহিত করতেন। কখনো কখনো পেটে পাথর বেঁধে শুয়ে থাকতেন, কিন্তু কোনদিন কানো নিকট কিছু চাইতেন না।
আবূ হুরাইরাহ্ (রা) সর্বাপেক্ষা অধিক হাদিস বর্ণনা করেছেন। তার বর্ণিত হাদিসের মোট সংখ্যা ৫৩৭৪ (পাঁচ হাজার তিনশত,চুয়াত্তর)। তার মধ্যে সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম উভয় গ্রন্থে রয়েছে মোট ৩৫২টি হাদিস, এককভাবে সহীহ বুখারীতে রয়েছে ৭৯টি। আর সহীহ মুসলিমে ৭৩টি হাদিস।
আবূ হুরাইরাহ্ (রা.) এর অসাধারণ স্মৃতিশক্তি সম্পর্কে নিম্মোক্ত হাদিসটি প্রণিধানযোগ্য। একবার আবূ হুরাইরাহ্ (রা) রাসূলে করিম (সা.)-কে বললেন,আমি আপনার নিকট বহু হাদিস শুনি কিন্তু ভুলে যাই। রাসূলে করিম (সা.) তাকে বললেন, তোমার গায়ের চাদর খুলে ধরো। তিনি তা খুলে ধরলেন, আর রাসূলে করিম(সা.) কথা বলে গেলেন। তারপর রাসূলে করিম (সা.) এর নির্দেশে আবূ হুরাইরাহ্ (রা) চাদরটি গুটিয়ে নিয়ে নিজ বক্ষে চেপে ধরলেন। আবূ হুরাইরাহ্ (রা) বলেন, তারপর আমি আর কোনদিন কোনো হাদিস ভুলিনি। কোনো সাহাবী আবূ হুরাইরাহ্ (রা.) এর উপরোক্ত উক্তির প্রতিবাদ করেননি।
তিনি বলতেন,‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রা.) ব্যতীত আমার চেয়ে অধিক হাদিস আর কেউ-ই জানে না। কিন্তু ইবনু‘আমর বলেন, হাদিসে আবূ হুরাইরাহ্ (রা.) আমর চেয়ে অধিক জ্ঞান রাখেন।
স্বয়ং‘ওমর (রা.) সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, আবূ হুরাইরাহ্ (রা.) আমাদের তুলনায় হাদিস শ্রবণের অধিকতর সুযোগ লাভ করেছেন এবং তার অসাধারণ স্মৃতিশক্তি ছিল।
আবূ হুরায়রাহ্ (রা.) এর একটি অভ্যাস বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি হাদিস বর্ণনার পূর্বে বরাবর রাসূলে করিম (সা.) এর এই সতর্কবাণী উচ্চারণ করতেন, ‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাপূর্বক আমার নামে মিথ্যা হাদিস বর্ণনা করবে, সে জাহান্নামের আগুনে তার বাসস্থান রচনা করবে।’
রাসূলে করিম (সা.) এর নিকট থেকে সরাসরি হাদিস শ্রবণ ছাড়াও আবূ হুরাইরাহ্ (রা.) বিশিষ্ট সাহাবীগণের মধ্যে আবূ বকর ‘ওমর, ফাযল ইবনু আব্বাস (রা.) প্রমুখ হতে হাদিস গ্রহণ করেন এবং তা বর্ণনা করেন। অপরপক্ষে ইমাম বুখারী (রা.) এর বর্ণনা মতে আটশত রাবী তার নিকট থেকে হাদিস গ্রহণ করেছেন। সাহাবীগণের মধ্যে আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস, ইবনু ওমর, জাবির ও আনাস (রা.) প্রমুখ তার নিকট থেকে হাদিস শুনেছেন। অনেক সময় ‘উমার, ‘উসমান, ‘আলী, ত্বালহাহ্ ও জুবাইর (রা.) প্রয়োজনে তার কাছে হাদিসের অনুসন্ধান করতেন।
আবূ হুরাইরাহ্ (রা.) এর দেহের রং ছিল গৌর, অপর এক বর্ণনায় কিঞ্চত গৈরিক, দুই কাধ ছিল প্রশস্ত, মেজাজ বিনম্র ভালো কাজে তিনি ছিলেন উদ্যোগী, মেহমানদারীতে ছিলেন অগ্রণী। রাসূলে করিম (সা.) এর সময়ে সংসার বিরাগীরুপে চরম দারিদ্র দিন কাটালেও পরবর্তী জীবনে তিনি বিবাহ করে সংসারী হন, সন্তান-সন্ততির পিতা এবং ধন সম্পদের অধিকারী হন।
প্রাচুর্যের সময় অভাবের কথা স্বরণ করে তিনি মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতেন। আবূ হুরাইরাহ্ (রা.) অতি ধর্মভীরু এবং রাসূলে করিম (সা.) এর সুন্নাতের একনিষ্ঠ অনুসারী ছিলেন। ইসলামী শরীয়াতে তার বুৎপত্তি এবং বিদ্যা-বুদ্ধি ও প্রজ্ঞায়‘উমার(রা.) এর গভীর আস্থা ছিল। তিনি তাকে বাহরাইন প্রদেশের শাসনকর্তা নিযুক্ত করেছিলেন। অর্থ সঞ্চয়ের অপবাদে তাকে বরখাস্ত করেন, যথাবিহিত অনুসন্ধানের মাধ্যমে সন্দেহ দূর হলে পরে তাকে পুনরায় উক্ত পদ গ্রহণের অনুরোধ জানান।
কিন্তু আবূ হুরাইরাহ্ (রা.) এর আহত আত্ন-সম্মানবোধ উক্ত পদ পুনঃ গ্রহণে তাকে নিরুৎসাহ করে তোলে। ফলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। মু‘আবিয়াহ্ (রা.) এর খিলাফত কালে মদিনার শাসনকর্তা মারওয়ান আবূ হুরাইরাহ্ (রা) এর হাদিস স্বরণ রাখার অদ্ভুত শক্তি এবং হুবহু বর্ণনার আশ্চর্য ক্ষমতা তার অজান্তে পরীক্ষা করে তার প্রতি অতিশয় শ্রদ্ধাশীল হয়েছিলেন।
‘ওমর (রা.) থেকে মু‘আবিয়াহ্ (রা.) পর্যন্ত প্রত্যেক খলীফা তার নিকট হাদিস অনুসন্ধান করতেন এবং সাহাবী ও তাবি‘ঈগণ যে কোনো প্রশ্নের মীমাংসার জন্য তার নিকট যেতেন। এতে নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হয় যে, আবূ হুরাইরাহ্ (রা.) ছিলেন একজন শরীয়াতজ্ঞ প্রজ্ঞাশীল এবং মুহাককিক ফাকীহ্। তার সরলতা, সততা এবং বিশ্বস্ততা ছিল প্রশ্নাতীত। রাসূলে করিম (সা.) এর বহু গুরত্বপূর্ণ হাদিস তথা ইসলামের বহু অমূল্য শিক্ষার প্রচারে তার অতুলনীয় ভূমিকা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে চিরস্বরণীয় হয়ে থাকবে। তার মৃত্যুসন সম্পর্কে মতভেদ রয়েছে। তিনি মহান্তরে ৫৭/৬৭৬/-৫৮/৬৭৭-৫৯/৬৭৮ সনে ইন্তেকাল করেন।
মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল আটাত্তরের কাছাকাছি। ওয়ালীদ ইবনু‘উকবাহ ইবনু আবী সুফইয়ান তার জানাজায় ইমামতি করেন। সাহাবীগনের মধ্যে ইবনু‘ওমর এবং আবূ সা‘ঈদ আল-খুদরী (রা.) শরীক হন। মদিনার অদূরে কাসবা নামক স্থানে তার মৃত্যু হয়। পরেসেকান থেকে তার লাশ মদিনায় এনে সমাধিস্থ করা হয়। (ইবনু কাসীর, আল বিদায়াহ্ ওয়ান নিহায়াহ্,নতুন সংস্করণ (দারুল ফিকর বৈরুত, লেবানান,১৩৯৮/১৯৭৭), পৃ:৩১৫;ইবনু হাজার, তাকরীবুত্ তাহযীব, হাশিয়াহ-পৃ: ৪৪১)।